• ফুটবল

টালমাটাল স্বর্গে ফিরলেন তিনি (পর্ব-১)

পোস্টটি ২০১৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০১৭-১৮ মৌসুম শেষ হয়েছে কেবল। টানা তিনবার ইউরোপীয় রাজত্ব কায়েমের উল্লাসে বুঁদ হয়ে আছে রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকরা। এরই মাঝে তাদের স্তব্ধ করে দিয়ে বললেন বিদায়। আবার ফিরে আসার কথাও জানালেন। তবে বিদায় বললেন, কারণ মানসিকভাবে আর ফুটবলীয় ট্যাক্টিক্সে তিনি নাকি এই দলকে আর চাঙা রাখতে পারছিলেন না। দলকে নতুনত্বের স্বাদ নেওয়ার আহ্ববান জানিয়ে নীরবে বের হয়ে গেলেন জিনেদিন জিদান, যিনি সহকারী কোচ এবং কোচ হিসেবে ক্যারিয়ারের একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নক-আউট রাউন্ডেও হারেননি। 

দেশের জাতীয় দলকে চরম অস্থিরতায় ফেলে জুলেন লোপেতেগিকে রিয়ালে নিয়ে আসলেও প্রেসিডেন্ট পেরেজ তখনও জানেন না এটি হতে যাচ্ছে তার প্রেসিডেন্সির আমলে রিয়ালের সবচেয়ে বাজে মৌসুম। রোনাল্ডো জুভেন্টাসে পাড়ি জমানোয় নখদন্তহীন প্রাণীতে পরিনত হলো রিয়াল মাদ্রিদ। টানা বেশ কয়েকটি খেলায় গোল না দিতে পারার মত ঘটনাও ঘটলো। এল ক্লাসিকোতে ধরাশায়ী হওয়ার কিছুদিন পরেই চাকরি হারান লোপেতেগি। তাঁর জায়গায় এসে স্যান্টিয়াগো সোলারি প্রথম দিকে আশা জাগালেও, এক সপ্তাহে কাপ, লীগ এবং ইউরোপ থেকে ছিটকে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে রিয়াল। আয়াক্সের সাথে ১-৪ গোলে হেরে ইউরোপীয় রাজত্ব হারায় তারা। সোলারির কাছে উপেক্ষিত হয়ে ইস্কো আর মার্সেলোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্টের সাথে মুখোমুখি বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন স্বয়ং অধিনায়ক সের্জিও রামোস। এরই মাঝে সাবেক প্রেসিডেন্ট রামন ক্যাল্ডেরণ মিডিয়ায় ঘোষণা করেন হোসে মরিনহোর রিয়ালে ফিরে আসা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। টালমাটাল এবং বেসামাল হয়ে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদে স্বর্গের মত সাজানো সংসার। স্কোয়াড, কোচ, প্রেসিডেন্ট আর নতুন কোচ নিয়োগে উঠে আসে চরম মতপার্থক্য।

মার্চ ১১, ২০১৯। স্প্যানিশ টিভি চ্যানেল এল চিরিঙিতো'র হুগানোস নামের একটি অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপণে বলা হয় খুব বড় একটি ঘোষণা আসছে। ধরেই নেওয়া হয় সোলারির বরখাস্ত হওয়ার খবর আর মরিনহোর নিয়োগের খবর আসছে।  উপস্থাপক জোসেফ পেদেরল সবাইকে ভুল প্রমানিত করে ফাঁটালেন বোমা, "রিয়াল মাদ্রিদের নতুন কোচের নাম, জিনেদিন জিদান"। ঘন্টা দুই পর বার্নাব্যুতে ফিরে এলেন তিনি, বললেন, "ক্লাব ডেকেছে তাই  ফিরে এসেছি ক্লাবের প্রতি ভালোবাসার টানেই। আমার খেলোয়াড়দের ধুকতে দেখে আমারও খারাপ লেগেছে। এই ক্লাবকে তার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে, অনেক কাজ বাকি। আমি সোজা কাজ শুরু করতে চাই"। জানালের দলে আসবে কিছু পরিবর্তনও।  এই লেখার পরবর্তী অংশে চলুন দেখি কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে রিয়াল মাদ্রিদে কোচ জিদানের দ্বিতীয় আগমনে।

