• ফুটবল

জোসে মরিনহোঃ দ্য স্পেশাল ওয়ানের উত্থান এবং পতন

পোস্টটি ৬২৩৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এক সময়ে প্রতিদিন খবরের কাগজে বড় করে ছবি আসা স্বঘোষিত স্পেশাল ওয়ান জোসে মরিনহো বর্তমানে খবরে আসেন কালে ভদ্রে। তাও নিজের সেই আগের রূপে না। সেই দাম্ভিক, দৃঢ় প্রত্যয়ী, নিজেকে সেরা বলে দাবি করা এবং তার প্রমাণস্বরূপ একগাদা ট্রফি বা জয় নিয়ে আসা জোসে মরিনহোকে অন্য কেউ মিস করে কিনা তা আমি জানি না তবে ফুটবল নিঃসন্দেহে মিস করে এই মানুষটির সরব উপস্থিতিকে।

 

 

মনে আছে কি সেই ন্যু ক্যাম্পে ইন্টার মিলানের হয়ে বার্সেলোনাকে হারিয়ে মাঠে দৌড়ে সেলিব্রেশন করার দৃশ্যটি?

 

 

 

 

মরিনহোর জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মাঝে অন্যতম এটি। অনেকের কাছেই এই সেলিব্রেশন অপছন্দ। তবে তাঁর জীবনের পূর্বের ঘটনাপ্রবাহ আপনি কিভাবে দেখছেন তার উপর নির্ভর করে এই দৌড়কে আপনি প্রতিশোধ বলবেন নাকি দাম্ভিকতা। তবে মরিনহোর দৃষ্টিকোণ থেকে বোধকরি প্রতিশোধ সঠিক শব্দ। ২০০৮ সালে মরিনহোর হাতে আসার কথা ছিল বার্সেলোনার দায়িত্ব। অনেকেই বলে থাকেন মরিনহো নিজের দল কিভাবে চালাবেন এমন একটি পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন। তার ইন্টারভিউ নেন সে সময়ের বার্সা প্রেসিডেন্ট লাপোর্তা। এরপরে মরিনহোর দেখা করার কথা ক্রুইফের সাথে যিনি সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করবেন বার্সার কোচ ব্যাপারে। বাকিটা তো আমরা সবাই জানি। মরিনহোর হৃদয় ভেঙ্গে এবং তাঁর দৃষ্টিতে তাঁকে অপমান করে বার্সেলোনার কোচ হয়ে আসেন গার্দিওলা।

 

 

সেই বার্সেলোনা বনাম ইন্টার মিলানের দ্বিতীয় লেগ নিয়ে বিশিষ্ট ফুটবল অ্যানালিসিস্ট মাইকেল কক্স লিখেছিলেন,

“মরিনহোকে নিয়ে যে এত এত আলোচনা তা মাঝে মাঝে বিরক্তিকর। আবার মাঝে মাঝে মরিনহো তাঁর কাজ দিয়ে প্রমাণ করে দেন এই আলোচনা তাঁরই প্রাপ্য। আজ রাতে দ্বিতীয় ঘটনাটিই ঘটেছে। এত সুন্দর করে রক্ষণাত্মকভাবে গুছিয়ে নিজের দলকে সমসাময়িক সময়ে কেউই পরিচালনা করতে পারে নাই।”

 

 

প্রায় ৭ বছর আগে যখন এই বিখ্যাত সেলিব্রেশনের ঘটনা ক্যাম্প ন্যুতে ঘটে তখন পুরো ফুটবল বিশ্বের অঘোষিত ঈশ্বর বার্সেলোনা। কেউই জানে না বার্সেলোনার সামনে কিভাবে দাড়াতে হবে, কি করলে তাদের সেই অস্বাভাবিক ফুটবলকে মাঠে দমানো সম্ভব হবে। যেন সেই ঈশ্বরকে প্রতি উত্তর দিয়েছিলেন সেই রাতে মরিনহো। এমনভাবে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন যা পুরো ফুটবল বিশ্বকে এখনো অবাক করে।

 

 

