• বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিব নাটকের টাইমলাইন

    দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিব নাটকের টাইমলাইন    

    গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বিদেশ সফর মানেই একটি নাটকের বারবার মঞ্চায়ন। সেটার কেন্দ্রীয় চরিত্র সাকিব আল হাসান, পার্শ্ব চরিত্র বিসিবি। নাটকের মঞ্চ ঘিরে একটা প্রশ্নই উড়তে থাকে, সাকিব যাবেন তো? জল আরও ঘোলা হয় খোদ বিসিবির বক্তব্যে। এমন নজির নিকট অতীত হাতড়ালেই পাওয়া যাবে।  

    বিদেশ সফর থেকে সাকিব কখনো ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কখনো দেশের খেলা এড়িয়ে গেছেন আইপিএলের জন্য। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরেও যাননি পারিবারিক কারণে। এবারও সাকিবের যাওয়ার কথা ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। কিন্তু দফায় দফায় বিসিবি আর সাকিবের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে পরিস্থিতি হয়ে যায় আরও ঘোলাটে। বলা চলে সেটা ছাড়িয়ে গেছে আগের সবকিছুকেই। তবে অনেক জল্পনা-কল্পনা আর বিশাল নাটকীয়তার পর সাকিব যাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। 

    দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, সাকিবের টেস্ট পরিকল্পনা আর বিসিবির বদৌলতে নাটকীয় সেই পরিস্থিতির একটা টাইমলাইন দাঁড় করে ফেলা যায় অনায়াসে। 

     

    ১৪ ফেব্রুয়ারি

    আইপিএলের দুইদিন ব্যাপী নিলামে অবিক্রিত থেকে যান সাকিব আল হাসান। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই আগ্রহ দেখায়নি তার প্রতি। এর আগেই গুঞ্জন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নাও খেলতে পারেন সাকিব। কিন্তু আইপিএলে দল না পাওয়ায় সেই সফরে সাকিবের থাকা না থাকা নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশার। 

     

    ২৬ ফেব্রুয়ারি

    বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এক সাক্ষাতকারে বলেন,  টেস্ট ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের ছুটি চেয়ে বিসিবিতে চিঠি দিয়েছেন সাকিব। যদিও তখনো সাকিবের ছুটি মঞ্জুর করেনি বিসিবি। জানায়নি কোনো সিদ্ধান্তও। 

     

    ২৮ ফেব্রুয়ারি

    আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ ছিল সেদিন। গণমাধ্যমকে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও জানান, আইপিএলের নিলামের আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের বিরতি চেয়ে সাকিবের চিঠি দেওয়ার কথা। এরপর সাকিব-বিসিবি; দুই পক্ষের আলোচনায় ফল আসে, আইপিএলের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজে খেলবেন না সাকিব। তবে আসন্ন এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে ঠিকই যাবেন। 

    কিন্তু সাকিব আইপিএলে দল না পাওয়ায় পরিস্থিতি বদলে যায়। সাকিবের আগামী এক বছরের পরিকল্পনা জানতে আলাদা করে বৈঠকে বসার কথাও জানান জালাল ইউনুস। যদিও বিসিবি সভাপতি সেদিন ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সরাসরি বলেন, সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলবেন। 

     

    ৩ মার্চ

    দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ওয়ানডে ও টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা করে বিসিবি। ওয়ানডের সাথে টেস্ট স্কোয়াডেও রাখা হয় সাকিবকে। তখনও সাকিবের টেস্ট খেলা নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

     

    ৬ মার্চ

    আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করে ৬ মার্চ রাতে ব্যক্তিগত কাজে দুবাই যান সাকিব। যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকে জানান, ক্রিকেটটা সেভাবে উপভোগ করছেন না তিনি। কারণ হিসেবে নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে বিরতি নিতে চান। তার মতে, আফগানিস্তান সিরিজেও নিজের সেরাটা দিতে না পারার মূল অন্তরায় ছিল সেটি।

    সাকিব বলেন, ‘যদি আমার মন মানসিকতা এরকম থাকে, ফিজিক্যাল কন্ডিশন এরকম থাকে, মেন্টাল কন্ডিশনও এরকম থাকে; এটা দলের জন্যই ক্ষতি হবে। আমি নিজে যেটা মনে করি, আমার নিজের প্রতি নিজের যে সম্মান, মানুষ যেটা প্রত্যাশা করে সেটা যদি আমি করতে না পারি, সেখানে (দক্ষিণ আফ্রিকা সফর) আসলে প্যাসেঞ্জার হয়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে। সতীর্থদের সাথে চিট করার মতোই একটা ব্যাপার হবে।’ 


    ৭ মার্চ

    সাকিব দুবাই যাওয়ার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি প্রশ্ন ছুঁড়েন, আইপিএলে দল পেলে সাকিব তার মানসিক অবসাদের কথা বলতেন কিনা? সেদিন বেশ কড়া সুরেই সাকিবের সমালোচনা করেন তিনি। 

    ৮ মার্চ

    বিসিবি সভাপতির পর সাকিবকে নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও। তিনি বলেন, 'সাকিব যদি না খেলে, না খেলুক টেস্ট ম্যাচ। আই ডোন্ট কেয়ার। বিসিবি এতটা কনসার্নও না, যদি না খেলতে চায়। আপনি জোর করতে পারবেন না। আমরা চাই, ও খেলুক। যতদিন পর্যন্ত ফিট থাকবে, সাকিব খেলুক। কিন্তু ও যদি উপভোগ না করে, তাহলে মনে হয় যে বলে দেওয়া উচিত আমি টেস্ট খেলব না বা ওয়ানডে খেলব না কিংবা কোনো একটা-দুইটা ফরম্যাট খেলব না। কোনো সমস্যা নেই।'

     

    ৯ মার্চ

    সাকিবের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তার ছুটি মঞ্জুর করে বিসিবি। সাকিবের মানসিক ও শারীরিক অবসাদের কথা আমলে নিয়ে তাকে বিশ্রাম দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বিসিবির। 

     

    ১০ মার্চ

    গত বৃহঃস্পতিবার কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা প্রকাশ করে বিসিবি। তিন ফরম্যাটের চুক্তিতেই রাখা হয় সাকিবকে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত হলেও ইনজুরি আর ব্যক্তিগত কারণ মিলিয়ে শেষ ৯ টেস্টের ৩টিতে খেলেছেন সাকিব। 

     

    ১২ মার্চ

    দেশে ফেরার একদিন পর বিসিবির সাথে আলোচনায় বসেন সাকিব। বিসিবিতে সেই আলোচনার পর জানা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দুই ফরম্যাটের সিরিজেই খেলবেন সাকিব। সাকিবের সিদ্ধান্ত বদলের ফলে অবসান হয় নাটকীয়তার। দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্যে তিন ভাগে বাংলাদেশ দল রওনা হয়েছে। সাকিব রওনা হবেন রবিবার রাতে। 

    ছুটি পেয়েও সিদ্ধান্ত বদল সাকিবের। এ নিয়ে এই অলরাউন্ডারের ভাষ্য, ‘পাপন ভাইয়ের সাথে আমার পরশু রাতে এবং আজ কথা হয়েছে। আমার পুরো বছরের পরিকল্পনাটা করতে পেরেছি। আমি তিন ফরম্যাটেই অ্যাভেইলেবল থাকব। বোর্ড অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে কোন সময় আমাকে বিশ্রাম দিতে হবে। এখন আমার সিদ্ধান্ত, আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছি।’