• ক্রিকেট

ক্রিকেট পংক্তিমালা ০১

পোস্টটি ৫৫৪০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
ডব্লিউ জি গ্রেসকে নিয়ে কবিতা পড়ি, ভিক্টর ট্রাম্পারকে নিয়ে পড়ি, ব্র্যাডম্যান, রনজিৎসিংজীদের নিয়ে পড়ি। আর ভাবি, আমাদের কাউকে নিয়ে কবিতা লেখা হয় না কেন? আমাদের এখানে ক্রিকেট নিয়ে সেভাবে কবিতা হয় না কেন? ক্রিকেট তো কেবল খেলামাত্র নয়, কাব্যও বটে! ২২ গজে শত শত কবিতার পংক্তি ছড়ানো-ছিটানো, সেসব কেউ তুলে আনেন না কেন?
আমি কবি না। কবিতা বড় সাধনার ধন। অত বড় সাধক হওয়ার যোগ্যতা হয়নি এখনো। চাইলেই কেউ কবি হতে পারে না। সাহিত্যে কবিদের ডাকা হয় সাহিত্য-সম্রাট হিসেবে।
এই প্রচেষ্টা বা দুঃসাহসের একটাই কারণ, সাধক-কবিরা যদি একটু চেষ্টা করেন...!

___________________

বাশার-স্মরণে

 

দুঃসময়ের চোরাবালিতে অতলে তলিয়ে যাওয়ার প্রাক-কালে,

দায়িত্বভার কাঁধে তুলে ছন্নছাড়া দলটাকে দিয়েছিলেন বদলে।

বছর পাঁচেকের খরা কাটানো আট রানের জয় দিয়ে শুরু-

যেনো কেটে গেল কোনো ভীষণ ফাঁড়া কিংবা শনির গেরো,

তারপর কত ইতিহাস আর রুপকথা, কত আনন্দ উপাখ্যান!

ক্রিকেট ফুলে-ফলে দিলেন ভরিয়ে, আমাদের এই শূণ্য উদ্যান।

 

স্বদেশের টেস্ট-অভিষেকে আপনাকে প্রথম-উপেক্ষার জবাবে

সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছিলেন পরের একযুগে।

চারপাশে অধারাবাহিকতার ধারা-তে স্বদেশ যখন মরছিল ধুঁকে-

টানা ফিফটি করে 'মিঃ ফিফটি' ডাকনাম ছড়িয়েছিলেন যে লোকমুখে।

প্রথম টেস্ট-ফিফটির পর কত প্রথম যে এসেছে আপনার হাত ধরে-

স্বদেশের তরে দু'হাত ভরে নিজের সর্বস্ব দিয়েছেন যে উজার করে!

 

দারুণ মজার এক গল্প শুনেছিলাম আপনার বিয়েকে ঘিরে-

পাত্রীর পিতা নাকি জিজ্ঞেস করেছিল, 'পাত্র ক্রিকেট ছাড়া আর কি করে?'

সেই যুগের ক্রিকেটার আপনি, খেলাটার পুরোটা জুড়ে যখন ছিল সততার ভাষা-

অর্থ, যশ, খ্যাতির বদলে কেবলই নিষ্ঠা, নিবেদন, আগ্রহ আর ভালোবাসা।

ছোট্ট একটি চারাগাছ, খানিক পরিচর্যা আর যোগ্য মালিতে কেমন হয়ে উঠে-

সে আমরা বুঝেছি, দেখেছি ও জেনেছি আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে!

 

অদ্ভুত সারল্য মুখে-চোখে, যেনো পাশের বাসার সহজ সরল ছেলেটি-

বিদ্রোহী হয়ে নিষিদ্ধ-লীগে খেলে, ক্যারিয়ারে যদিও পড়েছে ছোট্ট দাগটি!

তাতে খুব একটা কালিমা পড়েনি আপনার নিবেদন আর অবদানের বহরে,

বাংলাদেশ ক্রিকেট জুড়ে আপনার কীর্তি আছে আজো লেখা স্বর্ণাক্ষরে!

আজকের অনেক ক্রিকেট-মহাতারকার অবিসংবাদিত প্রথম নেতা আপনি-

তারা তো বটেই, আমাদের মতো অনেক দর্শকও যে আপনার কাছে চির-ঋণী!

_____________

১৭ই আগস্ট, ২০১৮

 

শচীন বন্দনা

 

আপনার বন্দনা দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে পড়তে পড়তে

কখনো কখনো কিঞ্চিত বিরক্ত বোধ করেছি।

নাক-চোখ কুঁচকে, মুখ বাঁকিয়ে ভাবনার দোরে টোকা দিয়ে ভাবতে বসেছি-

একটা মানুষকে তুলতে তুলতে কতটা উঁচুতে তুললে

মানুষটার সবকিছুই বিরক্তিতে পরিণত হয় বা হতে পারে!

 

নিঃসন্দেহে প্রশংসা আর সম্মান, বন্দনা বা স্তবগান সবই আপনার প্রাপ্য

তাই বলে কাঁহাতক আর সহ্য হয়। বলেন?

সহ্যেরও একটা সীমা-পরিসীমা আছে।

কিছু রাখঢাক তো রাখা চাই। নাকি?

 

চামিন্দা ভাসকে আপনি নীরব অহংয়ে শিখিয়েছিলেন 'স্ট্রেইট ড্রাইভ' কত

প্রকার হতে পারে।

ষোলো'র কৈশোরে ওয়াকারের চোখ চোখ রেখে রক্ত মুছে মৌন পৌরুষত্বে

জানান দিয়েছিলেন, আত্মমর্যাদা কেমন হয়!

