যেখানে ভালবাসা গুলো প্রস্ফুটিত হয়
পোস্টটি ২৩১২ বার পঠিত হয়েছে
স্যার আলফ্রেডো ডি স্টেফানো কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ কি ? উত্তরে স্টেফানো বলেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ মানেই একটা অনুভূতি । এরপর থেকেই নিজেকে প্রশ্ন করি এ কেমন অনুভূতি যে প্রায় সাড়ে আঁট হাজার কিলোমিটার দূরে বসে থাকা এক বালকের হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায় । কেন টিভি সেট খুললেই সাদা জার্সি ধারি ওই রামোস , রোনালদো কিংবা মার্সেলোর দিকে চোখজোড়া অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে । কেনই বা লিসবনের রাতে ইকারের চোখ জোড়া দেখে নিজের চোখে ও পানি চলে আসে । কেন ই বা ৯০ মিনিটের পর বলি “ ইয়েস উই ক্যান “ । এই যে দেখুন না প্রায় সাড়ে আঁট হাজার কিলোমিটার দূরের এক ক্লাবকে বুঝতে চাওয়ার চেষ্টা করছি সেখানেও “ উই “ চলে আসছে । এটাও কি তবে শুধুশুধুই ? নাকি সেই অনুভূতির মায়াজালে আচ্ছন্ন কিছু ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা
সেই মায়াজাল বুনতে থাকা অনুভূতির পেছনেই আছে একটি বেড়ে উঠার গল্প । আছে অনেক রথী মহারথীদের ঘিরে গড়ে উঠা কিছু স্বপ্ন । আছে অনেকগুলো মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম আর আজন্ম ভালবাসা । কেমন ছিল সেই সব মানুষগুলোর স্বপ্ন নিয়ে বয়ে চলা রিয়াল মাদ্রিদ নামক অনুভূতির সূচনালগ্ন ? চলুন দেখে আসা যাক ।
***
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ , ফুটবলটা সবে নতুন নতুন রং ছড়ানো শুরু করেছে স্পেনে অনেকটা বসন্তের প্রথম প্রহর গুলোর মত । ফুটবলের সেই শিহরণ থেকে বাদ পড়ে নি ইনস্টিটিউশন লিব্রে দে এন্সেঞ্জা এর ছাত্ররাও । এখানকার ছাত্রদের বেশিরভাগই হয় ক্যামব্রিজ নতুবা অক্সফোর্ডের এর ছাত্র । তাই ইংরেজদের মত এরাও চিন্তা করল এবার একটা ক্লাব খুললে কেমন হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা খুলে ফেলল ফুটবল ক্লাব স্কাই নামের একটি ক্লাব । ক্লাবের সদস্যরা সবাই মিলে প্রতি রবিবার মস্কলাতে খেলতে যেত । কিন্তু বেশিদিন আর টিকে থাকা সম্ভব হয় নি সেই ক্লাবটির । বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ফুটবল ক্লাব স্কাই । এক অংশের নাম দেয়া হয় নিউ ফুটবল ডি মাদ্রিদ আর অপর অংশের নাম দেয়া হয় মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব । সেই মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব এর দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এলেন জুলিয়ান প্যালাসিওস আর জুয়ান পেদ্রোস নামের দুই ভদ্রলোক । মজার ব্যাপার হল এই জুয়ান পেদ্রোস নামের ভদ্রলোকটি ছিলেন একজন কাতালানবাসি । এই মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবটির দায়িত্ব নেয়ার প্রথম পরিকল্পনাটি জুলিয়ান প্যালাসিওস করলেও অফিসিয়ালি ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন এই জুয়ান পেদ্রোস ।
