• ফুটবল

জানা অজানা থিবাট কোর্টোস

পোস্টটি ৪৪৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
৭ জুলাই ২০১৮ সালে রাশিয়াতে চলছে ফুটবল এর মহাযজ্ঞ (বিশ্বকাপ)। বিশ্বকাপের কৌটার ফাইনালে মুখোমুখি ব্রাজিল ও বেলজিয়াম। অনেকাই ব্রাজিল এর ওই স্কোয়াডটাকে ব্রাজিল এর লাস্ট ১০ বছর এর বেস্ট স্কোয়াড বলত। ব্রাজিল ওইদিন ২টা কারনে ম্যাচটা হারে প্রথম হলো ভাগ্য দ্বিতীয় হলো থিবাট কোর্টোস । বলতে গেলে ব্রাজিল পুরো ম্যাচেই অ্যাটাকিং খেলতেছিল। ব্রাজিল ওইদিন ২৭ টা শট করে যার মধ্যে ৯ টা অন টার্গেটে থেকে । ২৫,৩৫,৭৫,৮০ মিনিটে কোর্টোস এমন কয়েকটা সেভ করে যা দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যায় । ডিবক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিল এর প্লেয়াররা কয়েকটা ভালো ভালো শট করে কিন্ত কোর্টোস তা অবিশ্বাস্য ভাবে সেভ করে। ওই ম্যাচে কোর্টোস অসাধারন খেলে । ওই ম্যাচ দিয়েই কোর্টোস তাক লাগিয়ে দেয় পুরো বিশ্বকে। কখনো সে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোল বাঁচিয়েছে আবার কখনো এগিয়ে এসে ক্লিয়ার করতে দেখাগেছে তাকে। কোর্টোসের ভূমিকার জন্য সে ২০১৮ সালে গোল্ডেন গ্লাভস জিতে নেয় ।
ফুটবল হচ্ছে গোলের খেলা। হাজার হাজার দর্শক গাঁটের টাকা খরচ করে মাঠে যায় নিজের দলের জয় দেখতে। আর এই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় গোলের দ্বারা। তাই যারাই নিজের দলকে এই গোল উপহার দেয়, তারাই সবার চোখের মণি। ম্যাচ জিতলে দলের ফরোয়ার্ড প্লেয়াররাই যেন অন্য সবার চেয়ে একটু বেশি প্রশংসা পায়। গোল বানিয়ে দেয়ার জন্য মাঝমাঠের খেলোয়ারেরাও সবার হাততালি শুনতে পায়।
কিন্তু এইদিক দিয়ে গোলকিপার ও ডিফেন্ডাররা ব্যতিক্রম। তাদের ভালো খেলা প্রায়ই সবার অগোচরে থেকে যায়। কিন্তু তারা একটা ভুল করলেই সবার রাগ গিয়ে পড়ে তাদের উপর। যেন সব দোষ তাদের একার। একের পর এক সমালোচনার তীর ধেয়ে আসতে থাকে তাদের দিকে, এমনকি আসে প্রাণনাশের হুমকিও (কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার আন্দ্রেস এস্কোবার)। গোলরক্ষকরা যেন আরোও অভাগা, ডিফেন্ডারের ভুলে গোল খেলেও দোষ যেন কিপারের কাঁধেই বর্তায়। এমনকি কোনো কোনো গোলরক্ষককে বাকি জীবন মানুষের চক্ষুশূল হয়ে থাকতে হয়েছে, এমনও নিদর্শন রয়েছে। এই যেমন ১৯৫০ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের ঘিগিয়ার কাছে গোল খাওয়ার জন্য ব্রাজিল গোলরক্ষক বারবোসাকে তার জীবনের বাকি পঞ্চাশ বছর ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীদের চোখের বিষ হয়ে থাকতে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন,
"ব্রাজিলের আইনে যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ ৩০ বছর। কিন্তু আমার জন্য তা হয়ে গেছে ৫০ বছর। সেটাও এমন কিছুর জন্য, যার জন্য আমি সম্পূর্ণরূপে দায়ীও নই।"
তবে কিংবদন্তি সোভিয়েত গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিনের হাত ধরে সবাই বুঝতে পারে, গোলরক্ষকরাও ম্যাচ জেতাতে জানেন। এরপর গর্ডন ব্যাঙ্কস, সেপ মেয়ার, দিনো জফ, গোয়কচিয়া, অলিভার কান, ইকার ক্যাসিয়াসরা,ম্যানুয়েল নয়্যার সেই ধারা অব্যাহত রাখে।
