'রুবেল নীরবে ওর কাজ করে যাচ্ছে'
বাংলাদেশ ওয়ানডেতে টেকসই উন্নতি করছে
এরকম একটা ফাইনালের পর স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগাটা অনেক বেশি। আরও একবার ফাইনালে গিয়ে হারতে হলো আমাদের। তবে আমি হতাশ নই। কারণ বাংলাদেশের উন্নতিটা টেকসই হচ্ছে, ইংরেজিতে যেটাকে বলে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’। বাংলাদেশ দল ওয়ানডেতে কতটা শক্তিশালী তা আরও একবার প্রমাণ করেছে। একটা সময় আমরা সিরিজ জেতার কথা ভাবতে পারতাম না, আমরা সিরিজ জিতছি। ফাইনাল খেলার কথাও ভাবতে পারতাম না, এখন নিয়মিত ফাইনাল খেলছি। এশিয়ায় এখন ভারতের পর আমরা দ্বিতীয় সেরা দল, সেটা সবাই মানবে। বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে শিরোপা এখন খুব দূরে নয়, খুব শিগগিরই সেটা আমরা পেয়ে যেতে পারি।
২২২ রান যথেষ্ট ছিল না দিন শেষে
আমি কালকের ফাইনাল নিয়ে এক অর্থে খুব বেশি আক্ষেপ করার কিছু দেখছি না। আসলে ২২২ রান নিয়ে যে কোনো অবস্থাতেই জেতা খুব কঠিন। এমন একটা ওপেনিং জুটির পরও আমাদের রান অন্তত ২৬০ হওয়া উচিত ছিল। এখানে আমাদের একটু পরিকল্পনায় ভুল ছিল। আমার মনে হয় আমরা একটা সময় ৩০০র জন্য খেলতে গিয়েছি। কিন্তু সেটা না করে ২৫০-২৬০ এর জন্য খেললে ওই সময় ঝুঁকি নিতে হতো না। আর সেজন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যাটসম্যানের আউটকে আমি দায়ী করতে চাই না।
তারপরও আমি বোলারদের দারুণ প্রশংসা করব, তারা এই রান নিয়েই লড়ে গেছে। আমরা কিন্তু ধাওয়ান-রোহিতকেও তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছি। শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত খেলতে বাধ্য করেছি ওদের। কিন্তু মাশরাফি ভাই কাল যেটা বললেন, এই রান আসলে কখনোই যথেষ্ট ছিল না। এরপরও যা হয়েছে সেটা কম পাওয়া নয়।
ওই স্টাম্পিংটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার
লিটনের আউট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যথেষ্ট তোলপাড়, অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলছেন। এখানে বেনিফিট অব ডাউট নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, আম্পায়ার আউট ধরেই বার বার রিপ্লে দেখেছেন। কোনো একটা ফ্রেম দেখে আম্পায়রারের মনে হয়েছে বুটের কোনো অংশ দাগের পেছনে ছিল না। সেজন্যই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা লিটনের বিপক্ষে গেছে। ওই যে ক্রিকেটে একটা কথা আছে না, ‘লাইন বিলঙ্গস টু দ্য আম্পায়ার’। লিটনের পক্ষেও যেতে পারত সিদ্ধান্তটা, তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কেন দেওয়া হয় সেটা আমরা খেলোয়াড়েরা বুঝি। এই আউট আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।
লিটনের এই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগাতে হবে
লিটন কাল দুর্দান্ত খেলেছে, এমনিতেই ও প্রতিভাবান একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই সে রান করে আসছে, কাল সে সামর্থ্যের জানান দিয়েছে। বাংলাদেশ দলের জন্য এটা স্বস্তির, টপ অর্ডারের একজন শেষ পর্যন্ত রান পেয়েছে। সিনিয়র হিসেবে আমি ওকে পরামর্শ দেব, যে ভিত্তিটা এখন সে পেয়েছ সেটা যেন সে ধরে রাখে। অনেকগুলো ইনিংস খেলার পর সে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, দলে অনেকেই হয়তো এত সুযোগ পায়নি। মুমিনুলও কিন্তু টেস্টে এত ভালো করার পরও ওয়ানডেতে ওভাবে সুযোগ পায়নি। লিটন এখন সেই সুযোগটা পেয়েছে, আশা করব ও এটা দুহাত ভরে নেবে। আশা করি কাল যেভাবে খেলেছে সেটা সে ধরে রাখতে পারবে, ভবিষ্যতে কাজে লাগাবে।
