গল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০৩ : ম্লান আলোয় অম্লান গল্প
পোস্টটি ১৭৫১ বার পঠিত হয়েছেগল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০১
গল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০২
বাউন্ডারি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন শাহরিয়ার নাফিস। সূর্য-প্রদীপ নিভু নিভু। সন্ধ্যের ম্লান আলোয় আধো-আলো আধো-ছায়া গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে তাঁরা। শাহরিয়ার নাফিসের সঙ্গে আছেন বরিশাল বিভাগীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ও সতীর্থ ক্রিকেটারবৃন্দও। মধ্যমাঠে চলছে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই। মোহাম্মদ আশরাফুল ছাতার মতো ফিল্ডার সাজিয়েছেন, সমস্ত ফিল্ডার দু’জন মানুষ ঘিরে দাঁড়ানো।
ক্রিকেটটা বড্ড বেইনসাফির খেলা। দু’জন মানুষের সঙ্গে ১১ জনের লড়াই? ছ্যাঃ ছ্যাঃ, এ কোনো সাম্য হলো? কোথায় সমতা বিধানের আওয়াজ তোলা মানুষেরা? তাহাদের কি চোখে পড়ে না এইসব অসমতা, অসাম্য?
শাহরিয়ার নাফিস খুব উদ্বিগ্ন হয়ে দেখছেন, ১০ ও ১১ নাম্বারের শ্বাসরুদ্ধকর টিকে থাকা। ঢাকা বিভাগের অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের ওসব দেখতে বয়েই গেছে। তাঁর চাই উইকেট, একটা মাত্র উইকেট। তবে উইকেট নিতে গিয়ে খুব ভুল করাও চলবে না। একটুখানি এদিক-সেদিক হলে হেরে যেতে পারেন তিনিও। মোটে ন’কদম দূরে দাঁড়িয়ে বরিশাল, সাজেদুল বা তারিকুল ব্যাটটা যদি কোনোরকম ঘুরিয়ে বসেন, আর বল যদি পৌঁছে যায় দড়ি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বরিশালের ক্রিকেটারদের কাছে। তাহলেই হয়েছে, জয় তো দূরের ন্যুনতম পয়েন্ট নিয়েও ফেরা লাগবে না আর তাঁর।
শেষ বিকেলের অবাক রোমাঞ্চের মঞ্চটা বড্ড দোদুল্যমান। কোনদিকে হেলে পড়বে বোঝা মুশকিল!
*****
মোহাম্মদ আশরাফুল ঢাকা বিভাগের নেতৃত্বে। শাহরিয়ার নাফিস বরিশাল বিভাগের অধিনায়ক। মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধান তাদের দু’জনকে দুইরকম অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। বছর-সূচনায় বিশ্বকাপ যাত্রায় হাবিবুল বাশারের ডেপুটি ছিলেন আগের বছর তুমুল রানের ফোয়ারা ছোটানো শাহরিয়ার নাফিস। মোহাম্মদ আশরাফুলে সেখানে দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই সংশয়। টপ অর্ডারের জায়গা হারাতে হয়েছে আফতাব-মুশফিকুর-সাকিবের কাছে। কোচ-অধিনায়ক-টিম ম্যানেজমেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দলে তোমার জন্য সাত নাম্বার বৈ অন্য কোনো জায়গা নেই। যদি খেলতে চাও, দলে থাকতে চাও, তবে সাতে খেলেই পারফর্ম করতে হবে। রান করতে হবে। নচেৎ উঠে আসছে আরো নতুন ও তরুণ প্রতিভা। ফরহাদ রেজা সুযোগের প্রহর গুণছে। যদি রান করো, থাকবে, নয়তো থাকবে না। তুমি আর অটোচয়েজ নও। সেই দিন শেষ।
বিশ্বকাপে রহস্যময় কারণে ফর্ম-হারা হলেন শাহরিয়ার নাফিস, রানে ফিরলেন আশরাফুল। বারমুডার বিপক্ষে জেতালেন, দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে গড়লেন ইতিহাস। মানুষ আবার বিশ্বাসের বসত গড়লো তাঁর উপর, আবার ‘আশার ফুল’ হয়ে ফুটলেন আশরাফুল।
সহ-অধিনায়কত্ব গেল নাফিসের। দলে জায়গাও হারালেন। হাবিবুল বাশারের স্থলাভিষিক্ত হলেন আশরাফুল। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ও দিলেন উপহার।
নিয়তির ভিন্ন দুই পথিক দুটি দলের পথিকৃৎ হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এমন এক নাটকের সম্মুখীন হবেন, কে ভেবেছিল?