ক্লাব প্রতিষ্ঠা তো হয়েছে এবার যে একাদশ নির্বাচন , স্টেডিয়াম আর ক্লাব অফিস ঠিক করা দরকার । সে প্রেক্ষিতে মিটিং ডাকলেন জুলিয়ান প্যালাসিওস । এখানে আরও একটি মজার তথ্য আছে সেটা হল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবের হয়ে প্রথম প্লেয়ার হিসেবে সাইন করানো হয় আলফন্সো আলবেনেজ জর্ডানা কে । জর্ডানা তখন খেলত কাতালান ক্লাব বার্সোলনা তে । শুধুমাত্র মাদ্রিদে খেলার জন্য সে কাতালান ক্লাবটি ছেড়ে চলে আসে । পাশাপাশি পেদ্রো ভাইদের মাঝে আগে থেকেই ফুটবল খেলার প্রচলন ছিল । তারাও সেই সুযোগ লুফে নিল । জর্ডানা , পেদ্রো ভাই এবং বাকিদের নিয়ে গঠন করা হল একাদশ আর স্টেডিয়াম হিসেবে ঠিক করা হল ক্যালে ভ্যালাজকুয়েজ এবং ক্যালে জোসে অরটেগা গ্যাসেট এর মাঝে এক টুকরো মাঠকে , যার নাম ছিল ক্যাম্পো দে এসথ্রাদা । কিন্তু পরবর্তীতে জুয়ান পেদ্রোস আর তার ভাই কার্লোস মিলে ঠিক করল এত ছোটমাঠে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । তাদের স্টেডিয়ামের ব্যাপারে আরো বিনিয়োগ করা দরকার । তাই তারা তখনকার স্প্যানিশ রানি মারিয়া ক্রিস্টিনা থেকে মাসিক ১৫০ পেসিটাসের বিনিময়ে আরো বড় জায়গা নিয়ে নিল । যার নাম দিল অ্যাভেনিদা দে লা প্লাজা দে তোরস । তারপর সেই ধুলকাদাময় মাঠটাকে ফুটবলীয় সৌন্দর্যে জাগিয়ে তুলল তারা । আর ক্লাব অফিস হিসেবে ঠিক করল জুয়ান পেদ্রোসের রুম । সেখানেই দিনভর চলত কিভাবে কি করা হবে সেটা নিয়ে প্ল্যান । সেই আড্ডার একটি পরিচিত মুখ ছিলেন আর্থার জনসন । তিনি ছিলেন মূলত একজন ইংরেজ । কিভাবে খেলা হবে , কিভাবে ম্যাচ অ্যাঁরেঞ্জ করা হবে সব কিছু সম্পর্কে ধারণা দিতেন জনসন । পরবর্তীতে অনেকটা আকস্মিকভাবেই তাকে ক্লাবের প্রথম কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ।
এভাবেই চলতে লাগল “ মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবের “ প্রথম দিকের দিনগুলি । সেই সময় আবার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয় জুয়ান পেদ্রোসের ভাই কার্লোস পেদ্রোসকে । এদিকে রাজ্যে এক নতুন বসন্তের আগমন ঘটছে আর রাজা সেটা জানবে না এমনটা কি হয় নাকি । তাই স্প্যানিশ রাজা ত্রয়োদশ আলফন্সো এর সম্মানে আয়োজন করা হল “কোপা ডি স্পানা” টুর্নামেন্টের । শুধু টুর্নামেন্টের আয়োজন করলেই হয় না এর পাশাপাশি প্রচুর টাকা পয়সার ও প্রয়োজন । সে জন্য দরকার স্পন্সরশীপ । ভাগ্যবশত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের পূর্বেই পাঁচটি স্পন্সরশীপ পেয়ে যায় তারা । হিপোড্রোমোতে আয়োজিত সেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয় মাদ্রিদ। প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর এই প্রথম কোন ট্রপি ঘরে তোলে মাদ্রিদ । সেবার জিতেই তারা থেমে থাকে নি । এরপর আরও টানা তিন বছর কোপা ডি স্পানা জিতে নেয় তারা
1908 এ রিয়াল মাদ্রিদ এবং ভিগো স্পোর্টিং এর মধ্যাকার ফাইনাল ম্যাচের ছবি
সময় এসেছে আন্তর্জাতিক গণ্ডিতে পা রাখার । সেই উপলক্ষে প্যারিসের ক্লাব গ্যালিয়া স্পোর্ট কে আমন্ত্রণ জানানো হল মাদ্রিদে আসার জন্য । সেটিই ছিল মাদ্রিদের প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ । হিপোড্রোমোতে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয় । আবার ফিরতি লেগে প্যারিসে গিয়ে খেলার আমন্ত্রণ পায় মাদ্রিদ।
আস্তে আস্তে ক্লাব গুলো ছড়াতে থাকলেও তখনও কোন ফেডারেশন তৈরি হয় নি স্পেনে । এদিকে স্পন্সর গুলো ও ঠিক মত তাদের কথা রাখছে না , এছাড়া ক্লাব গুলোতেও বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে । এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা অর্গানাইজেশন থাকা দরকার । সে উদ্দেশেই ১৯০৯ এ প্রতিষ্ঠিত হয় দা ফেডেরাকন এস্পানলা ডি ফুটবল
