• ফুটবল

বছরের সব থেকে জঘন্যতম সাইনিং থেকে বিশ্বসেরা ক্লাবের নিউক্লিয়াস! এক প্রথাগত জাদুকরের বিশ্বসেরা হয়ে উঠার গল্পকথা..!

পোস্টটি ২১৫৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
  • প্রশ্নঃ লুকা মদ্রিচ বলতে তুমি কি বুঝো?
    লুকা মদ্রিচ হলো সেই মাল যার ঝাঁকড়া চুল আছে!  inbound3718764827106219673তিনি হলেন অনেকটা ওয়াইনের মতো বয়স যত বাড়ছে  সময় যত গোড়াচ্ছে  তার স্বাদ তত বাড়ছে!
    যে বছরের সব থেকে জঘন্যতম সাইনিং থেকে হয়ছিলেন বিশ্বসেরা ক্লাবের নিউক্লিয়াস!
    তিনি হলেন এক প্রথাগত জাদুকর!
    এবং আমার জন্য ভালোবাসার আরেক নাম মদ্রিচ!
    আমার হোম স্ক্রিনের সবসময়ের ভাগিদার মদ্রিচ
    আমার গ্যালারির অর্ধেক জুড়েও মদ্রিচ !

সাধারন অর্থে ম্যাজিশিয়ান বা জাদুকর কাকে বলে ? 

আমাদের মতো মানুষের মধ্যে থেকে যদি কেউ অতিমানবীয় কিছু করে সেই ম্যাজিশিয়ান বা যাদুকর। অন্যভাবে বলা যায়, যে আমাদের সামনে  অতিমানবীয় কিছু প্রকাশ করে সেই ম্যাজিশিয়ান যা আমরা সবাই পারি না আর এই না পারা কাজ গুলাই আমাদের আর জাদুকরের মধ্যে পার্থক্য করে দিয়েছে। 

আর লুকা মদ্রিচ ও ঠিক তাই ❤

আজ থেকে ৩২ বছর আগের কথা, ক্রোটরা পার করছিলো অতি দুঃসময়। "সোভিয়েত ইউনিয়নের" সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থা আর কতকাল মানা যায়! তাইতো প্রভাবশালীদের থেকে অল্পদিন আগেই নিজেদের ছুটিয়ে নিলো "যুগোস্লাভিয়া"। প্রায়শই সমানে স্লাভদের হামলা, অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছে ক্রোট আর্মিরা, নিরীহ সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছেনা কোনো অত্যাচারীদের শিকার থেকে! 

এমনি বিপদজনক, খারাপ পরিস্থিতিতে ৯ই সেপ্টেম্বর,  ক্রোয়েশিয়ার "যাদার" গ্রামে দরিদ্র পরিবারে "স্টিপ মদ্রিচ" ও "রাদোজকা" এর ঘর অনুজ্জ্বল ঘর আলোকিত করে আসেন তাদের সন্তান "লুকা মদ্রিচ"।

পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বাধ্য হয়ে মা রাডোজকা পুত্র লুকাকে নিয়ে কিছুটা দূরে অবস্থানরত "হোটেল কলভারে" অবস্থান নেয়। ফুটবলের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ এইখানেই হয় লুকার।

তার বাবা রাডোজকা ছিলেন একজন ফ্যাক্টরি কর্মী। বাধ্যতামূলকভাবে  হোটেলে অবস্থানরত বন্ধুদের সাথেই ফুটবল খেলায় মেতে থাকতে হতো লুকাকে। বাইরে বেরুনের উপায় কি আছে সেই মরণ যুদ্ধাবস্থায়? বের হলেই তো মৃত্যু নিশ্চিত!
তাই বলে কি থেমে থাকবে যাদুরকরের খেলা, প্রানের খেলা দ্যা আমেজিং গেম ফুটবল?
চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে লাশ, যেকোনো মুহূর্তে নিজেরাই হয়ে যেতে পারে সেইস্বরুপ, কিন্ত তবুও চলছে ফুটবল। কিন্তু তিনি দমে জাননি!

