• ফুটবল

ফুলব্যাকদের রাজ্যেঃ রক্ষণ থেকে আক্রমণে

পোস্টটি ১৭৮১৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ফুটবল মাঠের কথা বলতে গেলে সাধারণত তিনভাগে আমরা মাঠকে ভাগ করে ফেলি। রক্ষণভাগ, মধ্যভাগ ও আক্রমণভাগ। রক্ষণভাগ প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে গোলবার সামলাতে গোলকিপারকে সাহায্য করবে, মাঝমাঠ রক্ষণভাগ থেকে কিংবা প্রতিপক্ষ থেকে বল নিয়ে আক্রমণে দিবে আর আক্রমণভাগ তাদের পাস, ড্রিবলসহ অসাধারণ কারিকুরি দিয়ে গোল দিবে। এমনভাবেই আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের থেকে বেশি গোল দিয়ে খেলা জিতে আসতে হবে। মাঠের বিভিন্ন ভাগে বিভিন্ন সংখ্যার খেলোয়াড় ভাগ করে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা সাজান স্ব স্ব দলের সেনাপতিরা। যুগ যুগ ধরেই জেতার জন্য, প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার জন্য কিংবা কোন পরাক্রমশালী শক্তিকে দমানোর জন্য ফুটবল মাঠকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে নিজেদেরকে অমর করে রেখেছে বিভিন্ন দল আর তার পেছনের সৃষ্টিশীল মানুষগুলো। নিজেদের সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করে দর্শকদের অবাক করেছেন অনেকেই। আধুনিক ফুটবলের এমনই একটি গল্প শোনানোর ইচ্ছা আজ।

 

 

Association_football_4-4-2_formation.svg-588fcabc3df78caebc42395a

 

 

২০১৭ এর ট্রান্সফার উইন্ডোতে একটু ফিরে যাই। বেশ আলোচিত সমালোচিত একটা ঘটনা দেখা যায় যে ফুলব্যাক নিয়ে বড় দলগুলোর কোচদের মাঝে টানাটানি। সাথে দামটাও বেশ উর্ধ্বমুখী। সবচেয়ে দামী ফুলব্যাকদের একটা তালিকা করলে দেখা যায় ২০১৭ সালেই ১ম ১১টার মাঝে ৫টা। এর মাঝে আবার তিনটাই কিনেছেন ম্যানচেস্টার সিটির সেনাপতি গার্দিওলা। ফুটবলে টাকা উড়ানোর জন্য সিটি মালিকের বেশ একটা সুখ্যাতি থাকলেও এইবার এই ঘটনাকে ২০১৮ এর শুরুতে এসে পাগলামি বলতে নারাজ অনেক ফুটবল ভক্তই। কারণ এই পাগলামির পেছনে ছিল গার্দিওলার এক সুনিশ্চিত পরিকল্পনা। পুরনো ফুটবল খেলা আরো একটু নতুন করে উপস্থাপনই তার ইচ্ছা।

 

 

snip_20180223020927

 

 

সবচেয়ে দামী ফুলব্যাক ও তাদের দাম

 

Year

Name

Price in British (million)

Teams

2001

Lilian Thuram

23

Parma to Juventus

2008

Dani Alves

23.5

Sevilla to Barcelona

2011

Fabio Coentrao

27

Benfica to Real Madrid

2014

Luke Shaw

30

Southampton to Manchester United

2015

Danilo

23

Porto to Real Madrid

2016

Marcos Alonso

23

Fiorentina to Chelsea

2017

Benjamin Mendy

52

Monaco to Manchester City

2017

Kyle Walker

50

Tottenham to Manchester City

2017

Danilo

26.9

Real Madrid to Manchester City

2017

Davide Zappacosta

23

Torino to Chelsea

2017

Serge Aurier

23

Paris Saint-Germain to Tottenham

 

 

একটু পেছনে ফিরে গেলে দেখা যাবে ফুটবল দলে ফুলব্যাকদের রক্ষণভাগে সাহায্য করা ছাড়া তেমন কোন কাজ ছিল না। বলা যায় যারা ভালোভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণ দমাতে পারে তারাই সেন্টারব্যাক আর ফুলব্যাকের দায়িত্ব পেত। কিন্তু ট্যাকটিকসের বিবর্তনের হাত ধরে এক সময়ের অপ্রোয়জনীয় এ ফুলব্যাকরাই আজকে ফুটবল দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 

