• ফুটবল

ভালবাসি তাই, ভালবেসে যাই!

পোস্টটি ১৩৯৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সকলের জীবনেই প্রেম আসে। কিন্ত সকল প্রেম পরিপূর্ণতা পাইনা। কারো জীবনে প্রেম সূঁচ হয়ে প্রবেশ করে ফাল হয়ে বের হয়। সৃষ্টি করে একটি ভাঙ্গা হৃদয়। আবার কারো জীবনে জোনাকির আলোর মত এসে জীবনটাকে পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত করে দেয়। প্রবাদ আছে, প্রতিটি মহান মানুষের সফলতার পেছনে একজন নারীর গল্প থাকে। শূন্য থেকে মহান হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি সিঁড়ি টপকে যেতে একজন নারী অনুপ্রেরণা দিয়ে যায়। এই প্রচলিত প্রবাদ বাক্য গুলো বর্তমান সময়ের ফুটবল তারকা লুইস সুয়ারেজ ও তার স্ত্রী সফিয়া বালবির প্রেমের গল্পকে সংজ্ঞায়িত করে পুরোপুরি। এবার তাদের প্রেম উপন্যাসে এক পলক চোখ বুলিয়ে আসা যাক।

 

উরুগুয়ের সালতো শহরে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম লুইস সুয়ারেজের। মা সান্দ্রা দিয়াজ ও বাবা রুদোলফো সুয়ারেজের সাত সন্তানের মধ্যে সুয়ারেজ চতূর্থ সন্তান। জীবিকার জন্য একপর্যায়ে তার পরিবারকে উরুগুয়ের রাজধানী মন্টিভিডিও তে পাড়ি জমাতে হয়। বার্সালোনার মাঠ মাতানো এই তারকার শৈশব ছিল দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত।  

169061131-1446374151-800

যখন তার বয়স ৯, তখন জীবিকার জন্য রাস্তার ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। তবুও কাজের পাশাপাশি তিনি ফুটবল অনুশীলন চালিয়ে যেতেন। ১৪ বছর বয়সে তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটি আসে। তিনি সফিয়া নামে স্বর্ণকেশী এক সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়েন। তারা একসাথে অনেকটা সময় কাটান। ধীরে ধীরে সফিয়া সুয়ারেজের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেন। তারা একে অপরের সাথে আরো বেশি পরিচিত হয়ে উঠেন এবং একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন সম্পর্কটা অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। 

 

মাঝে সুয়ারেজের বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এসময় সফিয়া তার পাশে থেকে তাকে প্রেরণা দেয়। এমনকি সুয়ারেজের বদঅভ্যাস গুলো ধীরে ধীরে ত্যাগ করতে সহায়তা করেন। লুইস মানসিকভাবে দৃঢ় এবং পরিশ্রমী হয়ে ওঠেন। তিনি বিকেলে ফুটবল খেলতেন এবং রাতে স্কুলে কাজ করতেন। সেই সময় সুয়ারেজ ন্যাসিয়োনাল ক্লাবের কাছ থেকে সম্মান ও পেয়েছেন। স্থানীয় ক্লাবে তার পারফরমেন্স খুবই ঈর্ষনীয় ছিল এবং তার স্ত্রী সফিয়াও এটি বুঝতে পারেন। ন্যাসিয়োনালের প্রতিভা অন্বেষণকারী গাইড উইলসন পাইরেস বলেছিলেন, "সুয়ারেজ যখন ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তখন সফিয়াকে প্রায়ই মাঠের কিনারে দেখা যেত। সে ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার জন্য মানসিকভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না। তবে সফিয়ার উপস্থিতি এই ছেলেটিকে সফল হতে আগ্রহী করেছিল।" 

 

