• ক্রিকেট

সেরা পাঁচ পাক নায়ক

পোস্টটি ৮১২৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে অনিশ্চিত দল হচ্ছে পাকিস্তান।পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মকাণ্ড খেলোয়াড় থেকে শুরু করে খেলার ফল সবকিছুই অনিশ্চয়তার মোড়কে মোড়া।খাঁদের কিনারা থেকে ম্যাচ জিতে আসাও তাদের দ্বারা সম্ভব আবার জয় নিশ্চিত এমন খেলাও হেরে আসাও তাদেরই কম্ম।এমন একটি অনিশ্চয়তা পূর্ন দলের অধিনায়কের অবস্থা কতকটা পদ্ম পাতায় জলের মত।পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ককে সর্বদাই তটস্থ থাকতে হয়।কখন কি হয় তার কোন ঠিক নেই।অধিনায়কত্ব পাকিস্তানে অনেকটা নড়বড়ে দাঁতের মত,এই আছে এই নেই। 

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব কালকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।একটি হল ইমরান খান পূর্ব যুগ অন্যটি ইমরান খান পরবর্তী যুগ।১৯৫২ সাল থেকে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের পথচলা শুরু হয়েছে।সেই থেকে ১৯৮২ সাল ইমরান খান পূর্ব যুগ।আর ১৯৯২ সালের পর থেকে আজ অবধি ইমরান খান পরবর্তী যুগ হিসেবে ধরা যায়।তার অবসর গ্রহণের পর থেকে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের খেলার ফলের সাথে সাথে নেতৃত্ব বিষয়টিও অনিশ্চয়তার জালে আটকে পড়ে।এই সময়ের মধ্যে  একমাত্র ধারাবাহিক বিষয় হল অধিনায়কত্ব নিয়ে বিতর্ক।আর নেতৃত্ব ঘিরে দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অসন্তোষ, অসহযোগিতার কারনে বার বার অধিনায়ক পরিবর্তন।১৯৯২সালে ইমরান খান অবসর নেওয়ার পর থেকে ২০২০ সাল অবধি ২০ জন পাকিস্তানের সবচেয়ে বিতর্কিত অধিনায়কের পদ অলংকৃত করার ভয়াবহ সুযোগটি পেয়েছে।এই সমস্ত অধিনায়কের সাফল্য এবং ব্যর্থতা রয়েছে।এদের মধ্যে কেউ দীর্ঘ মেয়াদে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেয়েছে কেউ আবার দায়িত্ব পেয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ দেওয়ার সময়টুকু পায়নি।১৯৯২ সালের পর থেকে যারা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের মধ্য থেকে সেরা পাঁচজনকে নিয়ে বিশ্লেষণ।

 

১)মিসবাহ উল হক

২০১০ সালে যখন মিসবাহ উল হক অধিনায়কত্বের দায়িত্বে আসে তখন পাকিস্তান ক্রিকেট এক সংকটময় অবস্থার মধ্য চলছিল।স্পট ফিক্সিংয়ের কারণে অধিনায়কসহ সেসময়ের দলের সেরা তিন খেলোয়াড়কে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।শুধু তাই নয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল।এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মিসবাহ একজন প্রকৃত নেতার মতো দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল।তাই তালিকার ১ নম্বরে মিসবাহ-উল-হক অপ্রতিদ্বন্দ্বী।পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসাবে সর্বোচ্চ ৫৬ টেস্ট খেলে রেকর্ড ২৬টি জয়লাভ করে।সে পাকিস্তানের একমাত্র অধিনায়ক যে  আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিততে পেরেছে।২০১৬ সালে পাকিস্তানকে টেস্ট রাঙ্কিংয়ে শীর্ষে তুলে আনতে মিসবাহ দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া তার ক্যারিয়ারের সেরা মাইল ফলক হয়ে থাকবে। দেশের আপদকালীন অধিনায়ক হিসাবে শুরু করে মিসবাহ জাতীয় দলের পুনরুজ্জীবনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।টেস্ট ক্রিকেটে তার নেতৃত্বেই পাকিস্তান আবার অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো দলকে পরাজিত করতে শুরু করেছিল।তার আমলেই পাকিস্তান প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করে।সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে,মিসবাহের আমলে যা পাক দুর্গে পরিণত হয়েছিল।তার দলটি এখানে নয়টি সিরিজ জুড়ে অপরাজিত ছিল।তবে বিদেশের মাটিতে তার সময়ে পাকিস্তানের বলার মত কিছু ছিল না।দক্ষিণ আফ্রিকা,শ্রীলঙ্কা,অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে তারা হোয়াইটওয়াশের শিকার হয়েছিল।

