যাদের জন্য সময় থেমেছিল - পর্ব ৩: তুষার চিতা ওয়াসিকি
পোস্টটি ৪৫৪৪ বার পঠিত হয়েছে৪ ঘণ্টা ধরে টানা দৌড়ে যাওয়া ওয়াসিকি অবশেষে দৃষ্টিসীমায় দেখতে পেলেন অলিম্পিক পার্ক; কিন্তু যা দেখতে পেলেন না, তা হল পার্কের ভেতরে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিতব্য সমাপনী অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। স্বেচ্ছাসেবী এবং কর্মীরা শেষ মুহূর্তের টুকিটাকি কাজ সেরে উৎসবের জন্য প্রস্তত হচ্ছেন। ম্যারাথন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ ভেবে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রানিং ট্র্যাককে ঢেকে দেয়া হয়েছে কাপড় দিয়ে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ভুলে গিয়েছিলেন এক অখ্যাত আফগান প্রতিযোগীর জিদটাকে গোনায় ধরতে, মনে করেছিলেন, অন্য অনেকের মত তিনিও রেস থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ওয়াসিকি যখন স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী হলেন, ততক্ষণে অলিম্পিক কর্মীদের মধ্যে হঠাৎ করেই খবরটা ছড়িয়ে পড়েছে, এক অলিম্পিয়ান কিছুক্ষণের মধ্যে স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করবেন! আয়োজকরা খবর পেয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন, রুট পরিবর্তন করে ওয়াসিকিকে রেস শেষ করতে হবে নিকটবর্তী একটা অনুশীলন ট্র্যাকে। কিন্তু বেঁকে বসেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
আফগানিস্তানের একমাত্র অলিম্পিয়ান কি বাকি সবার মত স্টেডিয়ামে দৌড় শেষ করার সুযোগ পাবেন? নাকি অসম্মানজনক এবং বেমানানভাবে অনুশীলন ট্র্যাকেই শেষ হবে তাঁর দৌড়?
শেষের গল্পটা কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি রেখে শুরুর গল্পটা একটু দেখে আসা যাক!
সময়কাল ১৯৯৬, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় বসেছে ২৬তম অলিম্পিকের আসর। ১৮৯৬ সালে ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তিনের নেতৃত্বে আধুনিক অলিম্পিকের সূচনার ঠিক ১০০ বছর পরে হচ্ছে এবারের আয়োজন। তাই মাহাত্ন্যটা অন্যরকম, অলিম্পিকটা পরিচিত হয়েছে শতবর্ষী অলিম্পিক হিসেবে।
বরাবরের মতই ট্রেডমার্ক ইভেন্ট পুরুষদের ম্যারাথন দিয়ে পর্দা নামছে ১৯শে জুলাইতে শুরু হওয়া গেমসের। এবার ৭৯ দেশের ১২৪ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছেন ২৬.২ মাইল দৈর্ঘ্যের রেসে। কিন্তু ৪ঠা আগস্টের সকালের আবহাওয়াটা বেশ প্রতিকূল। তাপমাত্রা প্রায় সহনীয় থাকলেও আর্দ্রতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে প্রচণ্ড গরমে রীতিমত হাঁসফাঁস করছেন অ্যাথলেটরা।
পরিষ্কার ফেবারিট না থাকায় ম্যারাথন জেতার সুযোগ আছে যে কারোরই। অথচ শুরুর আগেই পদক জেতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে আফগানিস্তানের আবদুল বাসের ওয়াসিকির। অলিম্পিক শুরুর মাত্র দু'সপ্তাহ আগে চোট পাওয়ায় একটুও অনুশীলন করতে পারেননি এই কয়েক দিন। তারপরও জার্মান অভিবাসী তরুণ দেশের সম্মান রাখতে নেমেছেন ম্যারাথনে।
দৌড়ের আগে ভাগ্য যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলেন আরেকবার। নইলে এমনিতেই চোটাক্রান্ত বাসের মাইল তিনেক দূরত্ব পেরোনোর পর হঠাৎ করেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে কাবু হয়ে পড়বেন কেন? কিন্তু এরপরও হার না মেনে অবাধ্য ২০ বছর বয়সী যুবক যেন ধনুর্ভঙ্গপণ করে ফেললেন, যেভাবে হোক দৌড় শেষ করেই ছাড়বেন। অর্ধেক বিশ্ব পাড়ি দিয়েছেন কি কেবল বসে বসে অন্যদের অংশগ্রহণ দেখার জন্য? ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়, যাক! অলিম্পিকে আফগানিস্তানকে চেনানোর মহা দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন যে তিনি!