সব ভালোর মধ্যেও যে একটা দুটো মন্দের খোঁজ পাওয়া যায় মাদ্রিদের সামনে এখন এমন পরিস্থিতি । জনপ্রিয়তা যে হারে বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না লোক ধারন ক্ষমতা । নতুন স্টেডিয়ামের দরকার । মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবকে তাই চলে যেতে হয় ক্যাম্পো দে ও’ ডোনেল স্টেডিয়ামে, যার ধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ৫০০০ এর মত । অমাবস্যার অন্ধকারের ঠিক পরের আলোগুলো বোধহয় একটু তীব্রই হয় । না হলে কেন ই বা তখন আসবে রিয়ালের ইতিহাসেরই শ্রেষ্ঠ সম্পদ গুলোর একটি সান্তিয়াগো বার্নাবু । এমন এক খেলোয়াড়ের শুরুটা যে গোল দিয়েই হবে এমনটা তো ভাবাই যায় । মার্চ ৩ , ১৯১২ মাদ্রিদের হয়ে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে অভিষেক হয় বার্নাবুর । ১৬ বছর বয়সি বার্নাবুই সেদিন ম্যাচে উইনিং গোল করে । খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন ফরোয়ার্ড । পরবর্তীতে লা মাঞ্ছার এই ফরোয়ার্ডের হাতেই তুলে দেয়া হয় টিমের ক্যাপ্টেনসি । এরপরই ধরা দিতে থাকে একের পর এক সাফল্য ।
স্প্যানিশ রাজা ত্রয়োদশ আলফন্সো তখন ঠিক করলেন ক্লাবের নামের আগে “ রিয়াল ” যুক্ত করা হোক । স্প্যানিশ “ রয়্যাল ” শব্দের অর্থ রাজকীয়তা ।
১৯১৩ তে ও ডোনেল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম মাদ্রিদ ডার্বি
এল ক্লাসিকো
১৯১৬ – ১৭ সিজন । স্প্যানিশ কাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সোলনা । তখনকার সময়ে এওয়ে গোলের নিয়ম ছিল না । চার ম্যাচের খেলা ছিল তখন । প্রথম ম্যাচে রিয়ালকে ২-১ গোলে হারায় বার্সা । দ্বিতীয় ম্যাচে বার্সা কে ৪-১ গোলে হারিয়ে কামব্যাক করে মাদ্রিদ । তৃতীয় ম্যাচটা হয় ৬-৬ গোলে ড্র । চতুর্থ ম্যাচে বার্সাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে নয় বছর পর স্প্যানিশ কাপের ফাইনালে উঠে রিয়াল মাদ্রিদ । কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে খেলা শেষের নয় মিনিট আগেই মাঠ ছেড়ে চলে যায় বার্সোলনা প্লেয়াররা । তাদের মতে চতুর্থ গোলটি ছিল অফসাইড । ফাইনাল ছিল অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে আরেক কাতালান ক্লাব এস্পানিয়লের মাঠে । যাওয়ার পথে তাদেরকে প্রতিরক্ষা দিতে হয় স্প্যানিশ ন্যাশনাল গার্ড কে । খেলা শেষ হওয়ার পরই রিয়াল মাদ্রিদের বাসের দিকে ঢিল , পাথর ছুড়তে থাকে কতিপয় উশৃঙ্খল সমর্থকেরা। এভাবেই সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে দুই ক্লাবের মধ্যে আর জন্ম নেয় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্রুপদি লড়াই এল ক্লাসিকো
ওল্ড চার্মাটিন স্টেডিয়াম
ও’ডোনেল স্টেডিয়ামেও বেশি দিন থাকা হল না মাদ্রিদের । ১৯২০ এর প্রথম দিকে মাদ্রিদ ইন্টারন্যাশনালি ক্লাবকে আরও প্রতিষ্ঠিত করার উপর বিশেষ নজর দেয় । প্রথমে তারা অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক মার্কেটের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তাদের আরও বড় স্টেডিয়ামের প্রয়োজন । সে উদ্দেশে তৈরি করা হয় ১৫০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন চার্মাটিন স্টেডিয়াম । ইন্টারন্যাশনালি ক্লাবকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে কেবল স্টেডিয়াম তৈরি করলেই হবে না , বড় প্লেয়ার দের সাইন করানোও প্রয়োজন । তাই তারা প্রথমে তৎকালিন সেরা গোলকিপার রিকার্ডো জামোরাকে সাইন করে নেয় ।
কালো আর্মব্যান্ডের প্রচলন
