• ক্রিকেট

সুপারম্যান সমীপে

পোস্টটি ১০৬৯৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

পত্র মিতালীর যুগ গত হয়েছে সেই কবে! তারপরও পত্রের আবেদন খুব একটা কমেছে বলে মনে হয় না। নইলে এই এসএমএস, মেইলের যুগেও এত ঘটা করে আপনাকে পত্র লেখা কেন! অবশ্য আপনার আর আমার মাঝে ‘পত্র মিতালী’ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, তবে প্রেরক হতে তো বাঁধা নেই।

প্রাপক পেল কি পেল না, সে ভাবনা আপাতত তোলা থাক। এই অধম তো পত্র মিতালীর প্রথম পদক্ষেপ রাখতে পেরেই খুশী।

 

আপনাকে আমরা যে ‘সুপারম্যান’ বলি, সে আপনি জানেন নিশ্চয়! অথচ প্রথম যখন আপনাকে দেখি, আমার স্পষ্ট মনে আছে, আপনি তখন লিকলিকে একজন তরুণ। নাকের উপর চুনের প্রলেপ, স্বভাবে আপাত শান্ত-ধীরস্থির।

আপনার যেমন ছোট্ট একজন বোন আছে, তেমনি আছে আমারও। ছোট বোনটাকে শিষ্য বানিয়ে, তার সামনে রাজ্যির যত ক্রিকেটজ্ঞান জাহির করা আমার পুরনো অভ্যাস। কেন জানি না, সেই লিকলিকে তরুণকে দেখে ছোট বোনকে বললাম, ‘ইনি বাংলাদেশে না জন্মে যদি অস্ট্রেলিয়ায় জন্মাতেন ভালো হতো!’ আপনার শুভাকাঙ্খী ছিলাম নিশ্চিতই। মনে হতো হয়তো আপনি যথাযথ সমাদর পাবেন না আমাদের কাছ থেকে! তবে আমি যে ভুল ভেবেছিলাম, তা স্বীকার করতে এখন বিন্দুমাত্র বাঁধে না আমার।

আমাদের ক্রিকেটের শত বছরের ভাগ্য যে আপনাকে পেয়েছি, আপনি এই দেশে জন্মেছেন।

 

এস, ইউ, পি, ই, আর, এম, এ, এন... আটটি অক্ষরের কি অসম্ভব শক্তিশালী একটা শব্দ! এই আট অক্ষর যে আপনার নামের পাশে বসাই, আমরা কি খুব বাড়াবাড়ি করি? আপনি কি সত্যিই এই শব্দটির উপযুক্ত? আপনার কি সত্যিই সুপারম্যানশীপ পাওয়ার আছে?

আজ তাহলে আসুন, আপনার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলি। টেস্টের মতো ধৈর্য্য রাখতে হবে কিন্তু, মাঝপথে উঠে যেতে পারবেন না! আপনার একজন অনুরক্ত হিসেবে একটু আবদার করে ফেললাম, সীমা ছাড়িয়ে গেলে নিজগুণে ক্ষমা করবেন। কেমন!

 

এস ফর সুপারহিউম্যান যদি হয়, আপনার কি সুপারন্যাচারাল পাওয়ার আছে? আপনি কি ভাবেন জানি না, আমাদের মনে হয় আছে।

মিরপুরে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৬৯ বলে ৯২ রানের কথা মনে আছে আপনার? সেই ইনিংসটাকে কি সাধারণ মানবিক ইনিংসে অভিহিত করা যায়? কিংবা পাল্লেকেলেতে বিশ্ব টি টুয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৪ বলে ৮৪? অথবা ইংল্যান্ডে গিয়ে ওল্ড ট্রোফোর্ডে যে পিটারসেন আর ইয়ান বেলকে যে দুটো ফ্লাইটে বোকা বানালেন? সেঞ্চুরীয়নের ডি ভিলিয়ার্স আর ক্যালিসকে আউট করা ডেলিভারীগুলো মনে আছে আপনার? একটা পাশ থেকে বোলিং করে যেভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারালেন, এসবকি শুধু ‘হিউম্যান’ হলে সম্ভব? আপনার ‘সুপারহিউম্যান’ শক্তিমত্তা সম্পর্কে আমাদের কোনো সংশয় নেই, আপনার আছে কি?