রেস যখন মধ্যপর্যায়ে, আবদুল বাসের ওয়াসিকি তখন বাকি সবার চেয়ে প্রায় ২০ মিনিট পিছিয়ে গেছেন। ইতিমধ্যে প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত হয়ে ১৩ জন অ্যাথলেট সরে দাঁড়িয়েছেন রেসের মাঝেই, কিন্তু ওয়াসিকি? না, সম্ভব নয়। নিদারুণ যন্ত্রণা হওয়া সত্ত্বেও ব্যথার কাছে আত্মসমর্পণ না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। রেস এগোতে থাকলো, ওয়াসিকি থাকলেন পেছাতে, একটা সময় সামনে শুধু ফাঁকা রাস্তা, আর কোন প্রতিযোগী দৃশ্যমান দূরত্বেও নেই।
লিকলিকে শরীরের ওয়াসিকির গতি ধীর থেকে ধীরতর হল, কিন্তু ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়েও থামছেন না, জগিং করার চেয়ে টলছেন বেশি, হাঁটার চেয়ে হোঁচট খাচ্ছেন বেশি, তারপরও নিষ্ঠুর এই যুদ্ধ শেষ করার অভিপ্রায়ে রাস্তায় আঁকা নীল রঙের লাইন অনুসরণ করে যাচ্ছেন।
ওদিকে রীতিমত রুদ্ধশ্বাস শেষ কয়েক সেকেন্ডের চমকে কোরিয়ার লি-বং জু আর কেনিয়ার এরিক ওয়াইনাইনাকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকান জোসিয়া থুগওয়ানে ফিনিশিং লাইন ছুঁলেন ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটে। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে স্বর্ণ জিতে অবিস্মরণীয় করে রাখলেন নিজের প্রথম অলিম্পিক।
এখন আবার ফিরে যাই, প্রায় দু ঘণ্টা পরের দৃশ্যটায়, স্টেডিয়ামের ভেতরের জটলাতে। স্বেচ্ছাসেবকদের অটল দাবিতে শেষ পর্যন্ত টললেন আয়োজকরা। কিন্তু ট্র্যাকে নয়, বরং ট্র্যাকের চারপাশের খালি জায়গায় দৌড়ানোর সুযোগ পাবেন তিনি। সেই অংশে বিছানো কাপড় সরিয়ে ফেলা হল দ্রুত।
ওয়াসিকি স্টেডিয়ামের দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে চূড়ান্ত দুই ল্যাপ শেষ করতে শুরু করেছেন। দর্শক বলতে কেবল স্বেচ্ছাসেবক এবং গুটিকয়েক কর্মকর্তা। এই দৌড়বিদের পাহাড়সম সংগ্রাম আর সহনশীলতার সম্মানে স্বেচ্ছাসেবকদের দু'জন একটি সাদা ফিতায় বড় কালো অক্ষরে "আটলান্টা '৯৬" লিখে ফিনিশিং লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। আর অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য আসা বিশাল বাদক দল তাদের অনুশীলন বাদ দিয়ে বাজনা বাজিয়ে সমর্থন দিলেন আবদুল বাসের ওয়াসিকিকে। শেষ শক্তিটুকু দিয়ে রীতিমত টলতে টলতে দৌড়াচ্ছেন আফগান চিতা। ফিনিশিং পয়েন্ট স্পর্শ করেই জ্ঞান হারানো ওয়াসিকিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কার্টে করে। শেষ হয় তাঁর সুদীর্ঘ, যন্ত্রণা-পীড়িত অথচ বিজয়ের সৌরভ ছড়ানো যাত্রার।
ফটোগ্রাফঃ আটলান্টা অলিম্পিকে আবদুল বাসের ওয়াসিকি
৪ ঘন্টা, ২৪ মিনিট, ১৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে ওয়াসিকি অলিম্পিক ম্যারাথনের ইতিহাসে সবচেয়ে মন্থর টাইমিং করার রেকর্ড গড়েছেন! ১০০২ নাম্বার জার্সি পরিহিত আফগান তাঁর ঠিক আগে ১১০তম অবস্থানে শেষ করা প্রতিযোগীর চেয়ে সময় বেশি নিয়েছেন প্রায় ৮৫ মিনিট বেশি।
কিন্তু ঘণ্টা দেড়েক পর কিছুটা সুস্থ হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে টগবগে তরুণ যখন দুনিয়াকে জানালেন মনের ভেতরের না বলা কথাগুলো, তখন পৃথিবীর শীতলতম হৃদয়ের অধিকারী মানুষটিও হয়ত ভুলে যাবেন হিসেবের খাতাটা আরেকবার উল্টে দেখতে -
“I am Baser Wasiqi, and I am from Kabul. I represent my country to the world...to see... that Afghanistan is living, has not died, after 16 years...of war. It is not important to be first, second or 20th, it is important to come here and finish."
