• ক্রিকেট

অপরিপক্ক প্রতিভার অকাল পতন

পোস্টটি ৩৩৭৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এই ছেলেটার ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা আছে, তার জন্মই হয়েছে ব্যাট করার জন্য। কিংবা ঈশ্বর একে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন উইকেট নেয়ার জন্য। এই ধরনের শিরোনাম পত্র-পত্রিকায় প্রায়শঃই চোখে পড়ে। আর যে বোলার বা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে এসব লেখালেখি হয়ে থাকে তাদের  ক্রিকেট জীবন শুরু করতে হয় 'ভবিষ্যৎ তারকা' নামক চাপের বোঝা কাঁধে নিয়ে।তারা যে বিশেষ কিছু এই ধারনাটা অনুশীলনের প্রথম দিন থেকেই তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জুড়ে দেয়া হয়। সমবয়সীদের তুলনায় তার দক্ষতাকে বিশেষ কিছু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।ফলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেশবাসীর বিশেষ আকর্ষনে পরিণত হয় সেইসব ক্রিকেটার।এই অনাকাঙ্ক্ষিত আকর্ষণ অধিকাংশ কিশোর ক্রিকেটারের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে যায়।

উপমহাদেশ বিশেষ করে ভারত পাকিস্তানে ক্রিকেট একাডেমির আধিক্য দেখা যায়। আর নামকরা কিছু একাডেমির উপর গণমাধ্যমের দৃষ্টি সর্বদাই থাকে।এমনই এক একটি জনপ্রিয় ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনা করেন আহমেদ মোস্তফা। পাকিস্তানের করাচির এক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এর অবস্থান। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে করাচি ও আশেপাশের অনেক দক্ষ কিশোর সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিত।এদের মধ্যে  ফয়সাল ইকবাল ও ওয়াইস শাহ ছিল অন্যতম। যারা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। সেই সময়ে অত্যন্ত দক্ষ কিছু ছেলেদের দুর্দান্ত সমাবেশ ঘটেছিল। যারা ঘন্টার পর ঘন্টা নিরলস অনুশীলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিল।এদের মধ্যে একজনের উপর সমস্ত আলো এসে পড়ে।শুধু করাচিবাসী নয় সমগ্র পাকিস্তানীর দৃষ্টি কেড়ে নেয় ১২ বছরের এক বালক।একাডেমির শত বালকের ভিড়ে এই লিকলিকে লম্বা গড়নের ছেলেটি সবার আকর্ষণের বিষয় হয়ে ওঠে।পেশীবিহীন বাহুতে ব্যাট ধরলেও নিয়মিত সীমানার ওপারে বল পাঠাতে পটু হয়ে উঠেছিল। সেই একাডেমির অন্যদের তুলনায় সে অনেক এগিয়ে ছিল। এমনকি তার সমসাময়িক সময়ের সমস্ত প্রতিভাবান পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের থেকেও শতগুন এগিয়ে থেকে বয়স ভিত্তিক দলের হয়ে খেলা শুরু করেছিল।

কথা হচ্ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের *সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষিক্ত হাসান রাজাকে নিয়ে।১৯৯৬ ক্রিকেট মৌসুমে প্রথম শ্রেণীর প্রথম তিনটি ম্যাচে ৪৩.৪০ গড়ে ২১৭ রান সংগ্রহ করে জাতীয় নির্বাচকদের নজরে আসে। কিশোর ক্রিকেটারদের অভিষেকের সুযোগ করে দেওয়ার ঐতিহ্য বরাবরই পাকিস্তান জাতীয় নির্বাচকদের।সেই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ফয়সালাবাদে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে হাসান রাজার অভিষেক করিয়ে নেয়া হয়।১৯৯৬ সালে টেস্ট অভিষেকের দিনে তার বয়স মাত্র ১৪ বছর ২২৭ দিন !! পূর্ববর্তী রেকর্ডটি ছিল তার স্বদেশী মুস্তাক মাহমুদের দখলে।১৫ বছর ১২৪ দিন বয়সে তার অভিষেক ঘটেছিল ১৯৫৯ সালে।যাহোক হাসান রাজার কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা পূরণ করতে সে ব্যর্থ হয়।পাকিস্তান ম্যাচটি জিতলেও ৪৮ বলের স্থায়ী ইনিংসে মাত্র ২৭রানই করতে পেরেছিল। রেকর্ড বইয়ে নাম তোলার জন্য তড়িঘড়ি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নামিয়ে দেয়া হলেও পরবর্তীতে নির্বাচকদের হুঁশ ফেরে।তারা অনুধাবন করতে পারে যে সবচেয়ে বড় মঞ্চের জন্য হাসান খুব কম বয়সী।তাই অভিষেক হওয়ার পরের দু'বছরের জন্য তাকে আর পাকিস্তান দলে জায়গা দেয়া হয়নি।তবে ওয়ানডে আন্তর্জাতিক দলে তাকে নিয়মিতভাবে সুযোগ দেয়া হয় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য।

