• ক্রিকেট

অস্ট্রেলিয়ার সেরা পাঁচ অধিনায়ক

পোস্টটি ৪৬১৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

images-1ক্রিকেটে অধিনায়কের ভূমিকার দিকে যদি দৃষ্টি দেয়া যায় তো এটি অন্যান্য খেলাগুলির থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা হয়। ফুটবল এবং অন্যান্য বড় খেলাগুলির মতো নয় যেখানে কোচ কৌশল পরিকল্পনা করে এবং অধিনায়কের কাজ কেবলমাত্র মাঠে জিনিসগুলির তদারকি করা।অন্যদিকে ক্রিকেটে প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অধিনায়কের উপর নির্ভর করে। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ব্যাটিং অর্ডার বাছাই, ফিল্ডিং প্লেসমেন্ট এবং বোলিং পরিবর্তন, এই সিদ্ধান্তগুলি তৎক্ষণাৎ মাঠে অধিনায়ক নিয়ে থাকেন।আর অধিনায়কের নেয়া এই সিদ্ধান্তগুলো জয়-পরাজয়ের নির্ণায়ক।

দুর্দান্ত দলগুলির দুর্দান্ত কিছু নেতা রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন খুবই অনুপ্রেরণামূল। অস্ট্রেলিয়া তেমনি একটি দুর্দান্ত দল যার ব্যতিক্রমী নেতা রয়েছে। ড্যাভ গ্রেগরির (অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ক্যাপ্টেন) থেকে শুরু করে বিল লরি (অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক), অ্যালান বর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং এবং স্টিভ স্মিথ। অস্ট্রেলিয়া সর্বদা কিছু দুর্দান্ত অধিনায়ক পেয়েছে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

৫) মার্ক টেলর

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব আধিপত্যের সূচনা দুটি ব্যক্তির হাতধরে। একজন হলেন অ্যালান বর্ডার এবং অন্যজন মার্ক টেলর। যদিও টেলর তার পূর্বসূরীর জুতায় সতর্কভাবে পা রেখেছিলেন।ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়া তার অধিনায়কত্বে টেস্ট ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ধরন রপ্ত করে।যারফলে টেলরের অস্ট্রেলিয়া নির্মম দলে পরিণত হয়েছিল। তার সময়ে দলটি প্রায় সব প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।

অধিনায়কত্বের কৌশল ছিল সহজ - খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলতে চায়,বাধাহীনভাবে তাদের সেভাবে খেলতে দেওয়া। এর যথাযথ উদাহরণ - তিনি মাইকেল স্লেটারকে দিয়েছিলেন অবাধে খেলার লাইসেন্স।ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি এক অন্য মানসিকতার ব্যাটসম্যান।সেই সময়ের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানদের একজন। টেলর তাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল যারফলে স্লেটারের আক্রমণাত্মক মানসিকতা অনেক ম্যাচে জয় পেতে সাহায্য করেছিল। আর ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছিল টেস্টে আক্রমণাত্মক মেজাজের এক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।সেসময়ের সেরা উদ্বোধনী জুটি হয়ে উঠেছিল টেলর-স্লেটার।আর স্লেটারের টেস্ট শতকের নয়টি অধিনায়ক টেলরের অধীনে এসেছিল।

টেলরের অধিনায়কত্বের আরেকটি উল্লেযোগ্য দিক ছিল পরিস্থিতি যাই হোক জয়ের জন্য খেল।তার সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে বেশিরভাগ অধিনায়ক ছিলেন রক্ষণাত্মক।কিন্তু তিনি গতানুগতিক টেস্ট মানসিকতায় পরিবর্তন আনেন, সবসময় ড্রয়ের জন্য না খেলে জয়ের জন্য ঝাপানোর পক্ষে ছিলেন। তিনি দলে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছিলেন যাতে প্রত্যেক খেলোয়াড় বিশ্বাস করে যে হারানোর কিছুই নেই।  টেস্টে ২৬টি জয় এবং ১৩ টি পরাজয় এবং ৬৭ ওয়ানডেতে ৩৬ টি জয় তার মত এক অধিনায়কের পক্ষে খুব ভাল।কারন যখন টেলর অধিনায়কত্ব পান দলটি তখন সবে একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল। দলের অনেক নির্ভরযোগ্য তারকা অবসরে। নতুনরাও নিজেদের প্রমান করতে ব্যস্ত।

৪) মাইকেল ক্লার্ক

মাইকেল ক্লার্ক ছিলেন একজন অনুপ্রেরণামূলক নেতা।তিনি অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি বিখ্যাত জয়ের স্থপতি। অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে তার ব্যাটিংয়ে উন্নতী ছিল চোখে পড়ার মত। ২০১২ সালে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি চারটি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।

ক্লার্ক অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়েছিলেন যখন অস্ট্রেলিয়া দলের সমর্থকরা গভীর হতাশায় নিমগ্ন ছিল।ঘরের মাঠে ২০১০-১১ সালের অ্যাশেজটি হারিয়েছে। সেই হতাশাজনক সময়ে ক্লার্ক দলকে অনুপ্রেরণা যোগান নিজের ব্যাটিং দিয়ে।দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৩-১৪ সালে অ্যাশেজটি পুনরায় অজিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।সে সময়  ৫-০ হোয়াইটওয়াশ করে অ্যাশেজ জয় করে নেন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।এরপর ঘরের মাঠে ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ে তিনি অনুপ্রেরণার সাথে দলকে নেতৃত্ব দান করেন। অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে তিনি বিশ্বকাপ জয় করেন।

