• ক্রিকেট

দ্য লাস্ট উইক

পোস্টটি ৯৬৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আধুনিক ক্রিকেটের রাজপুত্র তাঁরা। ভিরাট কোহলি। কেন উইলিয়ামসন। স্টীভ স্মিথ। জো রুট। একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দেন প্রায়ই। কোহলি পিতৃত্বকালীন ছুটিতে গেছেন, উইলিয়ামসন সে অবকাশ কাটিয়ে মাত্রই ফিরেছেন। জো রুট বহু আগেই সেই সৌভাগ্য ও আশীর্বাদের বর পেয়ে গেছেন। পিতা হওয়ার দৌড়ে বাকি আছেন শুধুই—স্টীভ স্মিথ। তবে মাঠের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন তিনিই। ষাটোর্ধ্ব গড় নেই এই তিনজনের কারো। নিষেধাজ্ঞা হতে ফিরেও প্রমাণ দিয়েছেন তাঁর ব্যাটে মরচে-টরচে পড়েনি, বন্ধ্যাত্ব নামেনি, তাঁর উইলোটা এখনো রানপ্রসবা। যদিও আচমকা অচেনা মনে হচ্ছে তাঁকে, অশ্বিনের সঙ্গে বুদ্ধির খেলায় হার মানছেন বারবার। তবে স্থির-বিশ্বাস যুবরাজের প্রত্যাবর্তনটা ঠিকই রাজকীয় হবে। ওদিকে উইলিয়ামসন উইন্ডিজকে একহাত নেয়ার পর পাকিস্তানকে সামলে নিচ্ছেন আশ্চর্য কমনীয় ঢঙ-য়ে, ঐকান্তিক সুস্থির সাধনায়। বছরের এই গোধূলী বেলায় সবুজ মঞ্চে নেই কোহলি, নেই রুটও।

 

একসঙ্গে তাঁরা চারজন কখনোই ‘বক্সিং ডে টেস্ট’  খেলেননি। তিনটি দেশের আয়োজনে তিনটি প্রতিপক্ষের দেখা মেলে, তাতে খুব সম্ভব ছিল এই ব্যাপার। কিন্তু যেকোনো কারণে হয়নি হয়তো। ২০১৪-এর ইংলিশ গ্রীষ্মে স্মিথের ১৯২-এর মাস্টারক্লাসের জবাবে কোহলি দিয়েছিলেন ১৬৯-এর ক্ল্যাসিক। ২০১৭-এর অ্যাশেজে স্মিথের ১০২-এর কোনো জবাব রুটের কাছে ছিল না। স্টীভ স্মিথ টানা চার বক্সিং ডে টেস্টে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি, ২০১৪ থেকে ২০১৭— চারটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রেখেছেন ১৯২, ১৩৪*, ১৬৫* ও ১০২* রানের অনবদ্য ইনিংস। স্মিথের ‘বক্সিং ডে’ গিফট কে দেয়, সে নিয়ে তদন্তের দাবী তোলা-ই যায়? কিন্তু মুশকিল হয়ে গেছে অভিশপ্ত সেই স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারির পর থেকে। ২০১৮-তে নিষিদ্ধ থাকলেও ছিলেন ২০১৯-এ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৫ পর্যন্ত গেলেও ‘বক্সিং ডে’ গিফটটা আর পাননি। আর ২০২০-এ তো গেলেন শূণ্যতেই। সময় ফুরিয়ে যায়নি। হয়তো ২০১৭-এর সেই অ্যাশেজের মতো দ্বিতীয় পালায় পেয়ে যাবেন সেই আকাঙ্খিত উপহার!

