আজি হতে বহু বর্ষ পরে...
পোস্টটি ৪৫৫৫ বার পঠিত হয়েছেহঠাৎ কেঁপে উঠলো পুরো মঞ্চ। মঞ্চে উপবিষ্ট সুধীমন্ডলীর সকলে বসলেন নড়েচড়ে। প্রবেশ করছেন মঞ্চে সকলের প্রিয় একজন। প্রিয় নেতা। গুরু। বড় ভাই। ভদ্রলোকের মুখে কাঁচাপাকা কেশের উপস্থিতি কেমন ভারিক্কি করে তুলেছে তাঁকে। সকলে একে একে এগিয়ে এসে করমর্দন আর কাঁধে কাঁধ মেলালেন। তিনি স্বভাবসুলভ রসিকতা আর খুনসুঁটিতে ব্যস্ত। মঞ্চের সবচেয়ে অনুজকে কানে কানে কী যেন বললেন, আর হাসতে হাসতে প্রায় মাটিতে লূটিয়ে পড়ার অবস্থা অনুজের। ইংলিশদের বিপক্ষে শ্বেত পোষাকে অভিষেকের পর থেকেই অনুজকে ভাবা হচ্ছিল দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। পরে হয়েছেনও তাই। চোখ দুটো এখনও ছলবলে, এখনো তিনি প্রাণোচ্ছল, ছটফটে খুব। মাইক্রোফোন হাতে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কিঞ্চিত আবেগ তাড়িত হয়ে বলেই বসলেন- “ক্যাপ্টেন আমাকে সেবার এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বল দেয়ার আগে বললেন, এই পিচটা রানপ্রসবা। প্রচুর রান বিলাবে সবাই। কিন্তু তোকে লাগাম টানতে হবে। ৫০-এর বেশী দেয়া যাবে না কোনোমতেই। কি পারবি না?”
আমি মুহূর্তমাত্র না ভেবেই বলেছিলাম- “পারবো। কারণ, ক্যাপ্টেন সেই কাজটাই আমাদের দিতেন যা আমরা পারবো বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। আমরা অকপটে অধিনায়কের বিশ্বাসকে সঞ্চারিত করতাম নিজেদের মধ্যে। তাঁর আস্থার গুঞ্জন অনুরণিত হতে আমাদের ভেতরে। বিলিভ ইট অর নট, সে ম্যাচে সবাই বেধড়ক পিটুনী খেলেও আমি ৫০-এর কম দিয়েছিলাম। এবং আরো আশ্চর্য্যের, ম্যাচ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর ছিল সেটাই।”
পাশ থেকে তাঁর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন অনুজের প্রিয় নেতা।
এক মহাঅর্জনের আনন্দ পূর্তিতে এই মিলনমেলা। সেই অনন্য অর্জনের সকল কুশীলব আছেন এখানে। কারো চোখে ভারী চশমা, কারো মুখে বয়সের ভাঁজ, গালভর্তি দাড়িও রেখেছেন কেউ কেউ। এক এক করে স্মৃতিচারণা করছেন সবাই। আবেগ তাড়িত হচ্ছেন। মুখে খৈ ফোটাচ্ছেন কাব্যিক কথামালায় সবথেকে আড়ালের মানুষটিও।
“ছয়-ছয়টি ফাইনালের পরাজয়ের প্রত্যেকটির সাক্ষী ছিলাম। এক প্রান্তে আটকে থেকে সয়েছি ‘দুই’ রানের দুঃসহ যন্ত্রণাও। কখনো প্রায়শ্চিত্তের লক্ষ্যে হাতখুলে দরাজ দিলের ঝড়ো যোগান দিয়েছি স্কোরবোর্ডে, কিন্তু তারপরও শেষ পর্যন্ত চোখের কোণের চিকচিক অশ্রুই সঙ্গী ছিল বরাবর। এক আইরিশ সন্ধ্যায় আমারই ব্যাটে যখন বুনন হলো আরাধ্য পথরেখা, সেদিনই অন্তঃপুরে দৃঢ় হলো প্রবল বিশ্বাস- এবার হবেই। এবং হয়েছিলও। আজকের এই সন্ধ্যার মূখ্য চরিত্রের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করুন, জানবেন- আমাদের বিশ্বজয়ের সোপান ছিল সেদিনের আইরিশ গ্রীষ্মের অনিন্দ্য সুন্দর সন্ধ্যেটা।”
