• ফুটবল

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-জার্মানি নয় এবারের বিশ্বকাপে চমক দেখাবে যে দল !

পোস্টটি ২৮৪২৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

supporter2এই বিশ্বকাপে ফেবারিট কারা তা আমরা ভাল করেই জানি - ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, পর্তুগাল ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হলে সেটা কিন্তু চমক হবে না। চমক হবে সেটাই - যে দল অপ্রত্যাশিত ভাবে সাফল্য লাভ করবে। কিন্তু আনকোরা নতুন দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা যে খুবই কম, তা হলপ করে বলে দেওয়া যায়। হয়তো সেমিফাইনাল, বড়জোড় কোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছুতে পারলেই সেটা সারপ্রাইজ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

চলুন দেখা যাক আগের বিশ্বকাপগুলোতে কারা এরকম সারপ্রাইজ দিতে পেরেছিল - এখানে সেমি পর্যন্ত পৌঁছুতে পেরেছিল এমন টিমগুলোকে ধরা হয়েছে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন ১৯৮২ ও পরবর্তী বিশ্বকাপগুলো আমলে নেয়া হয়েছে, কারণ ৮২ বিশ্বকাপে প্রথম ২৪ টি দেশ অংশগ্রহন করে, এর আগে ১৬ টি দেশ খেলতো মূল টুর্নামেন্টে। আর ৯৮ থেকে ৩২টি দেশ মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
১৯৮২ - পোল্যান্ড
১৯৮৬ - বেলজিয়াম
১৯৯০ - সুইডেন, বুলগেরিয়া
১৯৯৮ - ক্রোয়েশিয়া
২০০২ - তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া
১৯৯৪ ,২০০৬ ,২০১০, ২০১৪ - চমক জাগানিয়া দল নেই, ফেবারিট দলগুলোই উঠেছিল সেমি ফাইনাল পর্বে।
এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার - ৮২, ৯০, ৯৮, ২০০৬ বিশ্বকাপগুলো ইউরোপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৯০ বিশ্বকাপ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০২ বিশ্বকাপ হয়েছিল এশিয়াতে। দেখা যাচ্ছে, যে মহাদেশে খেলা হচ্ছে, সেই রিজিওয়নের দলগুলোই কিন্তু বেশি ভাল করছে।

আর বরাবরের মতোই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জুন-জুলাই মাসে। এমনিতে 'রাশিয়া' নামটি শুনলেই পুতিনের ছবি ভেসে উঠলেও আরেকটি জিনিস ভেসে উঠে - কনকনে বরফ শীতল আবহাওয়ার কথা। কিন্তু এইসময়ে রাশিয়ায় সামার চলবে - তাপমাত্রা থাকবে কমফোর্ট জোনে, ১২-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ঘরে। তাই আবহাওয়া যে স্বাভাবিক খেলায় প্রভাব পড়বে না, ধরে নেওয়া যায়। তবে ইউরোপের দলগুলো হোম গ্রাউন্ডের বাড়তি সুবিধা পাবে - কারণ তুলনামূলক পরিচিত পরিবেশ, সাথে সমর্থকদের আনাগোনা। তাই সবমিলিয়ে ধরে নেওয়া যায়, চমক দেখাতে পারলে সেক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকবে ইউরোপিয়ান টিমগুলো।

এবারের রাশিয়া  বিশ্বকাপের গ্রুপ  ও দলের তালিকা ঃ

গ্রুপ এ: রাশিয়া, সৌদি আরব, মিশর, উরুগুয়ে

গ্রুপ বি: পর্তুগাল, স্পেন, মরোক্কো, ইরান

গ্রুপ সি: ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, ডেনমার্ক

গ্রুপ ডি: আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া

গ্রুপ ই: ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া

গ্রুপ এফ: জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া

গ্রুপ জি: বেলজিয়াম, পানামা, তিউনিশিয়া, ইংল্যান্ড

গ্রুপ এইচ: পোল্যান্ড, সেনেগাল, কলম্বিয়া, জাপান

ইউরোপিয়ান দল-
বেলজিয়াম, সুইটজারল্যান্ড বেশ ভাল টিম, ওরা সাফল্য পেলে চমকের কিছু নেই । আনকোরা নতুন দল চ্যাম্পিয়ন হলে সেটার যোগ্য দাবিদার বেলজিয়াম।

পোল্যান্ডঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ১০ )
র‍্যাঙ্কিং দেখেই বোঝা যাচ্ছে, মোটেই ফেলনা টিম না পোল্যান্ড। তুলনামূলক অজনপ্রিয় এই দলটির বিশ্বকাপে চমক দেখানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। গত ইউরোতে বেশ ভাল করেছিল, পেনাল্টি শুট আউটে পর্তুগালের কাছে হেরেছিল কোয়ার্টার পর্বে। এবার গ্রুপ পর্বে কিছুটা সহজ দল পাচ্ছে বিপক্ষে - সেনেগাল, কলম্বিয়া, জাপান। ২য় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ হবে সম্ভবত বেলজিয়াম/ইংল্যান্ড। তাই বাজির দর পোল্যান্ডের পক্ষে বেশ ভালই।
কী-প্লেয়ারঃ লেভান্ডোভস্কি, মিলিচ