টেস্ট ও ওয়ানডেতে তিনি যথাক্রমে ৫১.০৬ এবং অধিনায়ক হিসাবে ৭০.৪২ শতাংশ জিতেছেন। তার ২৮টি টেস্ট সেঞ্চুরির ১৪টিই আসে অধিনায়ক হিসেবে। ক্লার্ককে শুধু একজন অনুপ্রেরণামূলক নেতাই নয় একজন দক্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবেও মনে রাখা হবে।একজন ব্যাটসম্যান এবং ক্যাপ্টেন হিসাবে উভয় ক্ষেত্রেই ঈর্ষনীয় রেকর্ড নিয়ে হয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

৩) অ্যালান বর্ডার

অ্যালান বর্ডার যখন অশ্রুজল কিম হিউজেসের কাছ থেকে ক্যাপ্টেনের টুপিগ্রহণ করেছিলেন তখন তিনি তার দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের নেতৃত্ব দিতে যথেষ্ট পরিপক্ক ও যোগ্য।

অধিনায়ক হিসেবে বর্ডারের শুরুটা কিন্তু মোটেও আশাব্যঞ্জক ছিল না।প্রথম টেস্ট জয় পেতে অপেক্ষা করতে ১৫ ম্যাচ। তবে তার ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পরে তার অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান যথেষ্ট সমৃদ্ধ।তিনি ৯৩টেস্ট এবং ১৭৮ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ৩২ টেস্ট এবং ১০৭ ওয়ানডে জয় পান।

বর্ডারের নেতৃত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়।১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে।যা এখন পর্যন্ত অজিদের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিশ্বকাপ জয়।কারন সেসময় অজিদের পারফরম্যান্স ছিল নিম্নগামী। তাছাড়া বিশ্বকাপ ছিল ভারতের মাটিতে যেখানে অস্ট্রেলিয়া বরাবরই দুর্বল।সব শঙ্কা দূর করে অ্যালান বর্ডারের দল ফাইনালে জায়গা করে নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৭ রানে পরাজিত করে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক হিসেবে জায়গা করে নেন।খাঁদের কিনারা থেকে অস্ট্রেলিয়াকে টেনে তুলে এনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে তুলেছিলেন অ্যালান বর্ডার,তার এই কীর্তি আজও অবিস্মরণীয়।

২) স্টিভ ওয়াহ

মার্ক টেলরের অবসর গ্রহণের পরে স্টিভ ওয়াকে ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়েছিল।আর ১৯৯৯ সালে উভয় ফর্ম্যাটেই দায়িত্ব নেন।তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া শুধু ভারতকে বাদ দিয়ে এই ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিটি দেশকে ধ্বংস করেছিল।একমাত্র ভারতেই শুধু তিনি সফল হতে পারেননি।স্টিভের অধিনায়কত্বের অধীনে অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজেকে হোয়াইটওয়াশ সহ একটানা রেকর্ড ১৬ টি টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল যা ২০০১ সালে বিখ্যাত কলকাতা টেস্টে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।

টেস্ট,ওয়ানডে উভয়ই অধিনায়ক হিসাবে তাঁর দুর্দান্ত রেকর্ড। ৫৭ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৪১ টি জয় আর১০৬টি ওয়ানডে ম্যাচে ৬৭ টি জয়।শুধু তাই নয় দল যখন ঘোর বিপদে স্টিভের ব্যাট দলকে জিতিয়ে দিয়েছে ।এ কারণে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অন্যতম সেরা অধিনায়ক। ওয়াহ প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে (সাথে টম মুডি) দুবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান।তার নেতৃত্বে ১৯৯৯ দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া।

১) রিকি পন্টিং

১৯৯৫ সালে অভিষেক হওয়া রিকি পন্টিং ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওয়ানডে অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তিন তিনটি বিশ্বকাপের সফল অভিযানের অংশ ছিলেন।এছাড়া একটানা ৩৪ ম্যাচের জয়ের ধারাবাহিকের নেতৃত্বে পন্টিং ২৬ টিতে অধিনায়ক ছিলেন। তিনি তাঁর প্রজন্মের অন্যতম অদ্যম্ম খেলোয়াড় ছিলেন।

পন্টিং শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট নয় বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তিনি অস্ট্রেলিয়াকে ৪৮ টেস্ট জিতিয়েছেন যা গ্রায়েম স্মিথের এর পরে টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং রেকর্ড ১৬৫ ওয়ানডে জয় যা ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ৩২৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যা ধোনি ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত রেকর্ড পন্টিংয়ের দখলে ছিল।

২০০৩ ও ২০০৭ সালে পর পর বিশ্বকাপ জয়ী, ২০০৬ ও ২০০৯ সালের পরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা এবং ২০০৬/০৭ এ অ্যাশেজে হোয়াইটওয়াশ করা জন্য তার নেতৃত্বের উল্লেযোগ্য অর্জন। তার অধিনায়কত্ব বিশ্বজুড়ে উচ্চতর মূল্যায়ন করা হয়। তার সময়ে অস্ট্রেলিয়া অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এবং তার অধিনায়কত্বকালীন সময়কে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের স্বর্ণালী যুগ হিসেবে ধরা হয়।