• ক্রিকেট

ক্রিকেটে ঘটে যাওয়া দীর্ঘতম ওভারগুলি!

পোস্টটি ১১৫৫১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেটের পারতে পারতে কতইনা রেকর্ডের ছড়াছড়ি। একটি বল মাটিতে গড়ালেই রেকর্ড বইয়ে নতুন কোনো রেকর্ড লেখা হয়ে যায় রিতিমত। যে রেকর্ড এর কোনো শেষ নেই বললেই চলে।

২০১৪ এশিয়া কাপের ৮ম ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি পাকিস্তান। ১ম পাওয়ার প্লের ১০ ওভার শেষ হবার পর অধিনায়ক মিসবাহ উল হক বল তুলে দিলেন দলের অন্যতম সেরা বোলার আব্দুর রেহমানের হাতে। ইমরুল কায়েসকে করা রেহমানের প্রথম বলই নো বল! ফুলটস। এমনটা হতেই পারে। দ্বিতীয় বলটা রেহমান আবারো ফুলটস দিলেন এবং সেটাও নো বল ডাকলেন আম্পায়ার। পরের বল আবারো সেই ফুলটস এবং চার! আবারো নো বল! এরপর আর বল করতে দেওয়া হয়নি আব্দুর রেহমান কে। আম্পায়ার জোহান ক্লোয়েট আব্দুর রহমান কে ওই ম্যাচে বল করা থেকে সাসপেন্ড ঘোষণা করেন। আর ওই ৩টা নো বল ই কাল হয়ে দাড়ায় রেহমানের জন্য। ০-০-৮-০ বোলিং ফিগার দখল করে নেয় রেকর্ড বইয়ে। এরপর আর তাকে দেখা যায়নি পাকিস্তান চানতারা খোচিত জার্সি গায়ে জাতীয় দলে।

1393980396483আব্দুর রেহমানের দেওয়া নো বল (ছবি : Fox Sports)

সময়টা ২০০৯। জিম্বাবুয়ে দল বাংলাদেশ সফর করছে। আগের ম্যাচেও অলরাউন্ডার ডলার মাহমুদের দারুণ বোলিংয়ে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ডলার নিয়েছিলেন ২৮ রানে ৪ উইকেট, হয়েছিলেন ম্যাচসেরাও। পরে ম্যাচের ৪২ তম ওভারের ৪র্থ বলটি নো বল দিয়ে বাউন্ডারি খেলেন ডলার মাহমুদ ম্যালকম ওয়ালারের হাতে। পরের বল বলটি ভালই করলেন। কিন্তু শেষ বলটি কাল হয়ে দাড়ালে তার জন্য। এলটন চিগম্বুরার হেলমেট উড়িয়ে দিলেন বিধ্বংসী এক ফুলটস ডেলিভারী দিয়ে। আম্পায়ার আলিম দার ডলার মাহমুদকে দিয়ে বল করাতে দেননি। শেষ বলটি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই ম্যাচটিই ছিল নড়াইলের ডলার মাহমুদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ!

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষিক্ত বোলার ব্লেসিং মুজারবানি আজ এক ওভারে ৪টি নো বল দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে যার ভিতরে ছিল হ্যাট্রিক নো বল! বাংলাদেশের ইনিংসের ২৮ তম ওভারটি শেষ করতে মুজারাবানি কে করতে হয়েছে ১০ টি বল যেখানে ছিল ৪ টি নো বল। ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্ডিক পান্ডিয়াও তার অভিষেক টি টুয়েন্টি ম্যাচে ১১ বলে ওভার শেষ করেছিলেন!

Blessing Muzarabaniবোলিং একশনে ব্লেসিং মুজারবানি (ছবি ক্রিকইনফো)

এমন ঘটনা শুধু দু একটা নয় বরং অনেক আছে। ক্রিকেটে এমনও ওভার আছে যেটা শেষ হতে চায়নি। তারই কিছু নমুনা তুলে ধরা হয়েছে মাত্র।

ওডিআই ক্রিকেটে এক ওভার সবচেয়ে বেশি ১৭টি  ডেলিভারী দিতে হয়েছিল পাকিস্তানি বোলার মোহাম্মদ সামী কে। ২০০৪ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে মোহাম্মদ সামী দলীয় ৩য় ওভার এবং ব্যাক্তিগত ২য় ওভার শেষ করেন ১৭টি ডেলিভারীর মাধ্যমে! ওই ওভারে সামি ৭ টা ওয়াইড এবং ৪টা নো বল করেছিলেন। যেখানে বাংলাদেশের রান ৬/১ (২ ওভার) থেকে ২৮/১ (৩ ওভার) রানে গিয়ে দাড়ায়। ওই ওভার থেকে রান আসে ২২টি। এই ওভারটি ই আন্তাজার্তিক ক্রিকেটের দীর্ঘতম ওভার! অথচ সামীর আগের ওভারটা ছিল উইকেট মেডেন!