জাদারের হয়ে খেলার সময়ে বেশিরভাগ সময়েই যুদ্ধাবস্থায় থাকায় তাকে শুনতে হতো বোমার শব্দ। এমনও হয়েছে তারা অনুশীলন করছেন এমন সময়ে সাইরেন বেজে উঠলো এবং ক্লাবের প্রত্যেককেই সাথে সাথে একটা জায়গায় গিয়ে একদম পিন ড্রপ সাইলেন্ট  করে বসে থাকতো। আশেপাশের মানুষগুলোও তখন বোমার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য ছুটোছুটি করতো। এই সবকিছুই মদ্রিচের চোখের সামনে হতো!

২০০১ সাল পর্যন্ত জাদার ক্লাবে থাকার পর যোগ ক্রোয়েশিয়ার অন্যতম পরিচিত ক্লাব  ডায়নামো জাগরেবে। তারপর থেকেই নিজেকে চেনাতে শুরু করেন মদ্রিচ। মদ্রিচের প্রথম শিনগার্ডে ছিল ফেনোমেনোন রোনাল্ডোর।  মদ্রিচের আইডল ছিল এই রোনাল্ডোই!

ইংল্যান্ডে আসার পর এখানকার মানুষ তাকে নানান সময়ে বিভিন্ন কটূক্তি করে লাঞ্চিত করতো। কেউ বলতো খাটো, কেউ বলতো ওজনহীন মানুষ, কেউ বলতো গোলাপী এসব কিছু মদ্রিচকে খুব কষ্ট দিতো। এমনকি টটেনহ্যামে জয়েন করার পর আর্সেনালের কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তার শরীর নিয়ে তিনি ইংলিশ লিগে টিকে থাকতে পারবেন কিনা!

কিন্তু যেই মদ্রিচকে সেই ছোট বেলা থেকেই কোন কিছু দমাতে পারেনি তাকে কিভাবে দমাবে এই লোকেদের দুচারটে কথা, মাঠে ঠিকই তিনি জবাব দিয়ে গিয়েছেন!

টটেনহামে জয়েনের পরেই তিনি একই রকম সাফল্য দিয়ে কেটে যায়। নিখুঁত পাস, কৌশল
প্রদর্শন এবং সুসময়ে গোল করে দলকে এনে দিয়েছেন কাঙ্খিত জয়! 

২০১২ সিজনে তার দিকে নজর কাড়ে মৌরিনহো,  ৩৩ মিলিওন ইউরোতে তাকে কিনে নেয় সর্বকালের সেরা ক্লাব। কিন্তু মাদ্রিদ সমর্থকেরা সকলেই এই সাইনিংয়ে ছিল হতাশ..। মার্কার করা পোলে সে সিজনের সবথেকে বাজে সাইনিংয়ের ভোট পান। ঠিক ২০১২ সিজনেই মাদ্রিদ রাইভাল বার্সাও আর্সেনাল থেকে এলেক্স সং কে সাইন করায়। আর এমনকি সবাই মদ্রিচের সাইনিংটাকে সংয়ের সাইনিং থেকে বাজে ভাবে দেখেছিলন এবং মার্কার করা পোলেও বেশির ভাগই এলেক্স সং কে এগিয়ে রেখেছিলেন। অতপর ফলাফল সেই মদ্রিচ যিনি সবাইকেই ছোট বেলা থেকেই আঙ্গুল চুষেয়েছিলেন তাকে যারা যারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো  তাদেরকেও ঠিক সেইভাবে আংগুল চুষালেন। এখন কোথায় সেই এলেক্স সং সুইজারল্যান্ডের কোন এক টিমে নিজেকে খেয় হারিয়ে খুজছেন আর কোথায় লুকা মদ্রিচ!