আচ্ছা এখনকার সময় তো আমরা প্রায়ই দেখি যে কোন শোঁক প্রকাশের জন্য ফুটবল প্লেয়াররা কালো আর্মব্যান্ড পরিধান করে । আমরা কি এটা জানি এই রীতির চালু হয় কখন কিংবা কে সেটা চালু করে ? আচ্ছা না জানলেও সমস্যা নেই । আসুন জেনে নেই । ৫ ই মার্চ ১৯২২ তে রিয়াল মাদ্রিদই সর্বপ্রথম শোঁক প্রকাশের জন্য এই কালো আর্মব্যান্ডের প্রচলন করে । সেদিন সাবেক মাদ্রিদিস্তা স্টেরিও আয়ারাঙ্গুয়েন এর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে মাদ্রিদের সব খেলোয়াড়েরা কালো আর্মব্যান্ড পরিধান করে মাঠে প্রবেশ করে । এরপর থেকেই এই কালো আর্মব্যান্ডকে ফুটবলে শোঁক প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করা হয় ।
লিগ ডাবল
১৯৩১-৩২ সিজনে জ্যামোরা , কিরিয়াচো , কুয়েঙ্কোয়েস দের নিয়ে গড়ে তোলা রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে উঠে পুরোপুরি অদম্য । সেবার কোন ম্যাচ না হেরেই লিগ টাইটেল জিতে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ । পরবর্তী সিজনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে রিয়াল মাদ্রিদ । সেই সিজনেও লিগ জিতে নেয় লস ব্লাঙ্কোসরা । ১৯২৯ এ লিগ শুরু হওয়ার চার বছরের মাথায় ই ব্যাক টু ব্যাক লিগ জেতে রিয়াল মাদ্রিদ ।
১৯৩৬ তে আবারও কোপা ডেল রের ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সোলনা । এবার ও রিকার্ডো জ্যামোরার অসাধারণ সেভের কাছে হার মানতে হয় বার্সোলনাকে । সময় গুলো ভালই যাচ্ছিল মাদ্রিদের কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হতে পারল না সেটা । গৃহযুদ্ধের দাবানলে পুড়ে গেল গোটা দেশ । কোপা ডেলরে ফাইনালের একমাসের মাথায় বন্ধ হয়ে পড়ল স্প্যানিশ ফুটবল ।
1936-1943
স্পেন জুড়ে চলা গৃহযুদ্ধের ভাঙনচিত্র থেকে বাদ গেল না চার্মাটিন স্টেডিয়ামও । গৃহযুদ্ধ চলাকালিন সেই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ চেয়েছিল কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে কিন্তু পুরনো শত্রুতার কারনে বার্সোলনা বাঁধা দান করে । পুরনো শত্রুতার চেয়েও বোধহয় আরেকটা কারণ আরও প্রখর হয়ে উঠেছিল সেই সময়ে । যুদ্ধের প্রথম দিকে ওল্ড চার্মাটিনকে রিপাবলিকানরা তাদের রাজনৈতিক র্যালি এবং খেলাধুলার জন্য ব্যাবহার করত । কিন্তু এরপরই যখন তাদের সম্মুখভাগ ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে তখনই ফ্রাঙ্কো বাহিনী সেখানে চালায় ধ্বংসযজ্ঞ । এর ফলে স্টেডিয়ামের মূল অংশ গুলো ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে , লুটপাট হয় সবকটি ট্রপি । গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আবার চার্মাটিনকে কে ব্যাবহার করা হয় রাজনৈতিক কর্মীদের বন্দীশালা হিসেবে । গৃহযুদ্ধের ছয় মাস পর ২২ নভেম্বর ১৯৩৯ এ ৩০০,০০০ পেসিটাসের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদকে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয় তাদের চার্মাটিন স্টেডিয়াম ।
২২০০০ দর্শকের সামনে সেদিন অ্যাথলেটিকো এভিয়াকনকে ২-০ গোলে পরাজিত করে গৃহযুদ্ধ পরবর্তী যুগের সূচনা করে রিয়াল মাদ্রিদ ।
সান্তিয়াগো বার্নাবুর প্রত্যাবর্তন
