কে সেরা?
পোস্টটি ৩৭৪১ বার পঠিত হয়েছেসাইফ ও সাগর বসে আছে শিহাব ভাইয়ের দোকানে। শিহাব ভাইয়ের সাথে করছে নানান আলোচনা। তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রান পুর্ণ করে ফেলেছেন। তাই তামিম ভক্ত সাইফ শুরু করলো তামিমকে নিয়ে আলোচনা। সাকিব ভক্ত সাগর আলোচনায় নিয়ে আসেন সাকিবকেও। ক্রিকেট নিয়ে চলে তাদের কথোপকথন। এদিকে শিহাব ভাই ক্রিকেট কমই বোঝেন, তাই তিনি শুধু শুনতেই থাকেন তাদের কথাগুলো।
সাইফঃ বন্ধু, দেখলা তামিম ১৩ হাজার রান করে ফেললো।
সাগরঃ হ্যা, তো কি হইছে?
সাইফঃ এবার তো মানো যে তামিম সেরা?
সাগরঃ না মানিনা। ১৩ হাজার করলে কি হবে।
সাইফঃ আজব রে ভাই, মানোনা? বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেনি। ফার্স্ট ক্লাসেও তো এত রান করতে পারেনি কেউ।
সাগরঃ কিন্ত বাংলাদেশে তামিম ছাড়া আর কেউ তো এত লম্বা সময় ধরে খেলতেই পারেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। রান করারই তো কথা!
সাইফঃ এই সময়ে তো কোন ভালো মানের ওপেনারই পেলো না বাংলাদেশ। যারা কিনা পারফর্ম করতে পারে। কত ওপেনার এলেন, কিন্ত কেউই বেশি সময় টিকে থাকতে পারেলেন না। সেই এক দশকের বেশি সময় থেকেই এক পাশে আছেন তামিম, তার সঙ্গী হলেন সৌম্য, লিটন, ইমরুল, সাদমানেরা। কেউই তো ধারাবাহিক হতে পারলেন না।
সাগরঃ এসব সত্যি। কিন্ত তামিমও কিন্ত এতটা ধারাবাহিক ছিলেন না। মানলাম, গত কয়েক বছর তামিমের ফর্ম খুবই ভালো ছিলো। কিন্ত গত বছর বা এ বছরও তো তামিমের অবস্থা ভালো না। আর এর আগেও এভাবে অনেক সময় তামিম ছিলেন ফর্মহীন। তাও তিনি খেলে গেছেন। কারণ তাঁর জায়গায় বদলি হিসেবে কাউকে খুজেই পাচ্ছিলো না বিসিবি। আর তোর তামিম ত রে ভাই চাচার জুরে খেলে!
সাইফঃ না না। তামিম কখনোই চাচার জুরে খেলেনাই। সবসময়ই পারফর্ম করেই দলে খেলেছে। তবে এটাও ঠিক যে তাঁর থেকে ভালো কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা বা যারা এসেছিলেন তাঁর থেকে ভালো করতে পারেননি। আর ভাই, তামিমের চাচাজানেরই তো অবস্থা খারাপ। নামেমাত্রই তিনি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁর কাজ হলো জাতীয় দলকে দেখাশোনা করা । কিন্ত আমাদের জাতীয় দলের দায়িত্ব তো সভাপতি সাহেব নিয়ে নিছেন, উনাকে ম্যাচের আগের দিনের গেম প্লানও জানাতে হয়। আর যেহেতু তামিমের চাচা আকরাম খান ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান, তাহলে তো দল নির্বাচনে তাঁর কোন ভূমিকাই নেই।
সাগরঃ হ্যা, কিন্ত তামিমের এভারেজ দেখেছ? তামিমের মতো এরকম লম্বা সময় ধরে খেলা যেকোন ওপেনারের এভারেজ ৫০ এর কাছাকাছি। তামিমের তো কোন ফরম্যাটেই এভারেজ ৪০ এর উপরে নাই। সর্বোচ্চ মনে হয়ে ৩৭ কি ৩৮ হবে। এরকম এভারেজ তো এক দশকের বেশি সময় ধরে খেলা কোন ক্রিকেটারে মানায় না।
(সাগর শিহাব ভাইকে তাঁর ক্যালকুলেটরটা দেওয়ার জন্য বললো ও হিসাব করতে লাগলো)
সাগরঃ এই দেখ তোর তামিম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৩৪১টি, মোট ইনিংস ৩৯৪। রান সর্বমোট ১৩ হাজার ১৪। তাহলে এভারেজ কত? মাত্র ৩৩.০৩। এইটা কোন এভারেজ!
সাইফঃ সাগর, এখন টি-টোয়েন্টিতে কারো এভারেজ ৩০ হলে তাকে তো আর খারাপ বলা যায় না। আবার ঐ ৩০ যদি ওয়ানডে বা টেস্টে হয় তাহলে তো কিছুটা খারাপের কাতারে ফেলা যায়। আর কারো ওয়ানডে এভারেজ যদি ৫০ হয়, তাহলে কি সে প্রতি ম্যাচেই ফিফটি মারতে পারবে?