সঞ্চালকের দায়িত্বে থাকা বিখ্যাত সাংবাদিক মহাশয়ও এখন প্রবীণের কাতারে চলে গেছেন। মহা অর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণটাতে তিনিও ছিলেন উপস্থিত। তখন তাঁর বয়সের মধ্যগগণ। সেদিনের ম্যাচ রিপোর্টে তাঁর লেখা ক’টি লাইন পড়ে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তাবৎ ক্রিকেট পাঠককূল।
“এখন অত্যুক্তি শোনালেও বলতে চাই- ডাবলিনের সূর্য মিলানোর আগে দুই ডানহাতির ব্যাটের ঝলমলে হাসিতে, প্রথম বহুজাতিক ট্রফিজয় নিশ্চিতের শুভক্ষণে তাঁকে দেখছিলাম অবাক বিস্ময়ে। তাঁর ঠোঁটজুড়ে হাসির রেখা থাকলেও, মুখের রেখা কেমন যেনো দৃঢ় প্রত্যয়ী। ইঞ্জুরি তাঁকে এই সুন্দরতম সময়ের একাদশে সঙ্গী হতে দেয়নি। মনে হচ্ছিল- তিনি মনে মনে পণ করছেন, আরো বড় কোনো বিজয়ী একাদশের একজন হবেন। বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার, তবে সেই ডাবলিনের সূর্যাস্তের সময়ে আমার স্থির বিশ্বাস জমে গেল- মাসদেড়েক পর ক্রিকেটবিশ্বে একটা জোর ধাক্কা লাগতে যাচ্ছে। এবারকার বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে তাঁর। এবং বাংলাদেশের।”
একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মাইক্রোফোন হাতে একটা চোরা হাসি দিলেন। তাকালেন সতীর্থ, বন্ধু আর প্রিয় নেতার পানে। যেনো কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। লাজুক হাসিটা জনমভর তাঁর নিত্যসঙ্গী। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন- “বিশ্বাসটা সবথেকে বড়। আপনি যদি বিশ্বাস করেন, আপনার দ্বারা অমুক কাজ সম্ভব। তাহলে সেটা যদি খুব অসম্ভব হয়; আপনার দ্বারা তা সম্ভব হোক না হোক, অসম্ভব-টা আর থাকবে না। বিশ্বাসের শক্তি এখানেই। আমরা পুরো দল সেবার অন্যরকম এক বিশ্বাসে বলীয়ান ছিলাম। এটা ব্যখ্যা করা কঠিন। আমরা যে ক’জন বিশ্বাসটা পুরোদমে আত্মস্থ করতে পেরেছিলাম কেবল তাঁরাই উপলব্ধি করতে পারি।”
এই পুনর্মিলনী তিথিতে খুব বেশী কিছু বললেন না তিনি। আয়োজক আর সঙ্গী-সাথীদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন আর ধন্যবাদ প্রদান করেই শেষ করলেন। এটার নিগূঢ় কোনো অর্থ আছে কি না কে জানে! তাঁকে বোঝে সাধ্য কার?
