• ফুটবল

রাতটা লিভারপুলের

পোস্টটি ৮৬৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

শেষবার যখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি জিতল লিভারপুল, বাবা তখন ছেলেকে নিয়ে মাঠে। এরপর একটা লম্বা খরা। একেকটা দিন পার হয়, বাবা-ছেলে ঠিকই মাঠে যান, তবে প্রতিবারই হতাশ হন অন্যান্য দলের উত্থান আর লিভারপুলের পতন দেখে। বাবা হলেন বুড়ো, ছেলে বড় হয়ে নিজে হলো বাবা। এবার এই নতুন বাবা তার মেয়েকে নিয়ে আসলেন খেলা দেখতে। পুরো একটা প্রজন্ম বদলে গেল অথচ লিভারপুল আর ট্রফি জিতলনা। অবশেষে ২০২০ সালে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ট্রফিটা এলো লিভারপুলের ঘরে। বাবা-মেয়ের খুশি এবার আটকায় কে? জনপ্রিয় ফুটবল ওয়েবসাইট ব্লেচার রিপোর্ট ফুটবলের অ্যানিমেটেড ভিডিওর এই গল্পের মতোই ২০২০ সালের ২৩ জুলাই রাতে আরো যে কতশত আবেগের জন্ম হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

ট্রফি দেবার রঙিন মঞ্চ প্রস্তুত অ্যানফিল্ডের স্ট্যান্ডে। একজন বাবা যেমন তার হারানো ছেলেকে পেয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাসে ভেসে যান, অ্যানফিল্ডও যেন তখন সেরকম উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হওয়ার অপেক্ষায়। তা হবেই বা না কেন? পাক্কা ত্রিশ বছর পর একটা দল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে, এর থেকে বড় উপলক্ষ আর কী হতে পারে? এর আগে ১৯৯০ সালে শেষবার লিভারপুল যখন এই ট্রফিটা জেতে, তখন হয়তো এখনকার ফুটবল ভক্তদের অনেকের জন্মই হয়নি! অ্যানফিল্ড যেন এই রাতটায় এই নতুন প্রজন্মের নতুন মানুষগুলোকেই বোঝাতে উদগ্রীব ছিল লিভারপুলের সেই সোনালি অতীতকে বর্তমানে রুপ দেওয়ার ক্ষণ কতটা ঐতিহাসিক।

এই সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারিগর লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ প্রথম উঠে এলেন মঞ্চে। ট্রফির দিকে একবার তাকিয়ে পাশে দাঁড়ালেন। চোখেমুখে তখন তার একরাশ আনন্দ আর গৌরবের ছটা, যেন সেই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ তিনি। তাঁর পর একে একে মঞ্চে উঠে এলেন লিভারপুলের স্বপ্নসারথি খেলোয়াড়রা। প্রত্যেকেই একে অপরকে করতালি ও হর্ষধ্বনির মাধ্যমে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন মঞ্চে।

সবার শেষে এলেন অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন। শান্ত পদক্ষেপে উঠে এলেন, নিলেন তার নিজের জয়সূচক মেডেলটা। ঠিক তারপরই হাতে নিলেন সেই পরম আকাঙ্খিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি। সেই ট্রফি যার জন্য লিভারপুল অপেক্ষা করেছে যেন অনন্তকালের জন্য। সেই সোনার হরিণতুল্য ট্রফি, অবশেষে লিভারপুলের সোনার ছেলেরা তা হাতে পেল। আর তা পাওয়ার সাথে সাথেই অ্যানফিল্ড যেন হয়ে উঠল উৎসবের মধ্যমণি। রঙিন মঞ্চে সবাই ট্রফি নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে উঠলেন উদযাপনে।

স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডের এই উদযাপন শেষেই সবাই নেমে আসলেন মূল মাঠে। ততক্ষণে অ্যানফিল্ডের সবুজ গালিচা হয়ে উঠেছে বর্ণিল। বাতাসে কনফেত্তির ওড়াউড়ি আর চারিদিকে আলোয় উদ্ভাসিত অ্যানফিল্ড আর তার মধ্যমণি ট্রফি হাতে লিভারপুলের সোনার ছেলেরা। এতটুকুই যথেষ্ট আকর্ষণীয়, তবে এরপরের আয়োজনটাই যেন আসলে মূল আয়োজন যেটা ছাড়া হয়তো এই পুরো উদযাপনটাই পূর্ণতা পেতনা! সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গাইলেন লিভারপুলের সমার্থক হয়ে যাওয়া সেই কালজয়ী গানটা, ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন! এই দৃশ্য দেখে হয়তো আপনার চোখে হয়তো নিজের অজান্তেই অশ্রু চলে এসেছিল যদি আপনি লিভারপুল ভক্ত হয়ে থাকেন এমনকি একজন নিখাদ নিরপেক্ষ ফুটবলপ্রেমীও হয়ে থাকেন। সেই অশ্রু অবশ্যই পরম আনন্দের।

এইসব উদযাপনের আগে আগে লীগের ৩৭ তম ম্যাচটা লিভারপুল নিজেদের ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিল চেলসির বিপক্ষে। রাজসিক উদযাপনের মতো ম্যাচটাও হলো রাজসিক। আট গোলের থ্রিলারে একের পর এক গোল পাল্টা গোল কিংবা দুই কোচ ক্লপ-লাম্পার্ডের আগুনে কথার লড়াই শেষে লিভারপুল ম্যাচটা জিতল ৫-৩ গোলে। ম্যাচটা চলার সময়েই অ্যানফিল্ডের আশপাশ থেকে আতশবাজির লাল আভা পুরো আবহটাকেই করে তুলেছিল রোমাঞ্চকর। এর সাথে আগুনে এক ম্যাচ আর সবশেষে এই রাজসিক উদযাপন- রাতটা আসলে লিভারপুলেরই ছিল।

তবে সবকিছুর মধ্যেও একটা আক্ষেপ অবশ্য ছিল। এইরকম ঐতিহাসিক দিনে অ্যানফিল্ড ছিল দর্শকশুন্য! দৃশ্যপটে খলনায়ক কোভিড ১৯ ভাইরাস, খড়গটা পড়ল দর্শকদের ওপর। মাঠে থাকা চলবেনা দর্শক, এই নির্দেশনার জন্য টিভিই যেন মূল ভরসা। ইয়ুর্গেন ক্লপ বুঝতে পেরেছিলেন দর্শকদের এই দুঃখ। তাই হয়তো বলেছিলেন একটা বড়সড় পার্টি করার কথা এই বুলশিট ভাইরাস চলে যাওয়ার পরে! ওয়েল সেইড ক্লপ!!


Featured Image source: https://talksport.com