• ফুটবল

বিশ্বকাপ ফুটবলে এশিয়ার দেশগুলোর যত ইতিহাস

পোস্টটি ৩১১৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ফুটবলের নিজস্ব কোনো ধ্রুপদী ইতিহাস না থাকলেও ফিফা এবং উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে আজ থেকে প্রায় ২৩শ বছর আগে চীনে ফুটবলের সদৃশ একটি খেলার চল ছিলো। যা সুজু নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান আক্ষরিক অর্থে ফুটবল বলতে আমরা যা বুঝি একদম প্রায় একই জিনিস ছিলো সেই সুজু নামক খেলায়। সুতরাং এক অর্থে বলা যায় ফুটবলের আদিনিবাস ছিলো এশিয়া অঞ্চল। তবে আধুনিক ফুটবলের জন্ম হবার পর সেটির মূল কেন্দ্র হয়ে যায় লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু অংশ। এরাই দাপটের সাথে খেলে আসছে ফুটবলের বিশ্ব আসরে। যেখানে আমাদের এশিয়া অঞ্চল রয়েছে ধের পিছিয়ে। বিশ্বকাপের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, শুরু থেকে এই অঞ্চল অবহেলিত থাকলেও ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়। বৃদ্ধি পায় অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা। তবে ধরা দেয়নি তেমন সাফল্য। আজকে কথা বলবো ফুটবলের এই বিশ্বআসরে এশিয়ার দেশগুলোর সাফল্য ব্যর্থতার সাতকাহন নিয়ে।

ফুটবলের মেগা আসর ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের যাত্রা শুরু ১৯৩০ সালে। প্রথম আসরের আয়োজক ছিলো লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে। এই আসরটি ছিলো বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র বাছাইপর্বহীন বিশ্বকাপ। ফিফার সদস্যপদপ্রাপ্ত যেকোনো দেশ অংশ নিতে পারতো সেই আসতে। অধিকাংশ ইউরোপের দেশগুলো প্রায় তিন সপ্তাহের সমুদ্র যাত্রা করে খেলতে অনীহা প্রকাশ করে। এশিয়ার দেশগুলোর জন্যে এটি আরো দুরূহ ব্যাপার। যার কারণে প্রথম আসরে এশিয়ার কোনো দেশ অংশ নেয়নি।

১৯৩৪ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। সেই আসরে অংশ নেয় মোট ১৬ দল যেখানে ১২ টা স্লট বরাদ্দ ছিলো ইউরোপের দেশগুলোর জন্যে, ৩ টি আমেরিকার অঞ্চলের জন্যে এবং অবশিষ্ট ১টি জায়গা ছিল আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার কোনো দেশের জন্যে। এই একটি জায়গার জন্যে বাছাইপর্ব খেলতে হবে দুই মহাদেশের দেশগুলোকে। এশিয়া থেকে সেবার বাছাইপর্বে খেলে গ্রেট ব্রিটেনের অধীনে থাকা ফিলিস্তিন। কিন্তু বাছাইপর্বে মিশরের কাছে হেরে মূলপর্বে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় তাদের। তবে প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অংশ নিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় ফিলিস্তিনের সেই দলটি। তবে ব্রিটিশদের মতে, ফিলিস্তিনের সেই দলটি ইহুদি এবং ব্রিটেনের আদিবাসীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। সেই হিসেবে এই দলটিকে বর্তমান ইসরায়েলের পূর্বসূরী হিসেবে বিবেচনা করাই শ্রেয়।

অবশেষে বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের মূলপর্বে খেলার সুযোগ পায় এশিয়ার একটি দেশ। বাছাইপর্বে তৎকালীন ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ এবং জাপান এক গ্রুপে পড়লেও জাপান নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। যার কারনে প্রথম এশিয়ান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ।20221108_041940

উল্লেখ্য ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ হচ্ছে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার পূর্বনাম। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। নকআউট সিস্টেমে অনুষ্ঠিত সেই আসরে তখনকার শক্তিশালী হাঙ্গেরির কাছে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিতে হয় তাদের।

১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপের পর  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে দীর্ঘ ১২ বছর কোনো বিশ্বকাপের আসর অনুষ্ঠিত হয়নি। অবশেষে ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের চতুর্থ সংস্করণ।সেবার ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, ফিলিস্তিন বাছাইপর্ব থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নেওয়ায় প্রথমবারের মতো সরাসরি মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। কিন্তু খালি পায়ে ফুটবল খেলার ব্যাপারে আপত্তি থাকায় সেবার আর বিশ্বকাপ খেলা হয়নি তাদের। তাছাড়া তখন সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিলে যাওয়ার মতো ভ্রমণ খরচ বহন করার বিষয়টি ছিলো একপ্রকার দুরূহ ব্যাপার। যার কারণে এশিয়ার কোনো দেশ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের সেই আসরটি।

