• ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    রেকর্ড, না হওয়া রেকর্ডের প্রিমিয়ার লিগ

    রেকর্ড, না হওয়া রেকর্ডের প্রিমিয়ার লিগ    

    ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের প্রথম পর্ব শেষ। ফিরে তাকালে অনেক গল্পের খোঁজ মিলবে...


     

    দারুণ রাজ্জাক, অভাগা রাজ্জাক

    পরিসংখ্যান বলবে, ৭ ম্যাচ খেলে ২১ উইকেট নিয়ে প্রথম পর্বের পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি। এই পরিসংখ্যানটাই আব্দুর রাজ্জাকের কিংবা তাকে নিয়ে আফসোসটা বাড়িয়ে দেবে। যে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় চোট পেয়ে ছিটকে গেলেন, সেদিনও নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট! কলাবাগানের সঙ্গে সে ম্যাচটা অবশ্য হেরেছিল শেখ জামাল। রাজ্জাক ছিটকে গেলেন, অধিনায়কত্ব পেলেন রাজিন সালেহ। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট আরাফাত সানির, ২৮টি। তিনি খেলেছেন ১১টি ম্যাচই।


     

    ‘আহত অবসর’

    ব্যাটিংয়ের সময় চোটের কারণে লিগে ৭টির বেশী ম্যাচ খেলতে পারেননি রাজ্জাক। ব্যাটিং করতে করতেই চোট পেয়েছেন, ‘আহত অবসর’ হয়ে উঠেও গেছেন। তবে জহুরুলের এই ঘটনা একবার নয়, ঘটে দুইবার! ৩ মে পারটেক্সের সঙ্গে ম্যাচে চোট পেয়ে উঠে গিয়ে মিস করলেন সেঞ্চুরি। ৯৬ রানে ব্যাটিং করছিলেন তখন। প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে আবার উঠে গেলেন চোট পেয়ে, এবার রান ছিল ৬৬। দুইটি ম্যাচই জিতেছে জহুরুলের গাজী গ্রুপ, প্রথমটিতে ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন ‘আহত’ জহুরুল। মূল কারণটা অবশ্যই গরম, আর এর ফলে হওয়া ‘ক্র্যাম্প’। এই গরমে যখন সবার নাভিশ্বাস অবস্থা, তখন ক্রিকেটারদের খেলতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এক টুর্নামেন্ট!

     

     

    তিন অংক পেরিয়ে রেকর্ডের পথে

    প্রথম দিন ফতুল্লায় খেলাঘর ভেঙে দেয়া সেঞ্চুরি করেছিলেন আবাহনীর মোসাদ্দেক হোসেন। আর প্রথম পর্বের শেষদিন মোহামেডানের শামসুর রহমান ও রনি তালুকদার সেঞ্চুরি করলেন শেখ জামালের সঙ্গে। সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে হয়েছে ২৭টি সেঞ্চুরি। লিটন দাস, নাঈম ইসলাম, জুনায়েদ সিদ্দিক, নাজমুল হোসেন ও রবিউল ইসলাম করেছেন ২টি করে সেঞ্চুরি। ১টি করে সেঞ্চুরি আছে ১৭ জনের। তামিম ইকবাল, রাফাতুল্লাহ মোহাম্মদ, মোসাদ্দেক, আল-আমিন, রনির আবার কোনো ফিফটি নেই, আছে শুধু সেঞ্চুরিই। রকিবুল হাসানের সেঞ্চুরিটি আবার লিস্ট এ-তে বাংলাদেশের শুধু নয়, বাংলাদেশের মাটিতেই সর্বোচ্চ স্কোর। তিনি ভেঙ্গেছিলেন কদিন আগেই তামিমের ১৫৭ রানের রেকর্ড। এনামুল হক ও জাকির হাসানের আছে সর্বোচ্চ ৫টি করে ফিফটি, দুজনের কেউই আবার দেখেননি সেঞ্চুরির মুখ।


     

    নড়বড়ে নিরানব্বই

    দুজনই ম্যাচ জিতিয়েছেন, দুজনই হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। তবে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ইমতিয়াজ হোসেন ও রাজা দারের আক্ষেপটা একটু বেশিই! প্রাইম দোলেশ্বরের ইমতিয়াজ ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে কাটা পড়েছিলেন ৯৯-এ, আর রুপগঞ্জের রাজা সেঞ্চুরিটা পাননি পারটেক্সের সঙ্গে। দুজনের দলই উঠেছে সুপার লিগে, সেই আক্ষেপটা ঘোচানোর সুযোগটা কি পাবেন তারা?