 সাফল্য থাকলেও মাঠে মিসবাহর রক্ষণাত্মক কৌশল প্রায়শই সমালোচিত হয়েছিল।তার নেতৃত্বের অন্যতম সীমাবদ্ধতা তার আমলে সর্বাধিক জয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিচিত পরিস্থিতিতে ছিল।যারফলে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে মেনে নেয়া কঠিন।কিন্তু কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও মিসবাহ পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক আর অবশ্যই ইমরান পরবর্তী যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ এ বিষয়ে কোন দ্বিধা নেই।

 

২) ওয়াসিম আকরাম

সুইংয়ের সুলতান ওয়াসিম আকরাম তার দীর্ঘ ১৮ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে জাভেদ মিয়াঁদাদ,ইমরান খান,রমিজ রাজা প্রমুখ দূর্দান্ত কিছু নেতার অধীনে খেলার সুযোগ পেয়েছে।ইমরানের উত্তরসূরি হিসেবে নেতৃত্বে এসে প্রথম দিকে তাকে অনুকরণ করতে গিয়ে বেশ বেকায়দায় পরে।পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তিত করার প্রচেষ্টা করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়।ক্রমশ সে তার ভুলগুলো সংশোধনের মাধ্যমে দলের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।ইমরান পরবর্তী যুগের অধিনায়কদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানের জন্য  ইনজামাম প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।কিন্তু ওয়াসিমের অধিনায়কত্বে অগ্রাসী ভাবটা থাকায় দ্বিতীয় স্থানটি তারই দখলে যায়।তার নেতৃত্বের বড় সাফল্য ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত ও শ্রীলঙ্কা উভয়কেই পরাজিত করে এশিয়ার সেরা দলের মর্যাদা পাওয়া।১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের জয় বিদেশের মাটিতে তার সেরা সাফল্য।এই সিরিজটি 2 W ওয়াসিম-ওয়াকার ফাস্ট বোলিং জুটির বিষাক্ত রিভার্স সুইংয়ের সিরিজ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।এই জুটি সিরিজে ২৭টি উইকেট তুলে নিয়েছিল।১৯৯৮-৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানের প্রথম ওয়ানডে টুর্নামেন্ট জয় এবং ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে রানার্স আপ সাফল্য ওয়াসিমের যোগ্য নেতৃত্বের প্রমাণ।

ওয়াসিম আকরাম সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারদের অন্যতম।একজন মহান খেলোয়াড় তার দলের সহ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে একই স্তরের নৈপুণ্য প্রত্যাশা করে।কিন্তু সেই পরিমান নৈপুণ্য অনান্য খেলোয়াড়দের থেকে পায়নি।তাছাড়া ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগগুলি তার ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।তাই সম্ভাবনা,যোগ্যতা থেকেও তার পক্ষে নেতৃত্ব খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

 