শত সহস্র সমালোচনা, বিনয়ের অভাব এবং প্রতিনিয়ত অতিনাটকীয় ঘটনার জন্ম দেওয়া সত্ত্বেও কোচ মরিনহোকে আমি ভালবাসি। তিনি পারেন তাঁকে দেওয়া যেকোন দায়িত্ব সম্পন্ন করতে। তাঁর চাতুর্যের সাথে অসাধারণ ফুটবল জ্ঞান মিলে এমন এক পাগলাটে কোচকে ফুটবল বিশ্ব পেয়েছে যা আর কখনো আসবে কিনা সন্দেহ। গতবছর মাঠে খুব খারাপ খেলেও তিনটি শিরোপা জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউরোপা লীগকে সামনে রেখে এগিয়ে ক্রুইফ মতবাদের আয়াক্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নিয়ে এসেছেন দলকে।

 

 

আমি অবশ্যই মরিনহোর ভক্ত, তবে এও ঠিক যে অন্ধ ভক্ত নই। এবছর ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল আর চেলসির সাথে যে ভয়াবহ ফুটবলের প্রদর্শন করেছেন মরিনহো তাতে বলাই যায় গার্দিওলার ফুটবল দর্শন মনে হয় মরিনহোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। মরিনহোর উপস্থিতি ছিল ফুটবলে। তাঁর দর্শনকে বীরের বেশে একটা সময় বরণ করে নিয়েছিল প্রায় সবাই। কিন্তু নতুনত্বের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময় মাঠ ও মিডিয়া কাঁপানো দ্য স্পেশাল ওয়ান আর তাঁর ফুটবল দর্শন।

 

 

মরিনহো আর তাঁর দল সব সময়েই প্রতিক্রিয়াশীল। ক্রুইফ মতবাদের বিশ্বাসী অধিকাংশ ফুটবল ভক্তই ব্যক্তি মরিনহো বা তাঁর দর্শনকে পছন্দ করে না। তাদের ধারণাটা এমন যে যেখানে সৌন্দর্য নেই এবং যেখানে ফুটবল প্রতিক্রিয়াশীল তা প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ করে না। আমি মনে করি কোন নির্দিষ্ট মতবাদে না এগিয়ে বরং প্রতিপক্ষ দেখে নিজেদের সাজানোর মাঝেও সৃজলশীলতা আছে আর এভাবে মরিনহো বেশ শক্তিশালী দলও তৈরি করে দেখিয়েছেন।

 

 

২০০৪ সালে মরিনহো যখন আসলেন চেলসিতে তখন বিশ্ব শাসন করছে স্প্যানিশ আর ইটালিয়ান লীগ। বিগত ৫০ বছরেও চেলসি প্রিমিয়ার লীগ জিতে নাই। আর্সেনালের অসাধারণ দল নিয়ে আর্সেন ওয়েংগারের শেষ ভাল কিছু সময়, ম্যানইউতে রুড ভ্যান নিস্টলরয়ের সাথে উঠতি কিছু বালক আর খুব শক্তভাবে ৪-৪-২ এর গ্যাড়াকলে আটকা পুরো ইংল্যান্ড।

 

 

৪-৪-২ এর সীমাবদ্ধতা বুঝে নিয়ে মরিনহো নিয়ে আনলেন ৪-৩-৩ এর এক চেলসিকে। মাঝমাঠকে করে ফেললেন সংকুচিত আর আক্রমণকে করলেন দুই পাশে প্রসারিত যেটা আগের মৌসুমেই তিনি পোর্তোতে নিয়ে এসেছিলেন। অসাধারণ প্রতিভাবান কোন দল না নিয়ে বরং এক গড় দল হিসেবে পরবর্তী দুই বছর চেলসি মোটামোটি শাসন করেছিল পুরো প্রিমিয়ার লীগ। অসাধারণ হাই প্রেশার দিয়ে পুরো ম্যাচের গতি নিজেদের হাতে নিয়ে আর দুর্ধর্ষ সব কাউন্টার অ্যাটাক করে সবাইকে নতুন এক ইংলিশ ফুটবল উপহার দেন জোসে মরিনহো।

 

 