 

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ঐতিহ্য লালন ও সংস্কৃতি পালনের সচেতনতাবোধের আরেকটি প্রমাণ এই বক্সিং ডে টেস্ট। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা নিয়মিত পালন করে আসছে এই সংস্কার। এখন তো এই টেস্ট ঘিরে আলাদা সম্মাননার ব্যবস্থাও করেছে। ক্রিকেট শুধু খেললে হয় না, একে লালনের ব্যাপারও আছে। আর সেই উপায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো আর কেউ দেখাতে পারে না। নিউজিল্যান্ড অনিয়মিত, গত আট বছর ধরে দক্ষিন আফ্রিকা চেষ্টা করছে এই ঐতিহ্য গড়ে তোলার। ২০২২-এ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ দক্ষিন আফ্রিকা, নিশ্চিতভাবেই সে বছর ছেদ পড়ে যাবে দক্ষিন আফ্রিকার এই প্রচেষ্টায়।

*****

 

দক্ষিন আফ্রিকার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। গত বছর এই দক্ষিন আফ্রিকা থেকেই সিরিজ জিতে ফিরেছে শ্রীলঙ্কা। তিলকারত্নে দিলশানের অধিনায়কত্বে খুব সম্ভব একটা অর্জনই ছিল, তা হচ্ছে দক্ষিন আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিন আফ্রিকাকে হারানো। তার আগে কোনো শ্রীলঙ্কা দলই পারেনি তা। অথচ গত সিরিজে কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, ওশাদা ফার্নান্দোর সঙ্গে বিশ্ব ফার্নান্দো, কাসুন রাজিতার মতো তরুণেরা কত সহজই না করলেন! এবারের দলে স্ট্রোকমেকারের ছড়াছড়ি। কুশল পেরেরা ওপেনিংয়ে ফিরেছেন, মিডল অর্ডারে ধনাঞ্জয়া, শানাকা, ডিকওয়েলা... মার মার কাট কাট ব্যাপার যেন! বোলিংয়েও রাজিতা-ফার্নান্দো-কুমারা আছেন। আক্রমণাত্মক এই দলটায় গুরু হিসেবে আছেন এক ‘দক্ষিন আফ্রিকান’ মিকি আর্থার। গত সিরিজের তুলনায় এবারে শ্রীলঙ্কা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকবে। দক্ষিন আফ্রিকা দলটার অবস্থা পথভোলা পথিকের মতো। যেন সে ভুলে গেছে কোথা হতে সে শুরু করেছিল, যেতে হবে তার কোথায়। এই দক্ষিন আফ্রিকা লঙ্কাদ্বীপের উত্তাল ঝড় কতটা সামাল দিতে পারবে কে জানে!   

 

পাকিস্তান ধীরে ধীরে তার ঐতিহ্যগত শক্তির জায়গাটা ফিরে পাচ্ছে। শাহীন শাহ ও নাসিম শাহ দারুণ এক্সাইটিং, মোহাম্মদ আব্বাস খুব অ্যাকুরেট; তারপরও চালকের আসনে নিউজিল্যান্ড। ওয়াসিম ও ওয়াকার এক আড্ডায় স্মৃতিচারণ করেছিলেন কোনো এক টেস্টে তাঁরা দু’জনে মিলে পাঁচ-পাঁচ ভাগাভাগি করে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে একশোরও আগে গুটিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ সেবার পাকিস্তান টার্গেট দিয়েছিল একশো ত্রিশেরও কম। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের পূর্বের ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। প্রথম ইনিংসে ১৭০ রানের বিশাল লীড থাকার পরও শোয়েব আকতারের বিধ্বংসী বোলিংয়ে সেবার হারতে হয়েছিল স্বাগতিকদের। মিডল অর্ডারে ইনজামাম-ইউসুফের অবিচ্ছিন্ন ১২১ রানের জুটিরও ভূমিকা ছিল অবশ্য। যদিও সে প্রায় দেড়যুগ আগের কথা। এই টেস্ট ছাড়া তার আগে-পরে স্বদেশের মাটিতে আর কোনো ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ হারেনি নিউজিল্যান্ড।

 