হাসান রাজা ব্যাট হাতে প্রথম আকর্ষণীয় মুহূর্তটি ছিল ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে সাহারা কাপে।ভারত সিরিজ আগেই  জিতে নেয়ায় ৫ম তথা শেষ ওয়ানডেতে পাকিস্তান টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।২৫১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে।ইজাজ আহমেদ ও ইনজামামের অর্ধশতকে সহজেই  ম্যাচ জিতে নেয়।তবে সেই ম্যাচে রাজার ৪১ রানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।শহীদ আফ্রিদি ইজাজ আহমেদ উদ্বোধনী জুটিতে শতরান করলেও আর ২৭ রান করতে ৪জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হারিয়ে চাপে পড়ে। সেই অবস্থায় অভিজ্ঞ ইনজামামের সাথে শতরানের জুটি গড়ে তরুণ হাসান রাজা এবং পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা থেকে রক্ষা করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই ইনিংসটি ছিল তার প্রতিভার প্রথম দর্শন।কিন্তু তার পরের এক বছরে  আর কোন ওয়ানডেতে তাকে দেখা যায়নি।দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল। সেই খেলায় আগের সর্বোচ্চ ৪১ রানকে ছাপিয়ে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে।ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল নিয়মিত ভাল খেলে দীর্ঘ দুই বৎসর বাদে ১৯৯৮ সালে আবার টেস্ট দলে জায়গা পায়।কিন্তু সমর্থকদের আবারও আশাহত করে ৪০ মিনিট স্থায়ী ইংনিসে মাত্র তিন রান করতে পেরেছিল।ঘন কুয়াশার কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় পাকিস্তান একবার ব্যাট করেছিল।সেই ম্যাচের পরে আবার নিখোঁজ। এক বছর পরে ফিরে এসেছিল। ১৯৯৯ সালে ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে সমর্থকদের আশা যোগান।কিন্ত সেই বছরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার সর্বশেষ ওয়ানডে ইনিংস। হাসানের ওয়ানডে ক্যারিয়ার আবার কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়। তারপর আর কখনই আলোর দেখা পায়নি।

২০০২ সালে গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, জেসন গিলেস্পি, ব্রেট লি এবং শেন ওয়ার্নের মতো বোলার সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শারজায় খেলতে নেমে পাকিস্তান দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৫৯ ও ৫৩ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার রেকর্ড করে।ফলে প্রথম শ্রেণীতে ভাল রান করে আসা হাসান রাজার মূল একাদশে ফেরা ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার।চার বৎসর পর টেস্ট খেলতে নেমে উভয় ইনিংসেই  অর্ধশত রান করে। তার ইনিংস দুটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ কেননা আর কোন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান ৫০ পার করতে পারেনি।তার পরিশ্রমী ইনিংস সত্ত্বেও ইনিংস হার এড়াতে পারেনি পাকিস্তান।সেই বছর আরও দুটি টেস্ট খেলার সুযোগ পায় হাসান রাজা।কিন্তু তারপর আবারও দলের বাইরে চলে যেতে হয়।২০০৫ সালে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আবারও দলে ফেরার সুযোগ হয় তার।এবারও ব্যাট হাতে তার প্রতিভার প্রমান দিতে ব্যার্থ। এরপর জাতীয় দলের হয়ে আর কখনও খেলা হয়নি তার।

