• ফুটবল

একজন সন্তের গল্প, ইকার ক্যাসিয়াসের গল্প!

পোস্টটি ১০৬১৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
১৫ মে, ২০০২। চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনাল। বায়ার লেভারকুজেন ভার্সেস রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল মাদ্রিদের সামনে নবম বারের মত ইউরোপ সেরা হবার হাতছানি আর লেভারকুজেন নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনাল খেলতে এসেছে গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে।  
 
রবার্তো কার্লোসের লম্বা থ্রো ধরে চকিত শটে মাত্র ৮ মিনিটেই লিড পায় রিয়াল। তবে ৫ মিনিট পরেই ফ্রিকিক থেকে হেড করে সমতা ফেরান লুসিও। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠা খেলায় ত্রখন চলছে প্রথম অর্ধের অন্তিম সময়। সোলারির থ্রু বলে রান নিলেন রবার্তো কার্লোস। ক্রস বাড়ালেন ডিবক্সে থাকা জিদানের উদ্দেশ্যে। বল রিসিভ না করেই ফরাসী তারকা নিলেন বাঁ পায়ের ওয়ান্ডার ভলি। গোওওওল! চ্যাম্পিয়নস লীগ ইতিহাসের সেরা গোলে ২-১  ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথম অর্ধ শেষ করে মাদ্রিদ।
 
কিন্তু থমকে যায়নি লেভারকুজেন। পাল্লা দিয়েই আক্রমণ শানাচ্ছিলেন বালাক, বারবাটোভ, নেভিলরা। ৬৪ মিনিটে স্নাইডারের ফ্রিকিকে হেড করতে গিয়ে লেভারকুজেন ফরোয়ার্ড নেভিলের সাথে সংঘর্ষ হয় মাদ্রিদ কিপার সিজারের। হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে কয়েক মিনিট চেষ্টা করলেও আর পারেননি। ৬৮ মিনিটে মাঠ ছাড়তে হয় সিজারকে। বদলি হিসেবে নামেন ইকার ক্যাসিয়াস। 'ওয়ান্ডার কিপার' হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ইকার মাদ্রিদের ইয়ুথ একাডেমী থেকে মূল দলে আসেন ষোল বছর বয়সে। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের ফার্স্ট চয়েজ কিপার থাকলেও ধারাবাহিকতার অভাবে  জায়গা হারিয়েছিলেন ব্যাকআপ কিপার সিজারের কাছে।
 
২১ বছরের ইকার। হঠাৎ করেই অসম্ভব চাপ। গোলদুর্গ সামলিয়ে রাখতে পারলে রিয়াল জিতে নিবে ৫ বছরে তৃতীয়বারের মত ইউরোপ সেরার মুকুট। ক্যাসিয়াস কি পারবেন?
 
পরের ২৮ মিনিট ক্যাসিয়াস বোধহয় নিজেও জানতেন না তিনি কি করছেন! লেভারকুজেনের  একের পর এক প্রচেষ্টা বাঁধা পাচ্ছিল তরুণ মাদ্রিদ কিপারের কাছে। শেষের দিকে এসে রিয়ালকে চেপে ধরে জার্মান ক্লাবটি। ৮৯ মিনিটে তড়িৎ গতিতে একজনকে কাঁটিয়ে বক্সে ঢুকলেন নেভিল। দ্বিতীয় কোন চিন্তা মাথায় না নিয়েই জোরালো শট নিলেন গোল বরাবর। কিন্তু কেমন করে যেন উড়ে এলো একুশ বছরের তরুণ শরীরটা। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করলেন মাদ্রিদকে।
 
 
423
 
ফটোগ্রাফঃ স্টপেজ টাইমে বারবাটোভকে গোল বঞ্চিত করা অবিশ্বাস্য সেইভ
 
 
স্টপেজ টাইমের খেলা চলছে তখন। ষষ্ঠ মিনিটে (৯৬'') পোস্টের একেবারে সামনে থাকে বুলগেরিয়ান স্ট্রাইকার দিমিতর বারবাটোভের নিশ্চিত শট সেইভ করলেন ডান পা দিয়ে। ক্যাসিয়াসের পা বাদ দিয়ে বাকিটা শরীর তখন গোললাইনের ভেতরে।
 
কর্নার। লেভারকুজেন শেষ সুযোগ। বাস্টার্কের হেড। আবারো গোললাইন থেকে ক্যাসিয়াসের সেইভ। এবারো পা দিয়েই। সাথেসাথেই বল নিয়ে ক্লিয়ার করলেন মাদ্রিদ অধিনায়ক হিয়েরো। শেষ বাঁশি বাজালেন রেফারী উর্স মায়ার। লা নভেনা জিতলো ভিসেন্তে দেল বস্কের মাদ্রিদ। 
 
 
 
ভিডিওঃ হ্যাম্পডেন পার্কে ক্যাসিয়াসের ক্যামিও নৈপুণ্য
 
পরের গল্পটা মোটামুটি সবারই জানা। অন্যদিন বলা যাবে ওসব। আজ না হয় ক্যাসিয়াসের হ্যাম্পডেন পার্কের সেই বিজয় গাঁথায় বুঁদ হয়ে থাকি কিছুক্ষণ!