একজন সেরা গোলরক্ষকের কী কী গুণ থাকতে হয় ? অন্যসব প্লেয়ারদের মতো একজন কিপারেরও থাকতে হয় পজিশন জ্ঞান, একনিষ্ঠ মনোযোগ, আত্মবিশ্বাস, রিফ্লেক্স। এই গুণের উপর ভর করেই একজন কিপার মাঠের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন (গোল বাঁচানো) করেন।
৬ ফুট ৫ ইঞ্চির থিবাট কোর্টোস তার কোর্টোসের জন্ম ব্রে শহরে। বলতে গেলে সেখানেই সে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিল। পাঁচ বছরে সে "বিলসেন" একাডেমিতে গিয়েছিল। এই যুব দলে সে প্রায় তিন বছর খেলেছে - সেই মুহুর্ত পর্যন্ত যখন তাকে জেনকে যেতে হয়নি। সেখানে আট বছর বয়সে সে তার পরিবারের সঙ্গে চলে যায়(জেনকে )। সেখানে সে এফসি "গেঙ্ক" এ গিয়েছিল যেখানে কোর্টোস লেফট ডিফেন্ডার হয়ে খালে । দশ বছর ধরে কোর্টোস যুব দলে খেলেছে। যাইহোক তিনি বেশ দীর্ঘদিন ডিফেন্ডার হয়ে খালে । পরবর্তীতে সে গোলকিপার হয়ে খেলা শুরু করে।

courtois
কোর্টোসর যখন ১৮ বছর বয়স হয় তখন সে জেনকের থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে চেলসিতে নয় মিলিয়ন ইউরোতে জয়েন করে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে লোণে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে জয়েন করে। ২০১১-১২ মৌসুমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের তার অভিষেক হয় উয়েফা ইউরোপা লিগে ভিটোরিয়া ডি গুইমারেসের বিপক্ষে ৪-0 গোলের জয়ে। তিন দিন পরে ওসাসুনার বিপক্ষে ড্র করে লা লিগায়ায় অভিষেক হয় তার । লা লিগায় তার পারফরম্যান্স তাকে সার্জিও আসেনজোর চেয়ে ২য় চয়েছ থেকে ১ম চয়েছ গোলকিপার বানিয়েছিল কারণ সে তার প্রথম ছয়টি লা লিগা ম্যাচে চারটি ক্লিন শীট রেখেছিল। স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলার সময় রিয়াল মাদ্রিদের করিম বেনজেমাকে ফাউল করার পর সে তার প্রথম লাল কার্ড পায়। শেষ পর্যন্ত তারা ১-৪ ব্যবধানে ম্যাচটি হেরে যায়। অভিষেক সিজন এ ২০১২ উয়েফা ইউরোপা লিগ ফাইনালে পৌঁছেছিল এটিএম যেখানে সে ক্লিন শীট রেখেছিল । তার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর এটিএম ২০১৩-১৪ পর্যন্ত লোণের মেয়াদ বাড়িয়েছিল। ক্লাবের সাথে ২০১৩-১৪ মৌসুম খেলে সে দলের হয়ে একটি
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটআত ২০১৩-১৪ মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার আপ হয়। একই মৌসুমে, সে বর্ষের ইএসএম দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সেরা বেলজিয়ান খেলোয়াড়ের পুরস্কারে সম্মানিত হয়।
২০১৪ সালের জন মাসে সে চেলসি তে লোণ থেকে ফিরে আসে। ১ অগাস্ট ম্যানেজার ঘোষণা করে কোর্টোস প্রিমিয়ার লিগ শুরু করবে। বার্নলি এবং লেস্টার সিটির বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগ টুর্নামেন্টে কয়েকটি ম্যাচের পর সে চেলসির সাথে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন পাঁচ বছরের চুক্তি সাইন করে ।
পরের মৌসুমে তার টিম লীগ কাপের ফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পারকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে লীগ কাপ জিতেছে। ক্লাবের সাথে তার দিনগুলি অসাধারন কাটতছিল। সে চেলসির হয়ে ২০১৬-১৭ প্রিমিয়ার লীগ এবং ২০১৭-১৮ এফএ কাপ জিতে।

