• ক্রিকেট

'৯৯', ক্রিকেটে চিরদিনের আক্ষেপ

পোস্টটি ১৮৭৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

শরীরের সঙ্গ না পেয়ে এক সময় ভালোবাসার ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন তিনি। কোনও একদিন ক্রিকেট ডাটাবেজ সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটে উঁকি দেন নিজের প্রোফাইলে। সেখানে গিয়ে চোখ পড়ে থাকে একটি সংখ্যার উপর৷ যে সংখ্যা দেখলেই আক্ষেপের সাগরে ডুবে যান। সেই কোনও এক দিনটা তার জীবনে আসে বারবার। কখনো হয়তো তিনি নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দেন, আফসোস করতে করতে, বিরক্ত হয়েই! এ জগতে তিনি তার সঙ্গী পান আরও অনেককে।

ক্রিকেটে '৯৯' সংখ্যাটাকে আক্ষেপের সংখ্যা বলা যায়। যে সংখ্যার সাথে মিশে থাকে হতাশা, বেদনা! এই সংখ্যার কারণে আক্ষেপের আগুনে জ্বলে পুড়েছেন অনেকেই, নানা কারণে। সেটা গ্রেট আজহারউদ্দীন থেকে শুরু করে গ্রেট শেন ওয়ার্ন পর্যন্ত। 

যে কোনও ব্যাটসম্যানের জন্য শতক দারুণ ব্যাপার। আলাদা এক অনুভূতি! ক্রিকেট ইতিহাসে সেঞ্চুরির অভাব নেই। আবার সেঞ্চুরি না পাওয়ার তালিকা আরও লম্বা। তবে সতের জনের এক স্পেশাল তালিকা আছে, যারা থেমে গেছেন 'আক্ষেপের সংখ্যায়ই'। এক রানের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পাননি তারা। সর্বোচ্চ ৯৯'এই থেমে গেছে তাদের ক্রিকেট জীবন। যে দলে আছেন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নও। আবার ৯৯ রানে ইনিংস থেমেছে এমন তালিকা আরও লম্বা। এক শব্দে বিশাল। মোট ১৫১ ক্রিকেটার আছেন যারা থেমেছেন আক্ষেপের সংখ্যায়, করেছেন আফসোস।
 


প্রথমবার এমন ‘আফসোসের ক্লাব’ ওপেন করেছিলেন ক্লেম হিল।  অস্ট্রেলিয়ার এ ক্রিকেটার ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই ক্লাবে যোগ দিয়েছেন ১৪১ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে ২৩ জন অপরাজিত ছিলেন ৯৯ রানে। নিশ্চিতভাবেই তাদের আফসোস অযুত গুণ।   

চারজন ক্রিকেটার আছেন যারা তিনবার খেলেছেন ৯৯ রানের ইনিংস। যার মধ্যে তিন ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। বাকি তিনজন কমপক্ষে একবার ৯৯ রানে অপরাজিত থেকেছেন- জিয়ফ বয়কট, রিচি রিচার্ডসন ও মিসবাহ-উল-হক। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ২০০৭ সালে পাঁচ মাসের মধ্যেই ৯৯'এ তিনবার থেমেছেন শচীন টেন্ডুলকার।

একবার কিন্তু এক টেস্টেই তিনজন ব্যাটসম্যান ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে করাচীতে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে এমন ঘটে। ওই তিন আক্ষেপকারী-পাকিস্তানের মাজিদ খান ও মুস্তাক মোহাম্মদ এবং ইংল্যান্ডের ডেনিস এমিস।

অভিষেকেই সেঞ্চুরি! যে কোনও ক্রিকেটারের জন্য এ যেন এক স্বপ্ন। যেমনটা বাংলাদেশের হয়ে করেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসান রাজু। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে যদি বাধা হয়ে দাড়ায় একটি 'দৌড়' বা রান? তখন আক্ষেপের সংখ্যা হিসেবে ৯৯ এর যথার্থতা প্রমাণ হয় আবারো। 

এভাবে ক্যারিয়ারের শুরুতেই আক্ষেপে পুড়েছেন পাঁচ জন। যার স্বাদ প্রায় ৮৬ বছর আগে প্রথম নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার আর্থার চিপারফিল্ড। এরপর ১৯৪৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি আউট হন ৯৯ রানে। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের অসীম কামালও সেই আক্ষেপে পুড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। বর্তমান ইংল্যান্ড দলের ওয়ানডে কাপ্তান এউয়ন মরগানও অভিষেকেই সাজঘরে ফিরেছিলেন ৯৯ রানে। তবে সেটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, আয়ারল্যান্ডের হয়ে! এই পাঁচ জনের মধ্যে একমাত্র মহিলা ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার জেস জনাসেন। ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রান করে আউট হয়েছিলেন তিনি। 

এতো গেল, শতকের পরিসংখ্যান। এবার ৯৯ -র আরও কিছু হাহাকারের ঘটনা জানা যাক।
 


ছোটবেলায় একবার আজহারউদ্দীন গলিতে ক্রিকেট খেলছিলেন। ব্যাটিং ভালো না করতে পারায় স্বভাবতই বাকিদের নানান কথা শুনতে হচ্ছিলো তাকে। তিনি সেই ঘটনা তার দাদাকে বলেন। দাদার উপদেশ ছিল- মুখ দিয়ে নয়, ব্যাট দিয়ে জবাব দিও। যেই উপদেশ বরাবরই পালন করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন আজহার। 

ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চিনিয়েছিলেন নিজের জাত। তবে আজহারের দাদার মোহাম্মদ আয়াজউদ্দীনের একটা স্বপ্ন ছিল- আজহার ভারতের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলবেন। দাদার স্বপ্নকে লক্ষ্য বানিয়ে সে লক্ষ্যের পথে ভালোভাবেই এগুচ্ছিলেন আজহার। কিন্তু ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যান তিনি। পরে অবশ্য তার ফিক্সিংয়ে জড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে সে সময় তিনি আর টেস্ট খেলার উপযোগী নয়। আজহারের টেস্ট ক্যারিয়ার থেমেছিল ওই ৯৯ টেস্টেই! আবার শহীদ আফ্রিদির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারও থেমে যায় ৯৯ ম্যাচে। 

৯৯ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন চার বোলার। টেস্টে তিনজন- আর্থার মাইল, আব্দুর রেহমান ও বেন হিলফেনাস। আর ওয়ানডেতে ৯৯ উইকেট শিকার করে অবসরে যান নিউজিল্যান্ডের পেসার নাথান এস্টল।

কোন কিছু হবে আর হয়েছে, এর তফাত বুঝিয়ে দেয় এই ৯৯। ৯৯' এ থামলেই যে শতক হয়না! এই সংখ্যায় থামলেই যত আক্ষেপ। তবে এই আক্ষেপের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় ১ এর মূল্য, ১ রানের মূল্য বা ১ উইকেটের মূল্য কিংবা ১ ম্যাচের মূল্য। আর ওই ১ রান, উইকেট বা ম্যাচ বাড়িয়ে তোলে ক্রিকেটের সৌন্দর্য।

৯৯ 'এ থাকা অবস্থায় কি এখন আপনি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেন শতক হবে!