• ক্রিকেট

সাকিব ভুল করলেও দোষ, ক্ষমা চাইলেও দোষ!

পোস্টটি ৮০৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সাকিব ভুল করলেও দোষ, ক্ষমা চাইলেও দোষ!

আজহার মাহমুদ

সাকিব আল হাসান। তাঁর মর্যাদা, তাঁর সম্মান সবকিছুই আজ তার পরিশ্রমের কারণে এসেছে। আমরা বাংলাদেশি। আমরা কাউকেই মুখে তুলে খাইয়ে দিই না এবং উপরে তুলে দিই না। পারলে কেউ উঠতে গেলে তাকে নিচে কীভাবে নামানো যায় সেটা নিয়ে গবেষণা করি। টেনে যেন ফেলে দিতে পারি।
বর্তমানে দেশের অন্যতম একটি ইস্যু সাকিব আল হাসান। তিনি ইস্যু হয়ে এদেশে সবসময় থাকেন। এর আগেও ছিলেন জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করা, ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে। এসব নিয়ে যে যার মতো বলে গিয়েছেন। তার দুঃসময়ে পাশে থাকা মানুষের পাল্লা ভারি হলেও তার নামে কু-মন্তব্য করেছেন এমন মানুষও রয়েছে এই বাংলায়। যদিও সাকিব বরাবরের মতো বলে আসেন এসব তিনি দেখেন না এবং এসব নিয়ে ভাবেন না। তবে সম্প্রতি পূজা মন্ডপে যাওয়া এবং এক ভক্তের মোবাইল ফেলে দেওয়া নিয়ে তার উপর ক্ষেপেছে দেশের মানুষ। আমার মতে যারা ধর্মান্ধ এবং উম্মাদ।
সাকিব আল হাসান ভক্তের মোবাইল ফেলে দিয়েছেন নাকি ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছে সেটা তিনি নিজেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যারা এটা নিয়ে অতিবেশি ঢাকঢোল বাজিয়েছেন তাদের উচিৎ স্যোশাল মিড়িয়া না চালিয়ে কিছুদিন নির্বাসনে থাকা। আপনারাইতো স্যোশাল মিড়িয়া গরম করেছেন তার কোয়ারেন্টাইন না মেনে সুপার-শপ উদ্বোধন করা নিয়ে। ভক্তদের সাথে তখন মাস্ক খুলে ছবি তুলেছে কেন এটা নিয়েও বেশ সচেতনতার বাণী শুনেয়েছেন সাকিবকে।
এরপর সাকিব যখন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ছবি তুলতে চাননি। কিংবা দূরে সরিয়ে দিতে গিয়ে একজন ভক্তের মোবাইল ভেঙ্গে ফেলেছেন। এবার এটা মহা অপরাধ। এখন নিরাপদ দূরত্ব মেন্টেইন করেছে এটাও অপরাধ! আচ্ছা মেনে নিলাম অপরাধ। এজন্য সাকিব ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু কার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন? যার মোবাইল ভেঙ্গেছে সে এবং সাকিবের সকল ভক্তদের কাছেই তো! আসলে আপনারা কেমন ভক্ত? যে ভক্তদের এতো এতো খেলা উপহার দিয়েছেন সাকিব, সেই সাকিবকেই ভক্তদের কাছে ক্ষমা চাইতে হলো। একটা মোবাইল কি সাকিবের জন্য বিসর্জন দিতে পারেন না? সাকিব বললে তো এরকম হাজার মোবাইল নিয়ে আপনারাই ছুটে আসবেন। তাহলে কেন স্যোশাল মিড়িয়ার অপরাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেদের সুপারস্টারকে অপমান আর ছোট করলেন?
আচ্ছা এটার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। এই অধ্যায় শেষ। এবার পূজা উদ্বোধন করেছেন সাকিব এটা নিয়ে তাকে হত্যার হুমকি, তাঁর নামের আগে শ্রী, চন্দ্র, ঠাকুর, দাস ইত্যাদি বসিয়ে ট্রল করা হচ্ছে স্যোশাল মিড়িয়ায়। এসব কারা করছেন? যারা মাঠে, টিভিতে বসে তার খেলে দেখে সেই বাঙ্গালীরা। যারা বিশ্বকাপে সাকিবকে টুর্ণামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার না দেওয়ায় সমালোচনা করেছে, সাকিবের জয়ধ্বনি দিয়েছে তারাই এবার সাকিবকে নিয়ে এভাবে ট্রল করেছে। যারা সাকিবের শতক করা ম্যাচের ভিডিওতে লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে তারাই আবার সাকিবকে নিয়ে স্যোশাল মিড়িয়ায় অপপ্রচার চালিয়েছে।
