• ফুটবল

কুতিনহো- এক জাদুকরের জাদু হারানোর গল্প

পোস্টটি ৫৩২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সবুজ মাঠে লিভারপুলের লাল জার্সি গায়ে সে ক্যানভাসে খেয়ালি শিল্পী মেতে উঠতেন সৃষ্টির আনন্দে। তা দেখে কারোর মনে পড়ত ইনিয়েস্তা কিংবা নেইমারের কথা , কারোর কাছে বা মেসির। বলা হচ্ছিল লিভারপুল ফ্যানদের কাছে "লিটল ম্যাজিসিয়ান" নামে পরিচিত ফিলিপ কুতিনহোর কথা। ড্রিবলিং ক্ষমতা,গতি, এবং তৎপরতার কারণে তাকে লিওনেল মেসি এবং রোনালদিনহোর সাথে তুলনা করেছেন মৌরিসিও পচেত্তিনো। প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার কেরেকা তাকে জিকোর সাথে তুলনা করেছেন তার সৃজনশীলতার কারণে।

 

গল্পের শুরুটা হয় রিওর উত্তরাঞ্চলীয় রোচা জেলায় একটি পুরোনো শহরে। এখানেই বেড়ে উঠা তার। ছোটবেলায় বল পায়ে একটি অসাধারণ প্রতিভা ছিলেন। বড় দুই ভাই ক্রিস্টিয়ানো ও লিয়ান্দ্রোর সঙ্গে ফুটসাল খেলে শৈশব কেটেছে কুতিনহোর।স্থপতি পিতা হসে কার্লোস কোরেয়া তাকে নিয়ে যান ভাস্কোর একটি  বাছাই টুর্নামেন্ট এ। সাত বছর বয়সে ভাস্কোর বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেয়া কুতিনহো ১৬বছর বয়সে ইন্টার মিলানের দেখা পান। ৪০ লাখ ইউরোয় ইতালিয়ান ক্লাবটি তাকে কিনলেও দলে ভেড়াতে পেরেছে দুই বছর পর কেননা ইতালিতে ১৮ বছরের নিচে পেশাদার ফুটবলে খেলার নিয়ম নেই। তাই ভাস্কো তাকে ধারে আরও দুই বছর রেখে দেয়। ভাস্কোর হয়ে ৩১ ম্যাচ খেলে ৫ গোল করা কুতিনহোকে তার খেলার ধরনের কারনে কাকার উত্তরাধিকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম।

 

২০১০ সালে "ইন্টারের ভবিষ্যত " তকমা নিয়ে কুতিনহোর অভিষেক ঘটে "নেরুজ্জি"দের জার্সিতে। কিন্তু ইন্টারে প্রথম একাদশে সেভাবে স্থায়ী হতে না পারায় দুই বছর পর ধারে চলে যান স্পানিশ ক্লাব এস্পানিওলে। পরের বছর ৮৫ লাখ পাউন্ড ট্রান্সফার ফি দিয়ে কুতিনহোকে কেনে লিভারপুল। অল রেডদের আস্তানায় নিজের জাত চিনিয়ে সবার নজরে আসেন কুতিনহো। তাদের হয়ে ২০১ ম্যাচে ৫৪ গোল আর ৪৫ এসিস্টে ইপিএল এ ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গলের রেকর্ড করেন কুতিনহো। লিভারপুলের ২০১২-১৩ সিজনের সেরা তরুণ প্লেয়ার, দুইবার লিভারপুলের সেরা প্লেয়ারের পাশাপাশি একবার পিএফএ সেরা টিমে জায়গা করে নেয় সে। তবে ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অল রেডদের আস্তানা থেকে এই ম্যাজিসিয়ানকে নিজেদের আস্তানা নুও ক্যাম্পে ভেড়ায় বার্সেলোনা।লিভারপুলের হয়ে মাঠ মাতানো এ তারকা আরও বড় কিছুর আশায় বার্সেলোনা গেলেও ক্যারিয়ারে এগতে পেরেছেন খুব সামান্যই।