১৯৫৪ সালে এশিয়া অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় দক্ষিণ কোরিয়া। বাছাইপর্বে জাপানকে হারিয়ে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা।20221108_042656

কিন্তু মাইটি হাঙ্গেরির কাছে ৯-০ এবং তুরস্কের কাছে ৭-০ এর লজ্জাজনক হার তাদের বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতাকে সুখকর হতে দেয়নি। টেবিলের তলানিতে থেকে সেবার বিশ্বকাপ শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া।

১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে এশিয়ার কোনো দেশ মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। দুই আসর পর অর্থাৎ ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে আবার এশিয়ার কোনো দেশকে মূলপর্বে খেলতে দেখা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার পর এবার মূলপর্বে জায়গা করে নেয় উত্তর কোরিয়ার। বিশ্বকাপে এশিয়া অঞ্চলের যে ব্যর্থতার গতানুগতিক ধারা অবহ্যাত ছিলো সেই ডেডলক ভেঙে ফেলেছিল তারা। প্রথম ম্যাচে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে গোলশূন্য ড্র করে প্রথম এশিয়ান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে পয়েন্ট অর্জন করে উত্তর কোরিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচেও চিলির সাথে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। সবচেয়ে বড় চমক দেখায় গ্রুপের শেষ ম্যাচে। সেই ম্যাচে পরাশক্তি ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় তারা।World-Cup-England-1966-It-001 প্রথম এশিয়ান দেশ হিসেবে পয়েন্ট অর্জনের পর প্রথম জয়ের রেকর্ডের ভাগিদার হয়ে যায় উত্তর কোরিয়া। শুধু তাই নয়! গ্রুপ রানার্স আপ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় এশিয়ার সমাজতান্ত্রিক এই রাষ্ট্রটি।
কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল। সেখানেও ইউসিবিওর পর্তুগালকে রীতিমত ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। মাত্র পঁচিশ মিনিটেই  ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু কালোচিতা নামে খ্যাত ইউসিবিওর একক নৈপুণ্যে ৫-৩ গোলে হারতে হয় তাদের। সে ম্যাচে ইউসিবিও একাই চার গোল করে থামিয়ে দেয় উত্তর কোরিয়ানদের স্বপ্নযাত্রা। তবুও এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে অনেক ইতিহাস তৈরী করে বীরের বেশে দেশে ফিরেছিলেন উত্তর কোরিয়ার ফুটবলাররা।20221108_042949 

উত্তর কোরিয়া এই অসাধারণ সাফল্যের পরও তারা বিশ্বকাপের পরের আসরে খেলতে পারিনি। বাছাইপর্বে ইসরায়েলের মাঠে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় দেশটি। ফলে সেবার মূলপর্বে এশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে খেলেছিল ইসরায়েল। সেবার উরুগুয়ের সাথে হারলেও গ্রুপের বাকি দুই প্রতিপক্ষ সুইডেন এবং ইতালির সাথে ড্র করে তারা। ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে আলোচিত এই দেশটি। ইসরায়েলের সাথে এএফসির বাকি সদস্য দেশগুলোর শীতল সম্পর্ক থাকায় তারা AFC থেকে বের হয়ে উয়েফার সদস্যপদ নিয়ে সেই অঞ্চলে খেলা শুরু করে।

১৯৭৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতড়াতে আবারো ব্যর্থ এশিয়ার দেশগুলো। তখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় মোট ১০ টি আসর যার মধ্যে ৬ বারই মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এশিয়া অঞ্চলের দলগুলো। সেটি ছিল এশিয়ার দলহীন শেষ বিশ্বকাপ।

১৯৭৮ বিশ্বকাপে এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় ইরান। তবে ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এক ড্র এবং দুই হারে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের।
১৯৮২ সালে ফিফা অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ১৬ থেকে ২৪ এ উন্নীত করলেও বাড়েনি এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধির সংখ্যা। সেবার প্রথমবারের মতো মূলপর্বে খেলতে দেখা যায় কুয়েতকে। নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ম্যাচে চেকোস্লোভাকিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করে পত্রিকার শিরোনামে এসেছিল তারা। তবে বাকি দুই ম্যাচ হারের ফলে ওই এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ৫৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একাধিক প্রতিনিধি সুযোগ পায় এশিয়া অঞ্চল থেকে। সেবার সুযোগ পায় দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইরাক। দুই দলই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়। দক্ষিণ কোরিয়া একটি ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হলেও ইরাক গ্রুপপর্বের সব ম্যাচেই হারের স্বাদ পায়। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মূলপর্বে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। এবার তাদের সঙ্গী সংযুক্ত আরব আমিরাত। এবারও দুই দল বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই।