Thibaut-Courtois-AP-wew_571_855
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের পর (যেখানে সে সেরা গোলকিপার হওয়ার জন্য গোল্ডেন গ্লাভস পেয়েছিল) সে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল কিন্তু চেলসি বলেছিল যে তারা কোর্টোসের ভালো অফার না পাওয়া পর্যন্ত তাকে যেতে দেবে না। বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কোর্টোস চেলসির ট্রেনিং এ জয়েন দেওয়া বন্ধ করে দেয় । অবশেষে, ৪ ই আগস্ট ২০১৮ এ, কোর্টোস রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ছয় বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে। সিডি লেগানেসের বিপক্ষে জয়ী হয়ে ১ লা সেপ্টেম্বর মাদ্রিদের হয়ে তার অভিষেক হয়।
সে তার ক্যারিয়ারে { Belgian Professional Goalkeeper of the Year: 2011,Belgian Bronze Shoe: 2011,La LigaZamora Trophy: 2013, 2014,La Liga Goalkeeper of the Year: 2013,Best Belgian Player Abroad: 2013, 2014,ESM Team of the Year: 2013–14,UEFA Champions League Team of the Season: 2013–14,FIFA FIFPro World XI2nd team: 2014, 2018,London Football Awards Goalkeeper of the Year: 2015,Belgian Sportsman of the year: 2014,Premier League Golden Glove: 2016–17,FIFA World Cup Golden Glove: 2018,FIFA World Cup Dream Team: 2018,FIFA World Cup Fantasy McDonald’s Overall XI: 2018,The Best FIFA Goalkeeper: 2018,IFFHS World’s Best Goalkeeper: 2018; runner-up 2014,IFFHS Men’s World Team: 2018 } ইত্যাদি ট্রফি জিতে।
বেলজিয়াম জাতীয় দলে কোর্টোসেরপ্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপ। কিন্তু প্রথম চ্যালেঞ্জেই তিনি দেখিয়ে দিলেন তার সামর্থ্যের প্রমাণ। সবাই এই তরুণ কিপারের রিফ্লেক্স ও ঠাণ্ডা মেজাজে মুগ্ধ হতে বাধ্য হলো। অনেক দলের বিরুদ্ধে করেছেন একের পর এক দারুণ সেভ। বিশ্বকাপে ৪ টা ক্লিনশিট রেখেছে সে । ২০১৪ বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করার পর যতদিন গেছে, কোর্টোস হয়েছে আরও পরিণত ও ধারাবাহিক।
সত্যি কথা বলতে আসলে অনেকাই আছে যারা কোর্টোসরে ভালো গোলকিপার মনে করে না ।তারা নয়্যারের , এলিসন,অবালাক, ইত্যাদি কয়েকজন ভালো গোলকিপারের সাথে কোর্টোসের নাম দেখতে পারে না।কিন্ত কেন ? অনেক কিউল ফ্যানরা মনে করে এইটা তো রিয়াল এর গোলকিপার আর রিয়াল এর গোলকিপার কিউলদের কাছে ভালো হতে পারে। আরে ভাই আমরা তো অরে ওয়ার্ল্ড এর ১নাম্বার গোলকিপার বলি না আমরা অরে ওয়ান অফ দি বেস্ট বলি। যার যথেস্ত কারন আছে। সে এত বছর যাবত নিজেকে প্রভ করে আসছে আর আপনাদের এত চল্কানি যে আপনারা তাকে ওয়ান অফ দি বেস্ট মনে করেন না। যাইহোক কয়েকজন মানুক বা নামানুক সে বর্তমানের ওয়ান অফ দি বেস্ট গোলকিপার।কোর্টোসরে আত্মবিশ্বাস, অসামান্য রিফ্লেক্স, অদম্য মনোবল ও ঠাণ্ডা মেজাজের জোরে তিনি ধারাবাহিকভাবে টানা এত বছর কিপারের দায়িত্ব এত সুন্দরভাবে পালন করে যাচ্ছে।