মিরাজের চমকটা মাশরাফি ভাইয়ের
মিরাজকে শুরুতে প্যাড পরে নামতে দেখে আমি একটু অবাকই হয়েছিল। সাথে সাথে বুঝতে পেরেছি, এটা মাশরাফি ভাইয়ের মাথা থেকে এসেছে। মিরাজকে ওভাবে নামিয়ে দেওয়া শুধু উনার পক্ষেই সম্ভব। উনি হয়তো চেয়েছিলেন, শুরুতে মিরাজকে নামিয়ে দিয়ে ব্যাটিং অর্ডারটা একটু লম্বা হোক।
রুবেল নীরবে ওর কাজ করে যাচ্ছে
আমি বোলারদের কথাটা আলাদা করে একটু বলতে চাই। বিশেষ করে রুবেলের কথা। ও নীরবে যেভাবে নিজের কাজটা করে যাচ্ছে, সেটা দারুণ একটা ব্যাপার। ও অনেক দিন ধরে যেভাবে ধারাবাহিক, সেটা সেভাবে আলোচনায় আসছে না। সময়ের সাথে সাথে রান আপ ছোট করে পরিণত হচ্ছে, যেটার সুবিধা এখন দল পাচ্ছে। কালও টানা একই জায়গায় বল করে গেছে, গতিও কম ছিল না। অনেক দিন ধরেই ও ওয়ানডেতে আমাদের বড় ভরসা, কাল সেটা আরও একবার প্রমাণ করেছে। মোস্তাফিজ তো এমনিতেই দুর্দান্ত, মাশরাফি ভাইও নিজেকে উজাড় করে যাচ্ছেন। অপু রান একটু বেশি দিয়ে ফেললেও খারাপ করেনি। আমি তো বলব, বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের বোলিংটাই এখন সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হয়ে গেছে। বিশেষ করে পেসাররা যেভাবে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে, তাতে ভালো কিছুর আশা আমরা করতেই পারি।
ওয়ালশের কাজের প্রমাণ পরিসংখ্যান দিচ্ছে
কোর্টনি ওয়ালশ কী কাজ করছেন, সেটার প্রমাণ কিন্তু এখন পরিসংখ্যান দিচ্ছে। ২০১৬ সালের পর থেকে ওয়ানডেতে আমাদের পেসারদের গড় দ্বিতীয় সেরা (এগিয়ে শুধু পাকিস্তান)। আমি আগেও বলেছি, ওয়ালশের মতো একজন বোলারকে কোচ হিসেবে পাওয়া আমাদের জন্য বড় ভাগ্য। তাঁর মাপের ক্রিকেটারের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারাও বড় ব্যাপার। সেই ছাপ এখন বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে দেখা গেছে।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ নতুনদের জন্য সুযোগ
সামনেই জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। সাকিব, তামিম সেখানে না থাকার কথা, হয়তো বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে মুশফিককেও। আমি বলব, নতুনদের জন্য ভালো একটা সুযোগ এটা। সেখানে আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিশ্বকাপের জন্য একটা দল দাঁড় করাতেই পারি। আর একটা কথা, ওয়ানডেতে আমরা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছি। বিশ্বকাপেও আমাদের খুব ভালো সুযোগ আছে বলে মনে করি। টি-টোয়েন্টিতে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। তবে টেস্ট ক্রিকেটটাই আসল, ভুলে গেলে চলবে না। সামনে কিছু টেস্ট আছে, সেখানে আমাদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে মনযোগী হওয়াটা এখন জরুরি।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিছু চিন্তা ভাবনার জায়গা তো আছেই। সাকিব-তামিম এলে একটু দুশ্চিন্তা করবে। আমি বলব, এক ও তিন নম্বরের জন্য আমাদের ভালো ব্যাক আপ দরকার। ভারতে যেমন লোকেশ রাহুলের মতো ব্যাটাসম্যানকেও বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সেই মাপের বিকল্প ব্যাটসম্যান দরকার।
শাহরিয়ার নাফীস- বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট, ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।