*****
টস জিতে ব্যাটিং নিতে দু’বার ভাবলেন না ঢাকা-দলপতি। অথচ ভাবা কি উচিৎ ছিল না? শীতের সকালে শিশির-ভেজা পিচে সাধ করে কে চায় পেস বোলারের মুখোমুখি হতে?
মিনিট পনেরো না যেতেই আশরাফুল উপলব্ধি করলেন, কি সর্বনাশ তিনি ঢেকে এনেছেন দলের। তালহা জুবায়ের ও তরুণ সাজেদুল ইসলামের পেস, এবং আরাফাত সালাউদ্দীনের মিডিয়াম পেসে রীতিমতো নাভিঃশ্বাস উঠতে শুরু করল স্বাগতিক ঢাকা বিভাগের ব্যাটসম্যানদের। অধিনায়ক নিজেই নেতৃত্ব দিলেন ব্যর্থতার মিছিলে। লাঞ্চের আগেই তিন উইকেট নেই ঢাকার। মেহরাব হোসেন জুনিয়র ও জাভেদ ওমর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করলেও, টিকলেন না বেশীক্ষণ। লাঞ্চের একটু পর ফিরলেন জাভেদ, তরুণ মাহমুদুল্লাহও অনুসরণ করলেন তাঁকে, শামসুরও যোগ্য-সঙ্গ দিতে পারলেন না মেহরাবকে, এক পর্যায়ে মেহরাবও হার মানলেন, টি ব্রেকের মিনিট-চল্লিশেক পরেই গুটিয়ে গেল ঢাকা। স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ১৫৭ রান। তরুণ বাঁহাতি পেসার সাজেদুল ইসলামের ঝুলিতে গেল ঢাকার চার-চারজন ব্যাটসম্যান।
*****
শীতের সন্ধ্যেটা ঝুপ করে নামে। যেন আচমকা আঁধার নেমে আসে আকাশ হতে। প্রথম দিন শেষ বিকেলে কোনো বিপদ হলো না বরিশালের। দুই ওপেনারই রইলেন অপরাজিত। হান্নান সরকারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে শাহরিয়ার নাফিসের তারুণ্যদ্বীপ্ত মন। দুজনই ঢাকা বিভাগের সমস্ত প্রচেষ্টা সামলালেন দারুণ সাবধানতায়। পরদিনও বরিশালের ব্যাটিংয়ে অতি-সাবধানতা। উইকেট-আঁকড়ে থাকার কঠিন সাধনায় লিপ্ত সবাই। কিন্তু ছ’ঘন্টার সংযমে হান্নানের ৮৫ রান ছাড়া কারো ইনিংসই বড় হলো না। কলিতেই যেনো কাঁটা পড়লো ফুল, প্রস্ফুটিত হলো না।
দ্বিতীয় দিন সারা দিন ব্যাটিং করে বরিশালের সংগ্রহ ১৮৮। তৃতীয় দিন লাঞ্চের আরো ঘন্টাখানেক পর ইনিংস ঘোষণার সময় বরিশালের স্কোর দেখাচ্ছে—৩০৪, ৯ উইকেটের বিনিময়ে। লিড হয়ে গেছে ১৪৭। তালহা জুবায়ের খেলছিলেন ভালোই, সোয়া এক ঘন্টার ব্যাটিংয়ে ২৯ রান ঝুলিতে পুরেছিলেন। তাহলেও ডিক্লেয়ার কেন?