১৯৯৪ বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম এশিয়ান দেশ হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে দেশটি। এবার তাদের সঙ্গী ছিলো সৌদি আরব। এবার কোরিয়ার পারফরম্যান্সে কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। স্পেন এবং বলিভিয়ার সাথে ড্র এবং শেষ ম্যাচে শক্তিশালী জার্মানির সাথে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৩-২ গোলে হেরে ২ পয়েন্ট নিয়েই বিদায় নিতে হয় তাদের।

দক্ষিণ কোরিয়া গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিলেও সেই বআসরটি স্মরণীয় করে রেখেছিল সৌদি আরব।rlhi1iivlbuhh4jtpwo1-jpg উত্তর কোরিয়ার পর প্রথমবারের মতো কোনো এশিয়ার কোনো দল পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। তবে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে সুইডেনের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় তাদের। উল্লেখ্য গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।

১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফিফা মোট দলের সংখ্যা ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করার পাশাপাশি বৃদ্ধি করে এশিয়ার প্রতিনিধির সংখ্যা। সেবার থেকে মোট ৪ টি দল অংশ নিতে পারবে মূলপর্বে। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ওই আসরে অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, ইরান এবং জাপান। জাপানের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপ ছিলো এটি। এশিয়ার দেশগুলোর ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত থাকে। তবে ইরান গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র কে ২-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম জয় তুলে নেয়। fussball-wm-france-98-lyon-21-06-98-5b0147823467ac3601000008দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ থাকায় ইরানের কাছে এই জয়টি ছিলো তিন পয়েন্ট থেকে বেশি কিছু।

২০০২ বিশ্বকাপ ছিলো এশিয়ান দেশগুলোর জন্যে একটি বিরাট মাইলস্টোন। বিশ্বকাপের ৬২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের ফুটবলের এই আসর বসেছিল এশিয়ার দুই দেশ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে।2002-WC-678x381 স্বাগতিক দুই দেশের পাশাপাশি সেবার এশিয়া থেকে প্রতিনিধি হিসেবে ছিলো চীন ও সৌদি আরব। চীনের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপ ছিল এটি। প্রথমবারের মত ফুটবলের  বিশ্বআসর এশিয়াতে বসায় এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে প্রত্যাশাও ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সৌদি এবং চীন সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যার্থ হয় - গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ হেরে বিদায় নিতে হয় তাদের। এর মধ্যে সৌদি আরব জার্মানির কাছে রেকর্ড ৮-০ গোলে হেরেছিল।

তবে এবার মুদ্রার বিপরীত অবস্থানে ছিলো স্বাগতিক দুই দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপ পর্বের বেলজিয়ামের বিপক্ষে ড্র, রাশিয়া ও তিউনিশিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে পরের রাউন্ডে উঠে জাপান। তবে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে তুরস্কের কাছে ১-০ গোলে হেরে থেমে যায় ব্লু সামুরাইদের স্বপ্ন যাত্রা।7abfd-1530437188-800 

অন্যদিকে বিশ্বকাপে এশিয়ান দেশগুলোর সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস তৈরী করেছিল আরেক স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। জাদুকরী কোচ গাস হিডিংকের অধীনে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচে জয় লাভ করে তারা! গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে। সেখানে দেখায় আরেক চমক। গোল্ডেন গোলে ফুটবল পরাশক্তি ইতালিকে হারিয়ে উত্তর কোরিয়ার পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে দক্ষিণ কোরিয়া।Jung-Hwan-Ahn-of-South-Korea-heads-the-winning-goal-past-goalkeeper-Gianluigi-Buffon-of-Italy-838976-1350645169a

এবার তাদের প্রতিপক্ষ আরেক শক্তিশালী দল স্পেন। তবে থেমে থাকেনি তাদের স্বপ্ন যাত্রা।  পুরো ১২০ মিনিট স্প্যানিশ আক্রমণভাগকে আটকে রেখে খেলা নিয়ে যায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে স্পেনকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠার অনন্য এক কীর্তি গড়ে দক্ষিণ কোরিয়া। এই জয়ের মাধ্যমে এশিয়ার দেশ হিসেবে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার রেকর্ড টপকে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। এখন পর্যন্ত এই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রয়েছে।skysports-south-korea-spain_4325576-2
সেমিফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হয় দক্ষিণ কোরিয়া। সিউলে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে আর পেরে উঠেনি স্বাগতিকরা। হাড্ডাহাডডি সেই লড়াইয়ে জার্মানির কাছে হারতে হয় ১-০ গোলে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তুরস্কের কাছে ৩-২ গোলে হেরে চতুর্থ অবস্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া। এটি এখন পর্যন্ত এশিয়ার কোনো দেশের সর্বোচ্চ অর্জন এবং বিশাল গর্বের ব্যাপার। দক্ষিণ কোরিয়ার ডিফেন্ডার হোং মিয়ং বো বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ব্রোঞ্জ বল জেতে নেয় সেবার।

