• ক্রিকেট

লাল বলের রাজ্যে সাদা বলের হানা.........।

পোস্টটি ২০৪০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাইশ গজের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে ব্যাটসম্যানের কাঠের ব্যাটের পাশাপাশি বোলারের বলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্রিকেটের মূল আকর্ষণই হচ্ছে ব্যাট আর বলের লড়াই। ব্যাটসম্যান হয় বোলারের কাছে পরাস্ত হয় কিংবা বোলাররাই ব্যাটসম্যানের কাছে দারুন নাস্তানাবুদ হয়। এই ক্রিকেট বলই একটা ম্যাচের গতিবিধি পরিবর্তন করে দিতে পারে।

ইংল্যান্ডের ডিউক, ভারতের এসজি আর অস্ট্রেলিয়ার কোকাবুরা - এই তিন কোম্পানির বল দিয়েই সারাবিশ্বের খেলা হয়। তবে সর্বাধিক ব্যবহার হয় কোকাকুরা আর এরাই বর্তমানের সবচেয়ে বড় কোম্পানি।

বলের রাজ্য কোকাবুরার আগমণঃ- আলফ্রেড গ্রেস থম্পসন ১৮৬৩ সালে ক্যানব্রিজশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে ঘোড়ার জিন বানানো শিখেন এবং ১৮৯০ সালে ব্রাইটনে “ এজি থম্পসন প্রোপার্টি ” নামে একটি চামড়াজাত পণ্য বিক্রির দোকান দেন। খেলাধূলার প্রতি তিনি বিশেষরকমের আসক্ত ছিলেন। আর তার চামড়া কোম্পানি যখন অনেক বড় হয় তখন ১৯০০ সালে তিনি ক্রিকেট বল তৈরি শুরু করেন। আলফ্রেড থম্পসনের একটি পোষা মাছরাঙা ছিল। আর অস্ট্রেলিয়ায় মাছরাঙাকে বলা হয় কোকাবুরা। আর সেইখান থেকেই তিনি তার কোম্পানির নাম দেন “কোকাবুরা"।

১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায় এই বল আর এটিই ছিলো কোকাবুরার প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদার্পণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার জন্য বেসবল আর সফটবল তৈরী করেন কোকাবুরা। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধপরবর্তী প্রথম এশেজে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড বল প্রস্ততকারকদের কাছ থেকে বলের নমুনা চায়। আর সেখান থেকে কোকাবুরা বাছাই করা হয়। সেসময় থেকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকায় কোকাবুরা বলের ব্যবহার শুরু। বর্তমানে তিনটি দেশবাদে টেস্টখেলুড়ে বাকি দেশগুলা কোকাবুরা ব্যবহার করে। তিনদেশের ইংল্যান্ড আর উইন্ডিজ ব্যবহার করে ডিউক বল আর ভারত ব্যবহার করে এসজি। তবে দিবারাত্রির সকল টেস্টই হয়েছে কোকাবুরার গোলাপি বলে।

লাল বলের ক্রিকেটে ডিউক আর এসজি রাজত্ব করলেও সীমিত ওভারের খেলায় রাজা এখন কোকাবুরা৷ ১৯৭৭ সালে ক্যারি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট দিয়ে ক্রিকেটে এক বিপ্লব নিয়ে আসেন। শুরু হয় দিবারাত্রির ক্রিকেট সাথে রঙিন পোশাকের আধুনিকায়ন। ডব্লিউএসসি থেকে কোকাবুরাকে নির্দেশ দেয়া হয় রাতের বেলায় খেলার উপযোগী এমন বল তৈরি করতে। তারপর তিন রঙের বল দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। আর তারা কমলা, হলুদ আর সাদা। এই তিনের মধ্যে একমাত্র সাদা বলেই কৃত্রিম আলোয় খেলতে সুবিধা হয়েছিলো। তখন সাদা বলের ব্যবহার শুরু হয়। ডব্লিউএসসি মাত্র দুই বছর চললেও ক্রিকেটে এর প্রভাব থেকে যায় ভালোভাবেই। ১৯৭৮ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজের পর থেকে অস্ট্রেলিয়া তাদের নিজেদের দেশে রঙিন পোশাক ও সাদা বলে ওয়ানডে খেলা শুরু করে। এমনকি পাশের দেশ নিউজিল্যান্ডেও তখন কোকাবুরার সাদা বল চলে যায়।

১৯৭৫ সালে থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয় ইংল্যান্ডে। টানা তিনটা আসর ইংল্যান্ডে হয় এবং প্রতি বারেই ডিউক বলে খেলা হয়। ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশের আসরেও ডিউক বল ব্যবহার করা হয়। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে আসরের মাঝদিয়ে কোকাবুরা বলের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। মাঝে '৯৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে ডিউক ব্যাবহার হলেও আর সবকটি বার কোকাবুরা ব্যবহার হয়।

কোকাবুরার পদচিহ্ন অনুসরণ করে ডিউক বলও সাদা বল বানাতে শুরু করে। ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপে সাদা ডিউকে খেলা হয়। এসজিও শুরু করে সাদা বলের কাজ। কিন্তু এক সাদা কোকাবুরার কাছে কেউই নাই৷ ২০০৩ আফ্রিকা বিশ্বকাপ থেকে আইসিসি সব টুর্নামেন্টেই কোকাবুরার সাদা বল ব্যবহৃত হচ্ছে। আইসিসি সব ধরনের খেলায় কোকাবুরাকে প্রাধান্য দেয়ায় দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতেও কোকাবুরার ব্যবহার বেশি হয়৷ কিন্তু আইসিসির দাবী কোকাবুরা তাদের অফিসিয়াল বল না।

এক চামড়া ব্যবসায়ীর তৈরী কোকাবুরা এখন ক্রিকেট বিশ্বের বলের মাঝে রাজত্ব করছে। শুধু ক্রিকেট না অন্যান্য খেলার বল তৈরীতেও এগিয়ে আছে কোকাবুরা। কোকাবুরার সেদিনের তৈরী সাদা বলযে পুরো ক্রিকেটকে চেঞ্জ করে দিবে কেই বা জানতো।