৩)ইনজামাম উল হক

ইনজামাম-উল-হক অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান, পাকিস্তানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান।১৯৯২ সালে তার আক্রমনাত্মক ব্যাটিং পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জিততে বিরাট ভূমিকা রাখে।২০০৩ সালের বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পরে পাকিস্তান ক্রিকেটে  এক কোলাহলপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়।সেই পরিস্থিতিতে ইনজামামকে অধিনায়ক নিয়োগ দেয়া হয়।তার মূল দায়িত্ব ছিল দলে স্থিতিশীলতা,শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।পাকিস্তান দলকে একজোট করে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় এবং আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থান তুলে আনা তার অধিনায়কত্বের সেরা অর্জন।তার অধীনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা,ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেট সিরিজ জিততে সমর্থ হয়।এছাড়া ভারত সফরে পাকিস্তানের সর্বকালের দুর্বলতম দল হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও ইনজামাম টেস্ট সিরিজ ড্র রাখতে সমর্থ হয়।মুলতানের সুলতান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তৃতীয় তথা শেষ টেস্ট ম্যাচে ১৮৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে ব্যাঙ্গালোরে জিতে সিরিজ সমতায় নিয়ে আসে।

ইনজামাম তার অধিনায়কত্বের প্রথম দিকে যতটা সফল কিন্তু শেষদিকে ততটা সফল না।পাকিস্তান দলটি স্বভাব মত অনেক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল।যার প্রভাব দেখা যায় ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে।তৎকালীন সময়ে আইসিসি সহযোগী সদস্য নিম্ন র‌্যাঙ্কিংয়ের দল আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে লজ্জাজনকভাবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।সেইসাথে ইনজামামের অধিনায়ক পর্বেরও বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়।রক্ষণাত্মক,অলস নেতা হিসেবেই সে বিবেচিত হত।কিন্তু ইনজামাম পাঁচ বছর ধরে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন,যা ইমরান খানের পরে সর্বোচ্চ।ইমরান খান ব্যতীত পাকিস্তানের আর কারও পক্ষে এত দীর্ঘ সময় ধরে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি বলেই ইনজামাম সেরার তালিকায় তৃতীয়।

 

৪) ইউনুস খান

পাকিস্তানের অন্যতম দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান ইউনুস খান। এক দশক ধরে দেশের হয়ে খেলে গিয়েছে।তবে বেশিরভাগ পাক অধিনায়কের মতই সেও দীর্ঘদিন দলের নেতৃত্ব দিতে পারেনি।২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার কাছে পাকিস্তান ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর ক্রিকেট বোর্ড শোয়েব মালিককে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ইউনুস খান পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসাবে পদ গ্রহণ করেছিল।যদিও সে এর আগে ২০০৬ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইনজামামের খেলার উপর স্থগিতাদেশের কারনে নেতৃত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।আবার ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর ইনজামাম সরে দাঁড়ালেও ইউনুস পুতুল অধিনায়ক হতে চান না বলে প্রত্যাখ্যান করে।পাকিস্তানের কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের ১৭বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে অধিনায়ক ইউনুস খানের হাত ধরে।ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালের T20 বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান যা ইমরান খানের ১৯৯২ এর বিশ্বকাপ জেতার পরে সর্ব্বোচ্চ অর্জন।মূলত T20 বিশ্বকাপ জিতে নেয়ার কারণেই ইউনুস খান সেরার তালিকায় চতুর্থ।

ইউনুস খান ছিল আপোষহীন নেতা।মাঠে ও মাঠের বাইরের কোন বিষয়ে আপোষ করার কোন মনোভাব দেখা যায়নি তার কর্মকান্ডে।তাইতো ২০০৯ সালে যখন তার দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে সে নির্দ্বিধায় অধিনায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেয়।যদিও ফিক্সিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।একজন সৎ,স্বচ্ছ,ব্যক্তিত্ববান,নির্লোভ অধিনায়ক হিসেবে ইউনুস খান পাকিস্তান ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