 

খুব বিরক্ত হচ্ছেন বুঝি! এভাবে কি প্রমাণ করতে চাইছি আমরা? ঠিক জানি না, কি প্রমাণ করতে চাইছি। তবে আপনাকে ‘সুপারম্যান’ হিসেবে ভাবতেই আমাদের ভালো লাগে।

আচ্ছা, তারপর এগোয়। ইউ ফর আনস্টপেবল। আপনাকে কে কবে ‘স্টপ’ করতে পেরেছে? আপনি তো দূর্বার গতিতে অপ্রতিরোধ্য বেগে এগিয়ে চলেছেন। এই তো গত জুনের কথা, কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কি ইনিংসটাই না খেললেন! ঢাকার মাঠে ইংল্যান্ডের জাফর আনসারীকে ইমরুলের ক্যাচ বানানোর পর আপনার দৌঁড়টা কি ভোলা যায়? ওয়েলিংটনেও তো ২১৭ দৌঁড়ের পথে একবারও প্রতিরোধ্য ছিলেন না। নিউজিল্যান্ডকে একা হাতে চার ম্যাচে যে হোয়াইটওয়াশ করেছিলেন, সেখানে প্রতিপক্ষ এত এত হোমওয়ার্ক করার পরও কি আপনাকে থামাতে পেরেছিল? সেইন্ট জর্জ’স-এ ৯৭ বলে অপরাজিত ৯৬ করার পথে আপনাকে কেউ কি রুখতে পেরেছিল? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষ মাস দুয়েকের ব্যবধানে দ্রুততম দু-দুটো সেঞ্চুরীর সময়টাতেও তো অবিশ্বাস্য বেগে দৌঁড়ুচ্ছিলেন!

আপনি তাই আনস্টপেবল ছিলেন, এবং আছেনও!

 

পি ফর প্যাশোনেট। এর ব্যখ্যা কি দেয়ার দরকার আছে? ক’দিন আগেই না ‘চলে আয়’ কান্ড ঘটালেন। পরে নিজেই তো বলেছিলেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার দরকার ছিল। তাহলে ওই সময়টাতে অমন করার ব্যখ্যা কি? আপনি, খেলাটার প্রতি প্রচন্ড প্যাশোনেট! এই তো?

মুশফিকুর রহীমকে জড়িয়ে ধরে যে ঠোঁট চাপা কান্নায় পুরো দেশ কাঁদিয়েছিলেন, মনে আছে আপনার? মুস্তাফিজ-ধোনী ধাক্কা কান্ডের পর, ধোনীকে আউট করে অমন তেড়েফুঁড়ে দৌঁড়টাই বা কেন? আপনি নিরাসক্ত, উদাসীন, নির্বিকার ভাব যতই দেখান না কেন, আমরা জানি আপনি কতটা আবেগপ্রবণ! নিষেধাজ্ঞার সময়গুলোতে প্রিয় জায়গা হতে দূরে থেকে কত কষ্ট পেয়েছেন, তাও আমাদের অজানা নেই।

তাই ক্রিকেট মাঠে জীবনের জন্য যদি কাউকে বেছে নিতে বলা হয়, আমরা আপনাকেই নেবো। কারণ, আমরা জানি, আপনি আবেগী। আপনি বোঝেন আমাদের আবেগও।

 

ই ফর ইগোসেন্ট্রিক। সত্যি? আপনি অহংকারী? আত্মকেন্দ্রিক? অনেকে যে অর্থে আপনাকে অহংকারী ভাবে, আত্মকেন্দ্রিক ভাবে, সে অর্থে না হলেও, আপনি তো অহংকারীই। নয় কি?

আপনার সামর্থ্যে আপনার অগাধ আস্থা, এটা কি অহংকার নয়? নিজের সামর্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কি আপনার একটু দম্ভ নেই? নইলে ১০/৩ অবস্থায় ক্রিজে এসে অমন পালটা আঘাত হানেন কোন বলে? অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কথা বলে নিজেই সব বন্দোবস্ত করেন কোন শক্তিতে? ২৬১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেও, নির্ভয়ে ১১৭ বলে ৯৭ রান করার উৎসমূল কোথায়? কেউ সেঞ্চুরীর পর পাঁচ উইকেটের কথা কানে তুলে দিলে, তা স্বার্থক করার চিন্তা আসে কোত্থেকে?