মরিনহো এই যে ৪-৩-৩ কে ইংল্যান্ডে এত সুন্দর করে উপহার দিয়েছিলেন তা কিন্তু তিনি আগে থেকে বুঝে শুনেই করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি একবার বলেছিলেন,

“মাঝমাঠে তিনজনের এক ত্রিভুজ থাকলে তা সর্বদা মাঠের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে রৈখিক চারজনের বিপরীতে আপনাকে একটা বেশি মানুষের সুবিধা দিবে।”

 

নিচের ছবিটি খেয়াল করুন। কালো বক্সের মাঝে লাল দুজনের বিপরীতে চেলসির তিনজন। উপরের দুজনকে মার্ক করতে গেলে ম্যাকালেলে ফ্রি থেকে বল পাঠাতে পারে সামনে। ঠিক তেমনিভাবে ম্যাকালেলেকে মার্ক করতে গেলে অন্য একজন ফাঁকা হয়ে পড়ে। ভেঙ্গে বললে মাঝমাঠ চেলসির হাতে পুরোপুরি।

 

 

Sketch

 

 

মরিনহোর চেলসি সময়ের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ২০০৬ সালে ফার্গুসনের ইউনাইটেডকে ৩-০ গোলে হারিয়ে লীগ নিশ্চিত করার ম্যাচটি।

 

 

 

 

আরো একটি উদাহরণ ২০০৫ সালে রোনালদিনহোর বার্সেলোনার সাথে ৪-২ গোলের জয়টি। সেখানে ছিল প্রতিপক্ষভেদে নিজের দলকে বদলে কিভাবে সেরাটা বের করে আনতে পারেন জোসে মরিনহো তাঁর উদাহরণ। সেদিন মরিনহো দেখিয়েছিলেন যতই প্রতিভাশালী হোক ভাল পরিকল্পনা আর তার মাঠে বাস্তবায়ন করে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। রীতিমত বার্সেলোনাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল চেলসি। শুরু থেকেই বাতাসে আর মাঝমাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় চেলসি, বার্সার পাসকে করে ফেলে বিভ্রান্ত সাথে বারবার প্রতি আক্রমণে ভয়ংকর চেলসি।

 

 

 

 

অসাধারণ কোন ফুটবল খেলে কিন্তু ম্যাচ জিতে নাই চেলসি বরং দলভেদে তাদের প্রতিক্রিয়াশীল ফুটবল অসাধারণভাবে বাস্তবায়ন করে জয় ছিনিয়ে এনেছিল। প্রতিটা খেলোয়াড় কি করতে হবে জেনে মাঠে নির্ভীকভাবে নেমে নিজেদের কাজ পুরোপুরি করে আসতে পেরেছিল জন্যই জয় এসেছিল তাদের ঘরে। সবাই এটা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে সে সময় চেলসি ছিল ইংল্যান্ডে সেরা আর বাকি লীগগুলোর মাঝে অন্যতম সেরা।

 

 

গত দু বছরে চেলসি ছাড়া মরিনহো আর কারো বিপক্ষেই সেরকম আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে তার বর্তমান দল ইউনাইটেডকে মাঠে নামিয়েছেন কিনা এ ব্যাপারে আমি শংকিত। আমি টিকিটাকা বা কোন পজেশন ফুটবলের কথা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি সেই মরিনহোর কথা যার রিয়াল মাদ্রিদে এসে প্ল্যান ছিল এল ক্ল্যাসিকোতে যাই হোক বাকি সব ম্যাচ জিতে গেলে লীগ জেতা সম্ভব। আর তিনি করে দেখিয়েছিলেনও। জিততে হলে তো আক্রমণ করতে হবে, গোল করে আসতে হবে যা মরিনহো করে দেখিয়েছিলেন কিন্তু কই হারিয়ে গেল এখন সেটা। আমি সেই মরিনহোর কথা বলতেছি যে কিনা পোর্তো, চেলসি বা ইন্টার মিলানকে নিয়ে বল প্রতিপক্ষের পজেশনে রেখেও পুরো ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে এসেছে। ২০১০ এ তো ইন্টার মিলান বার্সার জালে তিন গোল দিয়েছিল তাদের প্রতিক্রিয়াশীল ফুটবল খেলেই।