২০০২ সালের বিশ্বকাপের পর সবাই ধরে নিয়েছিল এশিয়ান ফুটবলে মনে হয় এক নতুন সাফল্যের জোয়ার লাগতে শুরু করেছে। কিন্তু বাস্তবতা একদম ভিন্ন। ২০০৬ আবারো জরাজীর্ণ অবস্থা সব দলগুলো। সেবার এশিয়া থেকে প্রতিনিধি হিসেবে ছিলো দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরান ও সৌদি আরব। সবাই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে বের হয়ে AFC তে যোগ দেয় এবং ২০১০ বিশ্বকাপ থেকে এশিয়া অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিত্ব করা শুরু করে।WORLD CUP 2010 Australia  Serbia WORLD CUP 2010 Australia  Serbia WORLD CUP 2010 Australia  Serbia WORLD CUP 2010 Australia  Serbia 1

তার পাশাপাশি ছিলো দুই কোরিয়া এবং জাপান। সেখান থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া রাউন্ড অফ সিক্সটিনে উঠতে সক্ষম হয়।

চিরচেনা সেই ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত থাকে ব্রাজিল বিশ্বকাপেও। এশিয়ার কোনো দেশ গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারেনি। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো এশিয়া অঞ্চল থেকে সর্বোচ্চ ৫ দল অংগ্রহণ করা শুরু করে। তবে জাপান বাদে কেউই গ্রুপ বাধা টপকাতে পারেনি। দক্ষিণ কোরিয়া ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি হারিয়ে বড় চমক দেখিয়েছিল। জাপান দুর্দান্ত খেলে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে উঠে। কিন্তু বেলজিয়ামের সাথে সেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে এক্সট্রা মিনিটে নাসের চাদলির গোলে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ব্লু সামুরাইদের।Japan 

ফুটবলে এশিয়ার দেশগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কিছু তথ্য কণিকা:

সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে - দক্ষিণ কোরিয়া (১১ বার)
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হয় - দক্ষিণ কোরিয়া (৬ ম্যাচ)
সর্বোচ্চ সাফল্য - দক্ষিণ কোরিয়া ; চতুর্থ (২০০২ বিশ্বকাপ)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সাফল্য - হোং মিয়ং বো ; ব্রোঞ্জ বল (২০০২ বিশ্বকাপ)
সর্বোচ্চ গোলদাতা - টিম ক্যাহিল (৫ গোল)
সর্বোচ্চ Fifa ranking - ইরান (২০ তম)

এশিয়ার বিশ্ব আসরে দেশগুলো এমন ভরাডুবির কারণ কি? কেনো তারা ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারছেনা? সবচেয়ে বড় একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে ফুটবলের তেমন কালচার তৈরি না হওয়া + লক্ষণীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া। তাছাড়া শারীরিক সামর্থ্যের দিক দিয়েও কয়েকটি দেশ বাদে বাকিরা ইউরোপ আফ্রিকার প্লেয়ারদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। বিশ্বকাপে আফ্রিকা মহাদেশের চেয়ে আমাদের রেকর্ড ভালো হলেও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর ফুটবলার ইউরোপে খেলছে। অনেকে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে ইউরোপের কোনো দেশের হয়েও নামছে। যদি এশিয়ায় দেশগুলো চীন জাপানের মতো ফুটবলের দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেয় এবং ইউরোপের বিশেষ কিছু ক্লাব যদি তাদের স্কাউটিং কার্যক্রমের জন্য এখানে একাডেমি খুলে তাহলে সেই দেশ তথা এশিয়া অঞ্চলের এবং ক্লাব কর্তৃপক্ষ উভয়ই লাভবান হবে। 

hi-res-170874739_crop_north 

২০ বছর পর আবারো এশিয়ার মাটিতে হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপে এশিয়া অঞ্চল থেকে স্বাগতিক কাতার সহ অংশ নিচ্ছে জাপান, সৌদি আরব,ইরান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০২ সালের মতো এবারও কি উত্তাপ ছড়াবে এশিয়ার দেশ গুলো নাকি অব্যাহত থাকবে তাদের ব্যর্থতার ধারা? এই প্রশ্ন সময়ের হাতে তোলা থাক কেননা ফুটবল একটা আনপ্রেডিকটেবল গেম।