হ্যাঁ, আমরা বিশ্বাস করি আপনি ইগোসেন্ট্রিকই। সেজন্যেই আপনি উঠেছেন অমন ‘সুপারম্যান’ উচ্চতায়। সেরাদের সেরা হতে হলে যে কিছুটা ইগোসেন্ট্রিক হতেই হয়!

 

এস, ইউ, পি, ই গেল। আপনার ‘সুপারম্যান’ মাহাত্ম্য বর্ণনার চারটি অক্ষর বাকী আছে আরও। বিরক্ত হচ্ছেন? জ্বি হ্যাঁ, সুপারম্যানদের এই ধরণের এক-আধটু অত্যাচারও সহ্য করতে হয়ে বৈকি!

 

আর ফর রেসপন্সিভ। আপনার মতো এতো দ্রুত প্রতিক্রিয়া আর কেউ কি দেখাতে পারেন? কলম্বোর পি সারা ওভালে শততম টেস্টে, ১১৬ করার পথে, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ কত দ্রুত দেখিয়ে দিয়েছেন! আগের সন্ধ্যায় যার ব্যাটে বন্য উন্মত্ততা, সেই তিনিই পরদিন সকালে কতই না শান্ত! আগের রাতেই যারা আপনার মুন্ডুপাতে ব্যস্ত ছিলেন, সেই তাঁরাই তখন আপনার মুন্ডুর কত দাম তাই নিয়ে তর্কে লিপ্ত! নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে সেঞ্চুরী আর দশ উইকেটে বোথাম, সোবার্সের পাশে যে নাম লেখালেন, বা ওয়ানডেতে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই যে ৯৯ বলে ১০১ করলেন, এসব কি প্রমাণ করে না, দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রকাশে আপনার ব্যাট আর বল কত বেশী পারঙ্গম?

আপনাকে আমরা দেখি ‘রেস্পন্সিবল’ রুপেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে ১৪৪ করার পথে সংযমের কোন সুউচ্চ চূড়ায় যে উঠেছিলেন! অথবা পাকিস্তানের বিপক্ষেই মুলতানের ১০৮, ১০৯/৮ থেকে যে দলকে পার করিয়েছিলেন ২০০’র কোটা! ক্যারিয়ারের সূচনায়, ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংসটা কি রেসপন্সিভ আর রেসপন্সিবল, দুটোই আপনার নামের পাশে যুক্ত করছে না?

 

এবার একটি কুইজ। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে ভুল বোঝা ব্যক্তিটির নাম কি? মুচকি হাসছেন নিশ্চয়? হ্যাঁ, উত্তরে আপনার নামই আসবে।

এম ফর মিসকনসিভ। আপনাকে আমরা বা বাংলাদেশ ক্রিকেট কত ভাবেই না ভুল বুঝেছি! আপনার সব কিছুতেই সমস্যা দেখেছি আমরা। ধর্ম থেকে সমাজ, ব্যক্তি থেকে পরিবার, সব জায়গাতেই আপনাকে শূলে তুলেছি। আপনাকে একটুও বোঝার চেষ্টা করিনি। একটুও না। ধর্মের ব্যাপারে কত সহজ সরল সাধারণ দর্শন আপনার, নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন, অথচ সেই আপনাকে আমরা ধর্ম দিয়ে আক্রমণ করেছি বারবার। সমাজ আপনাকে একঘরে করেছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারপরও আপনি বলেছেন, ‘মানুষ এত কিছু ভেবে বলে না এসব। তারা নিজেরাও হয়তো এসব দেখে পরে লজ্জা পায়।’ কত উদার আপনি। আমাদের দেখুন, রাত-দিন আপনাকে অনুদার, সংকীর্ণমনা বলে গালমন্দ করেছি।  

২০০৯ সালে আপনি দুরন্ত ফর্মে তখন। গ্যালারীর প্লেকার্ডে দেখি, আপনার নামকে খুব সুন্দর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এস ফর স্মার্ট, এ ফর অলরাউন্ডার, কে ফর কাইন্ড, আই ফর ইন্টেলিজেন্ট, বি ফর বেস্ট। বছর চার-পাঁচেক পর সেই আপনিই হয়ে গেছেন আমাদের কাছে ভিলেন। আপনার নামের বিশ্লেষণ আর আগের মতো নেই আমাদের কাছে। তখন হয়ে গেছে, এস ফর সেলফিশ (স্বার্থপর), এইচ ফর হাউটিইয়ার (উদ্ধত), এ ফর এ্যাংরি (বদরাগী), কে ফর কিংকী (উদ্ভট, পাগলাটে), আই ফর ইডিয়টিক (আহাম্মক), বি ফর ব্রুটাল (বর্বর)। এই পালাবদলে কিছু ব্যাপার সত্যি ছিল, কিছু ছিল মিথ্যা। পুরো সত্যি ছিল শুধু একটাই, আমরা আপনাকে কখনোই ঠিকমতো বুঝতে পারিনি!

