• ফুটবল

হবে কি জিরোনা রূপকথা?

পোস্টটি ৪২৪৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এই সিজনে লা লিগাতে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো প্রথমবারের মতো লা লিগা খেলয়ে আসা স্পেনের কাতালান ক্লাব জিরুনা এফসি। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাব প্রায় ৮৭ বছর পর লা লিগাতে খেলার সুযোগ পায়।

এখন একটু পিছে ফিরে যাই। ফিরে যাই জিরুনা ক্লাব প্রতিষ্ঠাতে।

কাতালুনিয়ার ছোট একটি পৌরসভা জিরুনাতে আর্থিক সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যে ওই পৌরসভার মেয়র একটি ফুটবল ক্লাব তৈরি করেন। সেই বছরই কাতালুনিয়া চ্যাম্পিয়নশীপে খেলা শুরু করে জিরুনা এফসি। ক্লাব তৈরির পর জিরুনা পৌরসভার আর্থিক সমস্যা আস্তে আস্তে দূর হলেও কোন সাফল্য পাচ্ছিলো না ক্লাবটি। তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিলো সেগুন্ডা ডিভিশ্যন বা সেকেন্ড ডিভিশ্যান। তার উপর মরার উপর খাঁড়া ঘাঁ হয়ে আসে স্পেনের গৃহযুদ্ধ। ফলে বেশ কয়েকবছর জিরুনা এফসি কোন অফিশিয়াল ম্যাচ খেলতে পারেনি। ১৯৪৫ কি ৪৬ সালে আবার খেলা শুরু করে জিরুনা। আবারও সেই সেকেন্ড ডিভিশনে। আর তারা কখনো রেলিগেইটেড হয়ে চলে যায় থার্ড ডিভিশনে কখনো আবার কখনো প্রমোট হয়ে উঠে আসে সেকেন্ড ডিভিশনে। সবচেয়ে খারাপ সময় আসে ১৯৮০তে। ১৯৭৭ সালে সেকেন্ড ডিভিশ্যনকে দুইভাবে ভাগ করার পর সেকেন্ড ডিভিশ্যন এ তে আর খেলা হয়নি জিরুনার। সেগুন্ডা বি আর থার্ড ডিভিশ্যনেই কেটে যায় তাদের সময়।

২০১০ এ জিরুনার একদল ব্যবসায়ী ভাবলেন এইভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না প্রাণের ক্লাবটিকে। যেকরেই হোক তুলতে হবে সেকেন্ড ডিভিশ্যানে। এই উদ্দেশ্যে র‍্যামন ভিলারো, জোয়াকিম বোয়েডাস ও জোসেফ স্লিম নামের তিনজন ধর্না দেন ক্লাবের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট জোসেফ গুসো এবং জোসেফ রোফেসের দরজায়। তারাও রাজি হলো ওই তিন ব্যবসায়ীর প্রস্তাবে। কিনে নেন জিরুনা ক্লাবের ৭২% শেয়ার। তারপর জনাব ভিলারো হন ক্লাবটির নতুন প্রেসিডেন্ট, নিয়োগ দেন জিরুনার সাবেক কোচ অ্যাগ্নিকে। ২০১১ সালেই তৈরি করা হয় নতুন টিম, সফলতা এসেছিলোও। সুযোগ পেয়ে যায় সেকেন্ড ডিভিশ্যনে খেলার। তারপর থেকে ক্লাব স্বপ্ন দেখা শুরু করে লা লিগাতে খেলার। ২০১২তে রিক্রিয়েতিভো ক্লাবের কাছে হারার কারণে চাকরিচ্যুত করা হয় এগ্নিকে। ২০১৩ সালে পরিবর্তন আসে ক্লাবের বোর্ড অভ ডিরেক্টরে, পরিবর্তন আসে কোচের। নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পাবলো মাশিনকে। এই পরিবর্তনটাই সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে ক্লাবের।

২০১৪-১৫ সিজনের জিরুনার শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচে নিজেদের মাঠেই খেলতে আসে লিউগো। লিউগোকে নিজেদের মাঠে হারাতে পারলেই স্বপ্নের লা লিগাতে সরাসরি সুযোগ পাবে জিরুনা। ৮৯মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়েও ছিলো জিরুনা। ডাগআউট পাবলো আর বেঞ্চে খেলোয়াড়রা লা লিগার স্বপ্ন দেখছিলো তখনই ঘটলো অঘটন! ডিফেন্ডারের ভুলে বল নিজেদের জালে! কি আর করা খেলতে হবে প্লে অফ! প্লে অফের সেমিতে রিয়াল জারাগোজার কাছে ৩-০ হেরে স্বপ্ন ভাঙ্গে জিরুনার। পরের সিজনেও একি। প্লে-অফে হেরে বসে ওসাসুনার কাছে।

২০১৬-১৭ সিজন। এইবার আর ভুল নয়। সেগুন্ডা ডিভিশ্যানে সেগুন্ডা (সেকেন্ড) হয়েই সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়ে যায় স্বপ্নের লা লিগায়!

ইতিমধ্যে জিরুনার উপর চোখ পড়ে ম্যানচেষ্টার সিটি, নিউ ইয়র্ক সিটি, মেলবোর্ন সিটির মালিকপক্ষ "সিটি ফুটবল গ্রুপ" এর। কিনে নেয় জিরুনার ৪৪.৩% শেয়ার আর ৪৪.৩% থাকে বার্সার কিংবদন্তি খেলোয়াড় ও সাবেক কোচ, ম্যান সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার ভাই পেরে গার্দিওলা পরিচালিত "জিরুনা ফুটবল গ্রুপ" এর। এরপর ম্যান সিটি থেকে বেশ কিছু খেলোয়াড়কে আনা হয় জিরুনাতে।

প্রীতি ম্যাচে ম্যান সিটিকেও হারায় জিরোনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে মাদ্রিদের কোন ক্লাব হারাতে পারেনি জিরুনাকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে করে ২-২ গোলে ড্র আর লেগানেসের সাথে ০-০ ড্র, হেতাফেকে হারাই ১-০ গোলে আর রিয়াল মাদ্রিদকে হারায় ২-১ এ!

২৪ ম্যাচে ৯ জয়, ৭ ড্র আর ৮ হারে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৮ নাম্বারে আছে জিরুনা। স্ট্যাটসটা আহামরি না, তবে চোখ যখন পড়েছে শেখ মনসুরের, রুপকথা তৈরিতে সময় বেশি লাগবে বলে মনে হয় না।

 অপেক্ষায় আছি লেস্টার সিটি, লেইপজিগের মতো জিরুনা রুপকথার। হবে কি সেই জিরোনা রূপকথা?