 

abK2ApsagZ 

 

 

কোনদল নিজেদের কাছে বল রেখে ছোট পাসে আক্রমণ গড়তে চাইলে সেই দলের উইংম্যানদের তাদের জায়গা ছেড়ে হাফ স্পেসে বা ক্ষেত্র বিশেষে সেন্টারে এসে পড়তে হয় নিজেদের মাঝে দুরত্ব কমানোর জন্য। অনেক ক্ষেত্রে পুরো দলই মাঠের এক পাশের উইং এর দিকে খানিকটা সরে গিয়ে নিজেদের গতিশীল পাস সচল রাখে। প্রতিপক্ষের উইংগাররা মাঝে এসে গেলে তাদেরকে মার্কিং এর দায়িত্বে থাকা বিপক্ষের ফুলব্যাক বা মাঝমাঠের উইং এর খেলোয়াড়কে ভেতরে চলে আসতে হয়। ফলে মাঠের এক পাশে বা ক্ষেত্রবিশেষে দুইপাশের উইং এ এক ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। ফুলব্যাকদের মাধ্যমে আধুনিক ফুটবলে এই ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে আক্রমণে নতুনত্ব যোগ করার মাধ্যমে সফলতা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান সময়ের নামীদামী অনেক কোচই।

 

 

ফুলব্যাকদের আক্রমণে প্রথম ব্যবহার করে নান্দনিক ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে কার্লোস আলবার্তোকে আক্রমণের কাজে ব্যবহার করে তারা। সেই বিশ্বকাপ জেতা দলের খেলাকে চিত্রায়িত করতে নিচের ছবিটি ব্যবহার করা যায়। উইংগার জার্জিনহো উইং ছেড়ে ভেতরে গিয়ে আক্রমণের সময় নিজেদের ডান উইং এ ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করত যে জায়গার ব্যবহার করত কার্লোস আলবার্তো।

 

 

 tactics-1970-629x350

 

 

নিচে থেকে এসে পেলের পাস থেকে ফাইনালে গোলও দিয়েছিলেন কার্লোস আলবার্তো। গোলটি লক্ষ করলে দেখা যাবে ব্রাজিল প্রতিপক্ষের কাছে থেকে বল নিয়ে নিজেদের বাম উইং এ খেলা চালিয়ে যেতে থাকে। বল উপরে যেতে থাকে বাম পাশের হাফ স্পেস আর উইং দিয়ে। ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ে ডান উইং। পেলে যখন ডি বক্সের বাইরে বল পায় তখন একটু সময় নিয়ে বল এগিয়ে দেয় ডান পাশে নিচ থেকে উঠে আসা কার্লোসের জন্য। দুর্দান্ত শটে গোল দেয় তখন এই রাইট ফুলব্যাক।

 

 

 

 

 

 

 

snip_20180223142958

 

 

এরপরে মঞ্চে আসে আরেক ব্রাজিলিয়ান রবার্তো কার্লোস। রক্ষণে অতটা ভালো না হওয়ায় রয় হজসনের ইন্টার মিলানে উপেক্ষিত থাকা কার্লোসকে ব্যবহার করে দেখান ফ্যাবিও ক্যাপেলো ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের রিয়াল মাদ্রিদে। ক্যাপেলো এসময় আক্রমণভাগে মাদ্রিদে তিন স্ট্রাইকার ব্যবহার করা শুরু করেন। বল যখন আক্রমণে যায় তখন স্ট্রাইকাররা হাফ স্পেস বা সেন্টারেই বল রাখার চেষ্টা করত। এসময় উইং এর ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে নিজেকে প্রমাণ করতে থাকে রবার্তো কার্লোস। সেই সময়ের ক্যাপেলো তার ডান ফুলব্যাক হিসেবে ব্যবহার করে পানুচ্চিকে। তবে কার্লোস বা পানুচ্চি যেকোন একজন একটা আক্রমণে উপরে যেতে পারত আর বাকি তিনজনকে নিচে থেকে ডিফেন্স করতে হত। পুরো মৌসুমে ক্যাপেলো তার ডায়মন্ড শ্যাপে ফুলব্যাকদের আক্রমণের কাজে ব্যবহার করে এনে দিয়েছিলেন লীগ শিরোপা।

