• ক্রিকেট

বাংলাদেশের হার ও আবেগি বাঙালি জাতি

পোস্টটি ২৪৪৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাঙালি আবেগী জাতি!
হ্যাঁ... খুবই আবেগী আমরা। দুই দিন আগে যার নামে জয়ধ্বনি করি, দুই দিন পড় তারই নামের দুয়োধ্বনি উচ্চারন করতে দ্বিধা করি না।

২ জুন আর ৫ জুন। মাঝে ২ দিন। 
বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম দক্ষিন আফ্রিকা বধ করল ২ জুন। টাইমলাইনে কি ঝড় উঠল... টাইগাররা দেখিয়ে দিয়েছে, কাপটা তো মনে হয় এবার নিয়েই নিব দাদা, কি টিম পারফরমেন্সটা দেখাল টাইগাররা, ম্যাককালামের চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার কর!!! 
নিউজিল্যান্ডের কাছে হারল বাংলাদেশ, তাও আবার লড়াই করে। টাইমলাইনে ঝড় আবার... তবে বাতাসের বেগ ভিন্ন দিকে! বাংলাদেশ আন্ডারডগই রয়ে গেছে, মাশরাফির অবসর নেয়াটাই ঠিক ছিল, মুশফিক সবচেয়ে বাজে কিপার, ম্যাককালাম দোষ দিয়ে আর কি হবে।

29af43ccd45696fe096dec9adcedfd1b-5cf8bdc71e9aa

আবেগী জাতি। বাঙালি খুবই আবেগী জাতি।
এমনকি এই দেশের ক্রিকেট টিমও আবেগী... ওদের বদলে যাবার পিছনে স্কিলের যতটা না হাত আছে তার চেয়ে বেশি অবদান কিছু আবেগের। নিজের জন্য না দলের জন্য খেলা, একসাথে মিলে এক দল হয়ে খেলা, চাইলে আমরা যেকোন দলকে হারাতে পারি এই বিশ্বাস- এইরকম কিছু সাধারন আবেগের। দলের স্পিন কোচ সুনিল জোশীকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, কি জাদুর বলে বদলাল বাংলাদেশ দল? উত্তর এল, 'কোন জাদু নয়, ওদের একতাই সাফল্য এনে দিয়েছে ওদের। ওটাই প্রাথমিক জিনিস।' ক্রিকবাজের টক-শো তে গৌতম ভিমানি'র বানীতে, 'The mighty SA has been taken down by the emotional Bangladesh '

আসলেই বাংলাদেশ বড় দল হতে পারেনি। ভারতের মতন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান, বোলার নাই ওদের। নেই ইংল্যান্ডের মতন দাপুটে ব্যাটিং লাইনআপ। অস্ট্রেলিয়ার মতন এতোবার বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতাও নেই। আছে শুধু আত্মবিশ্বাস, প্রবল চেতনা, একতা। দলের জন্য জানপ্রান দিয়ে খেলার মানসিকতা। কালকের ম্যাচে প্লেয়ারদের প্রত্যেকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলেই সেটা বোঝা যায়।

মাশরাফি!!!
কথা উঠছে ওর বোলিং নিয়ে। ধার নেই বোলিং-এ আর। গতিও নেই। ওকে বসিয়ে সাকিবকে ক্যাপ্টেন বানানো হোক। আচ্ছা, একবার করে দেখি, আজকে আমরা বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে যেভাবে দেখছি সেভাবে যদি না দেখতে পারতাম। যদি বাংলাদেশ সেই ২০১৩-১৪ সালের বাংলাদেশ হত। আজকে আমরা যেমন আশা করছি বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাবে, তেমনটা যদি আশা না রাখতে পারতাম। যদি বাংলাদেশ এমন টিম হত যে সবগুলো ম্যাচ হেরে যেত। কিংবা শুধু আফগানিস্তানের সাথে জেতার সামর্থ্য রাখত। যদি ম্যাচের আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক ম্যাচ জেতার না, বরং শুধু ভাল ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখাতো। ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগে, তাই না? কিন্তু এমনটা কিন্তু হতেই পারত। এমনটাই তো ছিল বাংলাদেশ ২০১৩-১৮ সালে। মাশরাফি ক্যাপ্টেন হবার আগে। এই ম্যাশ তার জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলে দিয়েছে দলকে। সামর্থ্য একই আছে, বদলে গেছে বিশ্বাস। আর এই বদল ঘটিয়েছে ম্যাশ। মাশরাফির ব্যাপারে আমার ভাল লাগে তার অ্যাটাকিং ক্রিকেট। কাল ১০-১১ তম ওভারের সময় যেভাবে লং অফ, কাভার খুলে দিয়ে স্লিপ আর গালি নিয়ে এল, কয়টা কাপ্তান এই সাহস করবে। যেভাবে আন-ইউজুয়াল ওয়েতে বোলিং চেন্জ করে ব্রেক থ্রু আনে অনেকেই সেটা করতে পারে না।

মুশফিক!!!
আবেগী জাতির আবেগী ক্রিকেট দলের সবচেয়ে আবেগী খেলোয়াড়। এই মানুষটার উইকেট কিপিং নিয়ে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। আমিও মানি, সে বেস্ট উইকেট কিপারদের মধ্যে পরে না। কালকের রান আউটে উইকেটের সামনে হাত না আনলেও পারত। কিন্তু ওটা কিন্তু সে উইকেটটার সম্ভাবনা বাড়াতেই করেছিল। ভাগ্য সাথে ছিল না, তাই হয়নি। এরকম হতেই পারে ক্রিকেটে। ভাগ্য সাথে থাকার দিনে এমন একটা এপ্রোচই সাধুবাদ পেত। তবে এরপরও কিন্তু মুশফিক দারুন দুটো ক্যাচ নিয়েছে। যেগুলো না ধরলে বাউন্ডারি পেরিয়ে যেত, আউট তো দুরের কথা। আগের ম্যাচেও তার উপস্থিত বুদ্ধির কারণে ডি কক এর মত বিপদজনক ব্যাটসম্যান ফিরে গেছে। আর ব্যাটিং এ যে নিপুণও দেখিয়েছিল, সেটা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।

সমস্যা নেই। আবেগি জাতি বলে কথা। এরকম আবেগ হয়তো ভালবাসা থেকেই আসে। তাই ভবিষ্যতে চোখ রাখি। ক'দিন পর বাংলাদেশ আবার মাঠে নামবে। আবার আবেগ নিয়ে খেলবে। আমরাও আবেগ নিয়ে দেখব। ম্যাচ শেষ আবেগি চুলাচেরা বিশ্লেষন হবে। টাইমলাইনে ঝড় উঠবে। তবে আশা করি, ঝড়ের বেগ যেন অনুকুলে থাকে।

পুনশ্চঃ পোস্টটা সকাল সকাল দিতে পারলে ভাল হত। আমেজ থাকত। কিন্তু আমার লিখতে একটু বেশি সময় লাগে। আর পোষ্টটাও বেশ লম্বা হয়ে গেছে। পড়তে ধৈর্য লাগবে। তাই যারা এই লেখাটুকু পরছেন, তারা নিজের ওপর গর্ব করতে পারেন। আপনার ধৈর্য দারুন!

#CWC19