এরপরের কথাগুলোও নাড়িয়ে দেবে যে কাউকে। ঘৃণামুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখা ওয়াসিকি পরমুহূর্তেই ব্যস্ত হলেন মানব ধর্মের প্রচারেঃ “We are not different, not black and white, not Muslim and Christian. We are all people in Atlanta”
শান্তি বাহক তুষার চিতা
১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করা ওয়াসিকির অনন্য সংগ্রামের গল্পটা শুরু হয়েছিল, মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই। ১৯৭৯-তে শুরু হওয়া সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের প্রকোপে দেশটা তখন মৃত্যুপুরী। রকেট লঞ্চার, লুকিয়ে থাকা স্নাইপারের গুলি আর মাটিতে যত্রতত্র পোঁতা মাইনের আঘাতে প্রাণ যাচ্ছে নির্বিচারে। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচতে পালিয়ে ছোট্ট ওয়াসিকিকে নিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছান বাবা-মা। আর দেশের রক্তাক্ত মাটিতে রেখে আসেন চিরতরে হারানো দাদা-দাদীসহ অনেক আত্মীয়কে।
সৌদি আরব থেকে ১২ বছর বয়সে অনেক স্বদেশীর পথ অনুসরণ করে আশ্রয় নেন জার্মানিতে। অ্যাথলেট হওয়ার শুরুটা সেখানকার রাস্তাতেই।
এক নার্সিং হোমে খন্ডকালীন চাকরি করতে থাকার পাশাপাশি অ্যাথলেট হওয়ার সাধনাটাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়াসিকি। জার্মানিতে তখন চাকরির বাজারটা প্রকট আকার ধারণ করেছে, এজন্য সাধারণ জার্মানরা দায়ী করছেন অভিবাসী সম্প্রদায়কেই। হঠাৎ একদিন অনুশীলনরত অবস্থায় দুই বেকার জার্মানের প্রচণ্ড মারধোরের শিকার হন। তাদের নির্মম পিটুনিতে হাত তো ভাঙ্গেই, বাম চোখ প্রায় চিরতরে হারাতেই বসেছিলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ চোখে দেখতে পারেননি, টানা কয়েক মাস ভর্তি থাকতে হয় হাসপাতালে।
কিন্তু অদম্য ওয়াসিকি সুস্থ হয়েই নামেন অনুশীলনে। ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখছিলেন টেলিভিশনে, অলিম্পিক প্যারেডে ঐতিহ্য অনুযায়ী সর্বপ্রথমে গ্রীস দলের প্রবেশের পরেই বর্ণানুক্রমে প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তান প্রবেশ করে স্টেডিয়ামে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলেন, দল কোথায়! কোনো আফগান অ্যাথলেটই নেই অলিম্পিকে। কেবল এক কর্মকর্তা দেশের পতাকা বহন করে হাঁটছেন। মন খারাপ করা সেই ঘটনার পরেই ১৯৯৬ অলিম্পিকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার তাড়না থেকে শুরু করলেন পুরোদমে অনুশীলন।
তখন বয়স মাত্র ১৬, বয়সের ঝামেলা এড়ানোর জন্য মিথ্যা জন্মতারিখ দিয়ে অংশ নিলেন জীবনের প্রথম ম্যারাথনে। হামবুর্গের সেই ম্যারাথনে ৩ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নিয়ে বেশ কষ্টে শেষ করলেন। এরপর বার্লিন ম্যারাথনে দৌড়ালেন, টাইমিং কমে এসে দাঁড়ালো ২ ঘণ্টা ৩৩ মিনিটে।
এরপর অলিম্পিকে সাময়িক বরখাস্ত থাকা আফগানিস্তান অলিম্পিক কমিটির কাছে জানালেন আটলান্টা গেমসে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার আর্জি। আর নিজের টাইমিং এর বদৌলতে সহজেই পেরোলেন কোয়ালিফিকেশন।
তারপরই দুঃস্বপ্নের শুরু। আফগান কর্মকর্তারা বাধ্য করলেন নিজের প্রিয় রানিং শু বাদ দিয়ে, স্পন্সরের পছন্দমত শু পরতে। আফগান নবিশ কর্মকর্তারা অলিম্পিকে যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইস্যু করতেও পাকালেন ঝামেলা, সেই হ্যাপা সামলালেন নিজেই সব দায়িত্ব নিয়ে।
তারপর নিবিড় অনুশীলন, অলিম্পিকের ঠিক আগে ইনজুরি, আর সেই ঐতিহাসিক ম্যারাথন – পরের গল্পটা জেনে গেছেন ইতিমধ্যেই।
