• ক্রিকেট

ওয়ানডে ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ!!

পোস্টটি ৫৩৮৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

টেস্ট ক্রিকেটের জাকঁজমকের ভিড়ে ভিন্ন একটি সংস্করনের উদয় হবে তা হয়তোবা কেউ কোনোদিন ভাবেনি! বৃষ্টি আইনে কার্টেল ওভারে হওয়া ম্যাচ থেকে শুরু হওয়া ম্যাচের পরিবর্তিত নাম হয় একদিন এর ম্যাচ কিংবা ওয়ানডে ম্যাচ! 

১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় একদিনের ম্যাচ বা ওয়ানডে ম্যাচের পথচলা!! ঐতিহাসিক সেই প্রথম ম্যাচে দুই দলের মুখোমুখিতে সেদিন জয়টা নিজেদের করে নিয়েছিলো অজিরা। ১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৩ সালে ৩য় এবং ৪র্থ দল হিসেবে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে অংশ নেয় ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম দুই পরাশক্তি নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান! 

images - 2020-04-11T103538.792   

অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটা দেরীতেই শুরু করে ওয়ানডে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটিয় পথচলা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওয়ানডেতে পথচলাটা ১৯৮৬ শুরু হলেও আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলার মর্যাদা পায় ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন! ১৯৮৬-২০২০ দীর্ঘ ৩৪ বছরের পথচলার পথে  গৌরবময়, আবেগী, সুখ, দুঃখের সকল কিছু জানানোর চেষ্টা করবো আজকে! 

images - 2020-04-11T105814.467

চলুন ফিরে যায় ৮০ এর দশকে ; ৮০ এর দশকে অর্থাৎ ১৯৮৬-১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল একদিনের ম্যাচ খেলেছে ৫ টি । ১ম ম্যাচ ছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে। পাকিস্তানের ওয়াশিম আকরাম, ইমরান খান, আব্দুল কাদির দের নিয়ে গড়া শক্তিশালি বোলিং লাইন আপের তোপে পড়ে সেদিন বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিলো মাত্র ৯৪ রানে। পাকিস্তানের পর ৮০ দশকে বাংলাদেশ একে একে খেলে ফেলেছিলো ভারত, শ্রী-লংকার বিপক্ষে! ৮০ এর দশকে নেই বাংলাদেশের কোনো জয়!!

৯০ এর দশকের কথা; ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ মোট ম্যাচ খেলে ৩২ টি। তার মধ্যে জয় আসে ৩ টি ম্যাচে! ১৯৯০ থেকে শুরু হয় আমাদের ক্রিকেট অগ্রযাত্রার সাফল্যমন্ডিত সব কাব্য! বাংলাদেশ ক্রিকেট তখন খুজে পেয়েছিলো জাভেদ ওমর বেলিম, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাইমুর রহমান দুর্জয় এর মতো ক্রিকেটার! ৯০ এর দশকে ১৯৯৮ সালের ১৭ মে  বাংলাদেশে ওয়ানডে ক্রিকেটে ইতিহাসে আসে ১ম জয়!! ১৯৯০ এর দশকের সব চেয়ে বড় সাফল্য ছিলো আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ ১৯৯৯ এ পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ড এর সাথে জয়। এছাড়াও ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ খেলেছে ৪ টি এশিয়া কাপ।

 

১০ দশকের কথা; বাংলাদেশ ক্রিকেটের যতো উত্থান পতন সব কিছু গল্পের শুরু যেনো ১০ এর দশকে। ২০০০-২০০৯ এ বাংলাদেশ খেলে  ১৭৪ টি ওয়ানডে! আর তার মধ্যে বাংলাদেশ জয়লাভ করে  ৫২ টি ম্যাচে। বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন যারা লিডিং করছেন তাদের অধিকাংশই অভিষেক ১০ এর দশকে! ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসি মাশরাফি কিংবা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ আশরাফুল, আব্দুর রাজ্জাক, শাহরিয়ার নাফিস, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এদের সবাইকেই বাংলাদেশ দল খুজেঁ পেয়ে ছিলো ১০ এর দশকে! এই দশকে বাংলাদেশ যেনো বুনে রেখেছিলো চারাগাছ আর তা যেনো আমারা বিগত দশকে উপভোগ করলাম! এই দশকে বাংলাদেশ অর্জন করে ২০০৪ এ প্রথম ভারত বধ, ২০০৫ এ সুফিয়া গার্ডেনে ১ম অস্ট্রেলিয়া বধ, ২০০৬ এ প্রথম শ্রী-লংকা বধ, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত এবং প্রথমবারের মতো দক্ষি আফ্রিকা কে হারানো! এইরকম আরো অনেক স্মৃতিরমোঞ্চিত জয়ে টাইগাররা রাঙিয়ে ছিলো সেই দশক!!