 

 

Madrid-tactics-261x400

 

 

একই সময়ে আরো এক ব্রাজিলিয়ান যাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক হিসেবে বলা হয় কাফুও একইভাবে মাঠ কাপাচ্ছিল মিলানে। তবে শারীরিকভাবে বেশি শক্তিশালী হওয়ায় আক্রমণ আর রক্ষণ দুই জায়গাতেই সেরা ছিল কাফু। নিজের গতি দিয়ে বার বার উপরে উঠে আক্রমণ আর নিচে নেমে রক্ষণে সহায়তা করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন কাফু।সেই সময়ে মিলানের আক্রমণ পরিকল্পনা নিচের ছবি দেখলে বুঝা যায় মোটামোটি। নিজেদের পায়ে অধিক সময় বল রেখে খেলতে চাইলেই আক্রমণে ফুলব্যাকরা সাহায্য করতে পারে জন্যই মাদ্রিদ বা মিলানের মত দলরা এই ভাবে তাদের ব্যবহার করতে পেরেছিল।

 

 

milan-formation

 

 

২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল পেল রবার্তো কার্লোস আর কাফুকে একই সাথে। ফুলব্যাকদের আরেকটু ব্যতিক্রমভাবে ব্যবহার করে ব্রাজিল কোচ স্কলারি। অনেক রকমের ফর্মেশন ব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত ৩-৪-২-১ এই নিজেকে স্থির করেন তিনি। বিশ্বকাপ জেতা এ ব্রাজিল দলে ফুলব্যাকদের ভূমিকা অসাধারণ আক্রমণত্রয়ীদের জন্য বেশিরভাগ সময় আলোচনায় আসে না। 

 

 

brazil_2002_world_cup_rivaldo_ronaldo_ronaldinho-298x400

 

 

নীচে তিনজনের শক্তিশালী রক্ষণ এবং তাদের সামনে গিলবার্তোর মত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হওয়ায় নিজেদের খেলার মাঝে রক্ষণ নিয়ে চিন্তা করতে হয় নাই রোনালদো, রিভালদো আর রোনালদিনহোদের। নিজেদের মাঝে দুরত্ব কমিয়ে এবং জায়গা বদল করে বিপক্ষের সেন্টার ব্যাকদের পাগল করে দিতেন বিখ্যাত তিন আর(R)। সাথে কাফু আর কার্লোস ডিফেন্সের একটু উপরে অবস্থানের কারণে তারা আক্রমণে সেইরকম ধার যোগ করতে পেরেছিল। ক্লেবারসোনের কাজ ছিল আক্রমণে গেলে আক্রমণে সাহায্য আর বল নিচে এসে গেল রক্ষণে সাহায্য। নিচের ছবিটি দেখলে বোঝা যায় আক্রমণে ব্রাজিল কতটা চওড়া হয়ে যেত। রিভালদো আর রোনালদিনহোর ভেতরে চলে যাওয়ার ফলে উইং এ বিশাল ফাঁকা জায়গা পেয়ে উঠে আসত কার্লোস আর কাফু। ফলে আক্রমণের সুযোগও পেত বেশি বেশি।

 

 

2017-10-17_15.46.33-1-600x276

 

 

অনেক ফুটবল বোদ্ধাদের মতে ম্যারাডোনাকে ফ্রি রোল দিতে নাকি ততকালীন আর্জেন্টাইন কোচ কার্লোস বিলার্দো ২০০২ এর ব্রাজিলের মত এক ৩-৫-২ ফর্মেশনের ব্যবহার করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।

 

 

এ পদ্ধতিকে আরেকটু গুছিয়ে নিজের মত সাজিয়ে গত মৌসুমে লীগ শিরোপা এনেছেন চেলসি কোচ কন্তে। ৩-৪-৩ ব্যবহার করার ফলে আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়রা রক্ষণ নিয়ে কোন চিন্তা না করে মাঠে মাঝের অংশ ব্যবহার করে আক্রমণে যেতে পারে তেমনি উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে আক্রমণকে আরো ধারালো করতে পারে দুই পাশের ফুলব্যাকদ্বয়।

