করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রীড়াজগত
পোস্টটি ১৪০২ বার পঠিত হয়েছেইতিহাস বিশ্লেষন করলে দেখা যায় গ্রীক, রোমান, স্পার্টা সভ্যতার সময় সমাজিক আচারন, যুদ্ধের অনুশীলন ও বিনোদনের মধ্যদিয়েই এক সময় ক্রীড়া বা খেলাধূলার উৎপত্তি হয়েছিল। যুগ, স্থান, রুচি, বয়স, লিংগ, অর্থ, শক্তি ইত্যাদির পার্থক্যের ভেদে বিভিন্ন প্রকার ক্রীড়া ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের জন্ম হয়। এক সময় ক্রীড়ার সাথে যুক্ত ছিল কেবল স্থান, ক্রীড়াবিদ, দর্শক ও রেফারী অথবা বিচারক। উদ্দেশ্য ছিল শুধুই বিনোদন।
কিন্তু আজ সেখানে জড়িত ক্রীড়াবিদ, কোচ, রেফারী, ম্যাচ রেফারী, পরিচালনা পরিষদ, মেডিক্যাল কমিটি, ফিজিওথেরাপী টিম, ম্যাসুর, ট্রেইনার, ফিটনেস সেন্টার, মাঠ পরিছন্নকারী টিম, টিভি রয়ালিটি, ফটো-জার্নালিষ্ট, টিভি-জার্নালিষ্ট, নিউজ-জার্নালিষ্ট, মিডিয়া বক্স, এরিয়াল ক্যামেরা ফ্রে›”াইজ, প্রডাক্ট বিজ্ঞাপন, স্পনসারশীপ, সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট, স্পোর্টস এন্টিকরাপশন ব্যুরো, দর্শক, ফুডকোর্ট বিজনেস, ট্রান্সপোর্ট বিজনেস, হোটেল বিজনেস, ধারাভাষ্যকার স্ট্যাটিসসিয়ান, শেয়ার মার্কেট, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, জুতো শিল্প, রিয়েল এস্টেট শ্রমিক, ব্যাংকিং বিসনেস ইত্যাদি। অর্থাৎ নানা পেশার বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভবে জড়িত ক্রীড়া ইন্ডাস্ট্রিতে।
ইন্টারনাশনাল অলিম্পিক কমিটি ২০২০ অলিম্পিককে আপততঃ জুলাই ২০২১ ইং সালে পিছিয়ে দিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখিন। গত ২৩শে মার্চ ইউরোপীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন অনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিযোগীতা বন্ধ করে দিয়েছে। হংকং প্রিমিয়ার লীগ জানুয়ারী ২৮, ২০২০ এ করোনার জন্য প্রতিযোগীতা বন্ধ করে দিয়েছে।
তবুও বড়বড় ষ্টেডিয়ামে দর্শকদের জন্য সিট নির্ধারিত করেছিল ১৮০ জনের। প্রত্যেকের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে, মাস্ক, শরীরের তাপমত্রা দেখাতে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি।
সব খেলোযাড়কে মিটিং রুমে দূরুত্ব বজায় রেখে শুরুতে, হাফ-টাইমে ও খেলা শেষে বসতে হবে। নয়জনের বেশী খেলোয়াড়কে এক সংগে চেঞ্জিং রুমে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কোন খেলোয়াড় স্টেডিয়ামে গোসল করার অনুমতি পাবে না। প্রত্যেককে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং করমর্দন বা কোলাকুলি নিসিদ্ধ। হংকং লীগ এভবে চালানোর চেষ্টা হলেও পরবর্তীতে বন্ধ করা হয়। তাছাড়া ও থু থু ফেলা বা অন্যের মুখে হাত লাগানোও ছিল নিষিদ্ধ। শুধু এ গুলোকে নজরদারী করার জন্য ৪ টি আলাদা ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল।
রিসার্চ শুরু হলো মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এনডুরেন্স ট্রেনিং এর; দেখা গেল অনেক জটিলতা-
১. অপরিপূর্ণ শ্বাস-প্রশ্বাস।
২. অল্প সময়ে ফিজিওলজীকাল দুর্বলতা।
৩. কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস।
৪. ব্লাড প্রেসার/হার্ট রেট ও ক্লান্তি বৃদ্ধি।
৫. মুখের চামড়ায় অস্বস্থি বা এর্ল্যাজিক রিএকশন।
৬. শরীরের তাপমাত্রার ভার-সাম্যহীনতা, কারন অসামঞ্জস্য তাপ পরিবহন, সঞ্চালন ও বিকিরনের অভাবে। সুতরাং আশানুরূপ ফল থেকে বঞ্চিত হতে হলো।
ফলে আর্থিক ক্ষতি শুরু হলো:-
১. এন.বি.এ এর ক্ষতি ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
২. ফিফার ক্ষতি ইতিমধ্যে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার।
৩. জাপান অলিম্পিক পিছিনোর জন্য ক্ষতি প্রায় ইতিমধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার।
৪. উইবিলডন ২০২০ ট্যুরনামেন্ট প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার লস করছে।
৫. আমেরিকান কলেজ স্পোর্টস যথা-বাস্কেটবল, ফুটবল ও বেস থেকে অর্জিত অর্থ দ্বারা কলেজ গুলোর অর্ধেক অপারেটিভ বাজেট কভার হয়। যা থেকে বহু বিদেশী প্রতিভাবান কিশোর এ্যাথেলেট স্পোর্টস স্কলারশীপ পায়। করোনার জন্য সারা আমেরিকার কলেজগুলো প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে বঞ্চিত।
৬. পাম বীচ এরিয়া (ফ্লোরিডা) গল্ফ-ট্যুর সিরিজ চায়না প্রগ্রাম বাতিল হয়েছে।
৭. টোকিও ম্যারাথন বাতিল হয়েছে।
৮. ইরানে সকল স্পোর্টস ইভেন্ট বাতিল হয়েছে।
৯. প্রমিলা আইস হকি-বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানশীপ বাতিল হয়েছে।
১০. ইটালীয়ান ফুটবল সিরিজ বতিল হয়েছে।
১১. ফরমুলা ওয়ান চাইনিজ গ্রান্ড প্রীজ বাতিল হয়েছে ।
১২. ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল--কাতার ক্লোলিফাইং বিঘিœত হয়েছে।
১৩. ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক বিশ্ব ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, বার্মিংহামে তা পিছিয়ে গেল ২০২২ ইং সালে।
১৪. ২০২০ সালেরন আর্টিক উন্টার গেমস বাতিল হয়ে গেল।
১৫. ২০২০ সালের ফিলিপিনে অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান পারা গেমস্ বাতিল হয়ে গেল।
১৬. ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৩১ তম গ্রীষ্মকালীন ওয়ার্ল্ড ইউনিভর্সিটি গেমস যা চিনের
চেনংডুতে হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল হয়ে গেল।
১৭.ক্রীড়াজগত বা আজকের ক্রীড়া/ স্পোর্টসইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০ ইং সালে । ২০১৮ ইং সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে বেকার লোকের সংখ্যা ছিল ১৭২ মিলিয়ন। বর্তমানে সেটা যেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০২০ ইং তে প্রায় ৩৩০ মিলিয়নএ প্রায়; এর ৬%-৯% বেকার শুধু স্পোর্টস-ইন্ডাস্ট্রিজে। তাই সবাই শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে, করোনা-ভ্যাকসিনের জন্য।
কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত অভিমত “সৃষ্টিকর্তা সম্ভবতঃ আমাদের কাজের সততার উপর এখনও সন্তুষ্ট না । কোথায় যেন খানিকটা ঘাটতি আছে ? কারণ আমরা করোনা নিয়েও ব্যবসার নামে বাটপারী করতে দ্বিধা বোধ করিনা এখনও।”
ডাঃ গোলাম শওকত হোসেন- চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষকএবং লেখক ;
(এমবিবিএস; এমপিএইচ; ইএমবিএ-এইচআরএম; পিজিডি-এইচআরএম; এমএস; পিএইচডি; ডিবিএ-থিসিস পার্ট-আইবিএ-ঢাবি)
- 0 মন্তব্য