• ক্রিকেট

ক্যারি প্যাকার,যার হাতে ক্রিকেটের প্রসার!

পোস্টটি ২৪১০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্যারি প্যাকার(Kerry Packer),আপনি ক্রিকেটাঙ্গনের মানুষ,তবু ক্রিকেটিয় শব্দের পরিবর্তে আপনার জন্য বণিক শব্দটিই ব্যাবহার করলাম।আপনি এতে অসন্তুষ্ট হওয়ার কথা না।কারণ,ক্রিকেটের প্রতি সামান্যতম ভালবাসা থেকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন নি,আপনি এর মধ্যে টাকার গন্ধ পেয়েছিলেন এবং সেই অর্থ কুক্ষিগত করার প্রয়াসেই ক্রিকেটে উদ্দীপনা পেয়েছিলেন।ব্যাবসায়ীরা এটা করা দোষের না,কিন্তু ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে যখন খেলার স্পিরিটকে কলংকিত করে অভিযোগটা তখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।আপনি নিজের ইগোকে জেতাতে চেয়েছেন সবসময়,অর্থ দিয়েই সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হতে চেয়েছেন।

ক্যারি ফ্রান্সিস বুলমোর প্যাকার নাম নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৭ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে আপনি জন্মগ্রহণ করেন। আপনার বাবা স্যার ফ্রাঙ্ক প্যাকার অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমের স্বত্তাধিকারী ছিলেন।

WhatsApp Image 2020-03-15 at 10.37.58 AM

ক্যারি প্যাকার,পারিবারিকভাবেই আপনি বিত্তশালী। আপনার বাবা মৃত্যকালে ১০০ মিলিয়ন ডলার রেখে গিয়েছিলেন।এই বিপুল পরিমাণ কর্থ কাজে লাগিয়ে আপনি আরো অর্থশালী হবেন এতে অবাক হওয়ার কথা নয়!অস্ট্রেলিয়ার বিজনেস রিভিউ উইকলি ম্যাগাজিন ২০০৪ এ আপনার সম্পদের আনুমানিক হিসাব ধরেছিল ৬.৫ মিলিয়ন ডলার।বিশ্বে আপনিই প্রথম মানুষ যিনি ক্রিকেট খেলা টেলিভিশনে সম্প্রচার করে অর্থ উপার্জন করেছেন।সম্ভবত একারণেই খেলাটির প্রতি আপনার আগ্রহ বেড়েছিল।নইলে সংবাদপত্র আর প্রকাশনী সংস্থার ব্যাবসার সাথে ক্রিকেট ব্যাবসা সেভাবে মেলে না।আপনি কিছুটা খেয়ালি বাদশার মত,যে যখন যা ইচ্ছা তাই করতে চায়।ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট আয়োজনে ইংল্যান্ড অধিনায়ক টনি গ্রেগ আপনাকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে দিয়েছিল;প্রতিদানে আপনি তেমন কিছু চিন্তা না করেই তাকে চ্যানেল নাইন নেটওয়ার্কে আজীবন চাকরি দিয়ে দিলেন।সত্যি অদ্ভুত ছিল,কারণ ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট শুরু করেছিলেন শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডকে নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য।এশেজ টেস্ট সম্প্রচারস্বত্ব পাননি বলে ক্রিকেটের এত বড় ক্ষতি করতে হবে!আপনি সব দেশের নামি ক্রিকেটারদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে নিজের আয়ত্তে নিয়ে এসেছিলেন,অস্ট্রেলিয়ার এশেজ খেলতে হয়েছিল অবসরে যাওয়া ববি সিম্পসনকে ফিরিয়ে এনে।অর্থের দম্ভের একপর্যায়ে আপনি অস্ট্রেলিয়ান বোর্ডকেই কিনে নিতে চেয়েছিলেন।১৯৭৬ সালের সেই ঐতিহাসিক মিটিংয়ে আপনি তাদের বলেছিলেন,"There is a little bit of the whore in all of us,gentleman.What is your price?"

এতোদূর অবধি পড়ার পর পাঠকেরা ভাববেন আমি আপনাকে ক্রিকেটের বিষ হিসেবে পরিচিত করছি।এমনটি মনে হওয়া সম্পূর্ণ ভুল।অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড আর আইসিসিকে একহাত নিতে গিয়ে আপনি যে অজ্ঞাতসারেই ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় উপকার করেছেন তা যে কোন মানুষই একবাক্যে স্বীকার করবে।ওয়ার্ল্ড সিরিজের ক্রিকেটের পরই বোর্ডগুলো অনুধাবন করে ক্রিকেটারদের খুবই নিম্ন পারিশ্রমিক প্রদান করা হয় যা দিয়ে সংসার চালানো দুঃসাধ্য।আপনার দেখাদেখিই ক্রিকেটারদের জন্য বেতন চালু করা হয়,ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পুরো কৃতিত্ব আপনার।আপনার মাহাত্ন্য আরো গভীর।সাদা পোশাক আর লাল বলের চৌহদ্দি পেরিয়ে রঙিন পোশাক,সাদা বল আর দিবারাত্রির ম্যাচের পরিমণ্ডলে ক্রিকেট প্রবেশের একক কৃতিত্ব আপনাকেই দিতে হবে।

বর্ণবাদের কারণে আইসিসি দক্ষিণ আফ্রিকাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ করলো,আপনি আইসিসির তোয়াক্কা না করে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের চুক্তিবদ্ধ করলেন।

মৃত্যুও সহজে জিততে পারেনি আপনার সাথে।চার চার বার হার্ট এটাক হয়েছে,একবার তো ৬ মিনিটের জন্য ক্লিনিকালি ডেডও হয়ে গিয়েছিলেন,তবু হার মানেননি।শেষ পর্যন্ত কিডনি রোগের কাছে হার স্বীকার করলেন।ডাক্তাররা অবশ্য বলেছিল,চিকিৎসা করালে আরো কিছুদিন টিকবেন।কিন্তু নিজের শরীরকে ভালই চিনতেন আপনি,তাই ডাক্তারদের জানিয়ে দিলেন,"আমার গাড়ির পেট্রোল ফুরিয়ে এসেছে,অযাচিতভাবে জীবনের দৈর্ঘ্য না বাড়িয়ে সম্মানের সাথে মরাই ভাল।"

২৬ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে ৬৮ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে ক্যারি প্যাকারের দেহাবসান ঘটে।

হয়তোবা এত সব অবধানের কারণে আপনার মৃত্যুতে এমসিজিতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।এই সম্মাননা কি আপনার জন্য যথার্থ বলুন?টসের কয়েনে আপনার ছবি দেখলে আপনার প্রতি সম্মানটা যথার্থ হয়েছে বলে ভেবেনিতাম।

টনি গ্রেগ যথার্থই বলেছেন,"ক্রিকেটের এমন কোনো ইতিহাস লেখা সম্ভব নয় যেখানে ক্যারি প্যাকার নামটি উহ্য থাকবে।"