• আইপিএল ২০২২
  • " />

     

    মোস্তাফিজের ম্যাজিক ফর্মুলা স্লট বল?

    মোস্তাফিজের ম্যাজিক ফর্মুলা স্লট বল?    

    মোস্তাফিজুর রহমান। এই নাম শোনার পর সর্বপ্রথম কোন জিনিসটা আপনার ভাবনায় আসে? দুর্বোধ্য কাটার? নাকি কাটারে বিভ্রান্ত হওয়া কোনো এক ব্যাটসম্যানের মুখ? এমন দৃশ্য মোস্তাফিজ আপনাকে অনেকবারই দেখিয়েছেন। কিন্তু এর নেপথ্যে মোস্তাফিজের  দারুণ যে স্কিলটা  আছে, সেটা হয়তো খানিকটা আড়ালেই থেকে গেছে। বিশ্ব ক্রিকেটে ক্রমেই দূর্বোধ্য হয়ে ওঠার পেছনে কেবলই কি কাটারের অবদান? নাকি অন্যকিছুও আছে? 

     

    টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের বল করতে মানা ‘স্লট জোনে’। অথচ আইপিএলে সেখানে বল করেই রীতিমতো তুলকালাম বাধিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। স্লটে বল পেলে ব্যাটসম্যানরা শট খেলেন অনায়াসে, মোস্তাফিজ সেখানেই বাকিদের চেয়ে ঢের এগিয়। স্লটে বল করে মোস্তাফিজের চেয়ে ভালো ইকোনমি কেবল জাসপ্রিত বুমরাহ ও অ্যান্ড্রু টাইয়ের। 

    স্লটে বল করে  কতটা সফল মোস্তাফিজ? উইকেট সংখ্যাই বুঝিয়ে দিবে সেই সফলতার মাত্রা। স্লট লেংথের শেষার্ধে বল করেই পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি উইকেট । মোট ডেলিভারির ২৬ ভাগই করেছেন স্লটে। তবুও তার বিপক্ষে তেমন সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটাররা। আইপিএলের মোস্তাফিজ কি আসলেই আনপ্লেয়েবেল ছিলেন?

    মোস্তাফিজের বোলিং স্ট্র্যাটেজিকে  দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ইয়র্কার ম্নয়তো স্লট। বেশিরভাগ ডেলিভারিই ইয়র্কার নয়তো স্লট লেংংথে পিচ করাতেন মোস্তাফিজ। ইয়র্কার মিস করলে সেটা লো ফুলটস হলেও বাকিদের চেয়ে কম রানই দিয়েছেন তিনি।  ২৯% বল করেছেন ইয়র্কার। ফুলটসে ৩টি উইকেটও আছে তার। মোস্তাফিজ তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন মূল অস্ত্র কাটার দিয়ে। ডেথ ওভার কিংবা পাওয়ারপ্লে; তিনি চেষ্টা করতেন গুড লেংথ অথবা ব্যাক অফ লেংথে বল করতে। কোনোটি ওভারপিচড হলেও বল যেত সেই স্লট জোনের শেষাংশে আলাদা লাইন-লেংথের কাটারগুলোতে ব্যাটসম্যানরাও বাধ্য হতেন সামনে গিয়ে শট খেলতে। তার কাটার হয়ে উঠেছিল দুর্বোধ্য। অ্যাকশনে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না এনে স্লোয়ার কিংবা স্টক বলের দুটোই করতেন মোস্তাফিজ। অর্থাৎ বোলিং অ্যাকশন ঠিকঠাক রেখে ডেলিভারি রিলিজেই যত কারসাজি।

    ২০১৬ আইপিএলের মোস্তাফিজ ছিলেন অনন্য। তার চেঞ্জ অফ পেস ছিল দুর্দান্ত। গ্রিপ দেখে ব্যাটসম্যান হয়তো বুঝতেন কাটার আসছে, কিন্তু ধারণা ছিল না কেমন গতিতে আসছে। সেই সুযোগেই সেবার নেন ১৭ উইকেট।তবে ২০২১ আইপিএলে মোস্তাফিজের ফাস্ট আর স্লোয়ার বলগুলোর গতিতে বেশ ফারাক দেখা গেছে । গতির সাথে আপোস করায় কমেছে দ্রুতগতির কাটারের ডেভিয়েশন বা বিচ্যুতিও। ২০১৬-তে মোস্তাফিজের বেশিরভাগ কাটার উইকেটে পড়ে বাম থেকে ডান দিকে আধ মিটার বিচ্যুত হত।  কাঁধ আর বাহুর জোরে এই বিচ্যুতিটা আদায় করতেন মোস্তাফিজ। কিন্তু কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে গতির সাথে আপোস করতে হয়েছিল। ফলে কমেছিল ডেভিয়েশনও।

    এখন কাঁধের বদলে ব্যবহার করছেন নিজের কব্জি। বল রিলিজ করছেন ঠিক দরজার গোল হাতল ঘোরানোর মতো করে। আগের মোস্তাফিজের সাথে এই মোস্তাফিজের পার্থক্য; কব্জি বাঁকানোতে এরই সুবাদে। স্পিনারদের মতো হাওয়ায় ভাসানো ওভারস্পিনও পাচ্ছেন বেশি। উইকেটেও দারুণ গ্রিপ করছে ডেলিভারিগুলো। তাই গতি কমলেও বদলানো রিলিজ গ্রিপ, কাটার দিয়ে আদায় করা বিচ্যুতি মিলিয়ে মোস্তাফিজ এভাবেই হয়ে উঠেছেন সেরাদের একজন।