    বিফলা রান

    শীর্ষ দশ রান সংগ্রাহকের ৫ নম্বরে আছেন রবিউল ইসলাম(৪৫৭), ৭ নম্বরে অমিত মজুমদার(৪৩৩)। দুজনই একই দলের, খেলাঘর। তবে প্রিমিয়ার লিগে এবার আর দেখা যাবে না দুজনের ব্যাটিং, খেলাঘর যে ব্যর্থ হয়েছে সুপার লিগে উঠতে। শুধু তাই নয়, উল্টো খেলতে হবে রেলিগেশনের প্লে-অফে। সব মিলিয়ে ৫৭৮ রান নিয়ে তালিকার শীর্ষে আবাহনীর লিটন দাস, এরপর ৫২৭ রান নিয়ে আছেন রুপগঞ্জের নাঈম ইসলাম।


     

    কিপটে বোলিং

    ১১ ম্যাচে ১৭.৬৪ গড়ে ১৭ উইকেট। সনজিত সাহার এই পরিসংখ্যানের চেয়েও চমৎকার হচ্ছে তাঁর ইকোনমি। ৭৮.৫ ওভার বোলিং করে ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৩.৮০ রান। কমপক্ষে ৩৫ ওভার বোলিং করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে তাঁর ইকোনমিই সবচেয়ে ভাল। তবে রবি বা অমিতের মতো সুপার লিগে দেখা যাবে না সনজিতকেও,  তাঁর দল কলাবাগানও যে থেমে গেছে প্রথম পর্বেই!



    অধিনায়ক কে?

    প্রথম ৫ ম্যাচে কলাবাগানকে নেতৃত্ব দিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কলাবাগান জিতল শুধু ১টি ম্যাচ। এরপর সরিয়ে দেয়া হলো তাঁকে, অধিনায়ক হলেন তুষার ইমরান। তিনি নেতৃত্ব দিলেন ৪ ম্যাচ, জয় ওই একটিই। তুষারও সরলেন, এলেন মুক্তার আলী। তার সাফল্য আবার শতভাগ, শেষ দুই ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দল জেতালেন দুইবারই! অধিনায়কত্ব নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চলেছে খেলাঘরেও। নাফিস ইকবালই ছিলেন বেশীরভাগ ম্যাচে। নেতৃত্ব দিয়েছেন মাসুম খানও। এক ম্যাচের জন্য খেলাঘরের অধিনায়ক ছিলেন শ্রীলঙ্কান সুরাজ রনদিভও। মাহমুদউল্লাহ অধিনায়ক ছিলেন আবাহনীর, মুশফিক রুপগঞ্জের, নাসির গাজী গ্রুপের, তামিম মোহামেডানের। তবে জাতীয় দলের সাথে সফরে যাওয়াতে অধিনায়ক বদলাতে হয়েছে এসব দলকেও।

     

    হ্যাটট্রিকের বেদনা!

    ১১ ম্যাচ। একটিতে জয়। পরাজয় বাকি ১০টিতেই। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের জয়টি পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে। সেই পারটেক্সও পয়েন্ট তালিকায় ভিক্টোরিয়ার ওপরে! ক্লাবের নামের প্রতি কী উপহাসটাই না করলো তাদের পারফরম্যান্স। অধিনায়ক মনিরের দুঃখটাও বেশী বোধহয়! নিজেদের শেষ ম্যাচে ব্রাদার্সের কাছে ১ রানে হেরেছে তার দল। এ ম্যাচে ৫টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, ছিল হ্যাটট্রিকও! প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমে একমাত্র হ্যাটট্রিক তাঁরই।

     

    শেষদিন জমজমাট

    পাঁচ দলের সুপার লিগ নিশ্চিত। দুই দল রেলিগেশনের খপ্পড়ে পড়েছে আগেই। রুপগঞ্জ সুপার লিগে উঠবে কিনা, তা নির্ভর করছে শেখ জামাল ও মোহামেডানের ম্যাচের ওপর। মোহামেডান জিতলেই খুলে যাবে রুপগঞ্জের দরজা। মোহামেডান প্রথম ইনিংসে করলো জেতার মতোই রান! কিন্তু শেখ জামাল যে ভেবেছিল অন্য কিছু! তারা সুপার লিগে উঠলো রেকর্ড গড়েই। দর্শক রুপগঞ্জ তাই সুপার লিগেও হয়ে থাকবে দর্শক হিসেবেই! কলাবাগান বা খেলাঘরের হিসাবটা অবশ্য সোজাই ছিল। দুই দলের মাঝেই ম্যাচ, যে জিতবে, সামনের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ নিশ্চিত তাদেরই। সেখানে পাত্তা পেলো না খেলাঘর, পারটেক্স ও ভিক্টোরিয়ার সঙ্গী হলো তারাও।