• অন্যান্য

ই-স্পোর্টস, ব্যাপারটা কী?

পোস্টটি ১৭৩৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ই-স্পোর্টস, টার্মটি এখন আর মোটেও অপরিচিত নয়। শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে এটির ব্যাপক পরিসরে যাত্রা শুরু বলা যেতে পারে। WCG (world cyber games) এর মাধ্যমে ১ম বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের ইস্পোর্টস এর যাত্রা শুরু।   ২০১০ এর দিকে বাংলাদেশ থেকে WCG এর ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টে বেশ কিছু প্লেয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। প্রথমে স্বচ্ছতা বজায় রাখলেও পরের দিকে এসে WCG বাংলাদেশ পার্টে বেশ কিছু অনিয়ম দেখা যায়। একসময় WCG বাংলাদেশ থেকে তাদের ফ্রাঞ্চাইজি প্রত্যাহার করে।

এছাড়া বাংলাদেশে মূলত গেমিং ক্যাফে ভিত্তিক টুরনামেন্ট সারা বছর ধরেই থাকে। যখন wcg ছিল তখন এর পরিমান অনেক বেশি ছিল। ফিফা, এন এফ এস, কাউন্টার স্ট্রাইক, ডটা, এজ অফ এম্পায়ার, এই গেম গুলো প্রধানত খেলা হত টুর্নামেন্ট গুলোতে। এখন ক্যাফে ভিত্তিক টুর্নামেন্ট অনেক কম হয়।

ডোটা২ ও ১ মিলিয়ন ডলারঃ

পেছনের কথা কিছুটা বলতেই হবে। ১৯৯৯/৯৮ এর দিকে World of Warcraft গেম বের হয়। এই গেম এর বিশেষত্ব ছিল কেউ চাইলে আলাদা ম্যাপ বানাতে পারবে। আলাদা ক্যারেক্টার বানাতে পারবে। অনেকটা আলাদা একটা গেমই বানাতে পারবে চাইলে এরকম ব্যাপার। এরই ধারাবাহিকতায় Defence Of The Ancients (DOTA) নামে একটা ম্যাপ + কাস্টম গেম বানায় আইস্ফ্রগ ও তার সাথের কিছু গেমার। এই আইস্ফ্রগ এর পরিচয় কখনো পাব্লিক করা হয়নি। পরে ভাল্ভ (গেম কম্পানি) আইস্ফ্রগ কে সঙ্গে নিয়ে নতুন রুপে নিয়ে আসে ডটা কে, ডটা ২ নামে ২০১১ সালে। সবকিছু সেম থাকে, শুধু গ্রাফিক্স পরিবরতন হয়। ২০১১ সালে ডটা ২ পাবলিশের সময় এর নিরমাতা ভাল্ভ নিজ উদ্যোগেই একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে, জয়ী দল পাবে প্রাইজমানি ১ মিলিয়ন ডলার, আর বাকিরা সবাই মিলে পাবে .৬ মিলিয়ন ডলার। মোট প্রাইজমানি ১.৬ মিলিয়ন ডলার।

এটিই ছিল মূলত আজকের ইস্পোর্টস এর শুরু। এরপর থেকে গেমগুলো এমন ভাবে বানানো হয় যেন সেটা দর্শক বান্ধবও হয়। শুধু মাত্র গেমার এর কথা চিন্তা করে এখন আর গেম গুলো বানানো হয় না। দর্শক এর কথাও সমান ভাবে চিন্তা করা হয়। চলে আসে নতুন ভিডিও সাইট টুইচ.টিভি। এই সাইটে লাইভ গেমস্ক্রিন শেয়ার করেন গেমার রা। আর সেটি দেখেন দর্শকরা। বিনোদনের নতুন মাধ্যম হয়ে যায় টুইচ। এসব ভিউ থেকে টাকাও কামায় গেমাররা। ফ১ এর মত ইস্পোরতসেও এর গেমিং ভারসন আছে। অনেক সময় ভিডও দেখার সময় গুলিয়ে ফেলতে পারেন কোনটি আসল আর কোনটি গেম।

