লোয়ার অর্ডারে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নয়, অলরাউন্ডার প্রয়োজন
এশিয়া কাপ দরকার, রোমাঞ্চের জন্যই
ওয়ানডে ক্রিকেট তাৎপর্য হারাচ্ছে, এটা প্রায়ই শোনা যায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো টুর্নামেন্টও সংশয়ে পড়েছে। আমার কাছে টেস্ট ক্রিকেট সবচেয়ে আকর্ষণীয়, আসল ক্রিকেট সেটাই। টি-টোয়েন্টি আবার দর্শকসংখ্যা বা বাণিজ্যিক দিক দিয়ে খুবই ফলপ্রসূ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির নির্যাস মিলিয়েই ওয়ানডে। এর আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে, ফ্লেভার আছে। ইনিংস মেরামতের কথা যদি ধরি, টেস্টে অনেক সময় মেলে, আবার টি-টোয়েন্টিতে সেটা নেই। এখানেই আসলে ওয়ানডের মজাটা, যেটা একটু আলাদা।
ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যই এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্ট দরকার। ইউরোপীয় ফুটবলের দিকে তাকান- চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা, ইউরোর পরও তারা নতুন করে ইউয়েফা ন্যাশনস লিগ এনেছে। ফিফার ফ্রেন্ডলিগুলোকে একটা ফরম্যাটে নিয়ে আসতে চাচ্ছে তারা। আঞ্চলিক টুর্নামেন্টগুলোর প্রতি আলাদা একটা ঝোঁক থাকে কিন্তু।
এশিয়া কাপ এদিক দিয়েই ক্রিকেটে অনন্য। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এমন আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট নেই। পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ, একটি আবার বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসেছে। একটা সময়ে এশিয়া কাপ মানেই ছিল শুধু ভারত-পাকিস্তান। এরপর শ্রীলঙ্কা এলো, বাংলাদেশ এলো। এখন আফগানিস্তানের মতো দলও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সঙ্গে আছে উপমহাদেশের উন্মাদনা। হয়তো বিরাট কোহলি নেই, কিন্তু ভারত তো কম শক্তিশালী না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের প্রতিশোধের ব্যাপারটাও নিশ্চয়ই তাদের ভেতরে কাজ করছে।
এরকম একটা টুর্নামেন্ট রোমাঞ্চকর হবেই।
একজন সাকিবকে দরকার এশিয়া কাপে
সাকিবের অবস্থানটা কী, কতোখানি ফিট বা না, এটা বলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি সাকিব নিজে। এরপর বোর্ড। এখানে একটা দৃশ্যপট আছে।
সাকিব এমন একজন ক্রিকেটার, যার জায়গা পূরণ করতে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলাতে হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে বোর্ড অবশ্যই চাইবে সাকিব খেলুক। আবার সাকিব তার এখনকার ও ভবিষ্যতের ফিটনেসের কারণে অস্ত্রোপচার বা বিশ্রামের কথাও ভাববে।
আমি মনে করি, সাকিব যদি খেলার জন্য ন্যূনতম ফিট থাকে, তার এ টুর্নামেন্ট খেলা উচিৎ। অস্ত্রোপচার জিম্বাবুয়ে সিরিজের সময়ও করে নিতে পারে। ওই সিরিজে একজন সাকিব আল হাসান না থাকলে সমস্যা হবে না। কিন্তু এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে তাকে দরকার।
তবে শর্ত হচ্ছে, সাকিবের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা পেতে হবে। সেটা দেওয়ার পর্যায়ে না থাকলে তার খেলা উচিত না। যেহেতু ক্রিকেটারটা সাকিব আল হাসান, টুর্নামেন্টটা বড়, এ কারণেই ব্যাপারটা একটু ঘোলাটে হয়ে গেছে। সবকিছুর পর বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং অবশ্যই সাকিবের ওপরই আসলে পুরো ব্যাপারটা। দর্শক হিসেবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থক হিসেবে আমরা চাইব, সাকিব তার সেরাটা দিয়েই খেলবে। সাকিবসহ বাংলাদেশের সব প্লেয়ারই ফিটনেসের সেরাটা দিয়ে খেলবে।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম ম্যাচের আগে অনুশীলনে সাকিব, দুবাইয়ে/বিসিবি