বিশ্বাস করুন, এতে আপনার কোনো দায় নেই। হয়তো দায় নেই আমাদেরও। এ-কে আমাদের অক্ষমতা বলতে পারেন, ‘সুপারম্যান’-কে বোঝে কোন সাধারণের সাধ্যি!

এতকিছুর মাঝে আপনার ব্যাপারে একটা শব্দ খুব খেটে যায়। ইনএসক্যাপেবল। আপনাকে এড়ানো বা অগ্রাহ্য করার সাধ্য, সক্ষমতা বা আপনার ব্যাপারে উদাসীন থাকার শক্তি কোনটাই আমাদের নেই।

 

এ ফর এগ্রেসিভ। এটা আর নতুন করে কি বলবো? দলের অবস্থা, পিচ কন্ডিশন, আশপাশের পরিবেশ কোনোটাই কি কখনো আপনাকে আক্রমণ থেকে বিরত রাখতে পেরেছে? এ্যাডাম মিলনের শর্ট বলের গোলা বা আপনার পাশে তারকাখচিত ৯৮, কোনোটাই কি আক্রমণ থেকে আপনাকে বঞ্চিত করতে পেরেছে? ওয়াহাব রিয়াজের সাথে চোখ চোখ রেখে কথা বলা, বা আম্পায়ারের অন্যায্য সতর্ক সংকেতের তোয়াক্কা না করে, নিজের প্রয়োজন মেটানো... আপনি আর আক্রমণ, পরস্পর যেন হাত ধরাধরি করে চলে!

 

সর্বশেষ, এন ফর নিম্বেল। হঠাৎ এক ওভার ফিল্ড সেট করে ধোনীকে বেকুব বানিয়ে দেয়া, স্টোকসের নতজানু হওয়া বোল্ডের পর, অমন স্যালুট! ‘নিম্বেল’ বিশেষণ আপনার সাথেই তো সব’চে ভালো যায়। এন ফর নটিও হয়তো বলা যায় আপনাকে। যদিও আপনার দুষ্টুমি বোঝার ক্ষমতা হয়তো আমাদের সবার নেই। ‘লাঞ্চ ভালো ছিল বলে দ্রুত আউট হয়ে গেছে সবাই।’ অথবা ‘শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের লোকজন তো খাদ্যে কিছু মশলা মেশানো পছন্দ করে। তো এই ধরণের ব্যাপারগুলো খেলাতে মশলা নিয়ে আসে। ব্যাপারটা দুই পক্ষের জন্যেই মজাদার। অবশ্যই মাঠে, বাইরে নয়।’ হাসতে হাসতে কি অবলীলায় রসিকতা করে বসেন আপনি! কত সিরিয়াস প্রশ্নেও, মিটিমিটি হাসিতে তীর্যক খোঁচা দেন, কখনো হাস্যরস উপহার দেন। এখানেও ‘নিম্বেল’ বিশেষণ ব্যবহার করতে পারি আমরা।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘স্মার্ট ক্রিকেটার’ বলা হয় আপনাকে, তীক্ষ্ম বুদ্ধির অধিকারী না হলে কি এমন অভিধায় ভূষিত হন আপনি!

 

আর কথা বাড়াচ্ছি না আজ। শেষ করছি এবার। ভালো-মন্দে, আনন্দে-বেদনায়, আমাদের সাথে খুব মিশে গেছেন আপনি। জানেন, আপনাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলাম? খুবই কাঁচা পদ্য। তারপরও আপনাকে নিয়েই তো...

আপনি মাঠে থাকেন যত-ক্ষণ,

আমরা বিশ্বাস করি- ‘আপনি’ পারবেন।

আপনার আত্মবিশ্বাস আর মাঠে বিচরণ,

জানিয়ে দেয়- ‘আপনিই’ পারবেন।

 

আমাদের গভীরে প্রোথিত করেছেন বিশ্বাস-

চাইলে বিশ্বজয় করতে পারি আমরাও।

আমাদের ক্রিকেটাকাশের আজকের বিকাশ,

পুরোভাগে আপনি; সঙ্গী আরো কেউ!