সংস্কারের মধ্যে দিয়ে কেটে গেল পরবর্তী চারটি বছর । ১৯৪৩ এ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দলের হাল ধরতে আসেন সান্তিয়াগো বার্নাবু । খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনেছেন অনেক আগেই । প্রকৃত চ্যালেঞ্জটা যে এখনই । ধ্বংসযজ্ঞের উপরে দাঁড়িয়ে তার স্মৃতিময় ক্লাব । একে পুনঃজাগরণ ঘটাতে হবে । এসেই প্রথম সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন স্টেডিয়াম বানাতে হবে । আগেকার সেই ওল্ড চার্মাটিনকে দিতে হবে নতুন রুপ । তাই প্রথমে তিনি চার্মাটিন এবং ক্যাস্তেলিনার মাঝে পাঁচ হেক্টর জায়গা কিনে নেন এবং ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ এ সেই পুরনো চার্মাটিন স্টেডিয়ামকে ভেঙ্গে তৈরি করেন প্রায় ৭৫০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নুয়েভো এস্তাদিয়ো চার্মাটিন । যার জন্য তাকে খরচ করতে হয় প্রায় ৩৮ মিলিয়ন পেসিটাসের মত । পুরনো স্টেডিয়ামকে ভাঙ্গার কারনে মাঝে অনেকটা সময় রিয়াল মাদ্রিদকে খেলতে হয় এস্তাদিয়ো ম্যাট্রিপলিটনে ।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ নুয়েভো এস্তাদিয়ো চার্মাটিনে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচ ঃ রিয়াল মাদ্রিদ বনাম নিউক্যাসল ইউনাইটেড
বার্নাবু যুগের প্রথম ট্রপি আসা শুরু করে ১৯৪৬ এ । কোপা ডি জেনারালিসমোর ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়া কে ৩-১ গোলে হারিয়ে বার্নাবু যুগের প্রথম ট্রপি ঘরে তুলে রিয়াল মাদ্রিদ । তিনি ঠিক করলেন ক্লাবকে কয়েকটা অংশে বিভক্ত করতে হবে । প্রত্যেকটা অংশের দায়িত্বের জন্য এক একজন নিযুক্ত থাকবে । তৈরি করলেন রিয়াল মাদ্রিদ যুব একাডেমী লা ফেব্রিকা । আর এইদিকে ট্রান্সফার মার্কেটেও তিনি ছিলেন একজন হটকেক । একে একে সাইন করাতে থাকেন বিশ্ববিখ্যাত সব খেলোয়াড়দের । স্টেফানো , পুস্কাস , গেন্তো এদের নিয়ে পরবর্তীতে তৈরি করলেন এক বিশ্বজয়ী টিম ।
বার্নাবুর সাইনিং ক্ষমতা কতটা আসাধারন ছিল তার কিছু উদাহরণ নিচে দেয়া হল
স্টেফানোঃ প্রায় ৪ মিলিয়ন পেসিটাসের বিনিময়ে স্টেফানোকে দলে ভিড়ান বার্নাবু , যেখানে সে প্রায় বার্সা তে জয়েন করেই ফেলেছিল ।
পুস্কাসঃ তিনি সেই সময় ইউরোপে ছিলেন অবহেলিত । ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে জয়েন করার কথা থাকলেও ভাষাগত সমস্যা আর বয়সের কারনে তারা তখন তাকে সাইন করায় নি । তখনি এগিয়ে আসে বার্নাবু । ফ্রি ট্রান্সফারে পুস্কাস্কে দলে টেনে নেন তিনি ।
গেন্তোঃ রেসিং সান্তান্দার থেকে নামমাত্র মুল্যে নিয়ে আসেন এই রিয়াল লিজেন্ডকে ।
১৯৫৫ এ তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে চার্মাটিন স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় “ সান্তিয়াগো বার্নাবু স্টেডিয়াম “ ।
তাকে এখন ও ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট দের একজন হিসেবে ভাবা হয় । গৃহযুদ্ধ পরবর্তী গড়ে উঠা সময় থেকে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদের স্বর্নালী সময় অনেক গুলো বছর এই ক্লাবটির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন বার্নাবু ।
মাদ্রিদের হয়ে অর্জনঃ
৬ টি ইউরোপিয়ান কাপ
১৬ টি স্প্যানিশ লিগ
৬ টি স্প্যানিশ কাপ
১ টি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ
২ টি ল্যাটিন কাপ
২ ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়নশিপ
( পরবর্তী পুস্কাস , স্টেফানো , গেন্তোদের স্বর্নালী সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঘটনা গুলো নিয়ে থাকছে দ্বিতীয় পর্ব )
তথ্যসূত্রঃ
(১) রিয়াল মাদ্রিদ অফিসিয়াল
(২) ব্লেচার রিপোর্ট
(৩) ফোর ফোর ম্যাগাজিন
(৪) এস্তাদিওস ডি স্পানা ম্যাগাজিন
(৫) উইকিপিডিয়া
- 0 মন্তব্য