ভিরাট কোহলি নেই। তবে অজিঙ্কা রাহানে আছেন। মেলবোর্নে কোহলির সেই মাস্টারক্লাস ১৬৯-এর সঙ্গে রাহানেও ছিলেন, তাঁর ব্যাটে ছিল ১৪৭; দু’জনে ২৬৮ রানের বিশাল পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। এক অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মে ইরফান পাঠানকে দেখেছিল বিশ্বক্রিকেট, ভারতের পরের সফরে ইশান্ত শর্মাকে দেখা যায়। ইশান্ত শর্মা তো বলেছিলেনও— কলেজের আগের দিনগুলোয় তাঁর দিকে কেউ ফিরেও তাকাতো না, তিনি নিজের মতো ক্লাস করতেন। আর অস্ট্রেলিয়া সফর পরবর্তী সময়ে তিনি কলেজে গেলে সবাই তাঁর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো। তারও পরে বিশ্ব দেখেছে ভিরাট কোহলির বৈপ্লবিক রুপান্তর। অবিশ্বাস্য ব্যাটসম্যানশীপ। গত আসরে মায়নাক আগরওয়ালকে হয়তো সেরকম কিছু বলা যায়। কিন্তু এবার কে হবেন? শুভমান গিল? মোহাম্মদ সিরাজ? আইপিলের বদৌলতে এখন বিশ্বক্রিকেট তাদের বহু আগে থেকে জানলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও শ্বেত পোষাকের আবেদনই অন্যরকম।

ভারতের বোলিং আক্রমণ বিশ্বমানের, অসাধারণ। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ সে এক অন্যরকম আনন্দদায়ক কিছু। টু গুড। আগুন যেন! যদিও ব্যাটিংয়ে ভারত কিঞ্চিৎ এগিয়ে থাকবে। ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে তরুণ আক্রমণাত্মক প্রতিভা জুড়েছে। তাঁরা আবার ভয়ডরহীন। প্রতিভাবান বা আক্রমণাত্মক কিছু সামাল দেয়া যায়, কিন্তু ‘ফিয়ারলেস’ ক্রিকেট সামাল দেয়া মুশকিল। লড়াইটা জমবে বেশ। একপাশে আগুন, অন্যদিকে আগুনের ভয় না-করা তরুণ প্রতিভা; ভারত যদি লড়াইয়ের ফেরে তাহলে ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’ এর বদৌলতেই ফিরবে।

*****

 

বছর চারেক আগে বাংলাদেশ খেলেছিল ‘বক্সিং ডে’ ওডিআই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বক্সিং ডে নিয়ে আবেদন এই অঞ্চলে সেরকম নেই, তাই শীতের এই সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট মৌসুম হলেও তেমন কোনো আয়োজন নেই। ভিন্ন কোনো ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি বাংলাদেশ ক্রিকেট যুক্ত করতে পারে। সেজন্য অবশ্য ক্রিকেট বোঝা মানুষ হলেই চলে না, ক্রিকেট-মনষ্ক ব্যক্তিত্ব হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে সেরকম কেউ নেই। এমনকি ক্রিকেটারদের মধ্যেও ক্রিকেট ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আগ্রহী চরিত্র আছে বলে মনে হয় না।

 

সে যাকগে। বহু বছর আগে বাংলাদেশ একটি বক্সিং ডে ওডিআই খেলেছিল, ভারতের বিপক্ষে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম অর্জন ও আনন্দের দিন। চট্টগ্রামে আগের ম্যাচটাতে অনেকটা কাছে পৌঁছলেও, ভারতকে পেরিয়ে যাওয়া হয় না। খালেদ মাসুদের শেষদিকের ব্যাটিং কেবল ব্যবধান কমাতে সাহায্য করে। যদিও পরে বোঝা যায় তা একটা বার্তাও ছিল, যা ভারতীয় ক্রিকেট বুঝতে পারেনি। তাই শচীন টেন্ডুলকার যান বিশ্রামে। এদিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর ভর করে ঐশ্বরিক কিছু। জ্বরে উত্তপ্ত গা নিয়ে উপভোগ করা সে ম্যাচ ভুলিয়ে দিয়েছিল জ্বরের কাঁপুনি ও যন্ত্রণা। সৌরভ গাঙ্গুলি আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় বাবার মুখে শোনা সে কথা মনে আছে এখনো— গুরা ফোয়ার মুতত আছার হাইবনি হোনো! (বাংলা ভাষায় যা দাঁড়ায়— শিশুর প্রস্রাবে পা পিছলে পড়বে না তো!)