20230101_150843

"এটা একটা স্বপ্ন,জাদুর জায়গা আমার জন্য।" জাদুর ক্লাবের স্পর্শ পাওয়ার পরই যেন তার পায়ের জাদু উড়ে গেল। বার্সেলোনায় এসে কখনোই লিভারপুলের সে ছন্দ খুজে পাননি। ইংল্যান্ডে থাকতে যাকে মনে করা হয়েছিল বার্সেলোনার ধাঁচে গড়া! সেই কুতিনহোই স্পেনে এসে হারিয়ে ফেললেন নিজেকে। কোচ ভালভার্দে তাকে নেইমার বানাতে চেষ্টা করলেন,কাজ হলো না। আবার ইনিয়েস্তার পজিশনেও ডানা মিলল না কুতিনহোর। জ্বলুনি বাড়িয়ে তাকে হারিয়েই সাবেক ক্লাব লিভারপুল জিতে নিল চ্যাম্পিয়নস লীগ। বার্সেলোনার হয়ে দুইটি লা লীগা জিতলেও তাতে কুতিনহোর অবদান ছিল-এমন দাবি তুলতে পারবে না সে নিজেই। নেইমারের শুন্যস্থান পুরনে ব্যর্থ হয়ে জার্মানি যেতে হলো তাকে। বায়ার্নের হাতে বার্সেলোনার সবচেয়ে ভয়ংকর এক হারের ষোলোকলাতাও সেই কুতিনহোর মাধ্যমেই পূরণ হয়েছিল। অবশেষে বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার ঠিক ৪ বছর পর ১০৬ ম্যাচে ২৫ গোল আর ১৪ এসিস্টের মাধ্যমে রঙহীন এক বার্সা অধ্যায় শেষ করে পাড়ি জমান প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব এস্টন ভিলায়। ভিলায় পুরনো সতীর্থ জেরার্ডকে নিজের গুরু হিসেবে পায় কুতিনহো। ২০২১-২২ সিজনে ভিলার হয়ে ১৯ ম্যাচে ৫ গোল আর ৩ এসিস্ট করে সে। তবে নতুন সিজনে কোচ উনাই এমেরির অধীনে ১৩ ম্যাচ খেললেও বেশিরভাগ সময় বেঞ্চেই কাটাতে হয়েছে তাকে। এই সিজনে এখনো পর্যন্ত কোনো গোল কিংবা এসিস্টের দেখা পায়নি এই ব্রাজিলিয়ান। গুঞ্জন আছে ভিলা ছেড়ে ব্রাজিলের কোনো এক ক্লাবে যোগ দেয়ার তবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পাকাপোক্ত নিউজ পাওয়া যায়নি।

20230101_151403

ব্রাজিলের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেললেও জাতীয় দলে তার অভিষেক হয় ১৮ বছর বয়সে ইরানের বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে।  তবে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম গলের দেখা পান ৪ বছর ৮ মাস পর এক প্রীতি ম্যাচে। ব্রাজিলের জার্সিতে মোট ৬৮ ম্যাচ খেলে গল করেছেন ২১ টি।

অনেক চড়াই উতরাই এর ক্যারিয়ারে কুতিনহো জিতেছেন ১ টি কোপা আমেরিকা,১টি চ্যাম্পিয়নস লীগ, ২ টি লা লীগা, ১টি বুন্দেসলীগা,১টি জার্মান কাপ,২টি কোপা দেল রে, ১ টি স্পানিশ সুপার কাপ ও ১টি ইতালিয়ান কাপ।

কুতিনহো নামটা শুনলেই মনে পড়ে অল রেডসদের জার্সি গায়ে মাঠ কাপানোর কথা। ড্রিবলিং,গতি কিংবা দূর পাল্লার শত দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রাখার কথা। সেই কুতিনহোই বার্সায় যোগদানের পর হারিয়ে ফেলেন নিজেকে,বারবার ফিরে আসার গল্প শোনানোর কথা থাকলেও আর শোনানো হয়নি সে গল্প। তার ফিরে আসার গল্প শোনার জন্য নাহয় আরও অপেক্ষা করব তবুও চাওয়া ক্যারিয়ারের শেষটাতে আবার লিভারপুলের সেই 'লিটল ম্যাজিসিয়ান' ফিরে আসুক তার পুরনো জাদু নিয়ে।