• ক্রিকেট

২০০৭ এর রূপকথা ফিরে আসুক !

পোস্টটি ৫৬০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

২০০৭ বিশ্বকাপের কথা মনে আছে ? তামিম সাকিব মুশফিকের অভিষেক বিশ্বকাপের কথা ? ভারতকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে দেয়া দুঃসাহসী সেই বিশ্বকাপের কথা ? ক্যারবিয়ান দ্বীপে হওয়া সেই মায়াবী বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচয় করে দিয়েছিল বিশ্বক্রিকেটের সামনে ।

prv_ba1dc_1419790464

২০০৭ বিশ্বকাপে আমাদের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল স্বপ্নের মতো । স্বপ্নটা রীতিমত এমনই যে আমরা দেখলাম ২৩ বছর বয়সী একটা ছেলে বলে কয়ে শচিন - সৌরভ - শেবাগ - দ্রাবিড়ের ভারতকে মাটিতে নামিয়ে আনল । বলছিলাম এখনকার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা , পোর্ট অব স্পেনে সেদিন মাশরাফির করা প্রথম স্পেল আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যেকোন বোলারের সেরা স্পেল । গ্রুপ পর্বে ভারতের পর নবাগত বারমুডাকে হারিয়ে আমরা প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপের সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলাম । যেদিন বারমুডাকে হারালাম, সেদিন ছিল ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত, ৪৬তম স্বাধীনতা বার্ষিকী পালন করার জন্য এর চেয়ে আর ভাল উপলক্ষ হতে পারত কিনা আমার জানা নেই ।

শুরু হলো স্বপ্নের সুপার এইট , সুপার এইটের প্রথম দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড আমাদের স্বপ্ন থেকে বাস্তবতায় নামালো , এই দুই প্রবল প্রতিপক্ষের সামনে তরুণ বাংলাদেশ ব্যাটবলে দাঁড়াতেই পারল না । এরপর আসল এপ্রিলের ০৭ তারিখ , দক্ষিণ আফ্রিকা আর গায়েনার প্রভিনেন্স স্টেডিয়াম । ওইদিন বাংলাদেশ জানিয়ে দিল , নিজেদের দিনে আমরা কাউকে পরোয়া করি না , ওইদিনের পর থেকে আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করলাম , আমরাও পারি , অবশ্যই পারি । টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং এ পাঠাল আফ্রিকা , উদ্দেশ্য ওভারকাস্ট কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দেয়া । কিন্তু বাংলাদেশ সতর্ক শুরু করল , প্রথম দশ ওভারে এলো মাত্র ৩৬ রান , কিন্তু উইকেট দিল না দুই ওপেনার । ১৮ বছর বয়সী তামিমকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম আমরা , বুঝলাম ছেলেটা রয়েসয়েও খেলতে জানে । অবশ্য পরের কয়টা ওভারেই টপ অর্ডার ভেঙ্গে পড়ল । ২৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে মাত্র ৯২ । ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপটে, তখন সবারই মনে হচ্ছিল ২০০ রান করাই কঠিন হবে ওই অবস্থা থেকে ।

de85e32d98dc7c9c204cdf575edf8dd3

কিন্তু ঠিক সেই সময়ে খেলা পাল্টে দিলেন সেই সময়কার বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল , ডজনখানেক বাউন্ডারিতে ৮৩ বলে ৮৭ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেললেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের লিটল মাষ্টার । সত্যি বলতে, বল আর রান দিয়ে বিচার করলে আশরাফুলের ওই ইনিংসটার প্রটি অবিচার করা হবে , মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুটি সেঞ্চুরির পর আশরাফুলের ওই ইনিংসটাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ইনিংস । গায়নার দর্শক সেদিন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিল আশরাফুলের করা একটার পর একটা স্কুপ , অফড্রাইভ আর স্কয়ার ড্রাইভ । ওই ইনিংসের কল্যাণে ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সগ্রহ দাঁড়াল ৮ উইকেটে ২৫১ । তখনকার দিনে আড়াইশ অনেক রান , আর আমাদের ছিল তিনজন বাঁহাতি স্পিনের (সাকিব, রাজ্জাক আর রফিক) । আফ্রিকা ব্যাটিং শুরু করলো রয়েসয়ে , ষষ্ঠ ওভারে প্রথম আঘাতটা হানলেন মোহাম্মদ রাসেল , অধিনায়ক স্মিথের স্ট্যাম্প উপড়ে গেল । রাত দুইটায় সমস্বরে চিৎকার করে উঠল সমগ্র বাংলাদেশ । এরপর ক্রিজে সেট হয়ে পরের ১০ ওভারে ৪৫ রানের জুটি গড়লেন ক্যালিস আর ডি-ভিলিয়ারস , কিন্তু ক্যালিস রাসেলের বলে মিড অফে ক্যাচ দিলেন তামিম ইকবালের হাতে। সেখান থেকেই খেলার মোড় ঘুরে গেল । একটার পর একটা উইকেটের পতন শুরু হলো । তিন বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক, রফিক আর সাকিব মিলে পরের ৬টা উইকেট নিলেন । দুর্দান্ত ফিল্ডিং এ রান আউট হলেন আফ্রিকার বাকি ২ জন । কেম্প , বাউচার , প্রিন্স , গিবসকে নিয়ে করা প্রবল প্রতাপশালী দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ ধ্বসে পড়ল মাত্র ১৮৪তে , বাংলাদেশ জিতল ৬৭ রানে , লেখা হয়ে গেল নতুন ইতিহাস ।

maxresdefault

শক্তির বিচারে আজকে আমাদের যে দলটি আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামছে, সেটি ২০০৭ এর ওই দল থেকে অনেক পরিণত । প্রত্যাশার বিচারে , আমাদের স্বপ্নটাও আজ আকাশ ছুঁই ছুঁই । শুধু ২০০৭ এর সেই রূপকথা ফিরে আসার অপেক্ষা ! বাংলাদেশ দলকে শুভ কামনা , ২০১৯ বিশ্বকাপের যাত্রা শুভ হউক ।