আইসল্যান্ডঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ২২ )
এই প্রথম বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে আইসল্যান্ড, এবং সেটি ভাল খেলেই। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলবে । প্রথম দুটি দলের সাথে পাল্লা দিতে বেশ বেগ পেতে হবে। ২য় রাউন্ডে উঠতে পারলে প্রতিপক্ষ হবে সম্ভবত ফ্রান্স। তাই কতদূর যেতে পারবে দলটি, বলা দুষ্কর। তবে বিশ্বকাপে বরাবরই অঘটন হয়ে আসছে। তাই ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে, কি হবে কে জানে?
কী-প্লেয়ারঃ গিলফে সিগুর্দসন

ডেনমার্কঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ১২ )
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্কের টিম বেশ ব্যালান্সড। ফর্ম ও ভাল। খেলোয়াড়রদের ইউরোর বিভিন্ন দেশের লীগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। গ্রুপ পর্বে তারা পাবে - ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও পেরুকে। আর এই পর্ব পেরোতে পারলে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে - সম্ভবত আর্জেন্টিনাকে। এরিকসেন জ্বলে উঠলে আর মেসিকে আটকে রাখতে পারলে হয়তো এই পর্ব উতরে যেতে পারবে ডেনমার্ক।
কী-প্লেয়ারঃ এরিকসেন

ক্রোয়েশিয়াঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ১৮)
ক্রোয়েশিয়ার অবস্থা কিছুটা ডেনমার্কের মতোই। মোটামুটি ব্যালন্সড টিম। তবে ধারাবাহিকতা ভাল না। মড্রিচ-রাকিতিচের সমন্বিত প্রয়াসের উপর দলের সাফল্য নির্ভরশীল। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলবে । ২য় রাউন্ডে উঠতে পারলে প্রতিপক্ষ হবে সম্ভবত ফ্রান্স।
কী-প্লেয়ারঃ লুকা মড্রিচ, ইভান রাকিতিচ

ইউরোপের বাইরে -
উরুগুয়ে, কলম্বিয়া প্রতিষ্ঠিত দল, তাই ওদেরকে বাদ দেয়া যায়।

পেরুঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ১১)
পেরুর বর্তমান র‍্যাঙ্কিং দেখলে চোখ কপালে উঠার জোগাড়। কিন্তু বাছাইপর্বে বেশ ভাল লড়াই করেই উঠেছে দলটি। সাম্প্রতিক রেজাল্টও ঈর্ষনীয়। দলের ফাইটিং স্পিরিট প্রবল, সাথে টিমওয়ার্ক। গ্রুপ পর্বে তারা পাবে - ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্ককে। আর এই পর্ব পেরোতে পারলে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে - সম্ভবত আর্জেন্টিনাকে, যাদেরকে বেশ ভালই ভুগিয়েছিল বাছাইপর্বে ।
কী-প্লেয়ারঃ পাওলো গুয়েরেইরো

তিউনিশিয়াঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ১৪)
বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলা তিউনিশিয়া ১ম পর্বে পাবে - বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, পানামাকে। এরপরে হয়তো পাবে - পোল্যান্ড/সেনেগাল/কলম্বিয়াকে। বিপক্ষ দল কোনটাই টপ ফেবারিট না। তাই চমক দেখানোর প্রবাবিলিটিও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
কী-প্লেয়ারঃ ওয়াহবি খাজরি

সেনেগালঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ২৮)
২০০২ বিশ্বকাপ মনে আছে? সেনেগালের চমক দেখানোর ইতিহাস কিন্তু এখনো সবার মনে আছে । পরিশ্রমী খেলোয়াড় সবাই, ভাল বোঝাপড়া আছে, সাথে ফাইটিং স্পিরিট। দলের ফিক্সচারও ভাল। পোল্যান্ড, কলম্বিয়া, জাপান এর সাথে মুখোমুখির পর হয়তো পাবে বেলজিয়াম/ইংল্যান্ড/তিউনিশিয়াকে।
কী-প্লেয়ারঃ সাদিও মানে

মিশরঃ
(বর্তমান র‍্যাঙ্কিংঃ ৪৬)
মোহাম্মদ সালাহর মিশরের জন্য জার্নিটা কঠিন হবে। ইনজুরি থেকে ফিরে কতোটা সার্ভিস দিতে পারবেন সেটা একটা ব্যাপার। ১ম পর্ব একটু সহজ। রাশিয়া, উরুগুয়ে আর সৌদি আরব। শেষ করতে পারলে হয়তো তারা পাবে স্পেন/পর্তুগালকে।
কী-প্লেয়ারঃ মোহাম্মদ সালাহ

যাহোক, এতো বিচার-বিশ্লেষণ করে শেষমেশ কি দাড়ালো? দলের শক্তিমত্তা আর ফিক্সচার দেখলে খাতা কলমের হিসেব বলে পোল্যান্ডের চমক দেখানোর সম্ভাবনা সবচে বেশি। এরপর আছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, পেরু, সেনেগাল, তিউনিশিয়া, মিশর। তবে সবকিছু তো আর নিয়ম মেনে চলবে না। বিশ্বকাপ এমন একটা মঞ্চ - যেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে সবাই সামর্থ্যের শেষটুকু ঢেলে দিবে দেশের সম্মান তুলে ধরতে। আর এভাবেই চমক সৃষ্টি করবে হয়তো নতুন কোন দল, দর্শকের স্মৃতির মণিকোঠায় জায়গা করে নিবে - এটাই তো বিশ্বকাপের মাহাত্ম্য !