• ক্রিকেট

"ও যে কোথায় হারালো"

পোস্টটি ৪৮০৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

"ও যে কোথায় হারালো, ব্যথা কাকে যে সুধাই?", বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যান্ড আর্টসেলের দুঃখ বিলাস গানটি শেষ হয় এই দুইটি লাইন দিয়েই। দুঃখ বিলাস গুলো এমনই হয়। কাকে বলবো খুঁজে পাওয়া যায় না। মোহাম্মদ আশরাফুলের চরম ভক্তদের কাছে তিনি এখন একটি দুঃখ বিলাসই বটে।

বাংলাদেশ দল যখন কঠিনতম ফরম্যাটের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার ছক কষছে, সাকিব আল হাসান যখন প্রকৃত অর্থেই বিশ্ব কাপাচ্ছেন, এতো এতো পাওয়ার মধ্যে কোথায় যেন একটা না পাওয়ার যন্ত্রনা কষ্ট দেয়। এই ক্রিকেট উৎসবে তো আমার প্রিয় ক্রিকেটার আশরাফুলেরও থাকার কথা। শচীনের মত একেবারে সোজা ব্যাটে স্ট্রেইট ড্রাইভ করার কথা স্টার্ক, আর্চারদের, উইকেট পেলে মিড অন থেকে দৌড়ে এসে মুস্তাফিজকে জড়িয়ে ধরার কথা, বোলারদের খারাপ দিনে স্লো রাইট আর্ম বোলিং করে ব্রেক-থ্রু এনে দেওয়ার কথা। কিন্তু ম্যাচ পাতানোর কালো থাবা এক ধাক্কায় ধুলোয় মিশিয়ে দিলো সব।

আশরাফুলের সাথে মাস খানেক আগে ফোনে কথা হয় মিনিট দুই-এর মত।  বললাম ভাই আপনার অনেক বড় ভক্ত আমি, মিস করি আপনার খেলা, আপনাকে আবার জাতীয় দলে দেখার অনেক ইচ্ছে হয়। মৃদু হাসলেন, বললেন দোয়া করবেন। এত হাজার মাইল দূরে বসেও ঐ হাসিতে যেন একটা চাঁপা একটা দুঃখের আভাস পেলাম, হয়তো ভুল শুনেছি, হয়তো না।

টেস্ট আর ওয়ান্ডেতে পঁচিশের নিচে গড় যে আশরাফুলের তাকে নিয়ে কেন এত কথা? ক্রিকেটকে বিকিয়ে দিয়ে তিনি যে শাস্তি পেয়েছেন তা ন্যায্য হওয়ার পক্ষে যা যুক্তি আছে সবই আমি মানি। কিন্তু তার ঐ ১৯০ রানের ইনিংসটা যখন দেখি, অস্ট্রেলিয়ার সাথে করা ২০০৫-এর ঐ সেঞ্চুরিটা যখন দেখি তখন মায়া হয়। মায়া হয় আমাদের বর্তমান মিডল অর্ডারে মিথুন, সাব্বিরদের ধুঁকতে থাকা খেলা দেখলেও। আহা আমাদের একজন আশরাফুল ছিলেন। আমরা কদর করিনি। পাকিস্তান আমিরকে ফিরিয়ে এনে খেলাচ্ছে, আমরাও অনেক ধরনের অপরাধে নিষিদ্ধ করে আবার সময়ের আগেই ফিরিয়ে এনে খেলাচ্ছি কত প্লেয়ারকে, কিন্তু আশরাফুল সব হারালেন, আমরাও হারালাম বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের এক নক্ষত্রকে। 

যেসময় আশরাফুল ম্যাকগ্রা, ব্রেট লিকে হুক করেছেন সেসময় দেশের আর কোন ব্যাটসম্যান ঐ শট খেলার কথা দিবাস্বপ্নেও ভাবেননি। যখন টার্নিং উইকেটে লংকানদের স্পিন সামলেছেন তখন তার খেলা পরিনত হতে চলেছিল। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে বর্তমান বিচারে অতি সাধারণ মানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্য তিনি খেলেছেন নম্বর সাতেও।  বলের লাইন ধরে করা তার ফরোয়ার্ড ডিফেন্স আজ শুধু মুশফিকের আছে বোধহয়, তাও সেটা আশরাফুলের ফরোয়ার্ড ডিফেন্সের মত লাগে না।  আজ ধোনি,  আমলাদের দেখি  বুড়ো বয়স কিংবা খারাপ ফর্মেও টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের সাহস দেয়, আস্থা রাখে। আমরা পারিনি। আমরা মমিনুল, কায়েসদেরও যেন আস্তে আস্তে ঠেলে দিচ্ছি ক্রিকেট জগতের না ফেরার দেশে। 

তুষার ইমরান, আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিসদের আরো একটা সূযোগ দেওয়ার কথা উঠলেই নির্বাচকদের চরম বিরক্ত হতে দেখি। আমরা দেশে বিদেশে মিডল অর্ডার নিয়ে ঠিকই ভুগে চলেছি। অথচ অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প  নেই বর্তমান ক্রিকেটযজ্ঞে। যেখানে এখন দলে নামকরা সব সাপোর্ট স্টাফ, সেখানে  তুষার ইমরান, আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিসদের নিয়ে স্কিল আর মানসিকতার ঘষা-মাজাটা আরেকবার করলে খুব বেশি ক্ষতি হতো কি? যেখানে নিয়ম ভেঙ্গেও, খারাপ খেলেও ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ পাওয়ার নজির হর-হামেশাই চোখে পড়ছে, সেখানে এই সিনিয়র প্লেয়াররা এতটা ব্রাত্য কেন তার কারণ জানা যাবে না হয়ত কোনদিনই। 

ম্যাচ পাতানোর মত বড় অপরাধ খেলার জগতে নেই। কিন্তু আশরাফুল শাস্তি কাটিয়ে, ক্ষমা চেয়ে, চোখের জল ফেলেও আর পারলেন না একটিবার সেই ৯৮ নম্বর লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে চাপাতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম দিনগুলো তাই একেবারে সোজা ব্যাটের ঐ স্ট্রেইট-ড্রাইভ ছাড়া একটু হলেও খালি খালি লাগে।

ভালো থাকবেন আশরাফুল।