• ক্রিকেট

কোচ!বিসিবি শোনোওওওওওওওওওও!

পোস্টটি ৭৫০৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আইসিসির সদস্যপদ পাওয়ার আগে পরে কম কোচ দেখেনি বাংলাদেশ দল।মহসিন কামাল,এডি বারলো, গর্ডন গ্র্রিনিজ,ডেভ হোয়াটমোর,জেমি সিডন্স,শেন জার্গেনসেন,রিচার্ড পাইবাস,চন্ডিকা হাতুড়েসিংহে ; তালিকাটা বেশ লম্বা।কিন্তু কোন কোচই সেই অর্থে লম্বা সময় থাকতে পারেননি।

সব কোচের বিরুদ্ধেই কোন না কোন অভিযোগ ছিল, বিশেষ করে হাতুড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের লিস্টটা অনেক বড়।তিনি দলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন সত্য কিন্তু কোনভাবেই এই সাফল্যের কৃতিত্ব এককভাবে তাঁর নয়।হাতুড়ে এককভাবে ‍সমস্ত কৃতিত্ব দাবি করে অন্যায্য ভাবে নির্বাচক এবং অধিনায়কের এখতিয়ারে নাক গলিয়েছেন।আর যাই হোক এমন ‍আচরণের কোচ চাই না। তাহলে কেমন কোচ চাই?হাতুড়ের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কোচের প্রতি চাওয়াগুলো কি?

প্রথম চাওয়া, কোচের দীর্ঘদিন কাজ করার মানসিকতা থাকবে।কয়েকটা সিরিজ জিতিয়ে নিজের সিভি ভারি করে চলে যাবেন এমন কোচ চাই না।হাতুড়ের কাজ দেখে কখনোই মনে হয়নি তিনি লম্বা সময় থাকতে চান।তিনি টেস্ট সিরিজগুলো সিরিয়াসলি নেন নি।ওয়ানডেতে বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো করছিল তাই তিনি সেদিকে মনোযোগ দিয়ে কিছু সিরিজ জিতে সিভি ভারি করার দিকে যান।সেটার প্রমাণ হচ্ছে দলকে স্টেবল না করে বার বার নতুন নতুন প্লেয়ার ট্রাই করা।এসব প্লেয়ারের কেউ ক্লিক করেছেন কেউ করেননি।আর দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনি নিজেই বলেছেন যে আরো একবছর আগেই তাঁর সবটুকু তিনি দিয়ে ফেলেছেন।

দ্বিতীয় চাওয়া, সিনিয়র প্লেয়ারদের প্রপার হ্যান্ডেল এবং ইউটিলাইজ করতে পারবেন এমন কোচ চাই।কোচের ফিউচার প্ল্যানে যেন জুনিয়র প্লেয়ারদের গড়ে তোলার ব্যাপারটা থাকে।আগের সব কোচই একসময় ড্রেসিংরুমে একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য সিনিয়র প্লেয়ারদের ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন এবং জুনিয়রদের গড়ে তোলার বদলে আচমকাই অতিরিক্ত প্রায়োরিটি দিয়েছেন।ফলে অনেক প্লেয়ারেরই ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে অতীতে।এদিকটায় বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

তৃতীয় চাওয়া, হোম সিরিজ এবং অ্যাওয়ে সিরিজের জন্য আলাদা প্ল্যান ও স্পেশালিস্ট প্লেয়ার তৈরী করা দেখতে চাই।কিছু প্লেয়ার আছেন যারা সব জায়গায় সব প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই ইফেক্টিভ আবার কিছু আছেন যারা কন্ডিশনভেদে সবার বিরুদ্ধে কার্যকর নন।এই ব্যাপারগুলো যেন কোচের প্ল্যানে থাকে।আমার মতে এইদিকটায় হাতুড়ে ছিল বেস্ট।সে অসাধারণ প্ল্যানার ছিল।নতুন কোচও যেন এমন হয়।

চতুর্থ চাওয়া, কোচ নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট দেখবেন ,বিশেষ করে জাতীয় লীগ ও বিসিএল।হাতুড়ে ঘরোয়া ক্রিকেট মোটেও দেখতেন না।আবার তিনি নির্বাচক প্যানেলেও ছিলেন! শুধু স্ট্যাট ও নেটের পারফরম্যান্স দেখে আন্দাজের ওপর তিনি প্লেয়ার চুজ করতেন।তানভীর হায়দারকেও এভাবেই নেটে দেখে দলে নিয়েছিলেন।ফলাফলটা আমরা সবাই জানি।ঘরোয়া লীগের অনেক পারফরমারই আড়ালে পড়ে আছেন। কোচ খেলা না দেখলে তাঁদের চিনবেন কীভাবে!

পঞ্চম চাওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন টি-টোয়েন্টি এবং ‘ডেড রাবার’ ম্যাচেই করা হয়।হাতুড়ে ক্রমাগত বিভিন্ন পরীক্ষা করেই গেছেন।এক ম্যাচে কেউ ভালো করতে পারল না তাহলে পরের ম্যাচে নতুন মুখ আনো!এভাবেই তিনি একের এক প্লেয়ার খেলিয়েছেন।কোনদিন সাফল্য পেয়েছেন,কোনদিন পান নি।সাময়িক লাভ হয়েছে বটে কিন্তু ক্ষতির পাল্লাটাই ভারি।সব প্লেয়ার মানসিক চাপে পড়ে গিয়েছিলেন,স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারেন নি।বিশ্বের বেশিরভাগ বড় দল টি-টোয়েন্টিতেই এক্সপেরিমেন্ট চালায়।এই কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়া একই সময়ে আলাদা দুইটি সিরিজে দুইটি দল খেলিয়েছিল,অভিজ্ঞদের নিয়ে করেছিল টেস্ট টিম এবং নতুনদের নিয়ে টি-টোয়েন্টি টিম।বাংলাদেশও সেপথে হাঁটতে পারে।

ষষ্ঠ চাওয়া, প্রতিটি ফরম্যাটের জন্য আলাদা স্পেশালিস্ট প্লেয়ার তৈরী করা।এই জায়গাটাতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।র্যাকিংয়ের টপ দলগুলোর তিন ফরম্যাটের স্কোয়াডে অনেক পার্থক্য থাকে, হয়ত চার বা পাঁচজন প্লেয়ার কমন থাকেন কিন্তু বাকিরা থাকেন ঐ ফরম্যাটের স্পেশালিস্ট।বাংলাদেশ দলে এমন সংস্কৃতি নেই।যিনি ওয়ানডেতে বা টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে থাকেন তাকে টেস্টে নামিয়ে দেয়া হয়,উল্টোটাও ঘটে।এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চাই।

সপ্তম চাওয়া, নির্বাচকদের কাজে এবং মাঠে অধিনায়কের সিদ্ধান্তে অযাচিত হস্তক্ষেপ না করা।এ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই।হাতুড়ে হস্তক্ষেপের সমস্ত সীমা পেরিয়ে গিয়েছিলেন।ঐ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চাই না।

নতুন কোচ কে হবেন জানি না।কিন্তু নতুন কোচের মধ্যে যেন অন্তত এই ব্যাপারগুলো থাকে এমনটাই চাই ,বিসিবি যেন অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এগুলো নিশ্চিত করে।