রোনাল্ডোর ইতালীতে পাড়ি জমানোর মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ হারিয়েছে মৌসুমে গড়ে ৫০ টি গোল। করিম বেঞ্জেমা আর ম্যারিয়ানো দিয়াজ, এই দুইজন কখনোই এই ৫০টি গোলের প্রশ্নের উত্তর হতে পারেননি। সাথে গ্যারেথ বেল এবারেও তার সমগ্র রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ারের মতই  ইনজুরিতে ভূগে রাখতে পারেননি তেমন কোন অবদান। বরং, দাম্ভিকতা এবং একের পর এক বাযে পারফরমেন্সে পরিণত হয়েছেন দর্শকদের চক্ষূশূলে। গ্যারেথ বেলের রিয়াল থেকে চলে যাওয়ার এটিই উপযুক্ত সময় ও সূযোগ হলেও, রিয়ালের তাকে ছেটে ফেলতে পোড়াতে হবে  অনেক কাঠখড়। তার ফর্ম, ইনজুরি প্রবণতা এবং উচ্চ বেতনের কারণে কোন দলই তাকে কিনতে আগ্রহী নয় এই মুহুর্তে।

রিয়াল মাদ্রিদের প্রথমেই যা দরকার তা হলো, আক্রমণ ভাগে কমপক্ষে একটি নতুন এবং বড় নাম। খুব সম্ভবত তা হতে চলেছেন এডেন হাজার্ড। জিদান এবং রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি তার সম্মান ও ভক্তির কথা অজানা নয় কারোই। সম্প্রতি চেলসি ট্রান্সফার ব্যানের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও চুক্তিতে মাত্র এক বছর বাকি থাকা হাজার্ডেকে দলে ভেড়ানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করেছে রিয়াল, এমনটিই জানিয়েছেন দ্য টেলিগ্রাফের চেলসি প্রতিনিধি ম্যাট ল। প্রেসিডেন্ট পেরেজ জিদানকে ফিরিয়ে আনার পরেই নেইমার এবং এমাপ্পের বিষয়ে হেয়ালি করলেও এই দুইজনের যেকোন একজনকেও রিয়ালে আনা প্রায় অসম্ভব হবে। কিন্তু আগামী মৌসুমে না খেললেও, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় এই দুইজনের একজন রিয়ালে খেলবেন এধরনের ভবিষ্যত বাণী করাটা একেবারে ভুল হবে তা নয়। লোনে থাকা রাউল ডে টমাস আছেন দুর্দান্ত ফর্মে, শেষ পর্যন্ত সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে লুকা জভিচের মত কারো দিকে হাত না বাড়ালে রাউল ডে টমাস ফিরে আসতে পারেন যেমনটি এসেছিলেন আল্ভারো মোরাটা এবং বোরহা মায়োরাল। রিয়াল মাদ্রিদ মূলত আক্রমণ ভাগে একাধিক পরিবর্তনের পক্ষপাতী না কেননা তাতে মার্কো আসেন্সিও এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়রের প্লেয়িং টাইম কমে আসবে অনেকটা। তবে আসেন্সিও বার ইস্কোকে একাদশে রাখলেও অন্তত আরেকজন আরেকজন উইঙ্গার রিয়ালের বড্ড প্রয়োজন। কেননা লুকাস ভাস্কেজ অত্যন্ত কর্মঠ খেলোয়াড় হলেও তাকে দিয়ে ৪০-৫০ টি ভালো ম্যাচ বের করে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে লুকাস মৌরার এবং সাদিও মানের দিকেও আগ্রহ আছে রিয়ালের এমনটিই গুঞ্জন।