ধারাভাষ্যের দিক থেকেও কোন অংশে পিছিয়ে নেই ইস্পোর্টস। প্রথম দিকে প্রফেশনাল ধারাভাষ্যকার কম থাকলেও এখন অনেক ধারাভাষ্যকার রয়েছে। ধারাভাষ্যের কোয়ালিটিও কোন অংশে অন্য কোন স্পোর্টস থেকে কম নয়। তবে ধারাভাষ্যে পাইয়নিয়ার ছিল ‘টোবি ওয়ান কেনোবি’। যদিও এই বছরের শুরুর দিকে সেক্সচুয়াল হ্যারাস্মেন্ট এর অভিযোগে গেম নিরমাতা এবং আয়োজকরা তাকে বয়কট করে।

ফুটবলে যেমন দল থাকে ইস্পোর্টসেও এরকম দল থাকে। তবে খেলা গুলো দেশভিত্তিক হয় না, হয় দল ভিত্তিক। এসব দলে প্লেয়ার কেনা বেচা হয় না। তবে প্লেয়ার রিত্রুট হয়। কোন স্থায়ী চুক্তি হয় না বললেই চলে। ইউরোপে এই কালচার বেশি। তবে এশিয়াতে কোরিয়া জাপানে অনেক আগে থেকেই গেমিং টিম/ ক্লান রয়েছে। এস কে গেমিং, মাউস স্পোর্টস, মিট ইয়োর মেকার, কমপ্লেক্সিটি, ইভিল জিনিয়াসেস, এন আই পি, ই হোম, এল জি ডি, ভিজি গেমিং এই ক্লান গুলো অনেক আগে থেকেই একটিভ এবং প্রথম সারির। এরপর আস্তে আস্তে তৈরি হতে থাকে ফ্যানাটিক, নাভি, সেক্রেট গেমিং, অ্যালায়েন্স, লিকুইড, ওজি, নিগমা এরকম হাল আমলের জনপ্রিয় ক্লান।  অনেকটা অবাক করা হলেও সত্য, এসব টিমের প্রফেশনাল টিম ম্যানেজার ও কোচ থাকে। থাকে অনেক রকম স্পন্সরও। এই করোনাকালীন সময়ে অন্য সব স্পোর্টস এর পরিসর যেখানে ছোট হয়েছে, ইস্পরটস এর পরিসর হয়েছে বড়। অনেক অনেক অনলাইন টুরনামেন্ট এর আয়োজন করা হয়েছে। তবে অফলাইন মেগা-গিগা টুরনামেন্ট গুলো আয়োজন করা হয়নি এবার। এসব অফলাইন মেগা টুরনামেন্ট গুলো আসলে ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়। স্টেডিয়ামের মাঝে ২ দল মনিটর এর সামনে বসে পড়ে। আর তাদের খেলাও দেখানো হয় চারপাশের বড় স্ক্রিনে। অন্য খেলার মত এখানেও স্টেডিয়ামে টিকেট কেটে লোকজন আসে খেলা দেখতে। সাপোর্ট করে, উতসাহ দেয় পছন্দের দলকে।

টাকা পয়সার দিক থেকে সবচে এগিয়ে আছে ডটা২। এই গেমের প্রাইজমানি অন্যগেমগুলো থেকে বেশি। ডটা২ এর প্রধান টুর্নামেন্ট হলো ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল’, যেটা আয়োজন করে এর নিরমাতা প্রতিস্থান ভাল্ভ। ২০১১ থেকে প্রতিবছরই এটা হয়ে থাকে। ২০১১ তে ১.৬ মিলিয়ন প্রাইজমানি দিয়ে শুরু করলেও প্রতি বছর প্রাইজ মানি বেড়েছে।  এবছর করোনা এর জন্য হয়নি, আগামি বছর হবে যার মোট প্রাইজমানি ৪০ মিলিয়ন (চল্লিশ মিলিয়ন) ডলার।

সবচে কম বয়সে মিলিয়নিয়ার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবে ফেসবুকের মার্ক জাকারবারগের কথা। ২০১৫ এর আগে তাই ছিল। কিন্তু ২০১৫ তে ১৫ বছর বয়সি সুমাইল হাসান (পাকিস্তান বংশোদ্ভূত মার্কিন ডটা২ প্লেয়ার) এর দল ডটা ২ এর ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল’ চ্যাম্পিয়ন হলে সে হয়ে যায় সর্বকনিষ্ঠ মিলিয়নিয়ার। সেবছর চ্যাম্পিওন দলের জন্য প্রাইজমানি ছিল ৮ মিলিয়ন এবং মোট প্রাইজমানি ছিল ১০ মিলিয়ন। সুমাইলের ভাইও প্রোফেশনাল ডটা প্লেয়ার।