 

 

chelsea-3-4-3-600x337

 

 

উপরের ছবিতে বিগত মৌসুমে চেলসির ফর্মেশন দেখা যাচ্ছে। রক্ষণে নিচের তিনজনের সাথে মাটিচ। কান্তে মূলত বল যেখানে থাকবে সেখানে সাহায্য করতে যাবে। আর আক্রমণত্রয়ীরা নিজেদের মাঝে দুরত্ব কমিয়ে সাথে জায়গা বদল করে বল রেখে আক্রমণে যাবে। আর দুই পাশের ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করবে আলোন্সো এবং মোসেস।

 

 

alonso-and-moses-heatmaps-600x338

 

 

গত পুরো মৌসুমে মোসেস আর আলোন্সোর গড় হিটম্যাপ দেখলে বোঝা যায় কতটা প্রশস্ত করে নিজেরা উপরে উঠে আক্রমণ চালিয়েছে চেলসি।

 

 

বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত এটাকিং ফুলব্যাকদের লিস্ট উপর থেকে দেখলে বোঝা যায় যে ফুলব্যাকদের সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য উইংম্যানদের সাথে তাদের বোঝাপড়া খুব ভাল হতে হয়। উইংম্যান যখন ভেতরে ঢুকবে তখনি যদি ফুলব্যাক উপরে উঠতে পারে তাইলে আক্রমণে ধার বাড়ে ভয়াবহ। ফুটবল ইতিহাসে এই ভেতরে আসা উইংম্যান আর আক্রমণে উঠে আসা ফুলব্যাকদের সবচেয়ে ভালো বোঝাপড়ার দুইটা উদাহরণ আমরা চোখের সামনে বিগত বেশ কিছুদিন অহরহ দেখেছি। মেসি - ডানি আল্ভেস এবং মার্সেলো - রোনালদো। কত কত বার আমরা দেখেছি রোনালদো বা মেসি ফেক শট নিতে ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে আর এই সুযোগে উঠে আসা মার্সেলো বা আল্ভেসকে পাস দিয়ে দিচ্ছে শট না নিয়ে।

 

 

Marcelo-Dani-Alves

 

 

নিচের ছবিতে লক্ষ করলে দেখা যাবে মেসি ম্যানচেস্টার সিটির রক্ষণকে ভেতরে টেনে নিয়ে এসেছে ফলে উঠে এসেছে আল্ভেস। মেসি বল বের করে দিচ্ছে আল্ভেসকে। এই ছবির আক্রমণে আল্ভেস বল পেয়ে সুয়ারেজকে পাস দিয়ে দেয়। ফিনিশ করে সুয়ারেজ। তবে আধুনিক ফুটবলে এই আক্রমণে গিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল খাওয়ার রেকর্ডও আছে অনেক। যার জন্য ফ্যানদের দুয়ো শুনতে হয় মার্সেলোর মত অসাধারণ খেলোয়াড়ের।

 

 

2017-10-17_17.25.32

 

 

গার্দিওলা তার ফুলব্যাকদের ব্যবহারে আরো একটু পরিবর্তন এনেছেন। বিগত বায়ার্ন মিউনিখ আর বর্তমান সিটিতে গার্দিওলা তার ফুলব্যাকদের উপরের আক্রমণে না গিয়ে বরং মাঝমাঠে নিয়ে আসেন। ফুলব্যাকরা উপরে না উঠে মাঝমাঠে হাফ স্পেস বা সেন্টারে এসে গেলে পাসের জন্য মানুষ বাড়ে। এদেরকে মার্কিং এর জন্য প্রতিপক্ষের উইং এর খেলোয়াড়কে এসে পড়তে হয় ভেতরে। ফলে ফাঁকা হয়ে যায় উইংগাররা। নিচের ছবিতে খেয়াল করলে দেখা যাবে লাম আর আলাবা ভেতরে আসার ফলে রিবেরি আর রোবেন উপরে কিভাবে ফাঁকা হয়ে গেছে।

