'তামিমের সঙ্গী নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়নি'
সুযোগ এখনও শেষ হয়ে যায়নি
অবশ্যই এটা দুর্ভাগ্যজনক ছিল। আমাদের ব্যাটসম্যানরা কাল ভালো খেলতে পারেনি। ভারতের সঙ্গে আপনি ১৬০-১৭০ করলে ২০টা ম্যাচের মধ্যে আপনি হয়তো একটা জিতবেন। ব্যাটিংয়ের কারণেই কাল আমরা হেরে গেছি। অবশ্য এভাবে হারলে দলের আত্মবিশ্বাস একটু নড়বড়ে হয়েই যায়। তবে একটা ভালো ব্যাপার, পরের ম্যাচের আগে আমরা একটা দিন সময় পাচ্ছি। আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমাদের সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। পর পর দুইটি ম্যাচ জিতলে আমাদের ফাইনাল যাওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে এটা ঠিক, পর পর দুই ম্যাচে এভাবে হারাটা দলের আত্মবিশ্বাসের ওপর প্রভাব ফেলবে।
আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করতাম, এখনও করি, বাংলাদেশের দলে পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন তারা অনেক অনেক ভালো খেলে। এখন বাংলাদেশ দল যেখানে আছে, তার থেকে আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই জেদটা থাকলে পরের ম্যাচে ভালো কিছু হতে পারে। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন শুধু সামনের দিকে তাকাতে হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসলে লুকানোর কোনো সুযোগ নেই
প্রথমত লিটন ও শান্তর প্রতিভা ও সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তারা অনেক দিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে আসছে। জাতীয় দলে সেজন্যই তারা সুযোগ পেয়েছে। তবে একটা ব্যাপার হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেশ কঠিন, এটা মোটেই সহজ কিছু নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসলে লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। সবাই আপনাকে দেখছে, আপনার ভুল ত্রুটি নিয়ে গবেষণা করছে। এখানে চাপটা অঙ্কে বেশি। এখানে আপনার সামর্থক্যে পারফরম্যান্সে অনূদিত করতে হলে মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে।
তামিমের সঙ্গী নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়নি
আমরা অনেক সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা খারাপ সময়টা কোন না কোন ভাবে পার করে ফেলি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানসিকভাবে খুব শক্ত না হলে এই সময়টা পার করা কঠিন। আমি যেটা মনে করিয়ে দিতে চাই, আমরা কিন্তু অনেক দিন ধরেই তামিমের একজন যোগ্য সঙ্গী, একজন ভালো ওপেনার খুঁজছি। মাঝেমধ্যে আমরা একটু ভালো করি, তখন এই ব্যাপারটা আবার ভুলে যাই। এটা নিয়ে আমরা কোনো ধরনের হোমওয়ার্ক বা পরিকল্পনা করিনি। আজকে তামিম নেই বলে আমাদের টপ অর্ডার প্রতি ম্যাচেই ভেঙে পড়ছে। তামিম থাকলেও ওর একজন যোগ্য সঙ্গী, সঙ্গে একজন ভালো ব্যাক আপ নিয়ে আমাদের এখন থেকেই পরিকল্পনা করা উচিত।
সৌম্য-ইমরুলের আসা লিটনদের জন্য ভুল বার্তা
ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার যাওয়ায় আমি একটা ভালো দিক দেখতে পাচ্ছি। তারা দুজনেই ফ্রেশ, দলে ভালো কিছু করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, দুজনেই দলে ইতিবাচক একটা হাওয়া নিয়ে যেতে পারবে। আপনি ইমরুল বা সৌম্য হলে এটা আপনার জন্য পজিটিভ একটা সুযোগ। কিন্তু আপনি যদি লিটন-শান্ত বা মুমিনুল হন তাহলে এটা আপনার জন্য একটা ভুল বার্তা। আমি যদি শান্ত বা লিটনের জায়গায় থাকতাম, তাহলে আমার আত্মবিশ্বাস কমে যেত।
মিরাজ-মাশরাফির সময়ই শুধু 'মোমেন্টাম' ছিল
আপনি ১৬০-১৭০ রান করলে আসলে বোলার-ফিল্ডারের জন্য পরিকল্পনা করা কঠিন। বোলারদের কিছু করার থাকে না তখন। ধোনিরা যেমন সাকিবকে আউট করেছে, সেভাবে তাই মাশরাফিদের তেমন কিছু করার সুযোগ ছিল না। আমরা গত তিন চার বছর ধরে খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি, বোলাররাও ভালো করেছে। কিন্তু স্কোরকার্ডে রান না উঠলে তাদের কিছু করার থাকে না।
দেখুন, আমি নিজে খেলোয়াড়। সব খেলোয়াড়ের পরিশ্রম, দলের জন্য তাদের নিবেদনকে আমি খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ দলে যারা খেলে তারা খুব মনযোগ দিয়েই খেলার চেষ্টা করে। কিন্তু এক দুইটা উইকেট পড়লে স্বাভাবিক খেলাটা কঠিন হয়ে যায়। তখন তাদের মাথায় থাকে, এক দুইটা উইকেট পড়ে গেলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে। সাকিব, মুশফিকের ওপর চাপ থাকে, আমাকে রান করতেই হবে। তখন স্বাভাবিক খেলা তাদের পক্ষে খেলা কঠিন। আর উইকেট যেমনই হোক, ব্যাটসম্যানরা আউট হতে থাকলে আপনার রান করা কঠিন। সেই মোমেন্টামটাই আপনি কখনো পাবেন না। কাল পুরো ম্যাচে একবারই আমরা সেই মোমেন্টাম পেয়েছিলাম, যখন মিরাজ আর মাশরাফি ব্যাটিং করছিল।
মিরাজ আপাতত সাত-আটেই থাকুক
মিরাজের ক্ষেত্রে বলব, ও কাল বেশ ভালো ব্যাট করেছে, কিন্তু এখনই ওপরে ব্যাট করার সুযোগ নেই। অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সে মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছে, অফ স্পিন করেছে, কিন্তু এই দলে আপাতত সেই সুযোগ নেই। সাত-আটের আগে তাকে নিয়ে আসা সম্ভব নয়, যদি সে ধারাবাহিকভাবে এভাবে ভালো খেলতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে ওপরে নিয়ে আসার কথা ভাবা যেতে পারে।
আফগানিস্তানের সাথে প্রথাগত ওয়ানডে খেলতে হবে
আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচের আগে আমি একটা কথাই বলব, আমাদের এখন প্রথাগত ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে হবে। আপনি যাবেন, শুরু থেকে তাড়াহুড়ো না করে উইকেট হাতে রাখবেন। শেষ ১০-১৫ ওভারে উইকেট হাতে রেখে আপনি মারার চেষ্টা করবেন। আপনাকে বুঝতে হবে, এই উইকেটে ২৭০-২৮০ রান করা সম্ভব নয়। ২৪০ এর আশেপাশে করলে আপনার জয়ের সুযোগ থাকবে। আর আপনি যদি আগে বল করেন তাহলে আপনাকে ২২০ রানের আশেপাশে আটকে ফেলতে হবে। কারণ এই কন্ডিশনে গরমের মধ্যে পরে ব্যাট করে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করা কঠিন।
শাহরিয়ার নাফীস- বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট, ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।