 

অসাধ্য সাধনের সাধক হয়েছেন,

বাড়িয়েছেন স্বপ্নের পরিধি।

অজেয়কে অনায়াসে জয় করেছেন,

আপনাকে বোঝে কার সাধ্যি!

 

শত অসম্ভব আর প্রতিকূলতার মাঝে,

আপনাকে দেখেছি- দৃঢ়, স্থির, অবিচল।

আপনার চোখে-মুখে পেয়েছি খুঁজে,

লৌহ-কঠিন, অটুট মনোবল।

 

আপনি আমাদের ক্রিকেট-মহানায়ক,

আপনি আমাদের সুপারম্যান।

ম্যাচে সম্ভাবনার শেষ পথের সূচক-

শুধু ‘আপনিই’ পারবেন!

 

আপনিই প্রথম দেখিয়েছেন বিশ্ব-মান,

বাঁহাতের ভেল্কীতে কুড়িয়েছেন সব সম্মান।

হয়েছেন আমাদের গর্ব, অহং আর বাংলাদেশের প্রাণ,

আপনার জন্যেই এই স্তুতি কাব্য-

জনাব, সাকিব আল হাসান!

 

 

সবশেষে, আপনার কাছে আমাদের চাওয়ার ফিরিস্তি জানিয়ে শেষ করছি আজকের মতো। টেস্ট খেলুড়ে নয় দেশের বিপক্ষেই ফাইফার পেয়েছেন আপনি। পাকিস্তান ও ভারত ব্যতীত বাকী সব দলগুলোর বিপক্ষেই একাধিকবার। আমরা চাইবো, পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষেও এই কীর্তি আপনি একাধিকবার করে নিজেকে নিয়ে যাবেন আরো একটু উচ্চতায়।

সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরী নেই আপনার। অথচ আপনার সামর্থ্য জানান দেয়, এটা সম্ভব। বোথাম সেঞ্চুরী ও পাঁচ উইকেটের যুগল কান্ড পাঁচবার ঘটিয়ে বড্ড একাকীত্বে ভুগছেন। তাঁর একাকীত্ব নিরসন হোক আপনার মাধ্যমে। দশ উইকেট ও সেঞ্চুরীর কীর্তিটাও আরো কয়েকবার করা আপনার পক্ষে সম্ভব।
ওডিয়াই ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট ও ফিফটির যুগলবন্দী নেই আপনার। অথচ থাকা দরকার। চার উইকেট ও সেঞ্চুরীর যুগলবন্দীটা একাধিকবার ঘটিয়ে, একমেবাদ্বিতীয়ম হওয়া খুব সম্ভব আপনার পক্ষে।

আরো কত কত রেকর্ড আপনার পায়ে লূটিয়ে ধন্য হওয়ার অপেক্ষায় আছে! আপনার একটু মনোসংযোগ, একটু সতর্কতা, আরেকটু বিচক্ষণতা মিললেই, স্যার সোবার্স, ক্যালিস, স্যার বোথামরা হয়তো তাদের পাশে আপনার নাম দেখে পুলকিত না হয়ে পারবেন না!

 

চাওয়ার ফিরিস্তি দেখে হাসছেন হয়তো। এ কী ছেলের হাতের মোয়া, যে চাইলেই হয়ে গেল। নাহ, মোয়া নয়। তবুও আমাদের বিশ্বাস, আপনি পারবেন। আপনার পক্ষে সম্ভব। রেকর্ড নিয়ে খেলুন না প্লীজ! আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠুন না। আমরা আপনাকে দেখি। আপনার কীর্তি দেখি। আর বিশ্বক্রিকেটকে বুক ফুলিয়ে বলি, আমাদের একজন রক্ত মাংসের, জীবন্ত ‘সুপারম্যান’ আছেন।

 

এস, ইউ, পি, ই, আর, এম, এ, এন... আপনার নামের পাশেই যেন সবচেয়ে স্বার্থক ও পরিপূর্ণ মনে হয়।

আপনার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও সুস্থতা কামনায়...

ইতি-

আপনার একজন অনুরক্ত