• ক্রিকেট

নাইরোবি থেকে রাজকোট,পাঞ্জাবি রক্তের এক সাধারণ ছেলে থেকে অসাধারণ হিটার এরপর ভারতীয় কিংবদন্তি

পোস্টটি ১৩০২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

একদম ছোকরা এখনো পরিনত হওয়ার বয়সটাও হয়নি । নতুন এসেছেন ক্রিকেটে । অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নামলেন একজন আনকোরা ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব বেদম পেটালেন গিলেসপি, মেগ্রা, ব্রেট লি একে একে সবাইকে মারলেন। ভারতের স্কোর পেরিয়ে গেল দুইশ আশি। সকলে তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেই ম্যাচটা ভারত জিতে গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে হলো প্রথম পরিচয়।

ইয়ুবরাজ নাকি যুবরাজ?
নাম নিয়ে বিবাদে পরতে হতো প্রায় সময়ই। খেলা দেখার সময় কমেন্টেরকে বলতো ইয়ুবরাজ, আবার মানুষ বলতেন যুবরাজ,পত্রিকা পড়ার সময়ও দেখা যেত যুবরাজ লেখা । কি একটা জটিল ব্যাপার না!! তবে যুবরাজ হলে কোন দেশের রাজপুত্তুর তিনি? গাঙ্গুলির খুবই প্রিয় পাত্র ছিলেন। কাইফের ছিলেন খুব ভাল বন্ধু। ধনীর সাথে বন্ধুত হয় অনেক পরে। তবে প্রশ্নের বিষয় ছিল রাহুলের ২০০৭ ওয়ার্ল্ডকাপের ভরা ডুবি আর ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজের বাজে পার্ফরম্যান্সের কার হাতে উঠতে যাচ্ছে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। বীরেন্দর শেবাগ না যবুরাজ সিং? হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন দলনায়ক হয়ে আসলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনী। আর সেই ধোনীর 'মহাভারত' এর অন্যতম ভরসার সাহসি এক সহযোদ্ধা ছিলেন যুবরাজ সিং। প্রথম কোন টি২০ বিশ্বকাপ, ধোনীর সামনেও ১ম কোন বিগ স্টেজে নিজেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে কতটা দক্ষ তা প্রমান করার সুযোগ, তাই ট্রাম্প কার্ড হিসেবে মারকুটে ব্যাটসম্যান যুবরাজকেই বেছে নিলেন যুবিও ক্যাপ্টেনের আস্থার প্রতিদান দিয়ে হয়ে উঠলেন সেই টূর্নামেন্টের সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল প্লেয়ার! ইংলিশদের বিরুদ্ধে জোহানেসবার্ঘে খেলার এক পর্যায়ে এন্ড্রি ফ্লিনটফের সাথে বেধেছিল এক তুমুল ঝগড়া। ফলস্রুতিতে তাকে তেড়েফুঁড়ে ব্যাট হাতে মারতে যাওয়া তার পরের ওভারেই  স্টুয়ার্ট ব্রোডকে পেয়েই রাগের প্রতিফলন দেখিয়ে ৬ বলে ৬ ছক্কা হাকানো "লাভ এট ফার্স্ট সাইট" বলে যে পৃথিবীতে যে সত্যি কিছু আছে তার প্রমান সেইদিনই পেয়েছিলাম! তবে ব্রোডের ওই ছয় বলে ছয় ছক্কার চাইতেও ব্রেটলি কে মারা মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ১২০ মিটার ছক্কা আজও চোখে ভাসে!

এরপর আসে বিশ্বকাপ ২৮ বছর ধরে ভারতের ট্রফি না ছোয়ার তৃষ্না! কোচ গ্যারি ক্যাস্টেনের কথায় একপ্রকার একগুঁয়ে হয়েই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে তাঁকে দলে রেখেছিলেন ধোনী, (তখনও ট্রিটমেন্ট চলছিলো,থেরাপি দেয়া হচ্ছিলো) নেদারল্যান্ডের সাথে ম্যাচের ঠিক আগ মুহুর্তে রক্তবমি করেছিলেন।ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে ম্যাচের পরে ড্রেসিং রুমে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।
অষ্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচের মধ্যেই মাইগ্রেনের পেইনে ভুগতেছিলেন।কিন্তু কোচের,অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান ঠিকই দিয়েছিলেন এমত অবস্থায় খেলেও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এক বিশ্বকাপে ৩০০+ রান করা এবং ১৫+ উইকেট পাওয়া একমাত্র খেলোয়াড় তিনি হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা ও!

ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেওয়ার পর একটা লোককে তেমন স্মরণ করা হয় না এই প্রজন্মেরই অনেকেই চিনেন না পরের দশকের কথা তো বহুদূর তিনি মোহাম্মদ কাইফ। মোহাম্মদ কাইফ আর যুবরাজের ফিল্ডিং ৩০ গজের ভিতরে ছিলেন ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলির এক অপ্রত্যাশিত ভয়ংকর দুই বিশ্বাসী প্রহরী জন্টি রোডসের আর্বিভাব খুঁজে পাওয়া যেত এই জুটিতে। ইন্ডিয়ার আণ্ডারডগ টীম থেকে দাপুটে হয়ে উঠার ট্রানজিশনে যে কয়জনের হাত ছিল যুবরাজের তাদের মধ্যে একদম উপরের দিকে। নেটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনালে ৩২৬ রান তাড়া করতে নেমে ১৪০ রানেই ৫ উইকেট পরে যাওয়ার পর সেই কাইফ-যুবি ঐতিহাসিক জুটিতে লর্ডসে নেটওয়েস্ট সিরিজ জয় তারপর সেই লর্ডসের মাঠে দাদার জার্সি খুলে ফ্লিনটফকে দাদাগিরির দেখানো আহা যারা  সেই মুহুর্তটা দেখেনি! 

প্রথমদিকে তাঁকে পছন্দ ছিল না না হলেও কিন্তু পরে মুগ্ধ হয়ে দেখতাম তাঁর আক্রমণ, শর্ট বলকে থাপ্পড় মারার মতো করে দেখানো সীমানা দড়ির উড়াল পথ। ক্যান্সার জয় করে ফেরার পর তো হয়ে  উঠেছিলেন বেশি প্রিয় একজন।

বিদায়ের পর এখন থেকে যেকোনো কঠিন মহুর্তেই তাকে মনে করবে সবার আগে। ইশ এখন যদি যুবি থাকতো তাহলে কি নাই হতো!!! গত ৬ বছরের ভার্চুয়াল জগতে সকল ক্রিকেট প্রেমিদের টাইমলাইনেই তিনি নিয়মিত ছিলেন, এগুলো দেখে অনেকে নষ্টালজিক হবে, স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যাবে ,ফেলে আসা কোন এক উপন্যাসের পাতায় ডুব দিবো, নস্টালজিয়ায় সেই উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় একটা নায়কের নাম লেখা থাকবে! সেই নামটা আপনার !!!! পড়তে পড়তে আবেগে রুদ্র হবো আমি, চশমার কাছে বাষ্প জমবে, সেই বাষ্প মুছে আমি আবারও জীবনে ফিবে যাবে!

রিটায়ার্ডমেন্ট লেটারে বলতে শুনেছি ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য কিছু করতে চান এখন। আবারও সকলের অনুপ্রেণা হয়ে উঠলেন আশার আলো প্রজ্জ্বলন করলেন অনেক আক্রান্তদের। আপনি যুবরাজ ছিলেন আছেন থাকবেন!

অনেক দিয়েছেন ইন্ডিয়াকে ক্যান্সারের পরেও!  ইন্ডিয়ার লাস্ট যে প্রজন্মটাকে যারা হেট করতো, সেই প্রজন্মের প্লেয়ার আপনি!
নাইরোবি থেকে রাজকোট,পাঞ্জাবের রক্তের এক সাধারণ ছেলে থেকে অসাধারণ হিটার এরপর ভারতীয় কিংবদন্তি, ভারতের ইতিহাসের সোনালী প্রজন্মের শেষ ভদ্রলোক! আজহারউদ্দীন, শচীন রমেস টেন্ডুলকার, ডেনিস মঙিয়া,সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়,বীরেন্দর শেবাগ, ভিভিএস লক্ষ্মণ, রবিন সিং, অনিল কুম্বলে, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ, জহির খান, ইরফান পাঠান, অজিত আগারকার...
নামগুলো যখনই মুখে আসবে, অনেকেই তার শৈশবে ফিরে যাব মনে আসবে সেদিনও স্কুল বাদ রেখে, নাওয়া খাওয়া গোসল বাদ রেখে যাযাবর ছেলের মতো খেলা দেখেছে অনুসরণ করেছে !

প্রার্থনা করি মৃতুঞ্জয়ী ইনিংসের পর এবার অবসরোত্তর জীবনটা হয়ে উঠুক ব্রডকে মারা ছয় ছক্কার মতোই রঙিন!

১১-৬-২০১৯....inbound2718206434365585078