হাসান রাজা তার দশ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়।সর্বসাকুল্যে ৬০৮ টি বলের মুখোমুখি হয়েছিল।৩৮.৬৫ স্ট্রাইক রেটে ২৩৫ রান করতে সমর্থ হয়। তার টেস্ট খেলোয়াড়ি জীবনে চারজন অধিনায়কের অধীনে খেললেও কোন অধিনায়কই তার প্রতিভাকে কাজে লাগানোর মত কোন কিছুই করতে পারেনি।তার খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে ইমরান বা সৌরভের মত অধিনায়ক পেলে টেস্ট খেলার সংখ্যাটা ৭ না হয়ে ৭০ ও হতে পারত।ওয়াসিম আকরাম, মঈন খান, ইনজামাম উল হক,ওয়াকার ইউনুস এই চারজনের অধিনায়কত্বে খেলার সুযোগ পেয়েছিল।কিন্তু হাসান রাজার দুর্ভাগ্য যে কোন অধিনায়কই তাকে নিয়মিত মূল একাদশে জায়গা করে দেয়নি।কেউ তার পাশে ভরসা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কোন অধিনায়কই তার কাঁধে হাত রেখে হয়ত বলতে পারেনি রান করো বা না করো পুরো সিরিজে তুমি খেলছে।কারন পাকিস্তানের অধিনায়করা নিজের পদ রক্ষায় মরিয়া।কোন তরুণ প্রতিভার জন্য গলা ফটানোর মত জোর তাদের নেই। এদের মধ্যে শুধু ইমরান খান ছিল ব্যতিক্রম।

২০০৪ সালের নভেম্বরে হাশিম আমলা ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়।তখন সে ছিল সবার সেরা তরুণ প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম মেধাবী উদীয়মান ক্রিকেটার।কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটের মত কিশোর বয়সেই তড়িঘড়ি অভিষেক করানোর সংস্কৃতি দক্ষিণ আফ্রিকায় বিরল।২১ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল তাও ভারতের মাটিতে।প্রথম ইনিংসে ২৪ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রান করে  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পথচলা শুরু হয়। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম তিন বছরে তিনি ১৭ ইনিংসে ৫০ এর উপরে একটি ইনিংস।আর গড় মাত্র ২২। ২০০৫ সালে কোচ মিকি আর্থার যখন রে জেনিংসের কাছ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমলার প্রতি বিশেষ নজর দেয়।সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ছিল গ্রায়েম স্মিথ।অধিনায়ক আমলার মূল একাদশে জায়গা নিশ্চিত করে দিয়েছিল।প্রতিভার চাপট,প্রচারের আলো যাতে তার রান করার ক্ষেত্রে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় তারজন্য তাকে নির্ভার হয়ে খেলার জন্য ম্যাচের পর ম্যাচ তাকে খেলানো হয়েছিল।আর বাদ বাকিটা তো ইতিহাস।হাশিম আমলা বিশ্বের অন্যতম সেরা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে।

পাকিস্তানের উদীয়মান ক্রিকেটারদের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করে অধিনায়ক থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা প্রায়শই নিজের দলে ঠিকে থাকার জন্য খেলে থাকে।যারফলে তারা তরুণ প্রজন্মকে সঠিক দিশা দিতে অক্ষম।এতে করে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে দলে জায়গা করে নিয়েও সঠিক দিশার অভাবে নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ না পেয়ে ব্যর্থ তারকার তকমা জোটে।একটি সম্ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এমন একটি সংস্কৃতি থাকা উচিত যেখানে প্রকৃত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করা যায়।সেখান থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরবর্তী ধাপের জন্য উপযোগী করে তোলা।