একটা মানুষ তার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার আগেই আমরা তাকে আক্রমণ করে বসেছি। কিন্তু কেন? কি অপরাধ এই সাকিবের? এটাই কি তাঁর প্রতি ভালাবাসা ছিলো। সাকিবতো বলেছেন তিনি পূজা উদ্বোধন করেননি। এখন যারা বলেছিলেন সাকিব পূজা উদ্বোধন করেছেন তারা কি নিজে নিজে নিজের শাস্তি দিতে পারবেন? একজনতো রামদা নিয়ে লাইভে এসে সাকিবকে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছে। আর এদেশের মানুষ সেখানে হাসির রিয়েক্ট দিয়ে মনোরঞ্জন করেছে। শেয়ার করেছে, ছড়িয়ে দিয়েছে। এই হচ্ছে সাকিবের প্রতি ভালোবাসা!
অনেক উৎসুক জনতা ভিডিওটি দেখার জন্য এতোটাই অস্থির হয়েছেন যার ১০০ ভাগের একভাগ নামাজ পড়ার জন্য অস্থির হয় না। আবার ধর্ম নিয়ে বড় বড় লেকচার দিয়ে যায় তারা। ওই ভিড়িওতে যে গালি রয়েছে এসব কি ইসলামে শুনার জন্য অনুমতি দিয়েছে? আরেকটা কথা যে ব্যাক্তি ভিডিওতে গালি দিয়েছে, হুমকি দিয়েছে তার এসবও কি ইসলাম সমর্থন করে?
এবার আসি নিজেদের বিষয়। সাকিব তার এসকল কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চেয়েছন। তাও আবার সকলের কাছে। কেন? উনি সেলিব্রেটি বলে! আপনি কি পূজায় যান নি? আমিতো ফেসবুকে এমনও অনেককে দেখেছি যে দূর্গাপূজায় গিয়ে রাতভর নেচেছে অথচ সাকিবের এই বিষযটি নিয়ে অতি উচ্চমাত্রায় পোস্ট দিয়েছে। বুকে হাত দিয়ে ক’জন বলতে পারবে যারা তাদের বাল্যকালে, শৈশবকালে কিংবা একদিনের জন্য হলেও পূজায় যায়নি। আমি মনে করি বলতে পারবে না। একবার হলেও গিয়েছেন এমন সংখ্যা অনেক পাওয়া যাবে। আমার কথা হচ্ছে নিজের বেলায় কি এভাবে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন? ক্ষমা কেন চাইবেন। এটা আপনার নিজের স্বাধীনতা। আপনার পূজায় যেতে ইচ্ছে হলে যাবেন, প্রসাদ খেতে মন চাইলে খাবেন। এটা আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত ইচ্ছা। এসব নিয়ে কাউকে কৈফিয়ত দিতে আপনি যেমন দায়বদ্ধ নন, তেমনি একজন সেলিব্রেটিকেও দায়বদ্ধ করতে পারেন না। আপনি বলবেন সেলিব্রেটি অনেকের আইডল। তাই তার অনেককিছু দেখেশুনে চলা উচিৎ মানা উচিৎ। কিন্তু উনিও তো মানুষ। উনারও তো ভূল হতে পারে। উনিতো এমন না যে দিনের পর দিন পূজা মন্ডপে পড়ে থকেন। প্রয়োজনে, কাজে, ভালোবাসার মান রক্ষার্থে গিয়েছেন। তিনি তো আর কাউকে বলেননি সবাই পূজা মন্ডপে গিয়ে ঘুরে আসুন। তবুও তো আক্রমণ থেমে ছিলো না।
এবার যখন ক্ষমা চেয়ে পরিবেশ ঠান্ডা করতে চাইলেন সাকিব, ঠিক তখন আসলো আরেক আক্রমণ। এবার আক্রমণ করছেন আমাদের বিজ্ঞরা। সাকিব সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিলেন, তার ক্ষমা চাওয়া উচিত হয়নি এমন আরও অনেক কিছু নিয়ে প্রগতিশীলরা লেগেছেন সাকিবের পেছনে। তাহলে সাকিব কোথায় যাবেন? তাকে হত্যার হুমকি দিলেও চুপ থাকতে হবে। তাকে আক্রমণ করলেও চুপ থাকতে হবে। সাকিব ভুল করলেও আক্রমণ করবে, ক্ষমা চাইলেও আক্রমণ করবে। সাকিব কোথায় যাবে? তাঁর কি ব্যাক্তি স্বাধীনতা নেই?
   

লেখক : আজহার মাহমুদ
শিক্ষার্থী : বিবিএ-অনার্স, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ (৩য় বর্ষ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।