আটলান্টা অলিম্পিকের পর এক শিকাগো প্রবাসী চাচার আমন্ত্রণে বসবাস শুরু করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তার শিক্ষার সবরকম খরচও যোগান সেই চাচা। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে‘সংগঠন ও নেতৃত্ব’ এবং ‘রাজনৈতিক বিজ্ঞান ও ব্যবসা’ বিষয়ে আলাদা করে মাস্টার্স সম্পন্ন করা ওয়াসিকি চান বিশ্বকে শান্তির জায়গা বানাতে।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায়, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলার পর। ওয়াসিকিকেও মেলানো হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে। ফোনে প্রতিহিংসাপরায়ণ হুমকি পান, সাথে শিকার হন বিদ্রূপাত্নক আচরণ আর বাঁকা চোখের অগ্নি দৃষ্টির। তার উচ্চারণভঙ্গি এবং আরব নামের জন্য জাতিগত বিদ্বেষের বলি হন। এমনকি শিকাগো ম্যারাথনের সময়েও তার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ চলতেই থাকে। দুঃখ পেলেও হতাশ না হয়ে বলেছিলেন -
“My name is Arabic but my life is not Arabic. I have an accent. I thought that standing on the start line in the Atlanta marathon with five minutes to go was the toughest, most nervous thing I had ever done. Now it is tough again with people looking. You have to sense what people are thinking and that is a different challenge."
শেষটা কেমন?
১৯৯৬ অলিম্পিকে বদলে যাওয়া জীবনটা ভালোই যাছিল ওয়াসিকির। কিছুদিন পরেই চমক দেখিয়ে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিটে জিতেছিলেন গটর্ফ ম্যারাথন। কিন্তু তালেবান শাসনের কারণে ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক আসরে আফগানিস্তান হয় নিষিদ্ধ। ওয়াসিকি হাল ছাড়েননি, মার্কিন মুল্লুক থেকেই অনুশীলন আর যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন আফগান অলিম্পিক কমিটির সাথে। সিডনি অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন ওয়াশিংটনের অস্ট্রেলিয়ান এমব্যাসির সহায়তায় পৌঁছালেন অভিজ্ঞ আফগান, কিন্তু জানলেন নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এখনো। তাই আফগানিস্তানের কেউ অংশ নিতে পারবেন না। তারপরও জেদি দেশপ্রেমিক তিন দিন ধরে আইওসি কর্মকর্তাদের সাথে পেছন পেছন ছুটাছুটি করলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। ২০০২ সালে নিষেধাজ্ঞাদেশ উঠানোয় আবার ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকের মাধ্যমে অলিম্পিকে ফেরে আফগানিস্তান কিন্তু ফেরা হয়নি ওয়াসিকির। কারণ, এরপরে কখনো ম্যারাথনে অ্যাথলেটই পাঠাননি আফগান অলিম্পিক কমিটি। ২০০৭ সালে অবসর নেন ওয়াসিকি।
ম্যারাথন জেতার চেয়েও অংশ নেওয়াকে বড় করে দেখা আবদুল বাসের ওয়াসিকি অবসরের পর নেমেছেন শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশনে। নিজেকে বিশ্বনাগরিক ভাবা ওয়াসিকি বিশ্বাস করেন, তার দেশ একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জার্মানি এবং আফগানিস্তান।
আফগানিস্তান ও তালেবান শাসনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখেছেন বই; যেখানে তালেবানরা অন্য মানুষকে কি চোখে দেখে, আফগানিস্তানের ইতিহাস, রুশ আগ্রাসন, সাধারণ শিক্ষা এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্পর্কেও উল্লেখ আছে বিস্তারিতভাবে।
১৯৯৬ সালের একই সাথে করুণ এবং স্মরণীয় দিনটার আগে-পরে কোন অলিম্পিয়ানই সম্ভবত টলতে টলতে দৌড় শেষ করা ওয়াসিকির ধারণ করা অলিম্পিক স্পিরিটের উচ্চতায় উঠতে পারেননি। পদক জয়ের সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও প্রচণ্ড ব্যথা, যন্ত্রণা আর চোট নিয়ে রেস শেষ করে দেখিয়েছিলেন, পদক না জিতলেও, সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন তিনি।
আফগানিস্তানের জাতীয় প্রাণী তুষার চিতার মত ক্ষিপ্রতা হয়তো ছিল না; কিন্তু প্রমাণ করেছিলেন, হৃদয়টা তাঁর সবসময়ই তুষার চিতার চেয়েও দৃঢ়, মজবুত আর অদম্য সাহসে পরিপূর্ণ!
- 0 মন্তব্য