 

ফিরে দেখে বিগত দশক ২০১০-২০২০; একটি প্রবাদ বাক্য কথিত আছে ”যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ” কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে যে সেইটা  সেইটা প্রযোজ্য নয় তা কিন্তু সব ক্রিকেটাঙ্গন সাক্ষি৷ সময় যতো যায় ক্রিকেট এবং পারিপার্শিক সব প্রযুক্তি হয়েছে সব কিছুই উন্নত৷ তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেট ও যতো দিন পিছনে পড়েছে ততো উন্নত হয়েছে। বিগত দশক টা কে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ন যুগ বলা হয় তাহলে ভুল বলা হবে মনে হয় না। কেনোনা ১৯৮৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে বাংলাদেশ ২২১ ওয়ানডে খেলে জয় পেয়েছে ৫৫ ম্যাচে। কিন্তু বিগত দশকে বাংলাদেশ ১৫৫ ম্যাচ খেলে  জয় পেয়েছে ৭৩ টি ম্যাচে! তাই বিগত সেই দশক কে বাংলাদেশ ক্রিকেট স্বর্ন্য যুগ বলা যায় বইকি!

বিগত দশকে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটের ঝুলিঁতে জমা পড়েছে সুখ, দুঃখ, আবেগ মিশ্রিত নানান ধরনের নান্দনিক ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স এবং সাফল্য! ২০১০ ইংল্যান্ড নেটওয়েস্ট সিরিজের ২য় ম্যাচে ইংল্যান্ড কে পরয়াজিত করে দশক শুরু পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশ কে! একে একে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব দেশ কে হারিয়ে রেকর্ডময় দশক। চলুন পাঠক সে দশকের স্মৃতিবিজড়িত সব ইতহাস জেনে নেওয়া যাক ;

দশক টা যে ভালো কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছিলো বাংলাদেশ তার নিদর্শন পাওয়া যায় সেই ২০১০ সালে ঘরের মাঠে নিউ-জিল্যান্ড ৪ ম্যাচ ওডিয়াইতে হোয়াইটওয়াস এর চিত্র দেখেই! এরপর ২০১১ বিশ্বকাপে তামিম, সাকিব, মুশফিক, ইমরুল দের গড়া স্কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশ নেমে ছিলো ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে। তরুন প্লেয়ারদের নিয়ে বাংলাদেশের স্কোয়াড তাদের সামর্থের প্রমান রেখেছিলো আরো আগেই। আর তাইতো ২০১১ বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ইংল্যান্ড কেও। সাথে আসরে ছিলো ২ জয়! এরপর ২০১২ সালে পাকিস্তানের মাটিতে সেই হৃদয় বিদারক এশিয়া কাপ ২০১২। গ্রুপ পর্বে এশিয়ার তৎকালীন দুই পরাশক্তি ভারত এবং শ্রী-লংকা হারিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে আবারো প্রমাণ দিয়েছিলো নিজেদের সামর্থ জানিয়ে দিয়েছিলো টাইগাররা। বুঝিয়ে দিয়েছিলো নিজেদের দিনে আমরাই সেরা! কিন্তু ফাইনালের সেই হৃদয় বিদারক ২ রানের হার বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের মন এখনো নাড়িয়ে দেয়!

images - 2020-04-11T140629.831

২০১৪ এশিয়া কাপ কাটে বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের মতো! পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বাংলাদেশের ছিলো মাত্র ১ জয়। সেই দুঃস্বপন কাটিয়ে উঠার জন্যে হলেও হয়তোবা বাংলাদেশের দরকার ছিলো একটা বড় অর্জনের। আর তাই ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি কে হারিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছিলো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে! বিশ্বকাপের পরের সময় টা যেনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যে ছিলো আশীর্বাদ এর মতো! ঘরের মাঠে টানা ৫ টি সিরিজ জিতে নিয়েছিলো টাইগাররা! ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিন আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তানের সাথে টানা ৫ সিরিজ জয়ের রেকর্ড করেছিলো টাইগাররা! ২০১৭ তে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে আসে আরো একটি বড় সাফল্য! সাকিব রিয়াদের অতিমানবীয় ২২৪ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ড কে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ খেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে! ২০১৮ এশিয়া কাপে আবারো স্বপন ভঙ্গ হয় টাইগারদের। শ্রী-লংকা, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান কে হারালেও এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ! কাটা গায়ে আরো নুনের ছিটে লাগে তখনি যখন বাংলাদেশ আবারো সেই ভারতের সাথে ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে হেরে যায়! এরপর ২০১৯ এসে সেই অধরা স্বপন পূরন হয় বাংলাদেশের। তিন বা ততোধিক দল কে হারিয়ে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ জিতে ট্রাইনেশন সিরিজ!!

এইরকম অনেক স্মৃতিবিজড়িত বাংলাদেশ ক্রিকটের ওয়ানডে ইতিহাস! সব স্মৃতি ভক্তকুলের হৃদয়ে গেথেঁ থাকবো সবসময়!! হৃদয়ের মনিকোঠায় গাথাঁ থাকবে দেশের ওয়ানডে তে সাফল্য! আর হৃদয়ে হাহাকার জাগাবে অল্পের জন্যে বাংলার ক্রিকেটে ইতিহাস হতে না পারা ম্যাচ গুলো!