 

 

bayern-inverted-fullbacks-350x400

 

 

এই পদ্ধতিতে গার্দিওলা বায়ার্নের থেকে সিটিতে এসে সফলতা বেশি পাচ্ছেন স্টার্লিং আর সানের মত উইংগার পেয়ে যারা রিবেরি আর রোবেনের থেকে অধিক সরাসরি আক্রমণে যায়। বাম পায়ের সানে বাম উইং এ আর ডান পায়ের স্টার্লিং ডান উইং এ হবার কারণে খেলা অনেক প্রশস্ত করে একেবারে টাচলাইন ঘেষে চালিয়ে যেতে পারে সিটি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন গার্দিওলা চেলসির সাথে ম্যাচে। সেখানে ফুলব্যাকদের কাজ ছিল ভেতরে এসে চেলসির আক্রমণভাগের দুই পাশের খেলোয়াড়দের মার্ক করা। এ সময় উইঙ্গগাররা উপরে উঠে যাওয়ায় সিটির আক্রমণে সুযোগ বেড়ে যায় অনেক। নিচের ছবিতে লক্ষ করুন ডেলফ আর ওয়াকার কতটা ভেতরে আর সানে কতটা বাইরে। কোন উপায় না থাকায় আজপিলিপকুয়েটা সানের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে চেলসি ডিফেন্সে বিশাল ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হচ্ছে।

 

 

narrow-full-backs

 

 

কিছু পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে যে দলে ফুলব্যাকদের ভূমিকা এখন বিগত বছরগুলোর থেকে কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ন।

 

 

snip_20180223142434

 

 

উপরের ও নিচের ছবিতে বিগত বছরগুলোতে প্রিমিয়ার লীগে ফুলব্যাকদের ভূমিকার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

 

 

New Phototastic Collage

 

 

গেল মৌসুমে গোলের সুযোগ তৈরিতে প্রিমিয়ার লীগ আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফুলব্যাকদের ভূমিকা চোখে পড়ার মত। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফাইনাল খেলা রিয়াল মাদ্রিদ আর জুভেন্টাস এ দুই দলের ফুলব্যাকরাই মৌসুম জুড়ে ছিলেন আক্রমণের নিত্যসঙ্গী।

 

 

snip_20180223143100

 

 

snip_20180223143040

 

 

সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে পরিচিত পাওলো মালদিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কিন্তু রাইটব্যাক হিসেবে। পরে আরিগো সাচ্চি ডানে অন্য একজনকে সুযোগ দিতে বামে সরিয়ে আনেন। শেষ বয়সে মাঝে এসেও রক্ষণ কাঁপিয়েছেন তিনি। সর্বত্রই তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন। ট্যাকনিক্যালি এতটাই শক্তিশালী ছিলেন মালদিনি। অনেকেই মনে করেন বর্তমান সময়ের সেরাদের সাথে তুলনা করলে তার ধারেকাছেই হয়তবা কেউ যেতে পারবে না।

 

ট্যাক্টিকসে পরিবর্তনের হাত ধরে এখন আর কোন দলকেই নিচে চারজনকে রেখে ডিফেন্স করতে দেখা যায় না। এককালে রক্ষণভাগে দাঁড়িয়ে থাকা যাদের কাজ ছিল সময়ের পরিক্রমায় তারা আজ অনেক বড় বড় ফুটবল দলের প্রাণভোমরা হয়ে গেছে। একজন ফুলব্যাককে একই সাথে শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং টেকনিক্যালি অনেক দক্ষ হতে হয়। গোল ঠেকানোর থেকে আক্রমণে গিয়ে গোল দেওয়া বা দিতে সাহায্য করাই এখন ফুলব্যাকদের মূল কাজ হয়ে গেছে। বর্তমানে মাঠ কাপানো খেলোয়াড়দের তালিকা করতে গেলে অনেক ফুলব্যাকরাই এ তালিকায় উপরে উঠে আসবে নিজের যোগ্যতা বলে। তাই তো ফুটবল মাঠের এ অপরিহার্য অঙ্গের দাম এখন এতটা ঊর্ধ্বমুখী।