• ফুটবল

ব্যার্থ আবাহনী, নবাগত জায়ান্ট বসুন্ধরার কাছে খাচ্ছে ধাক্কা!

পোস্টটি ১১০৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 ৭ জানুয়ারি ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে নবাগত জায়ান্ট বসুন্ধরা কিংসের কাছে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় দেশের ফুটবলের আরেক জায়ান্ট ঢাকা আবাহনী। শুধু তাই নয় আজ নিজেদের দ্বিতীয় ফেডারেশন কাপের ট্রফি তুলে বসুন্ধরা ৷ঢাকার মাঠে এখন ও ঢাকা ডার্বি খ্যাত আবাহনী - মোহামেডান এর খেলা চলে, মাঠে খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তাপ থাকলে ও আশি - নব্বই দশকের মতো সব দিক দিয়ে উত্তেজনা নেই, উত্তেজনার বারুদ হারালে ও কিছু সমর্থকদের মনে এখনো, আজীবনের জন্য আবাহনী - মোহামেডান এর জায়গা রয়েই গেছে।

এই যুগে এসে ঢাকা ডার্বির উত্তাপ কমলে ও এর ঋণ যেনো একদিক দিয়ে শোধ দিয়েছে কর্পোরেট হাউজের দল বসুন্ধরা কিংস, যারা দেশের ফুটবলের জায়ান্ট আবাহনীর সাথে টক্কর দিচ্ছে সমান তালে, শুধু সমান তালে লড়াই না তাদেরকে দিচ্ছে ধাক্কা। শুধুই কি মাঠের লড়াই? মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি দু'দলের ডাগআউটের লড়াইয়ে আবাহনী কোচ মারিও লেমোসের চাইতে এগিয়ে বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজন। করোনা ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে ২০১৯-২০ মৌসুমের লীগ বাতিল হওয়ার কারণে দু'দলের সাক্ষাৎ হয় নি। তবে, ঠিক সেই লীগের আগের লীগে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ মৌসুমে লীগ ম্যাচের দুই দেখায় আবাহনীকে হারের মুখ দেখতে হয় বসুন্ধরার কাছে এবং সেবার আবাহনীর চোখের সামনে থেকে লীগ জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিলো বসুন্ধরা কিংস। এর আগে ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে দু'দলের লড়াইয়ে বসুন্ধরার বিপক্ষে আবাহনী জয় ছিনিয়ে নিয়ে আবাহনী নিজেদের ১১তম ফেডারেশন কাপের ট্রফি জিতলে ও সাম্প্রতিক সময়ে যেনো বসুন্ধরার সাথে মেরেই উঠছেনা আবাহনী। কিন্ত কেনো? কেনো আবাহনীর এই বেহাল অবস্থা? কেনো আবাহনী বসুন্ধরার চাইতে পিছিয়ে? এই প্রশ্নগুলো আপনার মনে ও আসতে পারে৷

নতুন ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম শুরুর করার আগে যেখানে বসুন্ধরা কিংসের বিদেশীরা ৩-৪ মাস সময় পেয়েছে সেখানে আবাহনীর এক বিদেশীতো ফেডারেশন কাপের নক আউট ম্যাচে যোগ দিতে পেরেছে দলের সাথে। এখন পর্যন্ত অন্য বিদেশী ফুটবলারদের খেলা দেখে বুঝলাম তাদের ফিটনেসে বেশ ঘাটতি রয়েছে, শুধুই কি ফিটনেস! আবহাওয়া - খাদ্যাভ্যাসের সাথে কতটুকু মানিয়ে নিতে পেরেছিলো আবাহনীর বিদেশী ফুটবলাররা বিশেষ করে ঢাকার মাঠে নতুন আসা আবাহনীর দুই ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সিসকো তোরেস এবং রাফায়েল আগস্ত। অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংসের বিদেশীরা আগে-ভাগে ঢাকা এসে ভালোই প্রস্তুতি নিয়েছে, আবহাওয়ার সাথে ও মানিয়ে নিয়েছে তারা। বসুন্ধরা কিংস যেখানে দেশী- বিদেশী মিলে অনুশীলন করেছে অনেকদিন ধরে সেখানে আবাহনী অনুশীলন শুরু করেছে অনেক দেরিতে। আর দু'দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ও রয়েছে বেশ পার্থক্য। আবাহনী দলে যেন ফুরিয়ে যাওয়া ফুটবলার যাদের বেশীরভাগের বয়সই ৩০ এর বেশী অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংস খুবই ভারসাম্য একটি দল৷ ফুটবলারদের বয়সের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ও পিছিয়ে আবাহনী। দেশীদের মধ্যে আবাহনী গত ২-৩ সিজনে মোটামুটি একই খেলোয়াড় থাকলে ও এর উল্টো চিত্র ছিলো বসুন্ধরা কিংসে, আবাহনী সহ অন্য দলে খেলা ভালো দেশিদের দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে তারা। আবাহনীর তাঁবু থেকেই তো তাদের সেন্টারব্যাক তপু বর্মন, মিডফিল্ডার ইমন বাবু এবং আতিকুর রহমান ফাহাদকে নিয়ে নেয় তারা। সে দিকে আবাহনী বরং ভালো মানের দেশি ফুটবলারদের হারিয়েছে। সেই অভাবে রাইটব্যাক রায়হান হাসানকে সামলাতে হচ্ছে লেফট ব্যাকের মতো দায়িত্ব। সেদিক দিয়ে এখন পর্যন্ত সেন্টারব্যাকে তপু বর্মনের জায়গায় ভালো দেশি রিপ্লেসম্যান্ট করতে পারে নাই আবাহনী, মিডফিল্ডে ইমন, ফাহাদদের জায়গা ও কাউকে আনতে পারে নি আবাহনী। উল্টো সোহেল রানা, মামুনুল ইসলাম, মামুন মিয়াদের সামলাতে হচ্ছে মধ্যমাঠ। অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংস শেখ রাসেল থেকে ইয়াসিন খান, মিডফিল্ডে রবিউলদের ভিড়িয়েছে। কিন্তু সাফল্যের দিক দিয়ে আবাহনী এগিয়েছে দুটো দিক দিয়ে। একটি হচ্ছে স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবনের পা থেকে গোল এবং এসিস্ট পাওয়া এবং অন্যদিকটি হচ্ছে এএফসি কাপের জোনাল সেমিফাইনালে খেলেছে আবাহনী প্রথম বাংলাদেশি ক্লাব হিসেবে। তবে, সর্বশেষ স্থগিত হওয়া লীগের ছয় ম্যাচে ১২ গোল করেছিলো আবাহনী। বিদেশীদের মধ্যে বসুন্ধরা কিংস যেখানে দলে ভিড়িয়েছিলো বিশ্বকাপ খেলা ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস সেখানে আবাহনীর ভরসা ছিলো পুরনো সানডে - বেলফোর্টরা।

বলা চলে অনুশীলনের পর্যাপ্ত অভাব, পর্যাপ্ত ফ্রেন্ডলি ম্যাচ এবং দেশি- বিদেশী ফুটবলারদের সমন্বিত অনুশীলন বিলম্বিত হওয়ায় আবাহনী মার খাচ্ছে বসুন্ধরার কাছে।