• ফুটবল

বৈচিত্র্যময় কোচ জিদান ও মাদ্রিদ

পোস্টটি ৭৭৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

images - 2021-01-24T050512.786

বড় বৈচিত্র্যময় রকমের হয় বর্ষার এই আকাশ। কখনো শুভ্র মেঘের আনাগোনাতো আবার কখনো আকাশে কালোমূর্তি ধারণ করে হঠাৎ  শুরু হতে থাকে মুষলধারে বৃষ্টি। এক পসলা বৃষ্টি আপনার মনে রোমান্টিকতার দানা বুনলেও কয়েক দিবসের স্থায়ী বৃষ্টি হয়ে পড়ে ভোগান্তির কারণ। গ্রেট জিদানের অধিনে বর্তমান রিয়াল অবস্থা বর্ষার হঠাৎ বর্যণ থেকে কোনো অংশে কম নয়।বড়  টিমগুলোর সাথে জিদানের দল সজীবতায় পূর্ণতা পেলেও অপেক্ষাকৃত ছোট টিমগুলোর সাথে কেমন যেনো মলিন জিজু বাহিনী। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোচ জিদানের অধিনে স্পেনিস লীগে মাদ্রিদের কিছু পরিসংখ্যান। 

২০১৫-১৬ সিজনঃ

উক্ত সিজনের শুরুটা ২০১৫ সালের ১লা জুলাই হলেও মাদ্রিদে জিদানের কোচিং ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটে ৪ঠা জানুয়ারি ২০১৬ সালে।  সে বছর রাজকীয় রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতলেও মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে লীগ হারতে হয় মাদ্রিদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ৯১ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জয়ী হয়। সেবছর রিয়ালের হয়ে লীগে সবচেয়ে বেশি গোল ও এসিস্ট করেন রোনালদো, যথাক্রমে ৩৫ গোল ও ১১ এসিস্ট। রিয়াল লীগে.....

ম্যাচ= ৩৮

জয়= ২৮

ড্র=    ৬

হার= ৪

নোটঃ ৬ ড্রয়ের মধ্যে ৫ ম্যাচ ড্র করে পয়েন্ট টেবিলের ৮ম স্থানে ও তার নিচে অবস্থান করা দলের বিপক্ষে। অন্যদিকে ৪ হারের সবই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলের বিপক্ষে।

০১৬-১৭ সিজনঃ

আগের সিজনে লীগ শিরোপা মিস হলেও এই সিজনে ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে লীগ শিরোপা নিজেদের করে নেয় জিদানের শিষ্যরা। সে বছর ২৫ গোল করে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো ও ১০ এসিস্ট করে দলের সর্বোচ্চ এসিস্টদাতা মার্সেলো। রিয়াল লীগে..

ম্যাচ= ৩৮ 

জয়= ২৯

ড্র= ৬ 

হার= ৩

নোটঃ উক্ত সিজনে ৬ ম্যাচ ড্রয়ের ৩ ম্যাচ ড্র করে পয়েন্ট টেবিলের ৮ম স্থানে ও তার নিচে অবস্থান করা দলের বিপক্ষে। অন্যদিকে ৩ হারের ১ ম্যাচ পয়েন্ট টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে। 

২০১৭-১৮ সিজনঃ

পূর্বের দুই সিজনের তুলনায় লীগে এবার অপেক্ষাকৃত কম সাফল্য পায় জিদান ও তার শিষ্যরা। লীগে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে ৩য় অবস্থানে থেকে লীগ শেষ  করে জিদান বাহিনী। ২৬ গোল করে দলের হয়ে রন সর্বোচ্চ গোল করলেও সর্বোচ্চ এসিস্ট করে বেন্জেমা(১০ টি)। রিয়াল লীগে....

ম্যাচ = ৩৮

জয়= ২২

ড্র= ১০

হার= ৬ 

নোটঃ ১০ ড্র এর মাঝে রিয়াল ৬ ম্যাচ ড্র করেন পয়েন্ট টেবিলের ৮ম স্থানে ও তার নিচে অবস্থান করা দলের বিপক্ষে এবং, ৬ হারের ২ ম্যাচ হারে টেবিলের নিচের সারির দলের বিপক্ষে। 

২০১৮-১৯ সিজনঃ

পূর্বের তিন সিজনের তিনটিতেই চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতার পরও আচমকা রনের মাদ্রিদ বিদায় যখন পুরো ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিলো তখন কোচ জিদানের দল ছাড়াও সকল মাদ্রিদিস্তাদের মাঝে ট্রেজেডির সৃষ্টি করেছিলো। দলে একে একে কোচ লোপেতেগুই ও সোলারির আগমন ঘটলেও ক্ষত-বিক্ষত মাদ্রিদকে পূর্বের সাফল্যে ফিরিয়ে আনতে ২য় বারের মতো জিজুকে দলে ভেড়াতে বাধ্য হয় প্রেসিডেন্ট পেরেজ। সিজনের প্রায় শেষ মূহুর্তে যোগদান করে সেবার খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তার দল। সে সিজনে বার্সা ৮৭ পয়েন্ট নিয়ে লীগ জিতলেও ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে ট্রফিলেস থাকতে হয় মাদ্রিদের। দলের হয়ে ২১ গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরার বেন্জেমা হলেও ৬ এসিস্ট করে সর্বোচ্চ এসিস্টদাতা মদ্রিচ ও বেন্জেমা। রিয়াল লীগে....