মাদ্রিদের হয়ে সেই যাত্রা এখনো চলছে মদ্রিচের । এখন পর্যন্ত ১৭ টি শিরোপা জয় করেছেন মদ্রিচ।

মদ্রিচের ব্যাক্তিগত অর্জনও কম না ১৯ নম্বর আর ১০ জার্সি গায়ে সর্বদাই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পুরো মাঠ! সহধর্মিণীর জন্ম কোন এক মাসের ১৯ তারিখ হওয়ায় তাকেই স্মরণ করে গায়ে জড়াতেন ১৯ নম্বর জার্সি! জায়গা হয়েছে ২০১৩-২০১৪ এবং ২০১৫-২০১৬  ২০১৬-২০১৭ ২০১৭ -২০১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা একাদশে, হয়েছেন ২০১৩-২০১৪ মৌসুমে লা-লিগার সেরা মিডফিল্ডার, হয়েছেন ২০১৫ সালে ফিফার বর্ষসেরা একাদশের মেম্বার, হয়েছেন লা-লিগার ২০১৫-২০১৬ ২০১৬-১৭  মৌসুমের সেরা একাদশের একজন! ধারাবাহিকভাবে ২ বার হয়েছেন উয়েফার সেরা মিডফিল্ডার! জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জিতেছেন ২০১৮ সালের গোল্ডেন বল এবং জায়গা করে নিয়েছিয়েন বিশ্বকাপের সেরা একাদশে! এবং
সর্বোপোরি মেসি রোনালদোর যুগে তাদের হারিয়ে জিতে নিয়েছেন উয়েফার সেরা প্লেয়ার, জিতেছেন ব্যালন ডি'ওর!

দীর্ঘ ৯০ মিনিট খেলা দেখার সময় অনেক সময় মন অন্যমনস্ক হয়ে যায়।  কিন্তু এই প্লেয়ারটার পায়ে বল গেলে সম্পূর্ণ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ হয়ে যায়। মদ্রিচের পায়ে বল এমন ১ টা সেকেন্ডও মিস করা যাবে না। ফুটবলের এমন শিল্পী কোথায় পাওয়া যাবে এই যুগে? যিনি শৈল্পিক ফুটবল দিয়ে আকৃষ্ট করবেন। বর্তমানে বিশ্ব ফুটবলে খুব সম্ভবত  তার মতো এমন কোন ফুটবল শিল্পী নেই যিনি মাঠের ভিতর এত সুন্দর ভাবে তার পা আর বল দিয়ে ফুটবলের কোন চিত্র আঁকছেন!

মদ্রিচ প্রমান করেছেন আপনার জীবনেও একটা স্টেজে খুব খারাপ সময় আসবে.. তবে ভেঙ্গে পড়বেন না.. ধৈর্য্যের সাথে সকল কর্তব্য পালন করে যান.. সাফল্য অবশ্যই একদিন দরজায় এসে কড়া নাড়বে...!

যতদিন নিজের সর্বোচ্চ ফর্ম থাকবে হয়তোবা ততদিন মাদ্রিদ ও ঠিক ট্রফি উচিয়ে ধরে যাবে!

সবশেষে  মদ্রিচ মানেই একটা স্পেশাল কিছু!
স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য যার বেচে থাকারই কথা ছিলো না খাঁটো ও দূর্বল, খেলতে লজ্জা দেয়া হতো৷!
এই ছেলে কে দিয়ে আর যাই হোক ফুটবল খেলা সম্ভব না! রিয়াল মাদ্রিদ এর সবচেয়ে বাজে সাইনিং!
সেই ছেলেটা সময়ের সেরা মিডফিল্ডার। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার! বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়! ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়!

দ্যা লিটল ম্যাজিশিয়ান, দ্যা স্ক্রিপ্ট রাইটার, দ্যা সাইলেন্ট আসাসিন, দ্যা ব্যাকবোন অফ রিয়াল মাদ্রিদ, দ্যা মিডফিল্ড মায়েস্ত্রো, দ্যা বেস্ট মিডফিল্ডার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট প্লেয়ার অব দ্যা ওয়ার্ল্ড লুকা মড্রিচ!  ❤

সবশেষে একটা উক্তি দিয়েই শেষ করিঃ

In this Era of  Ronaldo/Messi
Be someone like Luka Modric!