• ক্রিকেট

শুভঙ্করের ফাঁকি-১

পোস্টটি ৩২০৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 "যেহেতু ভারতে খেলা , তাই সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ফিট থাকলে এবং নতুন খেলোয়াড়েরা ঠিক থাকলে অবশ্যই ২০২৩ বিশ্বকাপে আমরা ফেভারিট"- লর্ডসে পাকিস্তানের সাথে ম্যাচের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভবিষ্যত নিয়ে নিজের মতামত কিছুটা এমনভাবেই তুলে ধরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পাকিস্তানের সাথে ম্যাচটার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল সমর্থকদের আশাও এরকমই ছিল । হয়তো অনেকের এখনও তাই।কিন্তু এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সকল ক্রিকেটারের পারফরমেন্স বিশ্লেষণ করলে সেই আশার সাথে বাস্তবতার এক দাম্ভিক সংঘর্ষে নিজের বিবেককে জড়িয়ে ফেলতে হয়।

                   এখানে আপাতত ব্যাটিংটা নিয়েই ঘেঁটে দেখি। শুরু থেকেই তাহলে শুরু করা যাক । বাংলাদেশের ভালো শুরুটা এনে দেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় তামিম ইকবালের কাঁধেই । গত চার বছর ধরে সে দায়িত্ব যথাযথ পালনও করেছেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় যেন তাঁর কাঁধ দুটো এই দায়িত্বের ভারে কুঁজো হয়ে আসে । এই বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম নয়। তাঁর রান ২৩৫, গড় ২৯.৩৭ এবং স্ট্রাইক রেট ৭১.৬৭। যেখানে তাঁর ৫০+ ইনিংস মাত্র একটি এবং তা-ও ৮৩ স্ট্রাইক রেটে! নিঃসন্দেহে এই পরিসংখ্যান আমাদের চেনা তামিমকে চেনায় না।

                   অপর প্রান্তেও স্বস্তির অবকাশ নেই। সেখানকার সমস্যা আরো গভীর। সৌম্য সরকারকে নিয়ে অনেক সমালোচনাই হয়ে এসেছে। যখন সেই সমালোচনাকে যৌক্তিক মনে হওয়া শুরু করে তখনই জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা আয়ারল্যান্ডের বোলিংয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সমালোচকদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেন। কিন্তু এই বিশ্বকাপে এসে কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে তার দুর্বলতা খুবই শোচনীয়ভাবে ধরা পড়ে। বিশেষ করে ব্যাট-প্যাডের মাঝখানে বিশাল ফাঁকা রেখে তিনি যেভাবে বোলারদের স্টাম্পে আঘাত হানার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং বোলাররাও যখন তা সাদরে গ্রহণ করে তখন তা যেন তার ব্যাটসম্যান সত্তাকেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। শুধুমাত্র ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া সবখানেই তিনি প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই তার ব্যাটিংয়ের কাজ সীমাবদ্ধ রেখেছেন । পাঠক, আপনার হতাশার দীর্ঘশ্বাস আর না বাড়াতে তার পরিসংখ্যান নাই তুলে ধরলাম। কিন্তু যখন জানবেন তিনি এই বিশ্বকাপে কমপক্ষে পাঁচ ইনিংস ওপেন করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাত্র দুজনের একজন যে কোনো ৫০+ ইনিংস খেলতে পারেননি তখনও সে দীর্ঘশ্বাস কম গভীর হবে বলে আমার মনে হয় না।                       

                      এরপর মোহাম্মদ মিঠুনকে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তার স্বভাববিরুদ্ধ একটি ইনিংস খেলার দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বল্প পরিসরে তিনি তা পালন করলেও স্বাভাবিকভাবেই তা যথেষ্ট ছিল না। তাই তিন ম্যাচ পর তাকে বসিয়ে লিটন দাশকে সুযোগ দেয়া হয়। এবং সবাই হয়তো মানবেন শুরুটা এর চেয়ে দুর্দান্ত তিনি করতে পারতেন না। উইন্ডিজের সাথে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ৬৯ বলে ৯৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে তিনি বাংলাদেশের সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন জিইয়ে রাখেন। কিন্তু তারপর তিনিও মিইয়ে যান। এর পরের চার ইনিংসে তার রান যথাক্রমে ২০, ১৬, ২২ ও ৩২ । লিটন দাশের প্রতিভা ও ক্লাস নিয়ে কারোরই কখনো কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু তার ধারাবাহিকতাটাই তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভাবিয়ে তোলে। উইন্ডিজের সাথে দুর্দান্ত শুরুর পর অমন চারটি ইনিংস তাদের সেই ভাবনার জায়গা থেকে মুক্তি দিল কই? 

                     মাহমুদুললাহ রিয়াদও শুরুটা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খুবই ঝোড়ো এক হাফসেঞ্চুরির মাধ্যমে। কিন্তু সেই ঝড় থেমে যেতেও বেশি সময় নেয় নি। মাঝে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫০ বলে ৬৯ রানের লড়াকু এক ইনিংস খেললেও বাকি টুর্নামেন্ট জুড়ে তিনি ছিলেন প্রাণহীন। যার কারণে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফিনিশার হওয়া সত্ত্বেও তার স্ট্রাইক রেট ৮৯.৭৫। তার চেয়ে কম শুধুমাত্র তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন ও মুস্তাফিজুর রহমানের ।

                    এতসব নেগেটিভের মধ্যে হয়তো কিছুটা খড়কুটো আঁকড়ে ভেসে থাকার জায়গাটা তৈরী করেছেন মোসাদ্দেক সৈকত ও সাইফুদ্দিন। দুজনের কেউই ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছুর সুযোগ পাননি। কিন্ত যা পেয়েছেন তাতেই প্রমাণ করেছেন নিজেদের সামর্থ্যের। সৈকতের ক্যামিওতেই দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৩৩০ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে জেতার মতো স্কোর পাই আমরা। যদিও তার পরিসংখ্যান হয়তো আপনাকে অন্য ধারণা দিতে পারে। কিন্তু তার ইনিংসগুলোর গুরুত্ব তা কমিয়ে দেয় না। সাইফুদ্দিনের ক্যামিও আমাদের দেয় নিউজিল্যান্ডের সাথে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মতো পুঁজি। আর ভারতের সাথে তার হার না মানা হাফসেঞ্চুরি তো এখনো সবার চোখে লেগে থাকবে। দুজনেই জানান দিয়ে রাখলেন যদি তারা আরো বেশি ব্যাটিংয়ের সুযোগ ও দায়িত্ব পান তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলকে অনেক কিছুই দিতে পারবেন তারা। আমাদের ভবিষ্যত ব্যাটিং নিয়ে স্বপ্ন দেখার একমাত্র সম্বলও আপাতত যেন তারা দুজন।  

 

 

                                                           (চলবে....)