সৌরভের ‘টিম ইন্ডিয়া’ শুধু পা পিছলে পড়েননি, উল্টো-পাল্টে চিৎপটাং হয়ে গিয়েছিলেন। আশরাফুল-আফতাবদের আনন্দের ডিগবাজি, পুরো মাঠ ঘুরে ঘুরে পুরো দলের চক্কর, উন্মাতাল গ্যালারীর উচ্ছ্বাস, রাস্তা থেকে ভেসে আসা মিছিলের স্লোগান... সে এক রাত ছিল!

 

তারও পরে বক্সিং ডে-তে একটা টেস্টে নেমেছিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৫২১ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে সেবার প্রথমে আশরাফুল-সাকিব, পরে সাকিব-মুশফিক পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। ভড়কে দিয়েছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো মাস্টার ট্যাকটিশিয়ানকেও। মুরালীর বলে স্লিপ পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়েছিলেন মাহেলা। বাংলাদেশ ক্রিকেট চতুর্থ ইনিংসে অমন দাপুটে বীরত্ব ও লড়াকু মনোভাব খুব কমই দেখাতে পেরেছে।

আরো একবার বাংলাদেশ বক্সিং ডে-তে টেস্ট খেলেছিল। টেস্ট আঙিনায় অভিষেকের এক বছরের মাথায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বলাই বাহুল্য সে ম্যাচের চিত্রনাট্যে গল্প পাড়ার মতো কিছু ছিল না!

*****

 

বছরটা শেষ প্রায়। যেন খুব দ্রুতই কেটে গেছে। মাস-দুয়েক স্রেফ গৃহবন্দীতেই পেরিয়ে গেছে। স্থবির বিশ্বে বসে থাকা ও ভাগ্য-নিয়ন্ত্রকের উপর নিজের ভাগ্য সঁপে দেয়া ছাড়া আর কারো কিছু করার ছিল না। রাহাত ইন্দুরির দুটো লাইন পাঠ হয়ে যাক—

Raste mein fir wahi pairon ka chakkar aa gaya

January guzra nahi tha aur December aa gaya

পথের বাঁকে পদক্ষেপে ঘোর লাগে যেন!

জানুয়ারি গেল কবে, এখনি ডিসেম্বর কেনো?

 

এই বছর অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে যেমনি, ঠিক তেমনি দিয়েছেও প্রচুর। মানুষে মানুষে মমতা-বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্কগুলো নতুন সার ও পানি পেয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মানুষ জীবনকে নতুন করে দেখার ভঙ্গী, বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেয়েছে। খেলাধুলোকে নেহায়েৎ সময় অপচয় ভাবা হয়। অথচ এই খেলাধুলা আজকের আধুনিক পৃথিবীতে মানুষের কতটা জুড়ে আছে, বোঝা হয়েছে তাও। প্রায় পাঁচ মাস কোনো ক্রিকেট ছিল না পৃথিবীর কোথাও। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে কাটে সে ফাঁড়া।

 

তুমি জানো একগুচ্ছ সময় নষ্ট তা,

তুমি জানো, তোমার কোনো আর্থিক সঙ্গতি মিলবে না এখানটায়।

দীর্ঘ সময় চেয়ে থাকা—

বিনিদ্র রজনী, কর্মহীন দিবস

অলস অবসর আছে যেন বড্ড!