IndiaTv45ff7d_sami-finalমোহাম্মদ সামী (ছবি ক্রিকইনফো)

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ওডিআই ম্যাচ ২০০৫।
ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলটা করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন কিউই বোলার ড্যারেল টাফি। ইনিংসের ১ম পরিশুদ্ধ বলটি ডেলিভারি দেওয়ার আগে ৬টি ডেলিভারী দিয়েছিলেন তিনি যার ভিতরে ছিল ৪টা নো বল এবং দুটো ওয়াইড বল। নো বল চারটি ছিল আবার টানা নো বল! ওই ওভারটি শেষ করতে ড্যারেল টাফিকে করতে হয়েছিল মোট ১৪টি ডেলিভারী যার প্রথম দুই বল হইতে ১০টা ডেলিভারী দেওয়া লেগেছিল টাফির যে ১০ বলের মাত্র ২টা ডেলিভারী শুদ্ধ ছিল বাকি ৮টি বলের ৪টি ওয়াইড ও ৪টি নো বল ছিল। যদিও শেষ ৪টি বল ছিল ডট। ওই ওভারটি শেষ করতে ড্যারেল টাফি যতটা না হাঁপিয়ে উঠেছিলেন ঠিক ওই ওভারটা মোকাবেলা করতে এ্যাডাম গিলক্রিষ্ট ততটা অধৈর্য্য ভোগ করছিলেন।

Daryl Tuffy 14 Ball Overড্যারেল টাফির সেই বোলিং একশন (ছবি : ফক্স স্পোর্টস)

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী বোলার কার্টলী এ্যামব্রুজ তার একটি ওভার শেষ করেন ১৫ বলে! টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের যেটা কিনা সবচেয়ে দীর্ঘতম ওভার হিসেবে রেকর্ড বুক দখল করে নিয়েছে। ১৯৯৭ সালের ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফির একটি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থ টেস্টে ১৫ বলে এ্যামব্রুজ তার ঐতিহাসিক ওভার শেষ করেন যে ওভারে ছিল রেকর্ডস ৯টি নো বল যেটা কিনা ক্রিকেট ইতিহাসের নজীরে নাই! ওই ওভারে রান দিয়েছিলেন ২২টি। সবগুলো নো বলই ছিল ওভারস্টেপিং এর নো বল। ওই ওভারটি শেষ করতে কার্টলী এ্যামব্রুজ সময় নেন ১৩ মিনিট! কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? পরের ওভারে এ্যামব্রুজের হাতে আবার বল তুলে দেওয়া হয়। আর ওই ওভারেও নো বল দেন ৬টি!

ambrose-1       এ্যামব্রুজ ও ওয়ালস (ছবি : Getty Images)

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪টি টেস্ট ও ৮ টি ওডিআই ম্যাচ খেলা রবার্ট ভ্যান্স গড়েছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম ওভার। ঘটনা নিউজিল্যান্ডের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ঘটেছিল। মূলত তিনি বোলার ছিলেন না। ওয়েলিংটন ও সেন্টারবুরির মধ্যকার ম্যাচ চলছে। শেষ দিনের বাকি আছে মাত্র ২টি ওভার। সেন্টারবুরির জিততে দরকার ৯৬ রান। ওই সময়ে দলীয় অধিনায়ক পার্টটাইম বোলার রবার্ট ভ্যান্স এর হাতে। আর তখন রবার্ট ভ্যান্স যা করলেন সেটা রিতিমত মহাকাব্যিক। রবার্ট ভ্যান্স এর ১ম ১৭ ডেলিভারীর ১৬টি ডেলিভারী ই ছিল নো বল! ওই ওভার শেষ হয় ২২ বলে! আর ওই ওভারে ভ্যান্স কয় রান দিয়েছিলেন জানেন? ৭৭ রান! সঙ্গে দিয়েছিলেন মোট ১৭টি নো বল এবং হজম করেছিলেন ৮টি ছক্কা! শেষ ওভারে সেন্টারবুরির জিততে দরকার ছিল ১৯ রান। প্রথম ৫ বলে তারা ১৮ রানও তুলে ম্যাচ যখন টাই করল তখন শেষ বলে জিততে দরকার ছিল মাত্র ১ রান। কিন্তু শেষ বলটা ব্যাটসম্যান ডিফেন্সিভ খেলে না জিতেই একটা ঐতিহাসিক ওভার শেষ করতে দেন। 

Robert vanceছবিতে ব্যাটসম্যান রবার্ট ভ্যান্স (ছবিঃ ক্রিকইনফো)

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজীর আরো আছে যেটা এখানে লিখে শেষ করা যাবেনা। ইয়র্কশায়ারের বোলার এডবাস্টনে মিডলসেক্সের বিপক্ষে ১১ নো বল ও ১ ওয়াইডে ১৮ বলে ওভার শেষ করেন ১৯৮২ সালে। ১৯৩৪ সালে ইংলিশ বোলার গাবি এ্যালেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩ বলে (৪ নো বল, ৩ ওয়াইড) ওভার শেষ করেন। ২০০১ সালে লর্ডসে সমারসেট ও লিচেস্টারশায়ারের মধ্যকার খেলায় স্কট বসওয়েল ১৪ বলের ওভার করেন। ২০১৩ সালে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়েস্ট জনের হয়ে সাউথ জোনের বিপক্ষে অভিষেক নায়ার নামের এক বোলার লিস্ট এ ক্রিকেটে ১৭ বলে (১০ ওয়াইড ও ১টি নো বল) ওভার শেষ করেন। এই ওভারগুলো কখনো সখনো শেষ হতে চায়না। আর যখন শেষ হয় তখন সেটা হয়ে যায় রেকর্ড যেটা মানুষ মনে রাখে অনন্ত কাল ধরে।