কারণ দুইটি। প্রথমত ডিক্লেয়ার করতে পারলে পয়েন্ট মেলে, আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে প্রতিপক্ষকে অলআউটের সুযোগ বঞ্চিত রাখা। অলআউট করত পারলে যে প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পায়!
বরিশাল প্রথম ইনিংস শেষেই এগিয়ে রইলো অনেকটা। ঢাকাকে অলআউট করে পয়েন্ট পেল ৪, তিনশো পেরিয়ে পেল ২, আর ঢাকাকে রাখলো অলআউট বঞ্চিত। ওদিকে লিড তো পেয়েছেই। সেটাও যোগ হবে বোনাস পয়েন্টের সঙ্গে।
*****
পৃথিবীতে কিছু কিছু ব্যাপার ঘটে যার কোনো ব্যখ্যা নেই। আপাত ধীরস্থির, শান্ত স্বভাবের জাভেদ ওমর কেন শুরু থেকে চড়াও হয়ে খেলবেন, প্রায় দেড়শো রানে পিছিয়ে দল সেই অবস্থায় কেন তিনি একের পর এক শট খেলে যাবেন, কেউ জানে না এর কারণ। মানব-মন বড়ই দুর্বোধ্য ও জটিল। কখন, কেন, কেমন আচরণ করে বোঝা মুশকিল! জাভেদ উমরের ১৫ মিনিটের ঝড় থামল রান আউটের মাধ্যমে। এরই মধ্যে পাঁচ-পাঁচটি চারে তিনি ২৪ রান তুলে নিয়েছেন। ওপেনিংয়ে প্রমোশন পেয়ে মেহরাব হোসেন জুনিয়র ইনিংস বড় করতে পারলেন না। সেই একই ভুল, বারবার। ইনিংস বড় করতে না পারা। ক্ষণিকের খামখেয়ালিপনা অথবা দুর্ভাগ্য অথবা প্রতিপক্ষের দারুণ বোলিং বা ফিল্ডিং; সম্ভাবনাময় ইনিংসের দুঃখজনক পরিসমাপ্তি।
আল শাহরিয়ার ও আশরাফুল, ঢাকার দারুণ দুই স্ট্রোকমেকার। স্ট্রোকের ঝুলি খুলে বসতে না বসতেই আউট। তৃতীয় দিনের আরো প্রায় ঘন্টা দেড়েক নির্বিঘ্নে সামাল দিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও শামসুর রহমান। লিড পেল ঢাকা। ৬ উইকেট হাতে রেখে ৮ রানে এগিয়ে তাঁরা।
খানিক দেরীতে হলেও, চতুর্থ দিনের শুরুটা চমৎকার। শীতের স্যাঁতস্যাঁতে কুয়াশা পেরিয়ে মিষ্টি রোদে ঝলমল চারপাশ। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানও দারুণ বিচক্ষণতা দেখিয়ে পার করে দিলেন প্রথম ঘন্টা। ঢাকার ইনিংসটা যখন সাবলীলতার পথে, দারুণ গতিশীল, তখনই এল বেরসিক বাঁধা। তারিকুলের সাধারণ অফ স্পিন ফেলে দিল মাহমুদল্লাহর বেল, খানিক বাদে অকেশনাল রাকিবুল হাসান ফেরালেন শামসুর রহমানকে। লিড মোটে ৫৯, চার উইকেট বাকি মাত্র।
টেইল অর্ডারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় ঢাকার স্কোর পেরিয়ে গেল আড়াইশো। লিড হলো ১১০। বরিশালের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ালো, মাত্র ১১১!