 

আদতে তোমার কাজ আছে অনেক,

কিন্তু তুমি সেসব ফেলে রাখো বা দেখেও দেখো না বা ভুলে থাকো।

তুমি সময় নষ্ট করে গেলো তা, মুগ্ধ হও, হও উচ্ছ্বসিত।

তুমি খাটুনী হলেও লেখো তা, শিরদাঁড়া যদি ব্যথা করে, করুক।

তুমি বসে বসে পড়ো তা, উদ্বেলিত হও নতুন জানার আনন্দে।

 

সুনীলের কবিতা পড়েছো তুমি—

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো

আমি বিষপান করে মরে যাবো।

 

সময়ের কাঠিন্যে নির্বাসন দিতে হয় তবু,

তুমি প্রহর গোণো সময় শেষের

নির্বাসন হতে প্রত্যাবাসনের।

তুমি জানো আগের মতো অনেক কিছুই দেখবে না আর,

সমবেত উচ্ছ্বাসে কাঁধে হাত, কাঁধে কাঁধ, গলাগলি, জড়াজড়ি—

থুতুর শৈল্পিক ব্যবহার,

ভরা গ্যালারীর উন্মত্ততা, সুর তোলা কোরাস, মিস করবে তুমি।

দেখবে না তুমি।

 

তবু তুমি প্রহর গোণো, অপেক্ষা করো,

এবং একদিন শেষ হয় তোমার কাল-গণনা।

তুমি দেখতে পাও শ্বেত পোষাক আর লালচে গোলক ফিরছে সবুজ মাঠে,

তুমি উত্তেজিত হও, উচ্ছ্বসিত হও,

অবশেষে ক্রিকেট ফিরছে।

যেন বহুকাল পর তুমি ক্রিকেট দেখতে পাবে...।  

(ক্রিকেট কবিতা— অবশেষে; ৮ই জুলাই, ২০২০)

*****

 

জো রুটের ফর্ম পড়তির দিকে। অকপটে স্বীকার করেন, অন্য যে তিনজনের সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়, তিনি তাদের কাতারে নন। অনেকে প্রশ্ন তোলেন কেনো এই চারজনই। পাঁচ নয় কেনো? বা ছয়? মার্নাস ল্যাবুশেন, বাবর আজমও তো আসতে পারেন এই আলোচনায়?

অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে রুট-স্মিথ-কোহলি-উইলিয়ামসন পৌঁছেছেন আজকের অবস্থানে। বিশ্বের নানাপ্রান্তে, নানান সময়ে ক্রিকেট দিয়ে প্রমাণ করেছেন নিজেদের। তাই এই চারজনের সঙ্গে এখনি অন্য কেউ আলোচিত হবেন, সে হয় না। তা সে রুট যতই বলুন, তিনি ফ্যাব-ফোরের উপযুক্ত নন। একদিনে যেমন তিনি উপযুক্ততা অর্জন করেননি, ঠিক তেমনি একদিনে হারাবেন না। সময়ই বলে দেবে ইতিহাসের কোন উচ্চতায় হবে কার অবস্থান।

এই চারজনের যে রান-ক্ষুধা, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যে তাড়না তাতে মনে হয়— দারুণ হবে যদি কখনো এই চারজন একসঙ্গে বক্সিং ডে টেস্টে নামেন। একটা ইতিহাস ও ঐতিহ্যে জুড়ে যাওয়া সময়ে যদি তাঁরা একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার, দেখিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, তাহলে তো কথাই নেই, বিশ্বক্রিকেটে অমন বছর-সমাপ্তি নিশ্চিতভাবেই আগে আসেনি কখনো!

 

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিন আফ্রিকা তিনটেই স্বাগতিক। তিন দলের বোলিং লাইনআপই দুর্দান্ত। সফরকারী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তিনটেই এশিয়ান পরাশক্তি। এবারে তিন দলের বোলিং লাইনআপই রোমাঞ্চকর। ব্যাটসম্যান-শাসিত এই ক্রিকেট দুনিয়ায়, বোলারদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে আসা ক্রিকেট নিয়ম ও শৃঙ্খলায়, এই সপ্তাহ বেশ একখান জমাটি ক্রিকেট উপহার দেবে বলেই বিশ্বাস। অনাগত আগামীতে ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বোলারদেরও ধুন্ধুমার ও মাঠ-দাপানো লড়াই হবে সেই ইঙ্গিত হোক এই বছরান্তের পরম পাওয়া।