• বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর
  • " />

     

    সাকিব-ইয়াসিরের ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর তাসকিন-মিরাজ-শরিফুলে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক 'প্রথম'

    সাকিব-ইয়াসিরের ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর তাসকিন-মিরাজ-শরিফুলে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক 'প্রথম'    

    ১ম ওয়ানডে, সেঞ্চুরিয়ন (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা/বোলিং)
    বাংলাদেশ- ৩১৪/৭, ৫০ ওভার (সাকিব ৭৭, ইয়াসির ৫০, লিটন ৫০, মহারাজ ২/৫৬, ইয়ানসেন ২/৫৭, রাবাদা ১/৫৭)
    দক্ষিণ আফ্রিকা- ২৭৬, ৪৮.৫ ওভার (ভ্যান ডার ডুসেন ৮৬, মিলার ৭৯, বাভুমা ৩১, মিরাজ ৪/৬১, তাসকিন ৩/৩৬, শরিফুল ২/৪৭)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৩৮ রানে জয়ী

     

    দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ পুঁজি পাওয়ার পর বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাড় করিয়েছিল সুপারস্পোর্ট পার্কের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানতাড়ার চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ আফ্রিকা
    তাতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ তাদের মাটিতে পেয়ে গেল তাদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের স্বাদ। সাকিব-ইয়াসির-লিটনদের দারুণ ব্যাটিংয়ের পরে তাসকিন-শরিফুল-মিরাজদের দারুণ বোলিং পারফর্ম্যান্সে ৩৮ রানের এই ঐতিহাসিক জয় যেন হয়ে থাকল দারুণ এক দলীয় পারফর্ম্যান্সের পরিচায়ক।
     
    ব্যাটিংয়ে শেষটা যেমন হয়েছিল বোলিংয়ে শুরুটা হল তেমনই। ৪র্থ ওভারেই শরিফুল ইসলামের স্লোয়ারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ইয়ানেমান মালান। দক্ষিণ আফ্রিকার আত্মবিশ্বাসে এরপর বড় ধাক্কা দেন তাসকিন, ৯ম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে। কাইল ভেরেয়েনকে ২১ রানে ফেরানোর পর রানের খাতা খোলার আগেই এইডেন মার্করামকেও ফেরান তাসকিন। তবে ধাক্কা সামলে এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন রাসি ভ্যানডার ডুসেন-টেম্বা বাভুমা। ২১ ওভার শেষে যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ৯৪; প্রোটিয়ারাও ৯০ রান তুলে নিয়ে ভালোভাবেই ফিরে আসে ম্যাচে।

    ছয় দিয়ে এরপর দারুণ খেলতে থাকা ভ্যান ডার ডুসেন ফিফটি পূর্ণ করেন। তবে আক্রমণে এসেই  দারুণ এক বাউন্সারে বাভুমাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে আরও একবার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন শরিফুল। উইকেটে এসে প্রতি আক্রমণে অবশ্য এরপর ডেভিড মিলার বাংলাদেশী বোলারদের লাইন এলোমেলো করে দেন। স্রোতের বিপরিতেই বাংলাদেশের বোলিংয়ের আশার পাদপ্রদীপ হয়ে থাকা তাসকিন জয়ের আশার পালে হাওয়া লাগান আবারও। ডিপ মিড উইকেটে ইয়াসিরের দারুণ ক্যাচে তিনি ফেরান ৮৬ রানে থাকা ভ্যান ডার ডুসেনকে।

    লোয়ার মিডল অর্ডারের দেখা মিলতেই এতক্ষণ দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটারদের তপের মুখে থাকা মিরাজকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক তামিম অকবাল। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে আন্দিলে ফেলুখওয়াওকে ফেরানোর পর এক ওভারেই ফেরান  মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদাকে। এক প্রান্ত আগলে লড়তে থাকা মিলারও শেষমেশ বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ওই মিরাজের কাছেই উইকেট দিয়ে আসেন ৫৭ বলে ৭৯ রানের দারুন ইনিংস শেষে। শেষে কেশাভ মহারাজ একটু চেষ্টা করলেও তাকে ফিরিয়ে তুলির শেষ আঁচড় টানেন মাহমুদউল্লাহ। সেই সাথেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে বহুল আরাধ্য 'প্রথম'-এর দেখা। 

     

    এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল-লিটন দাসের ওপেনিং জুটি ছিল সাবধানী। প্রথম ওভারেই মেইডেন দিয়ে শুরু করা  লুঙ্গি এনগিডির সাথে জুটি বেঁধে কাগিসো রাবাদা কোণঠাসা করে রেখেছিল দুই বাংলাদেশী ওপেনারকে; যার বদৌলতে প্রথম ১০ ওভারে আসে মোটে ৩৩ রান। এরপর এসে মার্কো ইয়ানসেনও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। অন্য প্রান্তে আসে কেশাভ মহারাজকেই এরপর হাত খোলার জন্য বেছে নেন তামিম-লিটন; তার করা ১৯তম ওভারে এক ছয়, দুই চারে দুজনে মিলে নেন ১৬ রান। ওই বাউন্ডারিগুলো লিটনের ব্যাট থেকে আসায় তার ইনিংসে গিয়ার পাল্টানোর আভাশ ছিল পরিষ্কার। দুজনে মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড ভাঙার পরপরই ৯৫ রানে ভাঙে জুটি; আন্দিলে ফেলুখওয়াওয়ের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ৪১ রানে ফেরেন তামিম।

    কিছুক্ষণ পরেই নিজের টানা ৩য় ফিফটি পূর্ণ করার পরের বলেই এরপর মহারাজের বলে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন লিটন। উইকেটে দুই নতুন ব্যাটার আসায় তার সুযোগ নিয়ে চেপে বসে মহারাজ-ইয়ানসেন জুটি। তারই ধারাবাহিকতায় মহারাজ পেয়ে যান মুশফিকুর রহিমের উইকেট। অথচ নড়বড়ে শুরুকে পেছনে ফেলে, ইনিংসের অবস্থার পরোয়া না করে সাকিব আল হাসান তখন থেকেই হয়ে উঠলেন সপ্রতিভ; ইয়াসির আলীও দিলেন যোগ্য সঙ্গ। দারুণ এক ছয় মেরে সাকিব নিজের ৫০তম ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করেন ৫০ বলে। ৩০ ওভারে ১৩৫ রানে থাকা বাংলাদেশের ২০০ রান দুজনে মিলে পূর্ণ করেন ৩৮.১ ওভারেই! এরপর দুজন মিলে পেরিয়ে যান তামিম-লিটনের জুটির রেকর্ডও। ইয়াসির  নিজের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেওয়ার পরের বলেই এনগিডির শিকার হয়ে সাকিব ফিরলে ভাঙে ১১৫ রানের জুটি। ইয়াসিরও পরের ওভারের প্রথম বলেই রাবাদাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫০ রানেই ফেরেন ইয়াসির।

    সাকিব-ইয়াসির দুজনেই ফিরে গেলেও রানের চাকা সচল রাখে বাংলাদেশ। আফিফ হোসেনের ১৩ বলে ১৭, মাহমুদউল্লাহর ১৭ বলে ২৫ ও শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ১৩ বলে ১৯* রানের ইনিংসে বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তোলে ৯১ রান। তারই ফলশ্রুতিতে তারা পায় ৩১৪ রানের পুঁজি, যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের সর্বোচ্চ। দিনশেষে সেটাই জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ করে বাংলাদেশের বোলাররা।