ছোটোখাটো গড়নের একজন দাঁড়াতেই তুমুল করতালি। কথাবার্তায় এখনো বেশ গোছানো তিনি। তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি খুব সুন্দর একটা কথা লিখেছিলেন, তাঁর ক্যারিয়ারের সমস্ত অর্জন এক পাল্লায়, এবং কেবলমাত্র এই মহাঅর্জন আরেক পাল্লায় যদি রাখা হয়, তাহলে দ্বিতীয় পাল্লাটাই নিশ্চিত হেলে পড়বে ওজনের ভারে।
উইকেটের পেছনে তাঁর দাঁড়ানো এবং শিশুতোষ ভুল নিয়ে অনেক সমালোচনাও কেনো যেনো সেদিনের পর থেকে কমে গিয়েছিল অনেকটা। অনন্য অর্জনের রাত্রিতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে একটা স্ট্যাম্প হাতে এক ইংলিশ ধারাভাষ্যকারের বাড়িয়ে ধরা মাইক্রোফোনে বলেছিলেন- “আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিন। আপনি জানেন, একজন ক্রিকেটারের জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হয় না। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, এবং আমাদের জন্য অসম্ভব আনন্দের এক উপলক্ষ্য। আমি খুব তৃপ্ত যে, এই অসামান্য অর্জনে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে পেরেছি। আই রিয়েলি হ্যাপী।” বিদেশী ভদ্রলোক একজন বিশ্বজয়ীর এমন বিনয়ে বিমোহিত হয়ে মাইক্রোফোন নিজের দিকে টেনে বলে বসেন- “সে আকারে ছোটো হলেও মননে অনেক বড়। এই দলটা যে এমন একটা অর্জনের গর্জনে ভাসছে, এমনতর নিবেদিত ক্রিকেটার ছিল বলেই। হ্যাটস অফ টু হিম।” বলেই কোনো একজনের মাথা থেকে টুপি নিয়ে নিজের মাথায় দিয়ে আবার খুলে খানিক ঝুঁকে- সত্যিকার অর্থেই টুপিখোলা সম্মান জানান বিলেতি ভদ্রলোক। ইংলিশ জেন্টেলম্যান বলে কথা!
এই ছোট্ট কথোপকথনের ক্লিপ বড় পর্দায় শেষ হতেই তুমুল করতালিতে আরো একবার উচ্চকিত হলো পুরো প্রাঙ্গণ। ছোট্ট মানুষটি বুঝি লজ্জায় মিশে যাবেন মাটির সাথে। আস্তে করে শুরু করেন, “সত্যি বলতে অসাধারণ একটা মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয়, আমরা যে ক’জন সেখানে ছিলাম তাঁরা মৃত্যু পর্যন্ত সে শিহরণ ভুলতে পারবো না। ছয়-ছয়টি ফাইনাল হারের দুঃখে প্রলেপ দিয়ে সাত নাম্বার ফাইনাল জেতার মাস দেড়েক পর এমন এক ফাইনাল আমরা জিতবো, এবং তা ভুলিয়ে দেবে আগের ছয়টি হারের দুঃখ তা কে ভেবেছিল? দল একটা পরিবারের মতো। একটা দলের বহু মত বা কথা থাকতে পারে না। আমাদের পুরো দলেরও বিশ্বাস একটা জায়গায় স্থির হয়ে গিয়েছিল। আমরা কঠোর পরিশ্রম আর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম, এবং তার ফল পেয়েছিলাম। মহান প্রভুকে ধন্যবাদ, এই সময় ভাগ্যটাও ছিল আমাদের পাশে। অবিশ্বাস্য এক যাত্রা ছিল পুরো সময়টা।”