 

 

সেই সময় মরিনহো মাঠে নির্ভয়ে নামতেন। এখন কেন জানি না মনে হয় মাঠে নামেন ভয় নিয়ে। দেখে মনে হয় নিজের খেলোয়াড়দের আগে যেই বিশ্বাসটা করতেন মরিনহো তা এখন আর পান না। সেই মরিনহো যে নিজের দলের পছন্দের খেলোয়াড়কে মিডিয়ার সামনে আগলে রাখতেন, সেই মরিনহো এখন কেন জানি না মনে হয় সাহস পান না ভরসার হাতটা তাদের কাঁধে রাখতে। আমি বিশ্বাস করি, এখনো মরিনহো পারেন দুর্দান্ত ফুটবল খেলা এই সিটিকে আটকিয়ে দিতে। কিন্তু এটার জন্য দরকার সেই মরিনহোকে যে মাঠে খেলোয়াড়দের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পুরোপুরি নির্ভার হয়ে মাঠের পাশে বসে থাকতে পারেন। তবে কি এখনকার স্কোয়াডের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন মরিনহো নাকি অসাধারণ ফুটবল বিষয়ে জ্ঞানী এই মানুষটি হঠাত ফুটবল ভুলে গেল। বড় ম্যাচে জিতে আসবেই এমন মরিনহো গেলেনই বা কই!

 

 

এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য গার্দিওলা। যে রকমের ফুটবল দর্শকদের উপহার দিয়ে যাচ্ছে তাঁর দল তাতে বলাই যায় ক্রুইফজমকে চ্যালেঞ্জ জানানো মরিনহো যদি নতুন কিছু নিয়ে, নতুন উদ্যমে মাঠে না ফিরেন তবে শেষ পর্যন্ত নিজের দর্শন নিয়ে জিতেই যাবেন গার্দিওলা। কারণ সুন্দর ফুটবল দিয়ে জয় এসে গেলে তা ইংলিশ দর্শকরাও পছন্দ করে। এর উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যায় ২০০৩ এ রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে হ্যাট্রিক করা রোনালদোকে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল পুরো ওল্ড ট্র্যাফোর্ড।

 

 

 

 

অনেকের মনেই সন্দেহ ছিল গার্দিওলাকে নিয়ে যে ইংল্যান্ডে এসে নিজের দর্শনকে কি আদৌ মেলে ধরতে পারবেন কিনা তিনি। কিন্তু সিটির সকলের গার্দিওলার প্রতি আত্মসমর্পণ আর গার্দিওলার নিজস্ব প্রতিভা দিয়ে মাঠে সকল খেলোয়াড়ের মানোন্নয়নই বলে দেয় ইংল্যান্ড সামনে কোন দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবে। টানা ১৮ ম্যাচ জেতার থেকেও বড় কথা কারো কাছে এখনো কোন উত্তর নেই যা দিয়ে মাঠে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে সিটিকে।

 

 

মরিনহো কি তাঁর দলের খেলোয়াড়দের রাতারাতি পরিবর্তন করে দেখাননি? মাইকন, স্নাইডার, ল্যাম্পার্ড, ম্যাকালেলে, লুসিও, মাইকেল এসিয়েন, হুলিও সিজার আরো কত কত মানুষকে স্টার বানিয়েছিলেন স্পেশাল ওয়ান। ল্যাম্পার্ড একবার বলেছিল যে যখন মরিনহো আসেন চেলসিতে তখন চেলসির খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ২৪-২৫। মরিনহো সবাইকে ডেকে বলল আমরা অনেকদিন কিছু জিতি নাই কিন্তু এবার জেতা শুরু করব। সবার উত্তর ছিল, “ইয়েস বস, অফ কোর্স বস”।  তবে আমাদের মাথায় এটাও রাখা উচিত অনেক খেলোয়াড় কিন্তু মরিনহোর সাথে কাজ করতে এসে হারিয়েও গেছে। কাকা, সালাহ, কোয়াদ্রাদোসহ আরো বেশ কিছু নাম খোজ করলে পাওয়া যাবে।