৫)সরফরাজ আহমেদ

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আজহার আলীর পদ থেকে পদত্যাগের পর ওয়ানডে অধিনায়ক হিসাবে নিয়োগ পায় সরফরাজ আহমেদ।২০১৬ সালের T20 বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হতাশাজনক নৈপুণ্যে অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি সরে দাঁড়ালে সরফরাজকে অধিনায়কত্ব দেয়া হয়।আর ২০১৭ সালের মে মাসে মিসবাহ-উল-হকের অবসর গ্রহণের পরে টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্বও তার কাঁধে তুলে দেয়া হয়।দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তান আশানুরূপ ফল পাচ্ছিল না।তাই সরফরাজের মত নতুন একজনকে দেয়া হয় যে সে পাকিস্তান ক্রিকেটকে নতুন যুগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।অনেকটা ধোনিকে ভারতের অধিনায়কত্ব দেয়ার ঘটনার অনুকরণ।তার নেতৃত্বের প্রথম বড় টুর্নামেন্ট ছিল ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে ট্রফি জিতে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় সরফরাজের পাকিস্তান।সরজরাজের পাকিস্তান T20 তে লাগাতার ১১টি সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে।এসময় পাকিস্তান T20 রাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে আসে।

সরফরাজের অধিনায়কত্বের প্রথম দুই বছর বেশ সফলতার সাথেই চলছিল।কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে উইকেটের পেছনে-সামনে তার ফর্ম পড়তে থাকে।যার নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দলের উপর।উপরন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের ওয়ানডে চলাকালীন সরফরাজ আন্ডিল ফেলুকওয়াইরকে বর্ণবিদ্বেষী শব্দ ব্যবহার করে ৪ ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড হয়।এই ঘটনার পর থেকেই তার অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়।২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নেতৃত্বে থাকলেও পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে তুলতে ব্যার্থ হয় সরফরাজ।সেইসাথে নিজের খারাপ ফর্মের কারনে দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই সন্দেহ জাগে।তাছাড়া তার অধিনায়কত্বে টেস্টে পাকিস্তান ভাল কিছুই করতে পারেনি।তাই ২০১৯ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট,T20 নেতৃত্বের সাথে দলে জায়গাও হারায়।আর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদিনের আন্তর্জাতিক দলের অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতির মাধ্যমে পাকিস্তান ক্রিকেটে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ যুগের আপাতত পরিসমাপ্তি ঘটে।আপাতত কারন পাকিস্তান ক্রিকেটে সাবেক অধিনায়ক ফিরিয়ে আনার ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে।সরফরাজ শুধুই  চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার কারণেই পঞ্চম স্থানে।

 

তো এইছিল অধিনায়ক ইমরান খান পরবর্তী প্রজন্মের সেরা পাঁচ অধিনায়কদের গল্প।এই তালিকায় নাম নেই এমন অধিনায়কদের মধ্যে আমির সোহেলের ভাল সম্ভাবনা ছিল।সে ছিল খুব তুখোড় মস্তিষ্কের,আক্রমণাত্মক নেতা।কিন্তু তার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়নি।দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিতে পারলে হয়ত অধিনায়ক আমির সোহেলের রেকর্ড সমৃদ্ধ হতে পারত।আবার ধীর-স্থির,শান্ত স্বভাবের শোয়েব মালিক হতে পারত 'ক্যাপ্টেন কুল'।অন্যদিকে সাহসী,অগ্রাসী অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদিও ইমরান হয়ে উঠতে পারেনি।পাকিস্তান ক্রিকেটের রীতি অনুযায়ী আবারও নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে।এবার দুজন নতুন অধিনায়ক তাদের পথচলা শুরু করেছে। আজহার আলী টেস্ট দলের দায়িত্ব পেয়েছে,যে এর আগে ওয়ানডেতে অধিনায়কের চাপ সামলেছিল। T20,ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হয়েছে বাবর আজম।আমরা অপেক্ষায় রইলাম ইমরান খান পরবর্তী প্রজন্মের কোন এক অধিনায়ক নেতা ইমরানকে ছাপিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে ।