• ক্রিকেট

বাবার মৃত্যু, একটি সেঞ্চুরি ও শতকোটি মানুষের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।

পোস্টটি ৩১৫০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

Sachin-Kenya_d

১৯৯৯ এর বিশ্বকাপটা শচীন টেন্ডুলকারের জীবনের একটা বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সাথে সম্পর্কিত। সেবার ভারতের বিশ্বকাপ মিশনটা শুরু হয়েছিলো খারাপভাবে। প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে হারের ধাক্কা সামলে উঠার আগেই দ্বিতীয় ম্যাচের আগেরদিন সন্ধ্যায় টেন্ডুলকারের স্ত্রী ডাঃ অঞ্জলী ম্যানচেস্টার থেকে একটা খারাপ খবর নিয়ে টিম হোটেলে আসেন। তিনি জানান কিছুদিন আগেই এনজিওপ্লাস্টি করা টেন্ডুলকারের বাবা বিখ্যাত মারাঠি সাহিত্যিক ও অধ্যাপক রমেশ টেন্ডুলকার মারা গেছেন। এই ঘটনায় পুরো ভারতীয় দল তার পাশে দাঁড়ায় এবং তিনি পরবর্তী ফ্লাইট ধরেই মুম্বাই ফিরে আসেন বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

ওদিকে শচীনবিহীন ভারতীয় দল তাদের পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সাথে লজ্জাজনকভাবে হেরে তখন  বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার শংকায় তখন কাঁপছে। সমর্থকরাও প্রিয় দলের এমন হতাশাজনক পারফর্ম্যান্সে দিশেহারা। পরের তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই তখন জয় ছাড়া সুপার সিক্সে যাওয়া সম্ভব নয়। এদিকে মুম্বাইতে যে মানুষটির অবদানকে তার ক্রিকেটার হবার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মনে করতেন সেই বাবার চীরবিদায়ে টেন্ডুলকার খুবই মুষড়ে পড়েন। নিজের শোকের পাশাপাশি দলের কথা ভেবেও কষ্ট পাচ্ছিলেন ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর। এমন পরিস্থিতে শচীনের মা তাকে সাহস দেন ও ইংল্যান্ডে গিয়ে দলের সাথে যোগ দিতে অনুরোধ করে বলেন যে এতেই তার বাবার আত্মা শান্তি পাবেন। মায়ের কথায় আশ্বস্থ হয়ে শচীন ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে।

পরের ম্যাচে কেনিয়া টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায়। দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর শচীন জুটি বাঁধেন রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে, খেলার ২১তম ওভার চলছিলো।কিছুটা ধীরে ইনিংস শুরু করলেও টমাস ওডোয়োর বলে চার মেরে আগ্রাসনের শুরু করেন শচীন। দ্রুত প্রান্ত বদলের মাধ্যমে দ্রাবিড়ের সাথে একটা শক্ত জুটি গড়ে তোলেন তিনি। দর্শনীয় কিছু কাভার ড্রাইভ আর প্যাডেল সুইপ খেলার পরে ডাউন দ্যা উইকেটে ছয় মেরে ৩৫তম ওভারে দর্শকদের বিপুল করতালির মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই ব্যাট তুলে আকাশের দিকে তাকালেন শচীন টেন্ডুলকার। যেনো সদ্য হারানো বাবাকে খুঁজলেন সেখানে।

ইনিংসের ৪৪তম ওভারে ৯৮রানে পৌঁছে যান শচীন। ইতিমধ্যে লেগ সাইডেও দূর্দান্ত কিছু শট খেলেছেন। স্টিভ টিকোলোর একটা মিডিয়াম পেসের বলকে মিড অফে ঠেলে দিয়ে শতক পূর্ণ করেই আবারো আকাশের দিকে ব্যাট তুলে ধরলেন আর সদ্য প্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করলেন সেঞ্চুরিটা। অন সাইডে কিছু মনোগ্রাহী শট আর মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে ছক্কায় ১০১ বলে ১৪০ করে অপরাজিত থাকেন এই মাস্টার ব্লাস্টার। শচীন আর  রাহুল দ্রাবিড়ের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের স্কোর হয় ৩২৯/২ ৫০ওভারে।দ্যা ওয়াল খ্যাত রাহুল দ্রাবিড় করেছিলেন ১০২রান। বিশ্বকাপে টিকে থাকার মহাগুরুত্বপুর্ন সেই ম্যাচে ভারতের জয় ৯৪রানে। যদিও সেইবারে বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্নটা পূরণ হয়নি শচীনের কিন্তু ব্যক্তিগত শোককে পাশ কাটিয়ে দলের প্রয়োজনে যে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন শচীন ক্রিকেটের ইতিহাসে তা' অসামান্য। তার সেই ইনিংসটি দারুন অণুপ্রেরণা  যেকোন মানুষের জন্যে।  

4fc01-1524540511-800