• টেবিল টেনিস

হাউস কমন রুমের স্মৃতিতে ফেরার দিন!

পোস্টটি ৩৯১৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বর্ষার বিকেলে সূর্য তখনো পুরোপুরি অস্ত যায়নি। পশ্চিমের আকাশটা রাঙ্গা। সেসময় বনানীর আতাতুর্ক টাওয়ারের পাঁচ তলায় চলছে পঞ্চাশোর্ধ্ব দুই দলের টেবিল টেনিস ম্যাচ। 'ওরওয়া টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট ২০১৭' -এর শতদল পর্যায়ের ফাইনাল। টানটান উত্তেজনায় ভরা ফাইনালে প্রথম সেট ১১-৯ পয়েন্টে জিতে নিল ১৯৭৫ ব্যাচ। তবে তারপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ১৯৮৫ ব্যাচ। প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই স্ব-ঘোষিত ফেবারিটের তকমা লাগানো দলটি পরের দুই সেট ১১-৮ আর ১১-৫ ব্যবধানে জিতে ফাইনালটা নিজেদের করে নেয়। ১০ বছরের বড় ভাইদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলে ছিলেন সদরুল আমীন ও ওয়াহিদ সাঈদ। 

ফাইনালে হারলেও টুর্নামেন্টের সারপ্রাইজ প্যাকেজ ছিল আগের দিন তড়িঘড়ি করে রেজিস্ট্রেশন করা ১৯৭৫ ব্যাচ। খেলারই কথা ছিল না যাদের, তারাই প্রথম রাউন্ডে হারালো ১৯৮৫ ব্যাচের দলকে। তারপর সেমিফাইনালে হট ফেবারিট ১৯৮৪ ব্যাচের দলকে। ১৯৭৫ ব্যাচের দুজনের পরিচয়টা দেওয়া যাক। হেলাল উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘকাল সরকারের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেছেন কিছুদিন আগে। আর ওয়াদুদুর রহমান আছেন রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে অধ্যাপক হিসেবে। দুজনই ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়। তবে টুর্নামেন্টের আগে বেশ কয়েক বছর নাকি টেবিল টেনিসের পথই মাড়াননি! আরেহ, কোথায় আছে না, 'পুরনো চাল ভাতে বাড়ে'। ওটাই করে দেখিয়েছেন দুই বর্ষীয়ান।

 

20121447_1354218491300625_8520780579211046331_o

ছবিঃ  শতদল গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ১৯৮৫ ব্যাচ

 

20157216_1354218477967293_1238392709310552589_o

ছবিঃ  শতদল গ্রুপে রানার আপ ১৯৭৫ ব্যাচ

বলছিলাম ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের অ্যালামনাই সংগঠন - ওল্ড রেমিয়ানস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (ওরওয়া) আয়োজিত 'ওরওয়া টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট ২০১৭' এর কথা। গত ১৪ জুলাই দিনব্যাপী টুর্নামেন্টে বসেছিল প্রাক্তন রেমিয়ানদের এই মিলনমেলা। সর্বমোট ২০টি ব্যাচের ৩২টি দল অংশ নেয় প্রতিযোগিতায়। সকালে কিশলয় গ্রুপ, দুপুরে পল্লব হয়ে বিকেলে খেলা হয় শতদল পর্যায়ে। নকআউট ফরম্যাটের প্রতিযোগিতাটি ছিল শুধু দ্বৈত অর্থাৎ দলগত পর্যায়ে।

 

20121217_1354218507967290_3987605207751346562_o

ছবিঃ পল্লব গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ১৯৯২ ব্যাচ

এতো গেলো বুড়োদের কথা। 'কিছুটা কম' বুড়োদের গ্রুপ - পল্লব পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন আর রানারআপ দুটো শিরোপাই গেছে ১৯৯২ ব্যাচের কাছে। বছর পঁচিশেক আগে স্কুলের পাঠ চুকালেও খেলাধুলা অন্তঃপ্রাণ সোহেল, উতেনদের কাছে রীতিমত ধরাশায়ী হয়েছে অন্য ব্যাচের দলগুলো। আর ছোটদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০০৩ ব্যাচ, রানারআপ ২০০৮ ব্যাচ। চ্যাম্পিয়ন দলের সালমান ও জিম দুজনেই খেলেছেন জাতীয় পর্যায়ের টেবিল টেনিস। আসর জুড়ে চমৎকার নৈপুণ্য বজায় রাখা দলটি শিরোপার ধারে-কাছে ভিড়তে দেননি কাউকে।

20157102_1354218954633912_2925547745004620841_o

ছবিঃ খেলছেন শতদল গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ১৯৯২ ব্যাচের সদরুল আমীন

 

20117171_1354218951300579_1380663754875490761_o

ছবিঃ কিশলয় গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ২০০৩ ব্যাচ

''মনে পড়ে হাউস কমন রুমে টেবিল টেনিস খেলার দিন?'' - ট্যাগলাইনে আয়োজিত হওয়া এই বিশাল আসরে খেলার চেয়েও বড় কিছু ছিল বন্ধুত্ব আর ভাতৄত্ববোধের মেলবন্ধনটাই! দিনভর আড্ডা-গল্প আর কোর্টের খুনসুটি-মাতামাতিতে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশবের সেই ফেলে আসা দিনগুলোতে!

এমন আয়োজন প্রতিবছর বজায় থাকবে এই আশাই পোষণ করেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ।