প্রাধান্য দিন, অপচয় না হোক
পোস্টটি ১১১৮ বার পঠিত হয়েছে
প্রথমত তার এই বোলিংয়ের জন্য অভিনন্দন। মাত্র ২৭ টেস্টের (চলমান) ক্যারিয়ারে ৮ম ফাইফার। ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান বলে — দেশের বাইরে দ্বিতীয় ফাইফার এটি মিরাজের। প্রথমটি ২০১৮ তে উইন্ডিজেদের মাঠে তাদেরই বিপক্ষে। 'ঘরে যেমন, বাইরে তেমন' এই উক্তির সাথে একেবারেই বেমানান মিরাজের ক্রিকেটীয় চরিত্র। যদিও সার্বিক অর্থে পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই এই উক্তির বিপরীতে অবস্থান।
গতকাল দ্বিতীয় দিনে দ্বিতীয় সেশনের শেষদিকে জিম্বাবুয়ে যখন ব্যাটিংয়ে আসলো, পিচ তখনও ব্যাটসম্যানদের অনুকূলে। পিচ আজকের চা বিরতির আগে কিছুটা আচরণ পাল্টাতে শুরু করে। তার আগে বোলিংয়ে তেমনকোনো প্রাণ ছিলোনা, স্পিনারদের টার্ন আর সিমারদের সুইং দুটোই ছিলো গৎবাঁধা। তাই, তার আগপর্যন্ত মিরাজ ছিলেন একবারেই নিষ্প্রাণ। সকাল থেকে মিরাজের নির্বিষ বোলিং দেখেছে জনশূণ্য হারারের মাঠ।
এতে করে প্রতিটি উইকেট পেতে মিরাজের পিচের সহায়তা যে কতটুকু জরুরি তা আরেকবার প্রমাণিত। প্রশ্ন আসতে পারে সবাই তো ব্যর্থ, তাহলে কেবল মিরাজকে নিয়েই কেন আলোচনা ? কারণ, আজকের ম্যাচে তো মিরাজই সবচেয়ে সফল। তাই তাকে নিয়েই কী-বোর্ড সরগরম হওয়া স্বাভাবিক। পিচের আচরণ না বদলালে আজকেও তিনি সাদাকালো থাকতেন, দিনশেষে তার নামের পাশে নতুন করে পাঁচটা উইকেট দেখা যেতোনা। বিদেশের মাটিতে অকার্যকর থাকতে হতো আজকেও। মিরাজ সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার এই কথা এখনকার বাজারে মানানসই নয়। কেননা, মিরাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাঁচ বছর অতিক্রম করে ফেলেছে। তবুও! প্রশ্ন থেকে যায়। তাই আবারও করতে হয়, 'মিরাজ আসলে কতটুকু পরিপক্ব ?' অল-রাউন্ডারের সঠিক আচরণ তো নেই মিরাজের মাঝে।
মিরাজের ব্যাটিং হতে পারতো মুশফিকুর রহিমের মতো। হতে পারতো ৩০ এর গড়ের একজন কার্যকরি ব্যাটসম্যান। কিন্তু, কেন হচ্ছেনা! এই প্রশ্নের জবাব আমাদের ক্রিকেটের অব্যবস্থাপনা ছাড়া আরকিছুই নয়। আজকের পারফরম্যান্সের পরও বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবেনা যে, 'মিরাজ বেশ ভালো করেছে।' মিরাজকে বোলিং অলরাউন্ডার ভেবে ভুল করছে দেশের ক্রিকেট। অন্যভাবে বললে অপচয় করা হচ্ছে মিরাজকে। ক্রিকেটীয় অবকাঠামোর দৈন্যতায় নাতো মিরাজ নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন! আবার মিরাজ ব্যর্থ হলে কাউকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছেনা তারচেয়েও অধিক যোগ্য। আর তাতেই মিরাজ নিয়মিত দলে সুযোগ পাচ্ছেন। এমন না যে তাকে বাদ দিতে হবে। তাকে কার্যকরি করে তুলতে হবে। আর যদি তা না হয়ে, এভাবে চলতে থাকে তবে মিরাজ অপচয়ের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলবেন সত্যি সত্যি একদিন।
মিরাজকে শুরু থেকেই পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করানো উচিত ছিলো। ৮ নম্বরে কাউকে ব্যাটিং করানো মানে শুরু থেকেই অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দেয়া। এখনকার দ্রুতগতির ক্রিকেটে পেশিশক্তির জোরেই স্লগে বড় শট খেলতে হয়৷ ওডিআইতে মিরাজের দ্বারা তো সম্ভব নয় বড় শট খেলা অনবরত। তাকে উচিত ছিলো শুরু থেকেই উপরে ব্যাট করার সুযোগ করে দেওয়া। মিরাজের ব্যাটিং কৌশল তুলনামূলকভাবে বর্তমান দলের অনেকের চেয়েই ভালো। তার মাঝে মাঠে পড়ে থাকার দক্ষতা আছে। তার বোলিংকে যেভাবে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে সেভাবে ব্যাটিংকে দেয়া হলে এতদিনে টেস্ট একাদশে ৮ ব্যাটসম্যান খেলানোর চিন্তা করতে হতোনা। এখন প্রাধান্য দেয়া হয়না বলেই মিরাজও একটানা চার ইনিংসে শূণ্যরানে সাজঘরে ফেরেন।
মিরাজের দেশের মাটিতে টেস্টে নিয়মিত ভালো বল করায় নির্বাচকরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকলে মিরাজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় অপচয় হবার সম্ভাবনাই বেশি। মিরাজকে দিয়ে ২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনালে ওপেনিং করানোর সাহস করা গেলে তাকে ৩ নম্বরে না হোক! ৫ নম্বরে কেন খেলানোর সাহস করা যাবেনা ? সবসময় যে দলের সিনিয়র ক্রিকেটার দিয়েই সফলতা বের করে আনতে হবে তা তো না। আর সিনিয়ররা তো টেস্টে আহামরি কোনো সফলতা এনে দিতেও পারেননি। তাহলে মিরাজকে উপরে ব্যাটিং করাতে এত কিসের সংকোচ ? মিরাজের উপর যদি ভরসা নাই করা যায় তাহলে তো আমাদের ক্রিকেটের দৈন্যতা আরোবেশি সামনে চলে আসে।
মিরাজকে অপচয় হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে তাকে উপরে ব্যাটিং করানো হোক। যেকোনো এক ফরম্যাটে তার ব্যাটিংটা মেলে ধরার সু্যোগ করে দেয়া উচিত। বোলিংয়ে মিরাজ একজন অতিসাধারণ, অতি চমকপ্রদ কেউ নন। সময় থাকতে বুঝুন, নইলে হারাতে হবে।
- 0 মন্তব্য