 

 

আজকের ইউনাইটেডের কতগুলি খেলোয়াড় মরিনহোর প্রতি ল্যাম্পার্ডরা যেরকম অনুগত ছিল সেরকম অনুগত? যদিও হেরেরা বা লিংগার্ড মরিনহো আসার পড়ে বেশ উন্নতি করেছে তবুও উত্তরটা মনে হয় শুন্য।আরো কিছু প্রশ্ন এসে যায় যার উত্তর আমার জানা নেই। পল পগবার মত একজন অস্বাভাবিক প্রতিভাধর খেলোয়াড় কি পারবে না সিটির মত ফুটবল খেললে তাঁর সাথে তাল মিলাতে কিংবা হুয়ান মাতা কি পারবে না সিটির হয়ে সিলভা যে  কাজ মাঠে বাস্তবায়ন করে তা ইউনাইটেডে করতে? র‍্যাশফোর্ড বা মার্শাল কি পারবে না ইউনাইটেডের জয়রথকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিতে? 

 

 

মরিনহোকে এমনভাবে বার্সেলোনা আঘাত করেছিল যে ক্রুইফজমকে মরিনহো কখনোই সামনাসামনি একবিন্দুও ছাড় দেন নাই। এমনকি আয়াক্সের বিপক্ষে জিতে গত মৌসুমে মরিনহো বলেছিলেন, “এ জয় বাস্তববাদীদের জয়। যারা অন্যের দুর্বলতাকে খুঁজে আঘাত করতে পারে এ জয় তাদের। কবিরা ফুটবলে শেষ পর্যন্ত পারেন না।” গার্দিওলা কিন্তু পারেন নাই ট্রফির হিসেবে জার্মানীতে সফল হতে। পারবেন কি ইংল্যান্ডে?

 

 

মরিনহোর দর্শন কাজে লাগিয়ে ক্রুইফজমকে চুড়ান্ত অপমান করেছিল বায়ার্ন। ইয়ুপ হেইংকস যে বায়ার্ন নিয়ে বার্সাকে ৭-০ গোলে দুই লেগ মিলিয়ে অপমানের শেষ সীমানায় নিয়ে গিয়েছিল সেই বায়ার্নের দর্শন ছিল কিন্তু মরিনহোর দর্শন (১ম ২০ মিনিট হাই প্রেশার আর জলদি জলদি কাউন্টার)। এইভাবেই মরিনহো তাঁর মাদ্রিদকে সাজিয়েছিলেন যদিও বায়ার্নের খেলোয়াড়েরা যেভাবে মাঠে তার বাস্তবায়ন করেছিল তা পুরোপুরি করতে পারে নাই মাদ্রিদ কিন্তু তবুও সেই বার্সা আধিপত্য কিন্তু বার বার বাধা খেয়েছে একমাত্র মরিনহো আর তাঁর দর্শনের কাছেই।

 

 

 

 

গত দুবছরে মরিনহো যা দেখাতে পারেন নাই হেইংকস তাই করে দেখিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন তাঁর নিজের খেলোয়াড়দের উপরে। হেইংকস ছিলেন মাঠে নির্ভীক, সাহসী। তাঁর ফলও তিনি পেয়েছিলেন। যদিও তাঁর দর্শন ছিল মরিনহোর দর্শন কিন্তু সাথে তিনি আরো এমন কিছু করে দেখিয়েছিলেন যা করতে পারে নাই মরিনহো বিগত দুই মৌসুমে। যা মরিনহো করে দেখাতেন সেই শুরুতে হরহামেশাই।

 

আমি আবারো সেই ভয়ংকর আত্মবিশ্বাসী, অত্যন্ত রূঢ়, দৃঢ়প্রত্যয়ী মরিনহোকে মাঠের পাশে দেখতে চাই। যার সামনে সর্বকালের সেরা বলে কেউ নাই। যিনি যে কারো দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা দিয়ে জয় নিয়ে ফিরে আসতে পারেন। আবারো অবাক হতে চাই এই অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষটির পাগলামিতে।