ওয়ার্নের মধ্যরাতের দুঃস্বপ্নে হানান দিয়েছিলেন নিশ্চুপ ব্যাটিং শৌর্যের সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়ে।

শোয়েবের বাউন্সারে বিনয় মাখানো দম্ভ মিশিয়ে আপার কাট-এ

দেখিয়েছিলেন সীমানা দড়ির উড়াল পথ।

 

শতকোটি মানুষের চাওয়া আর আপনার বাসনা মিলেমিশে হয়েছিল

একাকার।

আপনি শুধু ব্যাটিং-শিল্পেই মহান নন আপনি মহান হয়েছেন মনুষত্বেও।

আপনার বিদায়ী আয়োজনে নিজে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন আমাদেরও।

আপনাকে আমরা অকপটে মেনে নিয়েছি আধুনিক ক্রিকেটের অবিসংবাদিত গ্রেট হিসেবেও।

 

কিন্তু লেবুর অতি কচলানো-তে যে তিতকুটে স্বাদ বেরিয়ে আসে তা বোধকরি মনে নেই আমাদের অনেকেরই!

তাই আপনার বন্দনার নামে যা করা হয় তাতে মাঝে মধ্যে বিরক্তি ভাব আসে আমাদের।

অপরাধ নেবেন না প্লীজ!

তবে মজার ব্যাপার কি জানেন? ওই বিরক্তি ভাবটুকু উবে যায় ক্ষণকাল পরেই

আমরা আবার আপনার অসাধারণত্বে বুঁদ হই, মুগ্ধ হই।

 

শত শতকের অধিকারীর জন্য নত না হই অনায়াসে অবিরত হাততালি

বরাদ্দ করি

সবচেয়ে বেশীবার দৌঁড়ানো মানুষটির জন্য সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়াই অন্তত

একবার।

হ্যাঁ, তিতকুটে স্বাদ ভুলে গিয়ে আমরা আপনার অসাধারণত্বেই ফিরে আসি বারবার।

আপনার অনবদ্য ব্যাটিংয়ে যে মিষ্টান্নের স্বাদ একবার পেয়েছি

আপনার বিনয় আর নম্রতায় যে ক্রিকেট-মনুষ্যের স্বরুপ দেখেছি

তাতে শত তিতকুটে স্বাদ সত্ত্বেও আপনার প্রতি অন্তহীন মুগ্ধতার বুঝি শেষ

নেই।

কক্ষনো নেই।

হে, ক্রিকেট মাঠের সবচেয়ে কাঙ্খিত পূজারী পুরুষ!

আপনাকে জানাই জন্মদিবসের শুভেচ্ছা।

______________

২৪শে এপ্রিল, ২০১৮

 

যদি কখনো হয় দেখা-

 

আজীবন পঙ্গুত্বের ভয় ভুলে,

একরোখা, জেদী দৌঁড়; কলার তুলে,

হুটহাট, লাফঝাঁপ, নেই কোনো পরোয়া,

দেশ-দেশ বলে শুধু নিজেকে নিংড়ে দেওয়া।

এমন নিবেদন যাঁর; তিনি আসলে মানুষ কি?

যদি কখনো হয় দেখা, দেখবো কেটে চিমটি!

 

যদি কখনো হয় দেখা তাঁর সাথে-

দেবো তবে চিমটি কেটে তাঁর হাতে,

দেখবো তিনি ‘আহ, উঁহ’ করেন কি-না!

তিনি রক্তমাংসে গড়া মানুষ? নাকি না!

 

দূর থেকে জেনে গেছি তাঁর নানাদিক,

ক্রিকেটার ছাড়াও তিনি এক মহান দার্শনিক!

তিনি মহাত্মা-মানব, পুরুষোত্তম; মানুষের বিরল প্রজাতি-

যদি কখনো হয় দেখা, কাঁধে কাঁধ মেলানো যাবে কি?

______________

৯ই জানুয়ারী, ২০১৮

 

সুপারম্যান সাকিব

 

আপনি মাঠে থাকেন যত-ক্ষণ,

আমরা বিশ্বাস করি- ‘আপনি’ পারবেন।

আপনার আত্মবিশ্বাস আর মাঠে বিচরণ,

জানিয়ে দেয়- ‘আপনিই’ পারবেন।

 

আমাদের গভীরে প্রোথিত করেছেন বিশ্বাস-

চাইলে বিশ্বজয় করতে পারি আমরাও।

আমাদের ক্রিকেটাকাশের আজকের বিকাশ,

পুরোভাগে আপনি; সঙ্গী আরো কেউ!

 

অসাধ্য সাধনের সাধক হয়েছেন,

বাড়িয়েছেন স্বপ্নের পরিধি।

অজেয়কে অনায়াসে জয় করেছেন,

আপনাকে বোঝে কার সাধ্যি!

 

শত অসম্ভব আর প্রতিকূলতার মাঝে,

আপনাকে দেখেছি- দৃঢ়, স্থির, অবিচল।

আপনার চোখে-মুখে পেয়েছি খুঁজে,

লৌহ-কঠিন, অটুট মনোবল।

 

আপনি আমাদের ক্রিকেট-মহানায়ক,

আপনি আমাদের সুপারম্যান।

ম্যাচে সম্ভাবনার শেষ পথের সূচক-

শুধু ‘আপনিই’ পারবেন!

 

আপনিই প্রথম দেখিয়েছেন বিশ্ব-মান,

বাঁহাতের ভেল্কীতে কুড়িয়েছেন সব সম্মান।

হয়েছেন আমাদের গর্ব, অহং আর বাংলাদেশের প্রাণ,

আপনার জন্যেই এই স্তুতি কাব্য-

জনাব, সাকিব আল হাসান!

______________

৭ই জানুয়ারী, ২০১৮