জিদানকে ট্রান্সফার সম্পর্কিত সব স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মিডফিল্ডে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কিন্তু দানি সেবায়োস, মাটেও কোভাচিচ এবং মারকোস ইয়োরেন্তের জন্য জিদানের ফিরে আসার খবর মোটেও সুখবর নয়। বার বার তারা উপেক্ষিত হয়েছেন জিদানের একাদশে। স্পেন এবং ইতালীয় মিডিয়ার দাবি স্পার্সের এরিকসেন, চেলসির কান্তে এবং  ইউনাইটেডের পগবার দিকে হাত বাড়াবে রিয়াল। তাদের সবাইকে অবশ্যই একসাথে আনার চেষ্টা করা মোটেও বাস্তব সম্মত নয়। কিন্তু মিড ফিল্ডে এধরনের কোন পরিবর্তন হলে মদ্রিচ বা ক্রুসের মধ্যে একজনকে দলে জায়গা হারাতে হবে বেশ কিছু ম্যাচে কেননা জিদানের এ-টীম, বি-টীম ফর্মুলা ফিরে এলে একেবারেই বাদ পড়ে যাবেন না কেউই। এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা থাকবে পরবর্তী পর্বে। ওডেগার্ড, ভাল্ভারডেদের ভাগ্যে কি আছে তা প্রি-সিজনের আগে বলা যাচ্ছে না। জিদানের ফিরে আসায় হামেস রদ্রিগেজ আর ফিরছেন না বায়ার্ন থেকে, এ কথা বলেই দেওয়া যায়।

রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্স অত্যন্ত নড়বড়ে। রামোস ব্যতীত কোন একাদশ খেলে দিশেহারা হয়ে যেমনটি খেলেছে আয়াক্সের সাথে। সময় এসেছে নাচো এবং ইনজুরি ভরাক্রান্ত ভায়েহোর থেকে সামনে তাকানোর। তাই রিয়াল চেষ্টা করছে পোর্তোর ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মিলিতাওকে টেনে নিতে। তার প্রোফাইল এবং খেলার ধরন রিয়ালের সাথে খুবই মানানসই। ভায়েহো লোনে না গেলে একজনের বেশি সেন্টার ব্যাক কিনবে না রিয়াল। ফুল ব্যাক পজিশনগুলোয় এধরনের মাথা ব্যথা নেই। হাকিমি, থিও, রেগিলন সবাই অবশ্য দলে থাকবেন না। কাউকে না কাউকে অবশ্যই লোনে বা বাই-ব্যাক অপশনসহ অন্য দলে পাঠানো হবে। জিদান যদি এই মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলোয় কেইলর নাভাসকে খেলান, তাহলে বোঝা যাবে নাভাসের রিয়াল ক্যারিয়ার এখানেই শেষ নয়। তা না হলে আগামী মৌসুমে নাভাসের জায়গ্য দ্বিতীয় গোলকীপার হতে পারে লোনে থাকা আন্দ্রে লুনিন। 

পুরোপুরি ভেঙে পরা একদলে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে শুধু তাঁর ফিরে আসার খবরেই। জিদান ফিরে এসেছেন তাঁর প্রিয় ক্লাবের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে। এখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে রোনাল্ডোর বিদায় আর ২০১৮-১৯ এর ব্যর্থতা ভুলে সামনে তাকাতে হবে। জিদান যেমন বলেছেন অনেক কাজ বাকি, আসলেও তাই। তবে আশার কথা বাকি থাকা এই কাজগুলো সারতে জিদান আছেন। আগামী পর্বে জিদানের এ-টীম, বি-টীম ফর্মুলায় বর্তমান দলের সদস্যরা, সম্ভাব্য ট্রান্সফার তালিকার খেলোয়াড়েরা কিভাবে, কোন ফর্মেশনে মাঠে নামতে পারেন, সে বিষয়ে আলোচনা থাকবে।