নেলসন। ১১১।
*****
মর্নিং শো’জ দ্য ডে। ডাহা মিথ্যে প্রমাণ করতেই যেন বরিশালের মাঠে নামা। বরিশালের শুরুটা কি দারুণ ছিল, আর শেষ দিনে, মধ্য দুপুরে রান তাড়ার সূচনাটা হলো দু”স্বপ্নের মতো। মাহবুবুল আলম রবিন স্রেফ ধ্বংসস্তুপ বানিয়ে ছাড়লেন। তাঁর ইনসুইঙ্গিং ডেলিভারির কোনো জবাব নেই যেন! ভেতরে ঢোকা বল যেন এই প্রথম খেলছেন তাঁরা, জীবনে কখনো, কোনোদিন ভেতরে ঢোকা বল দেখেননি বা খেলেননি! কেউ পেছনে ক্যাচ দিচ্ছেন, আর কেউ লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ছেন। ২৩ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন বরিশালের প্রথমসারির পাঁচ ব্যাটসম্যানই। মাহবুবুলেরই চার উইকেট। একটু পর গেলেন রাইসুলও, ৩৮ রানে নেই ৬ উইকেট।
আরাফাত সালাউদ্দীন বুঝে গেলেন তাঁর দায়িত্ব। বাকি কাজ সারতে হবে তাঁকেই। এবং উইকেটরক্ষক শাহীন হোসাইন। লড়াইটা এখন এই দু’জনকে চালিয়ে নিতে হবে, হার মানা যাবে না কিছুতেই। পরস্পর-পরস্পরকে মন্ত্র শোনান তাঁরা, উই ক্যান ডু ইট। নাথিং ইজ ইম্পসিবল। মাঠের সীমানাপ্রান্ত থেকে উৎসাহ যোগাচ্ছে সতীর্থরাও। আরাফাত-শাহীন পণ করে ফেলেন, বরিশালের হয়ে লড়াইটা তাঁরা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিবেনই।
মাহবুবুল আলম কিঞ্চিৎ দম হারিয়ে ফেলেছেন, অবশ্য তবু ছাড় দিচ্ছে না ছোকরা। মোহাম্মদ শরীফও দারুণ দেখাচ্ছেন। আচমকা আশার সলতের মধ্যে আগুন দেখে ঢাকা বিভাগ তখন রক্তের নেশা পাওয়া বাঘের মতো। বোলাররা একের পর গোলা ছুঁড়ছেন। ফিল্ডাররা ছাড় দিচ্ছেন না একরত্তি। যে করেই হোক, শেষবেলায় রঙ বদলে নিয়ন্ত্রণ আসা এই ম্যাচ হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই।
*****
প্রায় দেড় ঘন্টা মধ্যমাঠে কাটিয়ে দিয়েছেন দু’জন। খেলে ফেলেছেন ১৯ ওভার। আরাফাত ও শাহীনের কাছে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ এখন ‘ঐ দেখা যায়’ দূরত্বে। একশো পেরিয়ে গেছে স্কোর। ঢাকার বোলাররা আক্ষেপ করছেন, হতাশা ঝাড়ছেন, দলনায়ক আশরাফুল কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ঠিক সেইসময়, হ্যাঁ, ঠিক সেইসময় মোশাররফ হোসেন রুবেল এনে দিলেন বহু আকাঙ্খিত সেই ম্যাজিক-মোমেন্ট। আরাফাত সালাউদ্দীনকে তালুবন্দী হতে বাধ্য করলেন মাহমুদুল্লাহর, ভেঙ্গে গেল ৬৩ রানের জুটি। জয়ের বাতিঘর তখনো ১০ দৌঁড় দূরে, সোয়া দু’ ঘন্টার সংগ্রাম শেষে ফিরলেন সালাউদ্দীন।
তালহা জুবায়ের ব্যাটিং মন্দ করেন না। সিঙ্গেল নিয়ে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এলেন একক সংখ্যায়, আর মাত্র ৯ রান। শাহীন হোসাইন ক্রিজে। দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগ করেছেন ৩০ রান, পুরো বরিশাল এখন তাকিয়ে শাহীনের ব্যাটের দিকেই।