সাতে দরকার অলরাউন্ডার, স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নয়
শেষ কয়েকটা সিরিজে আমরা লোয়ার অর্ডার নিয়ে একটু দোলাচলে আছি। আমাদের ব্যাটিং লাইন-আপে তামিমের সঙ্গে একজন ওপেনিংয়ে, এরপর সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ। এর মধ্যে চারজন অনেক অভিজ্ঞ, ব্যাটিংয়ের জন্য ফিট। আমি মাশরাফি ভাইকেও ধরবো, তিনি ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট সমর্থ একজন।
সাত নম্বর জায়গা নিয়ে একটু ভুগছি আমরা। বরাবরই এখানে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান খেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেটা এখনকার ক্রিকেটীয় প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জিং। আমরা সাব্বিরকে চেষ্টা করেছি, যে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন-চার-পাঁচের ব্যাটসম্যান। মোসাদ্দেক, নাঈম, সোহাগ গাজিকে চেষ্টা করেছি।
এখানে স্পেশালিস্ট একজন অলরাউন্ডার প্রয়োজন। যে ব্যাটিং করবে, বোলিং করবে। এবং ব্যাটিংয়ের ধরনটা শেষের দিকে যেমন চাওয়া হয়, সেভাবে ফিনিশ করার চেষ্টা করবে। এখন ঘরোয়াতে যে ওপরের দিকে খেলে অভ্যস্থ, তাকে এরকম পরিস্থিতিতে খেলানো কিছুটা মেধার অপচয়। আবার দেখা যায়, দুই তিন ম্যাচ পরই এসব ব্যাটসম্যানকে বসিয়ে দেওয়া হয়, ব্যাটিংয়ের তেমন সুযোগ পায় না তারা। এখানে এমন একজন ব্যাটসম্যানকে খেলানো শুধু কঠিন নয়, বিপজ্জনকও।
যেমন আরিফুল হককে দিয়ে চেষ্টা করানো হচ্ছে, ঘরোয়াতে সে নিচের দিকে ব্যাটিং করে, আবার বোলিং করে মিডিয়াম পেসে। বোলিংয়ে তাকে ব্যবহার করা গেলে সে পুরোপুরি কার্যকরী হতে পারে। কিন্তু শেষ তিনটা টি-টোয়েন্টিতে তাকে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হয়েছে। এখন আল্লাহ না চায় যদি সে কয়েকটা ম্যাচ খারাপ করে, তাহলে তো তার জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এখন মিঠুনকে খেলানোর চিন্তা করা হচ্ছে, আমি মনে করি সে চার-পাঁচে খেলার দাবি রাখে।
এখানে অবশ্যই একজন অলরাউন্ডার দরকার। এমন ক্রিকেটারের সঙ্কট থাকলে ঘরোয়া কাঠামোর ভেতর দিয়ে কাউকে তৈরী করা ছাড়া তো উপায় নেই। সাত-আটে যদি একদম পারফেক্ট খুঁজি, তাহলে সাম্প্রতিক সময়ে আমি দুজনের কথা বলবো- নাসির হোসেন ও সোহাগ গাজি। দুজনই হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যান, দুজনই অফস্পিনার। এরকম ক্রিকেটার খুঁজে বের করতে হবে।
এশিয়া কাপে নির্বাচকরা যাদের উপযুক্ত মনে করে নিয়ে গেছেন, তারা যাতে সেরাটা খেলতে পারে, এমন আশা করতে হবে এখন।
এবং শ্রীলঙ্কা…..
শ্রীলঙ্কা এমন একটা দল, যারা দলগত পারফরম্যান্স দিতে চেষ্টা করে সবসময়। এমন দল, যে কোনও প্রতিপক্ষর জন্য যারা বিপজ্জনক। তবে বাংলাদেশ এ ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই ফেভারিট। শ্রীলংকার এই দলটা তরুণ, নবীন, এবং পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফলও ভাল, শ্রীলঙ্কার ততোটা নয়। যদি বাংলাদেশ নিজের সেরাটা দিতে পারে, তাহলে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আদতে চিন্তা করার তেমন কিছু নেই। সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হলেই হলো।
শাহরিয়ার নাফীস- বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট, ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।