ম্যাচ= ৩৮

জয়= ২১

ড্র= ৫

হার= ৫

নোটঃ ৫ ড্রয়ের মাঝে ৩ ড্র পয়েন্ট টেবিলের নিচে থাকা দলের বিপক্ষে ও ১২ হারের ৮ ম্যাচ হারে বেটিস,জিরোনা,লেভান্তে মতো তলানির দলের বিপক্ষে। 

২০১৯-২০ সিজনঃ

ভরাডুবি ট্রফিলেস সিজন পার করে আবারো মাদ্রিদকে পুরোনো উদ্যমে ফেরান কোচ জিদান। সিজনের শুরুটা আশানুরূপ না হলে করোনা পরবর্তী সময়ে ট্রফি জয়ের আশায় ভালোভাবেই ক্যামব্যাক করে দল। অনবদ্য পারফরম্যান্স করে লীগে জয় পায় রিয়াল। উক্ত সিজনে ২১ গোল ও ৮ এসিস্ট করে দলের হয়ে সেরা পারফরমার হয় বেন্জেমা। রিয়াল লীগে..

ম্যাচঃ ৩৮ 

জয়ঃ ২৬ 

ড্রঃ ৯

হারঃ ৩

নোটঃ ৮ ড্র এর মাঝে পয়েন্ট টেবিলের ৮ এর নিচে অবস্থান করা দলের সংখ্যা ৬টি এবং, ৩ হারের ৩টি হারেন দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। 

২০২০-২১ সিজনঃসিজনঃ

কোচিং ক্যারিয়ারে ১১ টি ট্রফি জেতা জিদানের চলতি ২০-২১ সিজন হয়তো হতে যাচ্ছে রোমাঞ্চকর ও অপ্রত্যাশিত। দু ম্যাচ লীগ জয়ের আশা জাগালেও পরের ম্যাচে আশাহত হচ্ছে মাদ্রিদিস্তাদের। এ পর্যন্ত সিজনের ১৮ ম্যাচে রিয়ালের... 

পয়েন্ট= ৩৭

ড্র= ৪

হার= ৩

নোটঃ ৪ ড্র এর ২ ম্যাচই ড্র করে রেলিগেসন জোনে অবস্থান করা ওসাসুনা ও এলচের বিপক্ষে।অন্যদিকে ৩ম্যাচ হারের ৩টিই তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।  

কোচ জিদান তত্ত্বঃ

জিদানের রিয়ালের ছয়টি মৌসুমের সব কয়টি বৈচিত্র্য ভরা। কখনো শীতল হওয়া দিলেও কখনো উষ্ণতার পরশ আর কখনো অপ্রত্যাশিত বর্ষণ। সফলতায় ভর্তি জিদানের দল কখনো আলোয় দীপ্তিমান হলেও কখনো অন্ধকারের ঘনঘটা। বিশেষ করে রন থাকাকালীন কোচ জিদান ও রন না থাকা জিদানের কোচিং-এ বিস্তর ফারাক দৃশ্যমান। আর তা হলো স্কোরিং।দলের মিড, ডিফেন্স ভিত্তি হয়ে দাঁড়ালেও সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে স্কোরিং-এ।রোনালদো থাকা অবস্থায় রিয়াল যেমন স্কোরার নিয়ে নিশ্চিত থাকতো পারতো সেখানে ঠিক উল্টো চিত্র বেন্জেমা, হ্যাজার্ডদের মাঝে। পূর্বের সিজন গুলোর তুলনায় গত দুই সিজনে জিজুর জন্য মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্বল প্রতিপক্ষগুলো। আর এর অন্যতম কারণ হতে পারে ছোট টিমগুলো নিয়ে জিদানের কৌশল ব্যর্থতা বা, ম্যাচ পূর্ববর্তী যথার্থ বিশ্লেষণ ঘাটতি। তাইতো যেখানে মেসি,গ্রিজমেনদের মতো সেরা প্লেয়ারদের জিদানের কৌশলে হাবুডুবু খেতে হলেও নিনো, লুকুমিদের মতো সহজ প্রতিপক্ষদের কাছে হার বা ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হচ্ছে জিজুর মাদ্রিদের।

কারো কাছে জিদান একরোখা একগুঁয়ে আবার কারো কাছে জিদান সর্বসেরা।তবে আমি বলি কী, জিদান বৈচিত্র্যময়, আপনাকে হতাশা যেমন করবে তেমনি বিশ্বাসের মর্যাদা টাও রাখবে। জিদানকে উপভোগ করুন কারণ, সেরাদের গালমন্দ নয় উপভোগ করতে জানতে হয়।