মোশাররফ রুবেল সাধারণত দুই ধরণের বল করেন। প্রথাগত বাঁহাতি স্পিন, অন্যটা কিছুটা জোরের উপর টার্ন-হীন আর্মার। স্টক ডেলিভারিটাই ছুঁড়লেন এই মুহূর্তে। বোকা বনে গেলেন শাহীন, এতক্ষণের আস্থাশীলতা বেমালুম গায়েব। সরাসরি বোল্ড। ডাবল উইকেট নিয়ে ম্যাচের রঙ মুহূর্তেই ঢাকার রঙে রাঙিয়ে দিলেন মোশাররফ।
ফিকে হয়ে আসা আলোয় জমে উঠেছে নাটক। মিরপুরের উইকেট ফিরে গেছে তার বিখ্যাত ‘অননুমেয়’ চরিত্রে।
*****
ঢাকার বহু রণাঙ্গনের পরীক্ষিত যোদ্ধা মোহাম্মদ শরীফ। মরচে ধরা আলোয় কিঞ্চিৎ রঙ উঠে যাওয়া বলটা হাতে নিলেন তিনি। তাঁর বলে আছে দারুণ সুইং, পুরনো বল রিভার্সও করাতে পারেন তিনি, এই সময়ের জন্য একদম যোগ্যতম ব্যক্তিটিই বুঝি বেছে নিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
প্রথম বলটা ঘটনাবিহীন কাটলেও, দ্বিতীয় বলেই বোল্ড। তালহা আউট। মোহাম্মদ শরীফ ঢাকা বিভাগীয় ক্রিকেটদলের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছেন। তারিকুল ইসলাম নাম্বার ইলেভেন। ধীরে-সুস্থে ক্রিজে নামছেন। বরিশাল ক্রিকেট দলের আপত্তির শেষ নেই। মিনিট পনেরো আগে সব ঠিক ছিল, কিন্তু এখন কিচ্ছু ঠিক নেই। আলো একদমই নেই। ব্যাটসম্যানদের বল দেখার উপায় নেই। আম্পায়ারের কাছে আবেদন জানান ব্যাটসম্যানদ্বয়, আবেদন আসে সীমানা দড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বরিশাল ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও। আপত্তি-ওজর পাশ কাটিয়ে মোহাম্মদ শরীফ বোলিং শুরু করেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভীষণ সতর্কতার সঙ্গে ব্যাট ধরেন তারিকুল। ওয়াইড হয়, তারিকুল ঠেকিয়ে দেন, ছেড়ে দেন, মোহাম্মদ শরীফের ওভার শেষ হয়ে যায়।
বাউন্ডারি থেকে চিৎকার করেন শাহরিয়ার নাফিস, চলে আয়। মরে আসা আলোয় খেলা যায় নাকি? তা-য় আবার বরিশালের ১০ ও ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান। আম্পায়াররা খানিক আলোচনা করেন, আরেকটু দেখেন, ঢাকার বোলার-ফিল্ডার-ক্যাপ্টেন অপেক্ষা করেন; পরিশেষে আম্পায়ার দু’জন সম্মিলিত সিদ্ধান্ত জানান—এই আলো আঁধারিতে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। হাঁপ ছেড়ে বাঁচে বরিশাল। ঢাকাও কি নয়?
ম্যাচের ফলাফল ড্র দেখালেও, কি আসে-যায় তাতে! মরে আসা আলোর এক জীবন্ত উপাখ্যান হয়ে, ক্রিকেটের চিরন্তন অনিশ্চয়তার সৌন্দর্যের অনন্য উপস্থাপনা হয়ে, অভুলনীয় এক গল্প হয়ে এই ম্যাচ বেঁচে থাকবে রেখে আসা অতীত-খাতায়। থাকবে না?
বরিশাল বিভাগ বনাম ঢাকা বিভাগ
শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, মিরপুর; ২রা নভেম্বর-৫ই নভেম্বর, ২০০৭
জাতীয় ক্রিকেট লীগ, ২০০৭-২০০৮
ঢাকা বিভাগ : ১৫৭ ও ২৫৭
বরিশাল : ৩০৪/৯ ডিক্লেয়ার ও ১০৪/৯
ম্যাচসেরা—সাজেদুল ইসলাম
ফলাফল—ড্র
- 0 মন্তব্য