উরুগুয়ে লিগ চ্যাম্পিয়নশিপে ন্যাসিয়োনালের হয়ে দূর্দান্ত পারফরমেন্সর পর সুয়ারেজকে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হারাতে হয়েছিল। সফিয়া ২০০৩ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় পড়াশোনা করার জন্য পাড়ি জমান। ফলে সুয়ারেজকে উরুগুয়েতে ছেড়ে আসতে হয়। সুয়ারেজ বলেন, "সফিয়া স্পেনে চলে যাওয়ার পর আমি ফুটবল খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেসময় আমি বুঝতে পারি, এই সুন্দর খেলাটির জন্য আমার নিজেকে উৎসর্গ করা উচিত।" দুরত্ব তার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হয়ে উঠে। সে সবসময় সফিয়ার সাথে দেখা করতে এবং তার সাথে থাকতে চাইত। 'চ্যানেল ১০' এ দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সুয়ারেজ সফিয়া চলে যাওয়ার পর তার জীবনের খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো প্রকাশ করেছিলেন।

 

১৬ বছর বয়সে বিমানবন্দরে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বিকার হন। সেই মুহুর্তে সফিয়ার সাথে সাক্ষাতকার করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার মনে। তিনি বলেন, "বার্সেলোনার টিকেট কাটার জন্য আমার যথেষ্ট টাকা ছিল না। আমার ভাই আমাকে ৪৫ ইউরো ঋণ দিয়েছিল। যাত্রাপথে খুব দীর্ঘ সময় লেগেছিল। আমি সেখানে পৌঁছানোর পর বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ১৬ বছর বয়স বলে আমাকে বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিল। তার উপর আমার কাছে কিছুই নেই, যাওয়ার কোন ঠিকানা নেই।"  সুয়ারেজ প্রকাশ করেছেন যে তিনি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় সফিয়া আসলে তার জন্য দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করেছিল। কারণ সফিয়া বুঝতে পেরেছেন তার সফরের কোনও সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য না থাকায় তাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আটক করা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একজন অফিসার সুয়ারেজের ব্যাগে একটি ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার পরে তাকে ছেড়ে দেন। তবে ইতিমধ্যে সফিয়া দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে সুয়ারেজের সাথে সফিয়ার দেখা হয় নি। এটি সত্যই তার জন্য অত্যন্ত দুঃখের অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর পরে, সুয়ারেজ অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন মনের মধ্যে সফিয়ার সাথে দেখা করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।

Luis-Suarez-Wife-sofia

নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিঞ্জেনর ক্লাব যখন  সুয়ারেজেকে দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে তখন তিনি খুব খুশি হন। তার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা আসছে। তার ঐতিহাসিক দিন এসে গেছে। তিনি তীব্র আশা নিয়ে নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন। আর ভাবনা শুধু একটা, সফিয়ার সাথে তার বিমানপথের দূরত্ব হবে মাত্র দুই ঘন্টা। এইতো, খুব কাছেই চলে আসছি!

 

পরে সুয়ারেজ আবার অ্যাজাক্স আমস্টারডামে চলে আসেন। ২০০৯ সালে সোফিয়া অবশেষে নেদারল্যান্ডস আসেন, তারা একসাথে থাকার জন্য বিয়ে করেন। বিয়ের পর সুয়ারেজের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল।

 

নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ১৯৬ ম্যাচের মধ্যে ১২৬ গোল করার পরে সুয়ারেজ লিভারপুলে চলে যান। সফিয়া সত্যিই তার জীবন বদলেছিল। সুয়ারেজ আরও তীব্র এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

 

লিভারপুলের হয়ে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে সুয়ারেজ শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। তার স্বপ্ন বাস্তব হয়েছিল। সফিয়াকে বিবাহ করার পরে, সুয়ারেজ বার্সেলোনায় থাকা তাঁর স্ত্রীর পরিবারের আরও কাছাকাছি থাকার সুযোগ হয় অবশেষে।

 

লুইস সুয়ারেজ স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য তার সব বদঅভ্যাস ত্যাগ করেন। এই ঘটনাটি সফিয়াকে অপ্রত্যক্ষভাবে এমন এক ব্যক্তিতে পরিণত করে, যে সুয়ারেজের  ফুটবল ক্যারিয়ার নির্ধারণ করেছেন।