• ফুটবল

তাঁদের দুঃখগাথা বিশ্বকাপ (পর্ব ২)

পোস্টটি ১৪৬৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
দিনক্ষন পেরিয়ে আর দশ দিনের ও কম সময় ফুটবলের মহাযজ্ঞ শুরু হতে। একবিংশ শতাব্দীর এ একবিংশ ফুটবল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে জেনে নেই ফুটবল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ট্রাজেডি টি। "টোটাল ফুটবল " পশ্চিম জার্মানিতে বসা ১৯৭৪ এর বিশ্বকাপে হল্যান্ড গিয়েছিলো এক অদ্ভুত দল নিয়ে। ফুটবলের অতীত সব ধ্যান ধারনাকে রিতিমতো বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সম্পূর্ন নতুন ধারার এক ফুটবল খেলা শুরু করলো ডাচরা। যার নাম "টোটাল ফুটবল"। দলের কারও কোন নিদ্দিষ্ট পজিশন নেই, আক্রমন ও রক্ষন সবাই এক সাথে ই সামলাবে নতুন ধারার এই ফুটবলের নাম ই টোটাল ফুটবল। তাইতো এ বিশ্বকাপ শুরুর আগে হল্যান্ড কে চ্যাম্পিয়ন ধরে ই শুরু হয় বিশ্বকাপ। কিন্তু বিধি বাম, ৫৪ এর বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির মতো আবার ও তা হতে দেয়নি জার্মানরা। রুখে দিয়েছিলো সেই অবিশ্বাস্য ডাচদের ও!! অথচ এ বিশ্বকাপটি হল্যান্ডের না জেতার কোন কারন ছিলো না। অভূতপূর্ব টোটাল ফুটবলের বিস্ময়কর প্রদর্শনীতে তারা পুরো বিশ্বকে ই বিমোহিত করেছিলো... এখন পর্যন্ত বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে আলোড়ন আর জাগরনের নাম টোটাল ফুটবল। এই টোটাল ফুটবলের জনকের নাম "রাইনাস মিশেলস্"। ডাচ কোচকে এই নামটি দিয়েছিলো এক সাংবাদিক । তবে মিশেলস্ এই ফুটবলটাকে বলতেন "প্রেসিং ফুটবল"। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে "আয়াক্স আমস্টারডামে" এ মহড়া চালিয়ে যান মিশেলস্। তবে ইয়োহান ক্রুইফ,ইয়োহান নিসকেন্স,অঁরি হানদের মতো ফুটবলার ছিলো বলে ই টোটাল ফুটবল কার্যকর হয়েছিলো। টোটাল ফুটবলে যদিও কারও নির্দিষ্ট ভূমিকা বা পজিশন নেই তার পর ও ক্রুইফ ই ছিলেন দলের প্রানভোমড়া। মাঠে তার উপস্থিতি ছিলো রাজার মতো। বল পায়ে এমন এক অদ্ভুত টার্ন আবিষ্কার করেছিলেন , যাতে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা কিছু বুঝে ওঠার আগে ই পিছনে পড়ে যেতেন। ফুটবলে "ক্রুইফস্ টার্ন" নামে এটি এখন ও বিখ্যাত হয়ে আছে। অনেক তো ভূমিকা দিলাম দলটির, এবা না হয় তাদের বিশ্বকাপ জার্নি-টি শুরু করি... গ্রুপ পর্বে ডাচদের সঙ্গী হয়েছিলো উরুগুয়ে,বুলগেরিয়া আর সুইডেন। উরুগুয়ে আর বুলগেরিয়াকে হারিয়ে আর সুইডেনের সাথে ড্র করে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে তাঁরা। এ রাউন্ডে তাঁদের সেরা খেলাটার দেখা মিলে... আর্জেন্টাইনদের হারায় তাঁরা ৪-০ গোলে । তা ছাড়া ব্রাজিল আর প. জার্মানীকে হারায় তাঁরা ২-০ করে গোলে। হল্যান্ড যখন ফাইনালে ওঠে প্রতিপক্ষ ছাড়া কেউ ই তাদের পরাজয় কামনা করেনি।কিন্তু সেই ৫৪র হাঙ্গেরির মতো আবার ও জার্মান দেয়াল টপকানো যায়নি। হারের ধরনে ও ছিলো অদ্ভুত মিল! ফাইনালে হাঙ্গেরিয়ানদের মতো ডাচরা ও যখন নিকন্সের পেনাল্টিতে এগিয়ে যায় , জার্মানরা বলে ঠিকমতো পা ও ছোয়াতে পারে নি তখন! কিন্তু আবার ও জার্মানদের চোয়ালবদ্ধ মানসিকতার জয় হয়। ২৫ মিনিটে ব্রেইটনারের গোলে সমতায় ফেরে তারা; আর ৪৩ মিনিটের মাথায় "জার্ড মুলারের" গোলটি তো জয়সূচক ই হয়ে যায়। অনেকের ই বিশ্বাস , কৌশলে মার খেয়ে ও তীরে এসে তরি ডুবিয়েছিলো হল্যান্ড। "পেলে" তো ক্রুইফকে দোষলেন, "ক্যান (ক্রুইফ) সে সারা মাঠে ছড়িয়ে একটু বেশি বেশি খেলা দেখাতে গেলো? ওর উচিৎ ছিলো আরও একটু ধীরস্থির থাকা"। অন্তত ফাইনালের মতো ম্যাচে অতি আক্রমণাত্নক মানসিকতার সঙ্গে আপোস করতে পারলে ডাচরা ই হয়তো শেষ হাসিটা হাসতে পারতো....