“আমি আর কী বলবো...” বলেই মঞ্চের মাঝে মাইক্রোফোন হাতে শিশুর মতো সরল হাসিতে মেতে উঠেন চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠতম ক্রিকেট সন্তান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বেশ ডাকাবুকো চরিত্রের ছিলেন। তবে পরে তা মিলিয়ে গিয়ে কেমন নম্র, সুবোধ আর নিপাট হয়ে গিয়েছিলেন। এক সময় তাঁকে নিয়ে অভিযোগ ছিল- তিনি চাচা নামের এক খুঁটিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ান। তবে পরে তাঁর জৌলুস এমনই বাড়ে যে, চাচার মতো সহজ-সরল জীবন দর্শনটাই কেবল সঙ্গী থাকে তাঁর, চাচাকে ছাড়িয়ে যান বাকী সবকিছুতে। চট্টগ্রামের কাজীর দেউরী মোড়ে অগুনতি মানুষের মুখে তাঁর নাম আর ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ শুনে তিনি ফিরে যান শৈশবে। সেই মুহূর্তে বাড়ির বসার ঘরে দেশী-বিদেশী এক ডজন সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন- “ছেলেবেলায় আমাদের বাড়ির সামনেটায় লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। সবাই ‘আকরাম ভাই আকরাম ভাই’ আর ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ করছিল। শৈশবের এই টুকরো স্মৃতিচিহ্ন সবসময় জ্বালানী ছিল আমার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে। এখন দেখুন, বছর ২০-২২ পরে সব কেমন বদলে গেছে! আমার ছেলে আছে, দেখছে। ভাতিজা আছে, দেখছে। আশা করছি, ব্যাপারটা ওদেরও সমানভাবে উদ্বেলিত করবে।”
খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন প্রায়ই তাঁর বাবা চলে আসতেন তাঁর সমস্ত ক্রিকেট আলোচনায়, এখানেও ব্যতিক্রম হলো না সে ঘটনার। তিনি মাইক্রোফোন রেখে বসতে যাবেন, দেখছেন মঞ্চের সব আলো নিভিয়ে বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে তাঁর ছোট্ট একটি ক্লিপ। যেখানে তিনি বলেছিলেন- “বিশ্বকাপ জেতার মানসিকতা নিয়েই আমরা এখানে এসেছি।”
সেই ক্লিপ শেষ হতেই করতালির বান ডাকলো যেন হলঘরটায়। সেই শিশুতোষ হাসি নিয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে ব্যাপারটায় তখন সহজ ভাব আনার চেষ্টায় তিনি।
অনেকেই অনেক কিছু বললেন। কেউ আবেগে চোখের পানি ফেললেন, কেউ জানালেন মজার কোনো স্মৃতি। সবশেষে ‘জীবনের সব লেনদেন’ ফুরানোর আগে মাইক্রোফোন দিয়ে মঞ্চের মাঝখানটা ছেড়ে দেয়া হলো তাঁর জন্য। মঞ্চে উপস্থিত ও উপবিষ্ট প্রত্যেকেই তাঁর মোহে মোহাবিষ্ট। তিনি তাদের প্রিয় দলপতি। প্রিয় ভাই। প্রিয় বন্ধু। সবচেয়ে কাছের একজন।
দেশের মাটিতে ঐ সোনারাঙা বিশ্বজয়ের স্মারক হাতে আনন্দ মিছিলের মাঝপথে তিনি বলেছিলেন- “যে বিশ্বাস আর আস্থার দাপটে আমাদের এই অর্জন, সবকিছুর মূলে আছেন আপনারা- জনগণ। আপনারা যদি আমাদের অন্তঃপুরে এই বিশ্বাস সঞ্চারিত না করতেন, আমাদের যদি এই অনুভূতি না দিতেন যে- আমরাও বিশ্বজয় করতে পারি, তাহলে হয়তো আজকের এই আনন্দঘন মুহূর্তের শামিল হতে পারতাম না আমরা কেউই। আমি এখনো বলছি- এটা সবে শুরু। বিশ্বক্রিকেটের বাঁক বদলের ডাক মাত্রই দিয়েছে বাংলাদেশ, আরো অনেক অনেক মহা মহা অর্জন আমাদের দ্বারা অর্জিত হবে হবে, ইনশাআল্লাহ।”
তাঁকে নিয়ে অনেক কালজয়ী রচনা হয়েছে তারপর। তবে সবচেয়ে সুন্দর বলেছিলেন এক সুবিখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিকের সঙ্গে কথোপকথনে। “একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী যদি জানে তার সব শেষ। নিরাময় নেই আর। দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি এখানেই। তখন সে কী করে বা করবে? দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার আগে চাইবে- যতটা সম্ভব উপভোগ করতে যতটুক সময় পাওয়া যায়। তার কাছে হতাশা বা না পাওয়া কিংবা নেতিবাচকতার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ, সে জানে তার জীবনে এসব খুবই গৌণ হয়ে গেছে। আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল অনেকটা এমন। আমি জানতাম এটাই আমার শেষ। আমার সর্বস্ব উজার করে দেওয়ার এটাই শেষ সুযোগ। আমি আর সব ভুলে কেবল এই মাস দেড়েক নিয়েই ভাবছিলাম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রত্যেকটা দল, প্রত্যেকটা ক্রিকেটার, আমাদের শক্তিমত্তা আর দুর্বলতা- এইসবই ছিল পুরো সময় জুড়ে আমার ভাবনায়। উপভোগ করার সাথে সাথে নিজেকে নিংড়ে দেয়ার অভিলাষের যুগলবন্দী ছিল আমার মূলমন্ত্র। আমার সৌভাগ্য যে মনের মতো একটা দল দাঁড় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এবং সেই দলের প্রত্যেকটা সদস্যই আমার মতো করে সর্বোচ্চ বিলিয়ে দেয়ার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়েছিল।”
তিনি যদি দর্শনশাস্ত্রের ক্লাস নেন, নিশ্চিতভাবেই তা বিরক্তির উদ্রেক করবে না। তাঁর গভীর জীবনবোধ, ভাবাবেগ, আর জীবন-দর্শনের মুগ্ধ শ্রোতা অনেকেই।
এই মহা-মঞ্চে, মহামিলনের মাহেন্দ্রক্ষণে তেমন কোনো গভীর দর্শন কপচালেন না! কেবল বললেন- “ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া অবশ্যই অনন্য অর্জন। এটা সর্বোচ্চ ধাপ। যেমনটা ডাক্তারীতে, সাহিত্যে, শিক্ষকতায় থাকে। কেউ সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেন, কেউ নোবেল পান, কেউ বুকার পান। পেশাদারী বা প্যাশনের এই জায়গাগুলোর বাইরেও আমাদের আরো বড় অর্জনের পথ থেকে যায়। ধরুন, আপনি দারুণ কিছু আবিষ্কার করলেন, কিন্তু আপনার বাচ্চাটা ভালো মানুষ হলো না। তাহলে পেশাদারীর জায়গায় আপনি সফল, জ্ঞানের সাধনায় আপনি একশোই পেলেন একশো, কিন্তু বাবা হিসেবে আপনি ব্যর্থ পিতাই রয়ে গেলেন। আমরা বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার হলাম, কিন্তু আমাদের বাচ্চারা যদি সৎপথের দিশা না পায় বা সুপথের দিক ভুলে যায়, তাহলে বাবা হিসেবে আমি পুরোপুরিই ব্যর্থ। একইভাবে সমাজের প্রতিও দায়বদ্বতা থাকে কিছু, থাকে দেশের প্রতিও। আমরা যদি সেসব দায় ঠিকমতো মেটাতে না পারি- তাহলে ক্রিকেটার হিসেবে সফল হলাম সত্যি, কিন্তু মানুষ হিসেবে ব্যর্থ-ই বলা চলে। জীবনের এই বাঁকে আমার উপলব্ধি- মানুষ হিসেবে সফল হওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
করতালির ভীষণ আওয়াজে ভূমিকম্পই বুঝি হয়ে যাবে! তাঁর বয়স হয়েছে সত্যি, তবে জীবন দর্শনে একটুও যেনো পরিবর্তন আসেনি।
মহাঅর্জনের আনন্দপূর্তির সমাপন, এর চেয়ে ভালোভাবে করা যেত বলে মনে করলেন না আয়োজকদের কেউই।
- 0 মন্তব্য