আধুনিক যুগে যেকোনো ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারের সবরকমের পরিসংখ্যান পাওয়া খুবই সহজ।এছাড়া বিভিন্ন কোন থেকে স্লো মোশন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওর প্রাপ্যতার কারনে যেকোন ক্রিকেটারের সবল দুর্বল দিকগুলো উম্মোচিত হয়েছে।যারফলে কোচিং স্টাফদের হাতে একজন ব্যাটসম্যান বা বোলারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য যোগ্য করে তুলতে আগের তুলনায় অনেক সহজ ও দ্রুততর হয়েছে।আধুনিক যুগে ক্রিকেট নার্সারিগুলি প্রতিভাকে উন্নত করার জন্য স্থাপন করা হয়।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অস্বচ্ছ কাঁচা রত্নগুলিকে বার্নিসের মধ্য দিয়ে চকমক করে তোলার দায়িত্বে নিয়োজিত এইসব ক্রিকেট একাডেমি।সেখানে মনোবিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেয়া হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক মানসিক শক্তি যোগানোর জন্য।একজন কিশোরকে ক্রিকেটার হিসেবে যা কিছু উন্নত করা যায় তার উপর কাজ করা হয়।তাই ভাল ক্রিকেটার তৈরির পেছনে সব স্তরে ভাল কোচ এবং একাডেমির প্রয়োজনীয় প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। তবে এসব ক্ষুদে প্রতিভাকে নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক ঢাকঢোল বাজানোটা ক্ষতিকর। হাসান রাজার মত অনেক পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান সম্ভাবনার বোমা ফাটিয়ে খেলা শুরু করেও শেষটা ছিল শব্দহীন।এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রায়শই ঘটে।এর জন্য দায়ী পাকিস্তান ক্রিকেট কাঠামো।বর্তমান যে কাঠামো বিদ্যমান তা  ক্রিকেটারদের সম্পদে পরিণত করতে যথেষ্ট নয়।প্রতিভার অভাব কোন কালেই পাকিস্তানে ছিল না।কিন্তু সেইসব প্রতিভার যথার্থ স্ফুরনের সঠিক পদ্ধতির অভাব যথেষ্ঠই রয়েছে।যারফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের অপরিপক্কতা ও দূর্বলতা দ্রুত প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানের জুনিয়র এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো কখনও আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠেনি।সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মত নবীন অর্থনৈতিক শক্তি তাদের ক্রিকেট অবকাঠামোর উন্নয়নে অনেক অর্থ ব্যায় করছে।আর ভারতের মত বৃহৎ শক্তি স্বচ্ছ পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে তাদের ক্রিকেটের শিকড়কে শক্তিশালী করতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।ক্রিকেট কাঠামোতে স্বচ্ছতা বা অর্থ কোনটাই দিতে না পারায় পাকিস্তান ক্রমশঃ আরও পিছিয়ে পড়ছে।

পাকিস্তানী নির্বাচকরা যত উৎসাহের সাথে কিশোর প্রতিভাকে অভিষেক করায় কিন্ত সেইসব ক্রিকেটারদের সঠিক পরিচর্যার ব্যাপারে ঠিক ততটাই উদাসীন।২০২০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে ২৪০জনের টেস্টে অভিষেক হয়েছে।কিন্তু এরমধ্যে ৪২ জনের ভাগ্যে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয়নি।এই পরিসংখ্যান বলে দেয় কতটা সহজ পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলা।আর এই সুযোগের সহজলভ্যতার কারনে হাসান রাজার মত সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যানেকে অকালেই হারিয়ে যেতে হয়েছে।এটা স্পষ্ট তার মধ্যে মহৎ খেলোয়াড় হয়ে ওঠার সবকিছুই ছিল,ছিল ঈশ্বর প্রদত্ত বিশেষ গুন।বিশ্ব ক্রিকেটে চিত্তাকর্ষক ব্যাটিংয়ের জন্য জন্ম হয়েছিল হয়ত কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা আর পদ্ধতিগত ভুলের মাশুল গুনতে গুনতে হাসান রাজা গন্তব্যস্থল সাফল্যের শিখরে না পৌঁছে ব্যর্থতার স্টেশনে গিয়ে থামে।

 

*পরবর্তীতে তার জন্ম তারিখ,মেডিকেল পরীক্ষায় সন্দেহের ফলে পিসিবি রেকর্ড দাবি প্রত্যাহার করে নেয়।অভিষেকের সময় তার আসল বয়স অনিশ্চিত ছিল।

সূত্র : www.critracker.com

Image Courtesy : www.gettyimages.com