সাগরঃ না। এজন্যই তো ক্রিকেট সেরা।
সাইফঃ সবসময় এভারেজ দিয়ে কারো মান যাচাই করা যায়না বন্ধু। এখন কোন সহযোগী দেশের কোন ব্যাটসম্যানের এভারেজ ৫০ এর উপরে হলেই তুমি বলে দিতে পারবেনা সে খুব ভালো ব্যাটসম্যান বা সে বড় যেকোন দেশের সঙ্গে রান করে ফেলবে। কিন্ত তামিমের এভারেজ ৩৫-৩৬ হলেও তামিম যে মানের প্লেয়ার বা তামিম যতটুকু দক্ষতা সম্পন্ন, তামিমের উপর তুমি যেকোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই ভরসা করতে পারো।
সাগরঃ সহমত। আসলে তামিমকে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান বলা যায়। তবে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের একজন কিন্ত তামিমকে বলতে পারছিনা আমি। আর রানের বিচারে তামিমকে সেরা ব্যাটসম্যান বলা গেলেও সাকিব কিন্ত তামিমের চেয়েও এগিয়ে।
সাইফঃ কেমনে বন্ধু?
সাগরঃ তামিম করেন ওপেনিং। তাই তাঁর কাছে রান করার যথেস্ট সুযোগ থাকে। আর সাকিব খেলেন ওয়ান ডাউনে। কিন্ত ওয়ান ডাউনেও খেলছেন এই গত কয়েক বছর ধরে। এর আগে তো উঠতেন চারে, পাচে, ছয়ে কিংবা সাতে। কিন্ত তাও সাকিবের রান তামিমের কাছাকাছি। তামিমের মতো সুযোগ পেলে হয়তো সাকিব ছাড়িয়েই যেতেন তামিমকে। ওপেনিংয়ে রান করার যতটা সুযোগ পাওয়া যায়, পাচ-ছয়ে উঠলে তো আর সে সুযোগ পাওয়া যায়না।
সাইফঃ আরে ভাই, সব কিছু সবাইকে দিয়ে হয়না। সাকিব যদি ওপেনিং করতেন, তাহলে কেমন করতেন তুমি কি জানো। হয়তো চরম ব্যর্থই হতেন। তাহলে?
সাগরঃ ঠিক। কিন্ত একজন অলরাউন্ডার আর শুধু ব্যাটসম্যানের মাঝে অনেক পার্থক্য। সাকিব অলরাউন্ডার হয়েও একজন ওপেনিং ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি রান করে ফেলছেন। তা কি আর কম কথা বন্ধু। সাকিব তো বোলিংয়ে রেকর্ড আর রেকর্ড করতেছে, পাশাপাশি রানের দিকেও এগিয়ে। তোমার তামিমের পুরো ক্যারিয়ারে কয়টা উইকেট আছে?
(সাইফকে খ্যাপানোর জন্য সাগর এমনটা বলে। যদিও সে জানে তামিম বোলিংই করেননা, পিউর ব্যাটসম্যান)
সাইফঃ আরে ভাই বোলিং না করলে কেমনে উইকেট নেবে। আচ্ছা বাদ দে, এভাবে তর্ক করতে থাকলে সারাদিনই শিহাব ভাইয়ের দোকানে চলে যাবে। শিহাব ভাই তো আর আমাদের খাওয়াবে না যে আমরা থাকবো!
(হঠাৎ শিহাব ভাই বলে উঠলেন, 'আরে থাক তোরা, আমার বাসা থেকে খাবার আসুক। সবাই মিলেমিশে খাবো।' শিহাব ভাই বোধহয় তাদের আলোচনা শুনে খুব মজাই পাচ্ছিলেন)
সাইফঃ না ভাই, ধন্যবাদ। মজা করে বললাম। আচ্ছা সাগর, এখন তো মানো তামিম সেরা?
সাগরঃ না এখনো পুরোপুরি মানতে পারলাম না।
সাইফঃ কেন রে ভাই! ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর তামিমের, ৩৩৪। আর বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও তামিমের, ২১টি। ওয়ানডেতে ১১টা, টেস্টে ৯টি ও টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি আছে তামিমের। বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে সেই যে সেঞ্চুরি হাকালেন। মনে নাই? আর ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ফিফটিও তামিমের, ৪৭টি। আর কি বলবো, আর কিছু মনে পড়ছে না। আচ্ছা, এবার বল তামিম সেরা নাকি সেরা না?
সাইফঃ আচ্ছা মানলাম, তামিম বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান। তবে সাকিবও কিন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন। আর ইতিহাসের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে তো আছেনই। ব্যাটসম্যান সাকিব আর তামিমের মাঝে তামিমই সেরা। কিন্ত ক্রিকেটার তামিম ও সাকিবের মাঝে সাকিবই সেরা।
সাইফঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এবার যাই, অনেক তো বকবক করলাম।
সাগরঃ হ্যা চল।
সাগর ও সাইফ তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। যেতে যেতে আবার আলোচনা শুরু করলো তারা। তবে সেটা ক্রিকেট নিয়ে নয়। অন্য কিছু নিয়েই...
- 0 মন্তব্য